Reading Time: 4 minutes

ইউনিভার্সিটি শব্দটা শুনলেই বেশিরভাগ মানুষেরই হয়ত মনে পরে যায় ঢাকা ইউনিভার্সিটির কথা! খোলামেলা মাঠের মধ্যে বিশাল বিশাল পুরনো বিল্ডিং গুলো মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে অনেক বছর যাবত! নিশ্চয়ই আপনার মাথায়ও ঠিক একই ছবি ভেসে উঠে? ভার্সিটি মানেই সাদা রঙের ৪ থেকে ৫ তলা বিল্ডিং সোজা হয়ে দাড়িয়ে থাকবে তাই না! কিন্তু এই ভাবনার দিন আসলে শেষ, আজ আমরা আলোচনা করব বিশ্বের ৫ টি অদ্ভুত ভার্সিটি ডিজাইন নিয়ে যা আপনার চোখ ধাধিয়ে দিবে। গতানুগতিক ডিজাইনের দেয়াল ভেঙে এমন কিছু অদ্ভুত ভার্সিটি ডিজাইন বিশ্বে রয়েছে তা সত্যিই তাক লাগিয়ে দেবার মত। এই বিল্ডিংগুলোর আঁকার এবং কাঠামোতে রয়েছে আশ্চর্য রকমের বৈচিত্র, অন্তত আপনি দেখে এগুলোকে ভুলেও ভার্সিটি মনে করবেন না তা একদম নিশ্চিত। শপিং সেন্টার, বাসা কিংবা অফিস বা অন্যান্য যেকোন স্থাপত্যের ডিজাইনে কম বেশি নতুনত্ব আমরা অনেকেই দেখেছি কিন্তু, ভার্সিটি কখনো দেখে না থাকলে অবশ্যই লেখাটি পড়ুন। আপনি চমকে যাবেন। চলুন তবে, শুরু করা যাক ৫ টি অদ্ভুত ভার্সিটি ডিজাইনের গল্প।

ন্যাশনাল অটোনোমাস ইউনিভার্সিটি অফ মেক্সিকো

ন্যাশনাল অটোনোমাস ইউনিভার্সিটি
ন্যাশনাল অটোনোমাস ইউনিভার্সিটি অফ মেক্সিকো

প্রথমেই যে ভার্সিটির কথা মাথায় আসছে সেটি হলো, ১৯৫০ সালে তৈরি হওয়া মেক্সিকোর জাতীয় ভার্সিটি অটোনোমাস। অবাক করা এই ভার্সিটিটি  তৈরি ও ডিজাইন করেছেন মেক্সিকান একদল মেধাবী স্থপতি এবং চিত্রশিল্পীরা। আধুনিক ডিজাইনের তৈরি এই ভার্সিটির ক্যাম্পাসটি ল্যাটিন আমেরিকার অন্যতম সুন্দর একটি নিদর্শন হিসেবে বিখ্যাত। এই বিল্ডিংটা দেখলে আপনার মনে হবে মেক্সিকান সভ্যতার একটি রঙিন ছবি। মেক্সিকান সভ্যতা ভার্সিটির দেয়ালে এত সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছে যা দেখে মুগ্ধ হয়ে সময় কাটানোর ইচ্ছে করবে অনেক। এই ভার্সিটির মূল আকর্ষণ হচ্ছে এটার সেন্ট্রাল এক্সটেরিয়ের। যেখানে বই পড়ে সকলেই অনেক সময় কাঁটায়। এই স্থাপনাটি এতই সকলের নজর কেড়েছে যে ২০০৭ সালে ইউনেস্কোর দ্বারা বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে বলা যায়, এমন একটি অদ্ভুত ভার্সিটিতে পড়তে কার না মন চাইবে!

ন্যানইয়াং টেকনোলজিকাল ইউনিভার্সিটি, সিঙ্গাপুর  

ন্যানইয়াং টেকনোলজিকাল ইউনিভার্সিটি
ন্যানইয়াং টেকনোলজিকাল ইউনিভার্সিটি, সিঙ্গাপুর

ভবিষ্যতের ভাবনা নিয়ে তৈরি এই ভার্সিটিটি প্রকৃতির মাঝে এমনভাবে মিশে আছে যেন প্রকৃতির একটি অংশ মাত্র। ভার্সিটি ডিজাইন এ ছাঁদ কৃষিকে সম্ভবতই কোন স্থাপত্যে এমন ভাবে ব্যবহার করেছে । যেকোন বিল্ডিং ভাবলেই সহজে মাথায় যে ছবি ফুটে উঠে তাহলো চারকোণা একটি বিল্ডিং, কিন্তু এ ভাবনাকে নতুন রূপ এনে দিয়েছে ন্যানইয়াং টেকনোলজিকাল ইউনিভার্সিটি এর ডিজাইন। বিল্ডিং এর কাঠামো যে গোলগালও হতে পারে তা এই ভার্সিটি ডিজাইন না দেখলে সম্ভবত জানাই হতো না। সাস্টেইনিবিলিটি লক্ষ্য করে তৈরি করা এই ভার্সিটিকে এশিয়ার সবচেয়ে খ্যাতি সম্পন্ন ভার্সিটি হিসেবে দেখা হয়। এবং এই ভার্সিটির অংশ হওয়াও অনেক সম্মান বহন করে!

