Reading Time: 5 minutes

ঢাকা শহরে আপনি চাইলেই মজাদার খাবার মন ভরে খেতে পারবেন। কি নেই এই শহরে! ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবার থেকে শুরু করে বিদেশি সবধরনের খাবার এখানে সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়। ছুটির দিনে কিংবা অবসরে প্রিয়জন নিয়ে খাওয়ার মত অসংখ্য রেস্তোঁরা এখানে রয়েছে। বিভিন্ন রকমের খাবারের জন্য রয়েছে আলাদা নির্দিষ্ট কিছু রেস্তোরাঁ। আজকের এই ব্লগে আমরা জানবো ঢাকার সেই সব চমৎকার এলাকাগুলো সম্বন্ধে যেখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি বৈচিত্র্যময় রেস্তোঁরা। শুরু করা যাক। 

ধানমন্ডি

রেস্টুরেন্ট
সাধ্যের মধ্যে চমৎকার সব খাবার এখানেই পাওয়া সম্ভব

অনেকেই ধানমন্ডিকে শহরের প্রাণ বলে ডাকে। কি নেই এই এলাকাতে- শপিং মল, স্কুল-কলেজ, ইউনিভার্সিটি, রেস্তোরাঁ ইত্যাদি। যেকোন উপলক্ষ্যে এই এলাকা হয়ে ওঠে সরব। স্ট্রীট ফুড থেকে শুরু করে নামদামি রেস্তোরাঁ সবকিছুই আছে এই এলাকায়। মুখে জল আনা কিছু বেকারি থেকে শুরু করে রেস্তোরাঁ সবকিছুই রয়েছে সাতমসজিদ রোড ও ২৭ নম্বরের রাস্তায়। এমন কাউকে সম্ভবত খুঁজে পাওয়া যাবে না যারা কিনা এই এলাকায় একটা বিকেল কাটায়নি। 

পরিবার নিয়ে নিরিবিলি কিছু আনন্দের সময় কাটাতে চাচ্ছেন? তাহলে নিঃসন্দেহে আপনারা গন্তব্য হওয়া উচিত ধানমন্ডি। এখানের বুফে রেস্তোরাঁগুলো বেশ নাম করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গার্লিক এন্ড জিনজার যা বেশ ভালো রেস্তোরাঁ। সাধ্যের মধ্যে চমৎকার সব খাবার এখানেই পাওয়া সম্ভব। এখানে মাত্র ১২০০ টাকায় ১০০ এর অধিক মাল্টি-কুজিন আইটেম পাবেন। কেবল বুফেই নয়, রয়েছে জনপ্রিয় বার্গার চেইন ম্যাডসেফ এবং টেকআউট। এখানের বার্গার এতই চমৎকার আপনি একবার খেলে ফিরে আসবেন বারবার। মজাদার খাবারের অভিজ্ঞতার জন্য পুরো পরিবারকে নিয়ে বাইরে যাওয়ার কথা ভাবছেন, তবে এই জায়গাটি আপনাকে দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা এনে দিবে।

ওরিয়েন্টাল যারা ভালোবাসে তাদের জন্য রয়েছে গিনজা আর ইয়াম চা। এখানের খাবার যেমন সুস্বাদু তেমনি পরিবেশ সবকিছুই দুর্দান্ত। আরও রয়েছে স্টেক হাউজ। সুতরাং, আপনি লোকাল খাবারের পাশাপাশি সামুদ্রিক খাবার কালামারিও এই এলাকায় সহজেই খুঁজে পাবেন। এছাড়া এই এলাকার ক্যাফেগুলোর কথা না বললেই নয়। যারা বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে ভালোবাসে তারা এই ক্যাফেগুলোতে কিছু আনন্দঘন মূহুর্ত কাটাতে চলে আসে। ঢাকার ভেতর বৈচিত্র্যময় রেস্তোঁরা এর সমাহার রয়েছে এই ধানমন্ডিতে। 

