Reading Time: 5 minutes

ভাড়া বাসা! মানেই রাজ্যের বিধি নিষেধ! এই করা যাবে না সেই করা যাবে না! দেয়ালে তাড়কাটা যেন বিঁধাতে না হয়! দেয়ালের রঙ নষ্ট যেন না হয়। রান্নাঘরে যেন ময়লা দাগ না পড়ে। এত কিছু নিয়ম কানুন কম বেশ সব ভাড়াটিয়ারই শুনতে হয়। এবং শুনেই শেষ নয় আমলও করতে হয়। এই কথা গুলো আমার জৈনেক বন্ধুর। সদ্য বিয়ে করা দম্পতি নতুন বাসা নিয়েছে। কোথায় একটু নিজের মনের মত করে ঘর সাজাবে শুনতে হয়েছে এইসব কথা। কোনরকম ক্ষয়ক্ষতি না করেই সাজিয়ে নিলেন। রান্নাঘরে কিন্তু ফাংশনাল অনেক ব্যাপার থাকে। সেগুলো কিভাবে ম্যানেজ করা যায় তাও আবার বাড়িওয়ালাকে নারাজ না করে! ভাড়া বাসার রান্নাঘর নিজের সুবিধামত সাজিয়ে নেওয়া সম্ভব। 

এডজাস্টেবল কেবিনেট ব্যবহার করুন এবং রঙ দিন ক্লাসিক সাদা-কালো

ওপেন কিচেন
দৈনন্দিন কাজে কেবিনেটের ভূমিকাও অনেক

রান্নাঘরের একটা বড় অংশ জুড়ে থাকে এই কেবিনেট। দৈনন্দিন কাজে কেবিনেটের ভূমিকাও অনেক। নিজের বাসা হোক কিংবা ভাড়া বাসা ঘরের সাজে মনের মত করে কেবিনেট লাগিয়ে নেওয়া সবারই সম্ভব। রান্নাঘর নিয়ে অনেকেই ভাবেন এখানে সাজানোর কি আছে? কিন্তু আমরা ভুলে যাইযে রঙের প্যাটার্ন ও টেক্সচা সম্বন্ধে। যেকোন ঘরকে সুন্দর করে রাঙিয়ে দিতে রঙ একাই বড় ভূমিকা পালন করে। ভাড়া বাসার কমন রঙ হচ্ছে সাদা, তাই আপনি সেই সূত্রে রান্নাঘরের রঙ সাদাই পাচ্ছেন। শুধু কেবিনেটটা কালো রঙ করে নিতে পারেন। আপনি চাইলে এডজাস্টেবল কাবিনেট ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে বাসা বদলের সময় আপনি সাথে করে নিয়েও যেতে পারছেন। সাদা রং শুভতা আনে আর কালো রঙের সাহায্যে সবকিছু ফুটে ওঠে আর যখন এই দুটি রঙ এক সাথে ব্যবহার হবে, তখন বলাই বাহুল্য রান্নাঘর কতটা সুন্দর হতে যাচ্ছে। আপনি চাইলে কেবিনেটের এক পাল্লা কালো আর অন্যপাল্লা সাদা কিংবা দুই পাল্লার প্রতিটা কেবিনেট সাদাকালো মিলিয়ে রাখতে পারেন। কিংবা সাদা রঙের কেবিনেটে কালো বর্ডারও দিতে পারেন। 