দি রে অ্যান্ড মারিয়া স্টাটা সেন্টার, এম আই টি, ক্যাম্ব্রিজ, ম্যাসাচুসেটস

ক্যাম্ব্রিজ, ম্যাসাচুসেটস
দি রে অ্যান্ড মারিয়া স্টাটা সেন্টার, এম আই টি, ক্যাম্ব্রিজ, ম্যাসাচুসেটস

একটু দূর থেকে দেখলে মনে হবে, উথাল-পাতাল এই বিল্ডিংটি নিশ্চয়ই কোন মিউজিয়াম হবে কিংবা বিনোদনের কোন জায়গা! আর যাই ভাবুন না কেন ভার্সিটি যে ভাববেন না তা জোর দিয়ে বলা যায়। এমন অদ্ভুত কাঠামোতে তৈরি বিল্ডিং কখনো ভার্সিটি হতে পারে? অবিশ্বাস্য। পুরস্কারজয়ী স্থপতি ফ্রাঙ্ক গেহরি এর ডিজাইন করা এই ভার্সিটিটি বাস্তবের এক কল্পনীয় ঠিকানা। যখনই আপনি এই ভার্সিটির দিকে তাকাবেন মনে হবে একেকটি বিল্ডিং একে অপরের উপর হেলে পড়েছে, এলোমেলো কাঠামোতে তৈরি হওয়ার জন্যই এই ভার্সিটি বিশ্বের কাছে এক অদ্ভুত স্থাপনা। হাজার হাজার শিক্ষার্থী এবং ফ্যাকাল্টিরা এখানে তাদের লেখাপড়া ও গবেষণার কাজ করে যাচ্ছেন। ভার্সিটির ডিজাইন বিখ্যাত স্থপতির মেটাফোরিক সৃজনশীলতার প্রকাশ বটে।

ভিক্টোরিয়ান কলেজ অফ আর্টস, মেলবোর্ন অস্ট্রেলিয়া

ভিক্টোরিয়ান কলেজ অফ আর্টস
ভিক্টোরিয়ান কলেজ অফ আর্টস, মেলবোর্ন অস্ট্রেলিয়া

মেলবোর্ন এর ভিক্টোরিয়ান কলেজ অফ আর্টস ১৯৭২ সালে  তৈরি করা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থীদের জন্য এই ভার্সিটিতে রয়েছে ডান্স, ফিল্ম এবং টেলিভিশন, মিউজিকসহ আরও কয়েকটি বিষয়। সমসাময়িক এক্সটেরিয়র এবং আধুনিক নির্মাণ শৈলীতে তৈরি থিয়েটার বিল্ডিংটি এই ভার্সিটির অন্যতম আকর্ষণ। বর্তমান সৃজনশীলতার এক অনবদ্য সৃষ্টি এই ভিক্টোরিয়ান কলেজ। রঙিন এবং অনন্য ডিজাইনে তৈরি হওয়া এই বিল্ডিং বরাবরই বিশ্বের দরবারে সকলের নজর কেড়েছে আর কুড়িয়েছে হাজারো প্রশংসা। গতানুগতিক নির্মাণ শৈলীর বাইরে বের হয়ে বিশ্বে এমন একটি স্থাপত্য তৈরি করা সত্যিই বিরল।

ইডেনবার্গ ন্যাপিয়ার ইউনিভার্সিটি, স্কটল্যান্ড

ইডেনবার্গ ন্যাপিয়ার ইউনিভার্সিটি
ইডেনবার্গ ন্যাপিয়ার ইউনিভার্সিটি, স্কটল্যান্ড

ইডেনবার্গ ন্যাপিয়ার ভার্সিটি স্কটল্যান্ডের প্রাচীনতম স্থাপনা। প্রাচীন এই ভার্সিটি নির্মিত হয়েছে ১৯৬৪ সালে, ষোল শতাব্দীর স্কটিশ গণিতবিদ এবং দার্শনিক জন ন্যাপিয়ারের নামে করা হয়েছে নামকরণ। সময় থেকে এক ধাপ এগিয়ে করা হয়েছে এর ডিজাইন। পরে সংযোজিত থিয়েটার ডিপার্টমেন্টটি ডিম্বাকৃতি এবং সম্পূর্ন কাঁচের তৈরি। এই বিল্ডিংটি খুব সহজেই আপনার নজর কাড়বে! সাময়িক সময়ে এমন বিল্ডিং আমরা অনেক দেখি, কিন্তু ১৯৬৪ সালের সেই সময়ে এমন একটি স্থাপনার ভাবনাও অনেক দুঃসাহসী এবং প্রশংসনীয়। প্রাচীন স্থাপনা হিসেবে, আধুনিক সময়ে এই এডেনবার্গ ন্যাপিয়ারের এই বিল্ডিংটি সকলের কাছে একটি শ্রেষ্ঠ ডিজাইনের নমুনা। 

এই ছিল তবে বিশ্বের ৫ টি অদ্ভুত ভার্সিটি ডিজাইন! ওপরে বলা বিশ্বের ৫ টি অদ্ভুত ভার্সিটি ডিজাইন থেকে আপনার পছন্দ হয়েছে কোন ভার্সিটিটি? পছন্দের বিষয়গুলোও কমেন্ট সেকশনে জানাতে ভুলবেন না! এমন অদ্ভুত সব লেখা পড়তে চোখ রাখুন বিপ্রপার্টি ব্লগে

Write A Comment