বাসাবাড়ি বা যে কোন প্রপার্টি কেনার ক্ষেত্রে আমরা বেশ অনেক খরচ করি। এর পেছনে অবশ্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু কারণ বিদ্যমান। কোন প্রপার্টিতে বিনিয়োগ যেমন অনেক সম্ভাবনাময় ঠিক তেমনি এতে নিশ্চিত হয় একটি স্থায়ী ঠিকানাও। কিন্তু এই আধুনিক যুগে এসে এমন অনেক কিছুই হচ্ছে যা একসময় ছিল কল্পনাতীত। যেমন, ধরা যায় না ছোঁয়া যায় না, এমন রিয়েল এস্টেটের প্রতি মানুষ আগ্রহ দেখাচ্ছে এখন। এমনকি লক্ষ ডলার খরচ করে সেই প্রপার্টি কিনেও নিচ্ছেন অনেকে। আমাদের আজকে লেখা এমনই কয়েকটি ভার্চুয়াল প্রপার্টিতে বিনিয়োগ নিয়েই।
মনরিয়া, এন্ট্রোপিয়া ইউনিভার্স (Monria, Entropia Universe)
মাল্টিপ্লেয়ার অনলাইন গেমসের জনপ্রিয়তা অনেক আগে থেকেই ছিল শীর্ষে। এমনই একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় অনলাইন গেমস “এন্ট্রোপিয়া ইউনিভার্স”। কল্পিত বিভিন্ন আইডিয়ার উপরে ভিত্তি করে এই গেমসটি তৈরি। পৃথিবীর বাইরেও বিভিন্ন গ্রহ, নক্ষত্র এই গেমসের অন্তর্ভুক্ত। এই গেমসের প্লেয়ারেরা এসব স্থানে গিয়ে বিভিন্ন গুপ্তধন খুঁজে বের করেন সেখানে ঘাঁটি গেড়ে নগরায়নের চেষ্টা চালান। এসময় এসব স্থানে প্লেয়ারেরা বিভিন্ন বাসাবাড়ি, দোকানপাট এমনকি খনিও স্থাপন করেন বা আবিষ্কার করেন গেমসের ভেতরেই। “মনরিয়া” এই গেমসের ভেতরে থাকা একটি চাঁদের নাম। গেমসের ভেতরেই এই চাঁদ কেনাবেচা হয় কিন্তু তা সত্যিকার অর্থের বিনিময়েই। এমনকি এন্ট্রোপিয়া ইউনিভার্সে “পিইডি”(PED) নামক এক মুদ্রামানেরও প্রচলন আছে। ১০ পিইডি সমান ১ আম্রিকান ডলার। তো, মনরিয়া নামক চাঁদকে যখন বিক্রির জন্য নির্ধারন করা হয়, এর দাম ধরা হয়েছিল ২৫লক্ষ পিইডি বা আড়াই লক্ষ মার্কিন ডলার। শেষ পর্যন্ত ২০১৫ সালে জ্যাসন জার্ভিস নামধারী একজন ৯৫ হাজার ডলার বা প্রায় ৮০লক্ষ টাকা দিয়ে এই মনোরিয়াকে কিনে নেন। ৮০ লক্ষ টাকা ভার্চুয়াল প্রপার্টিতে বিনিয়োগ , ভাবা যায়!
ক্রিস্টাল প্যালেস, এন্ট্রোপিয়া ইউনিভার্স (Crystal Palace, Entropia Universe)
আমাদের তালিকায় পরবর্তীতে থাকা ভার্চুয়াল প্রপার্টিও সেই একই এন্ট্রোপিয়া ইউনিভার্সের। অনেকেই এই এন্ট্রোপিয়া ইউনিভার্সকে ভাবেন পৃথিবীর অন্যতম লাভজনক গেম। একারণেই ২০০৯ সালে বাজ “এরিক” লাইটইয়ার এই গেমের আরেকটি জায়গা, ক্রিস্টাল প্যালেস স্টেশন কিনে নেন ৩ লক্ষ ৩০ হাজার মার্কিন ডলারে। বাজ আসলে একটি বিশেষ নিলামের মাধ্যেমে এটি ক্রয় করেন এবং তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে অতি দ্রুতই তার এই ভার্চুয়াল প্রপার্টিতে বিনিয়োগ উঠে আসবে। তার ধারণা সত্যি ছিল। দশ বছর এটি থেকে লাভ করার পর তিনি এই ক্রিস্টাল প্যালেসকে “পাবলিকলি ওউন্ড অ্যাসেট” বা সহজ ভাষায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শেয়ারে ভাগ করে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে ১০পিইডি হল ১ মার্কিন ডলার সমমূল্যের। তিনি ৫ লক্ষ শেয়ারে এটি ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেন যার প্রতিটির মূল্য হবে ১০ পিইডি করে। অর্থ্যাৎ এর মূল্য দাঁড়ায় গিয়ে ৫লক্ষ ডলারে!
ক্লাব নেভারডাই, এন্ট্রোপিয়া ইউনিভার্স (Club NEVERDIE, Entropia Universe)
দেখে যেন মনে হয় এই এন্ট্রোপিয়া ইউনিভার্স গেমটি পুরোটাই যেন ভার্চুয়াল রিয়েল এস্টেটকে মাথায় রেখে বানানো। এবং আমাদের তালিকার শেষে থাকা এই ক্লাব নেভারডাই যেন দামের দিক থেকে সব কল্পনাকেও হার মানিয়েছে। জন “নেভারডাই” জ্যাকবস একে ১লক্ষ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে কিনে নেন। এজন্য তাকে তার নিজের “আসল” বাড়িটিকে বন্ধক পর্যন্ত রাখতে হয়। কিন্তু তার এই ঝুঁকি নেয়া ছিল সম্পূর্ণ সার্থক। এই বন্ধকী ঋণ শোধ করেই তিনি ক্ষান্ত দেন নি বরং সৃষ্টি করেছেন ইতিহাস। এই ক্লাব নেভারডাই পরবর্তীতে ৬ লক্ষ ৩৫ হাজার ডলারে বিক্রি হয়। ভার্চুয়াল প্রপার্টিতে বিনিয়োগ করে ৬ কোটি টাকা উপার্জন, কল্পনা নয় তো কী!
ভার্চুয়াল প্রপার্টিতে ভিনিয়োগ এখন আর কল্পনা নয়। অনেকেই এমন কল্পিত স্থানে বিনিয়োগ করে বিশাল লাভ করেছেন, এন্ট্রোপিয়া ইউনিভার্সই তার উদাহরণ। তবে এটুকু জেনেই হুট করে এন্ট্রোপিয়া ইউনিভার্সে ঝাপিয়ে পড়ে লাখ টাকা বিনিয়োগ করবেন না। যে কোন বিনিয়োগের জন্যই চাই পর্যাপ্ত জানাশোনা ও জ্ঞান। বিনিয়োগের জন্য ফলো করতে হয় নানা ট্রেন্ড। তাই যে কোন বিনিয়োগের আগে জেনে নিন বিস্তারিত।
এত কিছুর পরেও, ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না এমন কিছুতে লক্ষ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করা আসলেই নতুন কিছু। আপনার টাকা থাকলেও কি আপনি এমন কিছু করতেন? যেদি করতেন তাহলে নির্দিষ্টভাবে ঠিক কোথায় এই বিনিয়োগ করতেন? আমাদের কমেন্ট বক্সে তা জানিয়ে দিন।