যখন আমরা কোন বাসা বা ঘর সম্বন্ধে ভাবি ছোটখাটো অনেক কিছু একবারে চলে আসে মাথায়। নিজের ঘরকে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে তৈরি করা খুবই জরুরী। আপনার বাসায় যদি কোন বয়স্ক মানুষ থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই তার কথা ভেবে বাসার নকশা করতে হবে। এছাড়াও আপনার নিজের বাড়ি যেখানে আপনি বাকি জীবন কাটাতে চান সেই বাড়িটিও আপনার বৃদ্ধকালের কথা ভেবেই তৈরি করা উচিত। নয়তবা, পরে গিয়ে বিরাট একটা অংকের টাকা গুনতে হতে পারে আপনাকে। সত্যি বলতে, বৃদ্ধকাল সবার আসবে তাই যেকোন পরিকল্পনা সবদিক বিবেচনা করেই করা ভালো।
আজকের ব্লগে আমরা আলাপ করব, কিভাবে বয়স্ক-বান্ধব ঘর তৈরি করা যায়। আপনার ও আপনার পরিবারের বৃদ্ধ মানুষটির জন্য কিভাবে এটি সুবিধাজনক হবে তা দেখবো। আপনি যদি ট্রেন্ডের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে ভালোবাসেন তাতেও কোন সমস্যা নেই, আমরা নিয়ে এসেছি সব চমৎকার সব টিপস যা ব্যবহার করে ঘর ট্রেন্ডি কিন্তু বয়স্ক-বান্ধবও হবে। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।
ঘরের মেঝে
ঘরের মেঝের কথা আসলে নানারকমের মেঝের কথা মনে পরে যায়। আপনার প্রিয় ঘরের জন্য যেকোন মেঝে বেছে নিতে পারেন। কিন্তু কিছু মেঝে আছে যেগুলোর কার্যকারিতা একটু বেশি। এই ধরুন, স্লিপ-রেজিস্ট্যান্ট ফ্লোরিং! এই মেঝেগুলোতে পা পিছলে পড়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এবং আপনার বাসায় যদি বয়স্ক মানুষ থেকে থাকে তবে আপনার ঘরের জন্য এই মেঝে বেশ চমৎকার হবে। হাঁটার পাশাপাশি আরও অনেক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কেননা, আমাদের ঘরের মেঝে যদি হাঁটার জন্য নিরাপদ না হয় এক্ষেত্রে যেকোন দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা খুব বেড়ে যায়। মেঝের ক্ষেত্রে নরম ও মসৃণ পৃষ্ঠ থাকার উপকারিতা অনেক এক্ষেত্রে- কর্ক, রাবার এবং লিনোলিয়াম মেঝে নির্বাচন করা যায়। এই মেঝেগুলো আস্তে হাঁটার জন্য ভালো এবং পা পিছলে যাওয়ার প্রবণতা রোধ করে। মেঝের পৃষ্ঠ যতটা সম্ভব মসৃণ রাখুন। যদি কোন পৃষ্ঠ বদলানো প্রয়োজন সেক্ষেত্রে আলাদা উপাদান যোগ করে সমস্যা দূর করেন। চেষ্টা করবেন প্যাটার্ন কিংবা গ্লসি বা চকচকে পৃষ্ঠ এড়িয়ে যেতে। কেননা, যারা চোখে একটু কম দেখেন তাদের জন্য এমন মেঝে বেশ বিপজ্জনক। এই কাজগুলো করা বেশ কঠিন মনে হলেও বয়স্ক-বান্ধব ঘর করে তোলা বেশ জরুরী। আপনি চাইলে যেখানে শুধু প্রয়োজন সেখানে নন-স্কিড ম্যাট রাখার ব্যবস্থা করুন। এতে করে আলাদা পৃষ্ঠ বা মেঝে রঙ করার ঝামেলা থাকল না।
