Reading Time: 3 minutes

সবুজে ছেয়ে যাওয়া কোন ঠিকানা কি আপনি খুঁজছেন? চলতি বছরের শেষ এবং শুরুটা কি একটু প্রকৃতির কাছে গিয়ে করতে চাচ্ছেন? সারা বছরটা তো অনেক ব্যস্ততায় কেটেছে নিশ্চয়ই। এখন সময় একটি আরাম করে নতুন বছরকে আমন্ত্রণ জানাবার। এই আরামটা যদি একটু নিরিবিলি পাখিদের কলরবে করা যায় মন্দ হতো না কিন্তু! ব্যস্ত নগরী গাজীপুরে রয়েছে এমন একটি জায়গা যেখানে আপনার ব্যস্ততারা খুঁজে পাবে স্বস্তি। গজারির গড় নামে বিখ্যাত ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান এমনই এক জায়গা। কি এমন আছে সেখানে? কিভাবে যাবেন বা কিভাবে কাটাবেন সময় সবকিছুই জানা যাবে আজকের এই অলিগলি ভ্লগে।  

কোথায় এই ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান 

লোকেশন ম্যাপ
ঘুরে আসার মত একটি জায়গা এটি

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা জুড়ে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের অবস্থান। ঢাকা থেকে মাত্র চল্লিশ কিলোমিটারের পথ। সঠিক ভাবে হিসাব করলে মূল উদ্যানটি মূলত ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের পাশে ৯৪০ হেক্টর জমির উপর অবস্থিত।গাজীপুর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে এই উদ্যানটিতে ঢাকা থেকে যেতে সময় লাগে মাত্র দুই ঘন্টা। ময়মনসিংহগামী যেকোনো বাসেই এখানে আসা যায়। উদ্যানে প্রবেশের জন্য আপনাকে গুনতে হবে মাত্র ১০ টাকা। তবে গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করলে তার জন্য আলাদাভাবে নির্দিষ্ট অংক পরিশোধ করতে হয়।

ঘুরতে গেলে কী কী দেখা যাবে সেখানে? 

লেক
উদ্যানের বিশালাকার কয়েকটি লেক আছে

ঢাকার গাড়ি ঘোড়া দেখে দেখে যদি একটু ক্লান্ত হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে জাতীয় উদ্যানে আছে ঘন বন আর ঝোপ জঙ্গল। শাল বা গজারি, এই উদ্যানের প্রধান বৃক্ষ। এসব ছাড়াও ২২০ প্রজাতির গাছপালা আছে এখানে। বনের ভেতর দিয়ে ঘুরে বেড়ানোর জন্য আছে রাস্তা ও হাইকিং ট্রেইল যেখানে নিরিবিলি নিজের মত করে হেঁটে দেখতে পাবেন একেকটি গাছ। ১৯৭৪ সাল থেকে কার্যক্রম শুরু হলেও, আনুষ্ঠানিক ভাবে ১৯৮২ সালে জাতীয় উদ্যান হিসেবে এটি স্বীকৃতি পায়। জলে ভাসা পদ্ম দেখতে ছুটে যেতে পারেন এইখানে। উদ্যানের বিশালাকার কয়েকটি লেক, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পদ্মপুকুর। এই লেকটিতে পদ্মফুলের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য হৃদয়কাড়া। সেই সাথে অরণ্যের গাঢ় সবুজে জলের সমাহার এই উদ্যানের সৌন্দর্যকে করেছে অনন্য।

জাতীয় উদ্যান
নিজ মনে ঘুরে বেড়ানোর মত আনন্দ আর কি আছে কোথায়?

লেকগুলোতে নৌকায় ঘুরতে পারবেন, আবার ইচ্ছে করলে বড়শি দিয়ে মাছ ধরতেও পারবেন। সেই ব্যবস্থাও আছে, যদিও সেজন্য একটি নির্দিষ্ট অংকের অর্থ গুনতে হবে আপনাকে। ভাওয়াল বনে একসময় ছিল বাঘ, চিতা, কালোচিতা, হাতি, মেছোবাঘ, ময়ূরসহ নানা বন্যপ্রাণীদের মেলা। কালের বিবর্তনে এখন এ প্রাণীগুলোর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। বিলীন হয়ে গেছে গহীন বনের অস্তিত্বও। তবে এখনো এই বনে দেখা মেলে অল্প কিছু হরিণ, বানর, বন্যশুকর, শজারু, বনবিড়াল, কাঠবিড়ালী সহ প্রায় ১৩২ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর। যার মধ্যে ১৮ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৯ প্রজাতির সরীসৃপ, ৮৪ প্রজাতির পাখি ও ১১ প্রজাতির উভচর প্রাণী রয়েছে। এই উদ্যানের মূল বৃক্ষ শাল হলেও এখানে শনাক্ত করা হয়েছে ৫২টি পরিবার ও ১৪৭টি গোত্রের ৩৫৬ প্রজাতির উদ্ভিদ। এর মধ্যে জিগা, অর্জুন, আলই, মেহগনি, আকাশমনি, কড়ই, কাঠাল, আমলকি, হরিতকি, বহেরা ইত্যাদি বেশি পরিমাণে লক্ষ্য করা যায়। বর্তমানের শালগাছগুলো রোপন করা হয়নি। 

ঘুরতে আসা সকলের জন্য আরও আছে, প্রজাপতি বাগান, যেখানে দেখতে পারবেন নানা প্রজাতির রঙ বেরঙের প্রজাপতি! দু-একটা প্রজাপতি যদি আপনার কাঁধে নাই বসে, তাহলে এই ট্যুর যেন বৃথা! শুধু প্রজাপতি দেখেই কিন্তু শেষ নয়। আছে কচ্ছপ প্রজনন কেন্দ্র যেখানে দেখা মিলবে সব বয়সী কচ্ছপদের। সাথে আছে মিনি এক চিড়িয়াখানা। সমস্ত উদ্যানটা এক সাথে এক সময়ে দেখতে চাইলে রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান সাধারণত খোলা থাকে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। উদ্যানে প্রবেশ করতে আপনাকে দিতে হবে মাত্র ১০ টাকা। সাথে পাচ্ছেন নিরাপদে গাড়ি রাখার সুবিধা। 

ভাওয়াল রাজবাড়ি
ভাওয়াল রাজবাড়ি

ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান ঘুরে যদি সময় থাকে ঘুরে আসতে পারেন, ভাওয়াল রাজবাড়ি থেকে। ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান থেকে কেবল ১৫ কিলোমিটার দূরেই অবস্থিত এই জমিদার বাড়ি। অতীতের পাতায় একটু সময় কাটিতে আসতে ঘুরে দেখা জরুরী এই জমিদার বাড়ি। বিশাল এই জমিদার বাড়ি আসলেই যেন এক গোলক ধাঁধা। ঘুরতে ঘুরতে কখন যে হারিয়ে যাবেন কিনা সেই খেয়াল রাখতে হবে! এই জমিদার বাড়ির গল্প শোনানো হবে অলিগলি ভ্লগের অন্য এক পর্বে!!  

Write A Comment