র‍্যাক ব্যবহার করুন 

র‍্যাক
প্রয়োজন মত এগুলো ব্যবহার করা যায় আবার গুছিয়েও রাখা যায়

নিত্যদিনের ব্যবহারের থালা, বাসন-কোসন, চামচ, গ্লাস রান্নাঘরে কিংবা খাবার টেবিলের ওপর  ছড়িয়ে-ছিটিয়ে না রেখে বরং ঝামেলা এড়াতে ঘরে আনতে পারেন র‍্যাক। বিভিন্ন ধরনের র‍্যাক কিনতে পাওয়া যায় মার্কেটে। কোনোটাতে শুধু প্লেট রাখা যায়, তো কোনোটাতে শুধু গ্লাস। আবার একই সঙ্গে প্লেট-গ্লাস-চামচ মোটামুটি সবকিছুই রাখা যায়, এমন র‍্যাকও আছে। সবকিছু যেটাতে রাখা যায় এটাই ভালো রান্নাঘরের জন্য। র‍্যাক ব্যবহারের ফলে প্লেট-বাটি সাজিয়ে রাখলে সেগুলো যেমন নিরাপদে থাকে, তেমনি জায়গাও কম লাগে। প্রয়োজন মত এগুলো ব্যবহার করা যায় আবার গুছিয়েও রাখা যায়। আর এ জন্য এই র‍্যাকের চাহিদাও বেশি। রান্নাঘর র‍্যাক ছাড়া ভাবাই যায়না। প্লাস্টিক, স্টেইনলেস স্টিল এবং লোহা তিন ধরনের উপাদান দিয়ে তৈরি র‍্যাক পাওয়া যায়। প্লাস্টিকের র‍্যাকের দাম স্বাভাবিকভাবেই কম। তবে র‍্যাকে ধাপ যত বাড়বে, দামও তত বাড়তে থাকবে। হরেক রকমের প্লাস্টিকের র‍্যাক দেখতে যেমন সুন্দর, তেমন মজবুতও। ১০০ থেকে শুরু করে ৬০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো। স্টেইনলেস স্টিলের র‍্যাক পাওয়া যাচ্ছে ৮০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০০ টাকা দামের মধ্যে। লোহার র‍্যাক পাওয়া যাবে বিভিন্ন আয়রন রড ফার্নিচারের দোকানে। আকার অনুসারে লোহার র‍্যাকগুলো দাম বিভিন্ন ধরনের। তবে তা ৫০০০ টাকার বেশি নয়।

পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা 

রান্নাঘর পরিষ্কার করা
রান্নাঘরের খুঁটিনাটি পরিষ্কার করা

এই মজাদার খাবার যেখানে তৈরি হয় সেটারও কিন্তু আপনার ভালোবাসা আর মনোযোগের প্রয়োজন, তাই নয় কি! যেহেতু দিনের বেশিরভাগ সময় আপনি সেখানে কাটান কেননা আমরা রান্নঘরের একটু যত্ন করি! কিভাবে ভাবছেন? পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রেখে। এখন হয়তো আবার ভাবছেন রোজই তো পরিষ্কার করি আর কিভাবে করবো? তাহলে বলব, রান্নাঘরের খুঁটিনাটি পরিষ্কার করা। কোন ময়লা, দাগ ও দুর্গন্ধ না হয়। কিংবা রান্নাঘরের পুরনো দাগ কিভাবে দূর করবেন সে সম্বন্ধেও জানতে পারবেন। রান্নাঘর পরিষ্কার রাখার কয়েকটি জাদুকরী টিপস আছে, যেগুলো ব্যবহার করে আপনার রান্নাঘর হয়ে উঠবে ঝকঝকে তকতকে। ভাড়া বাসায় যখন থাকছেন তখন পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার উপর দিতে হবে কড়া নজর। কেননা যখন আপনি বাসা ছাড়বেন তখন যাতে বাসার বেশি ক্ষয় ক্ষতি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। রান্নাঘরের কুকিং অ্যাপ্লায়েন্সগুলোর প্রতি নজর রাখুন ভালো ভাবে। নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে নাহলে পুরো রান্নাঘরই নোংরা মনে হবে। 

