বিড়াল পোষা অনেকের শখ। যখন এই বোবা প্রাণীগুলোর দিকে তাকান, তখন কিন্তু আপনার মন একটু একটু করে মোমের মত গলতে থাকে। দ্রুত বাসায় নিয়ে যাবার ভাবনাগুলো তাড়া করতে শুরু করে। তাদের ভালবাসতে চান আপনি, তাদের পেলে পুষে বড় করতে চান আপনি, তাদের নানা কিছু শেখাতে চান আপনি, তাদের যেন একটুও কষ্ট না হয় সেটা সর্বক্ষণ নিশ্চিত করতে চান আপনি। এই প্রাণীগুলো দেখতে এতটাই সুন্দর আর আদুরে যে এই চাওয়াগুলো পূরণ করা অসম্ভব নয়। কিন্তু, যে বাড়িটাতে আপনি তাদের এনে রাখছেন সেই বাড়িটা বা ঘরটা কি পোষা বিড়াল উপযোগী ঘর ? যদি না হয়ে থাকে তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন, যেখানে পোষা বিড়াল উপযোগী ঘর প্রস্তুত করার কিছু চমৎকার টিপস শেয়ার করবো। পড়তে থাকুন!
বিড়ালের নিরাপত্তা
সর্বপ্রথম আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে আদরের বিড়ালটি যেন ঘর থেকে বের হয়ে না পড়ে কিংবা কোন উপায়ে যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। এই বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিড়াল পোষা একটা গুরুদায়িত্ব তাই পালন করতে হবে কোন ভুল ছাড়াই। ঘরের জানালা বা বারান্দায় নেট দেওয়ার ব্যবস্থা করুন, ঢাকায় এমন বেশ কিছু সার্ভিস চালু হয়েছে যারা আপনার ঘরের জানালায় বা বারান্দায় নেট লাগিয়ে দিবে। তাদের সাথে যোগাযোগ করে জানালা বা বারান্দায় নেট লাগিয়ে পোষা বিড়াল উপযোগী ঘর তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করা যেতে পারে। নেট ব্যবহারের ফলে বিড়ালটি আর অন্য কোথাও পালাতে পারবে না। বাসার ভেতরের স্পেসটাকে আপনার যথা সম্ভব পরিষ্কার করতে হবে যাতে কোন ধারালো বস্তুর দ্বারা তারা আঘাত না পায়। এছাড়াও ছোট খোট বেশ কিছু সরঞ্জাম আপনাকে সরিয়ে রাখতে হবে যা আদরের বিড়ালটির গলায় চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া যদি কোন দূর্ঘটনা ঘটেও যায় আপনার নিকটস্থ পোষ্য প্রাণীর ক্লিনিক থেকে দ্রুত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে।
খাবারের সময়
বিড়ালের যত্নের যেন কোন শেষ নেই! সাড়া বছরই তাদের দেখাশোনা করতে হয়। আর কেনই বা না করবেন! এই ছোট ছোট প্রানীগুলো নিজের খেয়াল যে ঠিকমত রাখতে জানে না। তাই আমাদের একটু বাড়তি আদর করতেই হয়। বছরের গ্রীষ্মকাল থেকে শীতকালে যত্ন করতে হয় বেশি। তারা যেন প্রচন্ড শীতে আরাম খুঁজে পায় সে ব্যবস্থা আপনাকেই করতে হবে। যত্ন করতে গেলে সইতে হবে তাদের শত আহ্লাদ। খাবারের ক্ষেত্রে বিড়ালরা একটু নাকউঁচু স্বভাবের হয়ে থাকে। তাই পোষা বিড়াল উপযোগী ঘর তৈরির সময় আপনাকে তাদের খাবার দাবারের বিষয়টিও ভাবতে হবে। বিড়াল যেমন ভরা পেটে থেকেও খাবারের জন্য কান্নাকাটি করতে পারে, আবার খাবার দিলে দেখা যাবে ঠিক মত খাচ্ছেও না। আবার যখন সত্যিই ক্ষুধা পাবে তখন খাবার না দিলে আপনি তাদের কাছে হয়ে উঠবেন বাংলা কোন সিনেমার ভিলেন। এই সমস্ত ঝামেলা এড়াতে আপনাকে একটা নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করতে হবে। সেই সাথে একটি স্থান চিহ্নিত করতে হবে। ঠিক একই উপায় তাদের জন্য প্রস্রাব-পায়খানা ত্যাগের জন্যেও একটি নির্দিষ্ট স্থান তৈরি করতে হবে। এবং এই দুটো বিষয়ই আপনাকে সময় মেনে করতে হবে। তারা একটু চঞ্চল স্বভাবের হলেও তাদেরকে অভ্যাসের আওতায় আনা সম্ভব।