রান্নাঘর
যেকোন বাসায় রান্নাঘরের কার্যকারিতা সবচেয়ে বেশি। মাইক্রোওয়েভ, ওভেন, ফ্রিজ সবকিছুই এক জায়গায়ই রাখা। ঘরের বাকি সদস্যদের জন্য এই সবকিছু ব্যবহার করতে কোন তেমন কোন কষ্ট পোহাতে হয় না, কিন্তু বাড়ির বৃদ্ধ মানুষটির ব্যাপার কিন্তু আলাদা। এগুলোর উচ্চতা যদি বেশি হয়ে থাকে এবং রান্নাঘরের নকশা যদি জটিল হয়ে থাকে তাহলে, ঘরের বয়স্ক যারা হুইল চেয়ার বা ওয়াকারে যাতায়াত করেন তাদের জন্য স্বাভাবিকভাবে তাদের জন্য এগুলো ব্যবহার করতে সমস্যায় পড়তে হয়। এক্ষেত্রে রান্নাঘরের অ্যাপ্লায়েন্সগুলো সহজেই কনট্রোল করা যায় এবং অন অফ করা যায় এমন দেখে কিনুন। রান্নাঘরের ক্যাবিনেটগুলো এমনভাবে তৈরি করুন যাতে করে সহজেই নাগাল পাওয়া যায়। যদি সম্ভব হয় নিয়মিত ব্যবহারের জিনিসপত্রগুলো নিচে নামিয়ে আনুন। এছাড়াও, বয়স্ক-বান্ধব ঘর গড়ে তলার জন্য যাতায়াতের পথকে প্রশস্ত করুন যাতে করে হুইলচেয়ার বা ওয়াকারে থাকা মানুষ সুবিধামত চলাচল করতে পারে।
বাথরুম
নিজের বাথরুমে কিভাবে ডিজাইন করেছেন সে সম্পর্কে পুনরায় চিন্তা করুন। বয়স্কদের পক্ষে এই বাথরুমটি ব্যবহার করা কতটা সুবিধাজনক সে সম্বন্ধে ভাবুন। সমস্যা অনেকই হতে পারে যেমন, সাপোর্ট সিস্টেমের অভাব, পিচ্ছিল মেঝে এবং উচ্চতা। কার্বলেস ঝর্ণা বেছে নিয়ে আপনার বাড়িকে বয়স্ক-বান্ধব করতে পারেন। এইভাবে আপনি তাদের বয়স, গতিশীলতা এবং ক্ষমতা নির্বিশেষে বিবেচনা করে প্রত্যেকের চাহিদা পূরণ করতে পারবেন। ঝর্ণার জায়গায় এবং তার আশেপাশে স্লিপ-প্রতিরোধী মেঝে বা ম্যাট যোগ করুন। ঝরনা, টব এবং টয়লেটের পাশে গ্র্যাব বারগুলো ইনস্টল করুন। ঝর্ণার নিচের পিচ্ছিল মেঝের জন্য যেকোন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে তাই, ঝর্ণার নিচে বসার ব্যবস্থা করুন। এর জন্য ফোল্ডিং টুল বা চেয়ারের রাখুন। এবং বাথরুমের সবকিছু সামঞ্জস্যযোগ্য উচ্চতায় রাখার চেষ্টা করুন।
ঘরের দরজা
আপনি যদি বয়স্ক-বান্ধব ঘর গড়ে তুলতে চান, তাহলে ঘরের দরজা নিয়ে আগে ভাবতে হবে। মোচড়ানো ডোরসনবগুলো বাড়ির বয়স্ক কিংবা ছোট সদস্যের জন্য বেশ ঝামেলাপূর্ণ। যাদের শারীরিক সমস্যা আছে তাদের জন্য এই নবগুলো ব্যবহার করা বেশ পীড়াজনক। লিভার-স্টাইলের সাথে ট্যুইস্ট-স্টাইলের দরজা নবসগুলো বেশ সহজভাবে প্রতিস্থাপন করা যায়। সবসময় এমন কিছু নিয়ে ভাবতে হবে যেটা করলে জীবন সহজ হয়ে উঠে। সেজন্য বাড়ি নির্মাণের সময় প্রথমেই লিভার-স্টাইলের দরজা নবসগুলি বেছে নিন।
ঘরে আলোর ব্যবস্থা করুন