কিচেন রেঞ্জ হুড

কাস্টম বিল্ট রেঞ্জ হুড
আকার এবং নকশা কাস্টমাইজ করে নিতে পারেন

আপনার আধুনিক রান্নাঘরের জন্য রেঞ্জ হুড এমন একটি উপকরণ যেটা ছাড়া কিচেন ডেকোর অনেকটাই অপূর্ণ রয়ে যায়! আর আমরা সবাই জানি কিচেন রেঞ্জ হুড এর কার্যকারিতা সম্বন্ধে। আপনি যখন রান্না করেন চুলা জালানোর জন্য ক্রমাগত ধোঁয়া এবং বাষ্প তৈরি হয়, পাশাপাশি গ্রীজ এবং অন্যান্য পদার্থগুলি আপনার রান্নার জায়গার চারপাশের বায়ু দূষণ করে তোলে। ভাড়া বাসায় কিচেন রেঞ্জ হুড নিজের পছন্দমত হয়তো ব্যবহার করা যাবে না কিন্তু যদি সুযোগ থাকে তাহলে কোনটা বেছে নিবেন??? অনেকে আছেন যারা পুরো রেঞ্জ হুড না কিনে বায়ু নির্গমনের জন্য ফ্যান ব্যবহার করা পছন্দ করেন। এছাড়াও ভাড়া বাসায় বাড়িওয়ালা আগে থেকেই এই ফ্যানগুলো লাগিয়ে দিয়ে থাকেন। তারপরও যদি এমন ব্যবস্থা না থাকে সেক্ষেত্রে, আপনাকে যা করতে হবে তা হল আপনার রান্নাঘরের দেয়ালে বা জানালায় ফ্যান লাগিয়ে নিতে হবে। এই ফ্যানগুলোর সাহায্যে আপনি রান্নাঘরের তৈরি হওয়া ধোঁয়া দূর করতে পারবেন কিন্তু অন্য কোন কাজ তেমন একটা করতে পারবেন না। আপনার বাড়িওয়ালা যদি আপনাকে একটু পছন্দ করে থাকেন বা ভাড়া বাসাতে একটু নিজের মত করে বানিয়ে নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়ে থাকে তাহলে, কাস্টম বিল্ট রেঞ্জ হুড বেছে নিতে পারেন। সাধারণত কম স্পেসেই এটা বসিয়ে নেওয়া যায়। কিচেন স্পেস যখন কম তখন আপনার ভাবতে হবে এই কম স্পেসে কিভাবে সবকিছু ঠিকঠাক আঁটানো যায়। দেয়ালের উপরের অংশ যতটুক সম্ভব ব্যবহার করুন। যারা তাদের রান্নাঘরের নকশা বা ইন্টেরিয়ের সম্পর্কে সচেতন, তারা মূলত কাস্টম লুকের রেঞ্জ হুডগুলো ভীষণ পছন্দ করেন। রেঞ্জ হুডের প্রভাব রান্নাঘরের ডেকোরের জন্য বেশ কার্যকরী। অন্যদিকে, আপনি নিজের প্রয়োজনীয়তা হিসাব করে আকার এবং নকশা কাস্টমাইজ করে নিতে পারেন। কিচেন যে মাপেরই হোক না কেন, আপনি নিজের মত করে সাজিয়ে নিতে পারছেন। ভাড়া বাসার রান্নাঘর হলেও পাবেন নিজের স্বাচ্ছন্দ্যবোধ। 
এবার পালা ডেকোরের! রান্নাঘরের জন্য খুব বেশি ডেকোর প্রয়োজন হয় না। কেননা, আপনি যখন উপরের টিপসগুলো ফলো করবেন তখন নিজেই দেখবেন রান্নাঘর আগের থেকে বেশ অন্যরকম লাগছে। এই টিপসগুলো ভাড়া বাসার রান্নাঘর এর চেহারা বদলে দিতে পারে। রান্নাঘর সাজাতে খুব বেশি কিছু আপনাকে করতে হবে না। হালকা লাইটিং এর দিকে খেয়াল করলেন, কিছু ফটোফ্রেম  দেয়ালে ঝুলিয়ে দিলেন। রান্নাঘরের আমেজ বদলাতে তাজা ফুল রাখতে পারেন। একটু গান শোনার ব্যবস্থা করলেন। কুকিং টাইমটা যেন বোরিং না লাগে! সারাদিনের পর যখন রান্না করতে আসলেন সে সময়টাও কিন্তু আনন্দের হওয়া চাই। এইতো আর কি লাগে বলুন? কিচেন ডেকোর এখন আরও সহজ হয়ে গেছে ৫০০০ টাকার ভেতর রান্নাঘর বদলে ফেলতে পারবেন। আরও জানতে চোখ রাখুন বিপ্রপার্টির ব্লগে।

Write A Comment