মিরপুর 

মিরপুর রেস্টুরেন্ট
মিরপুরের একেক অংশে খাবারের আয়োজন ভিন্ন

ঢাকার অন্যতম বৃহত্তম এলাকা হওয়ায় মিরপুর বেশ জনপ্রিয়, তাই ট্রেন্ডি সব রেস্তোঁরাগুলো এখানেই রয়েছে। ধানমন্ডির মতো মিরপুরেও বিভিন্ন ধরণের রেস্তোঁরা রয়েছে। তবে যা মিরপুরকে অন্যান্য এলাকা থেকে আলাদা করে তোলে তা হচ্ছে মিরপুরের স্থানীয় এবং দক্ষিণ এশিয়ার খাবারগুলো। চট্টগ্রামের স্থানীয় মেজবানী গরুর মাংস থেকে শুরু করে ভারতীয় হ্যান্ডি গরুর মাংসের মতো খাবারেও মিরপুরের জুড়ি নেই। আশ্চর্যের কথা হচ্ছে মিরপুরের রাতের দৃশ্য কিন্তু একদমই আলাদা। রাতের রাস্তায় দেখা যায় নানা ধরণের সুস্বাদু স্থানীয় খাবার। মিরপুর বেশ বড়। মিরপুর থেকে শহরের অন্যান্য এলাকার মানুষও এখান থেকে খাবার সংগ্রহ করে থাকে। কালশী সহ মিরপুরের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল পায়া এবং হালিমের জন্য বিখাত্য। অন্যদিকে মিরপুর ১ ও ২ এর আশেপাশের অঞ্চলে ফাস্ট ফুড বেশ জনপ্রিয়। মিরপুরের একেক অংশে খাবারের আয়োজন ভিন্ন। 

মিরপুর ২, বিশেষত লাভ রোডের অঞ্চলটি অল্প বয়স্ক ছেলেমেয়েদের কাছে পছন্দের একটি জায়গা। কেননা সেখানে আছে সাশ্রয়ী মূল্যের স্ট্রিট ফুড এবং চায়ের স্টল। যেখানে রাত দিন ধরে চলে আড্ডা আর গান। তবে আপনি যদি জাতীয় চিড়িয়াখানার দিকে রাস্তা থেকে খানিক দূরে যান তবে আপনি পাবেন চুই ঝাল খাবারের জন্য বিখ্যাত আরও একটি রেস্তোঁরা, খুলনার স্থানীয় খাবার হিসেবে এর তুলনা নেই।

উত্তরা 

উত্তরা রেস্টুরেন্ট
উত্তরা আপনার জন্য কাঙ্ক্ষিত একটি জায়গা

উত্তরা এলাকাটি যেন শহরের ভেতর আর একটি এলাকা। এমন কিছুই নেই যা আপনি এই এলাকায় খুঁজে পাবেন না। উত্তরার রেস্তোরাঁগুলো সবই বেশ জনপ্রিয় এবং সুনামধন্য। কন্টিনেন্টাল, ইতালীয়, প্রাচ্য থেকে দক্ষিণ-এশীয় এবং স্থানীয় খাবার সবকিছুই রয়েছে উত্তরায়। মিরপুরের মতো বিশাল না হলেও উত্তরায় রয়েছে বৈচিত্র্যময় রেস্তোঁরা সমূহ। যারা খোলামেলা সেটিং সহ এশিয়ান ফিউশন খাবার পছন্দ করেন তাদের জন্য উত্তরা সেক্টর ১৩ এর আজো আইডিয়া স্পেস দুর্দান্ত একটি জায়গা। ট্রিভেল রেস্তোরাঁটি আরও অপূর্ব একটি রেস্তোরাঁ। উত্তরায় আরও বেশকিছু থিমেটিক রেস্তোঁরা রয়েছে যা আপনাকে আলাদা একটা অনুভূতি এনে দিবে। লা টিংটিং এমন একটি রেস্তোঁরা যা আপনাকে মাটির কুটির এবং পল্লী সজ্জা দিয়ে বাংলাদেশের সুন্দর গ্রামীণ চিত্র দেখাবে। তবে আপনি যদি স্ট্রিট ফুড প্রেমী হন এবং বিভিন্ন ধরণের খাবার চেষ্টা করতে পছন্দ করেন তাহলে উত্তরা আপনার জন্য কাঙ্ক্ষিত একটি জায়গা। এছাড়াও, এই অঞ্চলের প্রতিটি কোণে কোণে রয়েছে আশ্চর্য রকমের কাবাব, রেস্তোঁরা, পিজ্জা এবং বার্গার চেইন রয়েছে বেশ কয়েকটি বিখ্যাত বুফে রেস্তোঁরাও। 

মোহাম্মদপুর

মোহাম্মদপুর
বৈচিত্র্যময় রেস্তোঁরা এর জন্য নিঃসন্দেহে মোহাম্মদপুর বিখ্যাত

মোহাম্মদপুর বরাবরই সুস্বাদু খাবারের এক অনন্য জায়গা। মোস্তাকিমের চাপ থেকে শুরু করে বোবা’র বিরিয়ানি পর্যন্ত দুর্দান্ত খাবারে এই এলাকা পরিপূর্ণ। রিয়েল এস্টেটে সম্প্রতি এই এলাকাটি বেশ প্রসার পেয়েছে দেখে, স্থানীয়দের প্রয়োজন মেটাতে এখন নতুন রেস্তোরাঁ এখানে চালু হয়েছে। 