বিশেষ করে বাড়িতে যখন বয়স্ক ব্যক্তিরা থাকেন তাদের জন্য লাইটিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সিঁড়ি বা প্রবেশের পথগুলিতে যথাযথ আলোর অভাবে যাতায়াতে সমস্যা হয় এবং দুর্ঘটনা ঘটে। নিজের বাড়িকে যদি বয়স্ক-বান্ধব করতে চাইলে এটি একটি এমন জিনিস যা আপনি কখনই এড়াতে পারবেন না। আপনার বাড়ির সমস্ত জায়গা, বিশেষ করে সিঁড়ি এবং প্রবেশপথের আশেপাশের জায়গাগুলোতে আলোর যথাযথ ব্যবস্থা রাখুন। খেয়াল রাখতে হবে, ঘরের বয়স্কদের চোখের দৃষ্টি বয়সের ভারে কমে আসছে তাই পর্যাপ্ত আলো থাকাটা খুব জরুরী নয়তো বা কোন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। যথাযথ আলো থাকলে তাদের আসবাবের চারপাশে ঘোরাঘুরি, বই পড়া বা ওষুধ নেবার মত কোনও কাজ করতে আর সমস্যা হবে না।
সুরক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ
ঘরের বয়স্ক সদস্যের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আপনার দায়িত্ব। ঘর বয়স্ক-বান্ধব করার আগে আপনার মাথায় রাখা উচিত তাদের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা সবচেয়ে জরুরী। তাদের নিরাপত্তা আপনার তালিকার প্রথমে থাকবে। যেকোন ধরণের মেডিকেল ইমারজেন্সি বা কোন দুর্ঘটনা সমস্যা যা ই হোক না কেন, যেকোন পরিস্থিতি আসুক না কেন তাদের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আপনার প্রথম দায়িত্ব। সে কারণেই ফায়ার এলার্ম, সিসি ক্যামেরা, স্প্রিংকলারস এর মতো প্রাথমিক সুবিধা ইনস্টল করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মেডিকেল ইমার্জেন্সী, অগ্নিকাণ্ড ও অন্যান্য বিপর্যয়কালে বিল্ডিং এর উঁচু তলায় থাকা বাসিন্দারা যেকোন সমস্যায় পড়তে পারেন সেখান থেকে বাঁচতে এই সুরক্ষা ব্যবস্থাগুলো ব্যবহার করতে পারেন।
আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা
ঘরকে যে যে উপায়ে সম্ভব বয়স্ক-বান্ধব করে তুলুন। এগুলো ছাড়াও আরও কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো মেনে চললে আপনি সহজেই তাদের জন্য ঘরে কাটানো সময়টাকে আরও সুন্দর করে তুলতে পারবেন। যেমন, একটি চেয়ার বা সোফার ব্যবস্থা করা, সেখানে বসে সে সময় কাটাতে পারেন নিজের মত করে। সেই চেয়ারে কুশনের ব্যবস্থা রাখা। ধারালো-প্রান্তযুক্ত আসবাব এড়াতে চেষ্টা করুন। যেকোন জিনিস নামিয়ে দেওয়ার জন্য প্রবেশ পথের নিকটে একটি চেয়ার, টেবিল বা বেঞ্চটি রাখুন।
ঘরের বড়দের আমরা সবাই ভালোবাসি নিজেদের থেকেও বেশি। বয়স্ক-বান্ধব ঘর করে তোলা কিন্তু অতটাও কঠিন কিছু নয়। সুতরাং, যখন নিজের বাড়ি তৈরি করবেন কিংবা মেরামত করবেন এই উপায়গুলো কাজে লাগাতে পারেন। এই উপায়গুলো বেশ উপকারী। এমন আরও টিপস জানতে আমাদের ব্লগ নিয়মিত পড়ুন।