প্রস্রাব-পায়খানা ত্যাগের প্রশিক্ষণ
একটি নির্দিষ্ট জায়গা নির্ধারণ করতে হবে, যখন প্রস্রাব-পায়খানা করতে হবে বিড়ালগুলো সেখানে চলে আসবে। বিড়ালের সাইজ অনুযায়ী একটি লিটার বাক্স কিনে আনতে পারেন। বিড়ালকে শেখাতে হবে খাবার খাওয়ার পর যেন তারা এই লেটার বাক্সে যায় প্রস্রাব-পায়খানা ত্যাগের জন্য। তাদের জন্য খাবারের পরের সময়টা উত্তম, প্রস্রাব-পায়খানার জন্য। এই প্রশিক্ষণের সময়ে কিছু ভুল হতেই পারে এক্ষেত্রে রেগে গেলে একদম চলবে না। তাদেরকে সঠিকভাবে শেখানো আমাদের কর্তব্য। সুতরাং যা কিছু ভুল হবে তা ঝটপট পরিষ্কার করুন। এবং যে উপায়টি আপনি শেখাতে চাচ্ছেন তার জন্য ঘরে অল্পকিছু নমুনা বা স্যাম্পল(প্রস্রাব-পায়খানা) রাখুন, তাহলে দেখবেন তারা গন্ধ শুকে ঠিকই সেই জায়গায় পৌঁছে যাবে এবং যথা স্থানে প্রস্রাব-পায়খানা ত্যাগ করা শুরু করবে। বিড়ালরা খুব স্মার্ট এবং পরিষ্কার বাসস্থান দেখতে পছন্দ করে। তাই পোষা বিড়াল উপযোগী ঘর তৈরি করা মানে তাদের জন্য স্বয়ংসম্পূর্ণ লাইফস্টাইল তৈরি করা।
খেলার জায়গা
বিড়ালরা নাকি অলস! এমন কোন কথায় একদম কান দেবেন না। তারা কিছু ক্ষেত্রে অলস হতে পারে তবে তারা অবিশ্বাস্যরকম উদ্যমী। পোষা বিড়াল উপযোগী ঘর মানে তাদের জন্য খেলা ও ঘোরাঘুরি করার যথেষ্ট জায়গা দেয়া। তবে সতর্ক থাকুন যে তারা যেন কিছু ভেঙ্গে না ফেলে কারণ খেলার এই সময়ে তারা একটু ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠতে পারে। তাদের খেলনা বা ঘুরে বেড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট জায়গা দিন। এটি তাদের স্বাস্থ্যের পাশাপাশি আপনার মনের জন্যও ভালো।
ক্যাটপ্রুফ বাসা
পোষা বিড়াল উপযোগী ঘর তৈরির পাশাপাশি আপনাকে বেশ কিছু জিনিষ নিজের জন্যেও করতে হতে পারে। বিড়ালগুলো অনেক সময় কৌতূহলী হয়ে ওঠে, এটা ওটা দেখতে চায় ধরতে চায় তখনই ঘটে আসল বিপদটা। জিনিষপত্র ছিঁড়ে ফেলবে ও আঁচড়াবে। একদমই খেয়াল করবে না। তাই ভঙ্গুর জিনিষগুলো সবসময়ই নাগালের বাইরে রাখতে হবে। আর তাদের নখ আঁচড়ানোর জন্য একটি স্ক্র্যাচিং পোস্ট দিন।
বিড়াল পোষার জন্য যদি আপনার উপযুক্ত পরিবেশ থাকে তাহলে বিড়াল পোষার মত চমৎকার কোন কাজ হতে পারে না। তাদের সাথে কাটানো প্রতিটা সময় বেশ চমৎকার কাটবে এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। সময়মতো তাদের খাওয়ান, ভালবাসুন, সুরক্ষিত রাখুন, আপনার ঘরকে নিরাপদে রাখুন – এবং প্রকৃতিকে তার গতিতে চলতে দিন। সুতরাং, আপনি যদি বাড়িতে বিড়াল পোষার পরিকল্পনা করে থাকেন তাহলে এখনই সিদ্ধান্তটা নিয়ে নিন।