এখানে স্থানীয় খাবারসহ এশিয়ান এবং ওয়েস্টার্ন ফিউশন রেস্তোঁরাগুলি প্রচুর পরিমাণে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। পাবুলাম, কুডোস এবং খানের মতো রেস্তোরাঁগুলো অত্যন্ত জনপ্রিয় এখানে। স্থানীয় রেস্তোরাঁগুলো বার্গার, ফ্রাই এবং অন্যান্য সুস্বাদুযুক্ত মজাদার ফাস্ট ফুড খাবারও পরিবেশন করে থাকে। এবং রয়েছে আরও ইতালিয়ান এবং জাপানি খাবারের রেস্তোরাঁ। তবে, আপনি যদি সত্যিকারের মোহাম্মদপুরের খাবার খেতে চান তবে আপনাকে বিহারি ক্যাম্প এবং টাউনহল মার্কেট এলাকায় যেতে হবে। এই এলাকায় ঢাকার কয়েকটি সেরা বিরিয়ানি এবং তেহরির হোটেল থাকার জন্য বিখ্যাত। তাদের তেহরি এবং বিরিয়ানির দূর্দান্ত স্বাদ এবং সুগন্ধ আপনাকে বন্দী করে রাখবে অনেক দিন আপনি ফিরে আসতে বাধ্য হবেন এখানে। বৈচিত্র্যময় রেস্তোঁরা এর জন্য নিঃসন্দেহে মোহাম্মদপুর বিখ্যাত। 

বনানী

বনানী
বনানীতে বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় রেস্তোঁরাও রয়েছে

এই শহরে একবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে বেশ কিছু রেস্তোঁরার আবির্ভাব হয়েছিল। এলাকাটির নাম বনানী। বনানীতে অভিনব এবং উচ্চমানের রেস্তোঁরাগুলোর পরিমাণ বেশি। পিজ্জা বা বার্গার যা ই হোক না কেন, বনানীতে সব খাবারের একটি করে চেইন আউটলেট রয়েছে। বনানীতে অনেক আন্তর্জাতিক মানের ফাস্ট-ফুড চেইনও রয়েছে। এ এলাকায় বসবাসকারী অনেকেই ক্যাফেতে ঘুরে বেড়াতে এবং বিভিন্ন ধরণের খাবার উপভোগ করতে পছন্দ করেন। তবে এর অর্থ এই নয় যে বনানীতে কোনও স্থানীয় রেস্তোঁরা নেই। স্টার কাবাব ঢাকার অন্যতম জনপ্রিয় স্থানীয় রেস্তোঁরা যা কাবাব থেকে শুরু করে সুস্বাদু বিরিয়ানি সবকিছুই তৈরি করে থাকে। এছাড়া স্টেক হাউজ এবং উডহাউজ গ্রিল, দ্য পিট গ্রিলের মত বিখ্যাত রেস্তোঁরাও রয়েছে। জাপানি এবং চাইনিজ খাবারের জন্য বনানীতে বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় রেস্তোঁরাও রয়েছে। 

খিলগাঁও 

খিলগাঁও
শুধু রেস্তোরাঁ না, খিলগাঁও তার স্ট্রীটফুডের জন্য বিখ্যাত

খিলগাঁও তার মজাদার সব খাবারের জন্য বিখ্যাত। রুফটপ রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে স্ট্রীট ফুড সবকিছুতেই খিলগাঁও এর জুড়ি নেই।  খিলগাঁওয়ে বিভিন্ন রকমের বেশ কয়েকটি আশ্চর্যজনক রেস্তোঁরা রয়েছে। ছাদ ডাইনিংয়ের জন্য খিলগাঁয়ের অন্যতম সেরা জায়গা ডা রুফটপ রেস্টুরেন্ট। একটু অন্যরকম স্বাদের খাবারের জন্য বেছে নিতে পারেন, দ্য কালার ক্যাফে। 

অন্যদিকে, জমপেশ খাবারের জন্য ভূতের আড্ডায় খাওয়া যেতে পারে। বিয়ে বাড়ির খাবারের জন্য রয়েছে ট্র্যাডিশনাল বিডি। এছাড়া শহরের সেরা গ্রিল এবং চাপ চ্যাপ খেতে খানআড্ডা তাদের প্রথম পছন্দ। বার্গারের কথা উঠলে মিঃ বার্গারের রসালো এবং মশলাদার বার্গারের কথা বলতেই হয়।  এছাড়াও রয়েছে আলফ্রেসকো পাস্তা, পিজ্জা। শুধু রেস্তোরাঁ না, খিলগাঁও তার স্ট্রীটফুডের জন্য বিখ্যাত। কোন কিছুই না খিলগাঁও এর ফুচকা যদি একবার খেয়ে দেখেন আপনি বার বার সেখানে ফিরে যেতে বাধ্য হবেন। 

এই ছিল আমাদের বৈচিত্র্যময় রেস্তোঁরা নিয়ে আজকের আর্টিকেল কেমন লাগলো জানাতে কমেন্ট করতে ভুলবেন না যেন। 

Write A Comment