Reading Time: 3 minutes

Land Reclamation নামের ইংরেজি শব্দটির শাব্দিক অর্থ শুধুমাত্র ভূমি পুনরুদ্ধার হলেও, বৃহৎ অর্থে এর ব্যাপ্তি অনেক। সমুদ্র, নদী, খাল বা যে কোন জলমগ্ন ভূমি পুনরুদ্ধার করে তাকে মানুষের ব্যবহার উপযোগী করে তোলা, বিশেষ করে কৃষিকাজের জন্য প্রস্তুত করার একটি বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ই হল এই ল্যান্ড রিক্লেম্যাশন। এটি কী, কেন করা হয়, এর প্রয়োজনীয়তাই বা কী, আমাদের দেশের জলমগ্ন ভূমি পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা কেমন, এসব নিয়ে আমাদের এই লেখা।

জলমগ্ন ভূমি পুনরুদ্ধার কী?

এটি মূলত একটি বিশেষ ধরণের বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া। যে কোন জলামগ্ন ভূমি, লেক, নদী কিংবা সমুদ্র থেকে অগভীর অংশ পুনরুদ্ধার করে তা ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হয়। মূলত এই প্রক্রিয়ার সেচ অথবা ড্রেনেজ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, আবার ল্যান্ডফিলও ব্যবহার করা হয় অনেক ক্ষেত্রে। শুধু মাত্র প্রাকৃতিক কারণে জলমগ্ন ভূমি নয়, বরং কোন দুর্যোগ, কিংবা মনুষ্যসৃষ্ট কারণেও অনেক প্রয়োজনীয় জমি ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হয় এই পদ্ধতির মাধ্যমে।  

কেন ল্যান্ড রিক্লেমেশন করা হয়?লাল মাটি

পৃথিবীর অর্ধেকেরও বেশি অংশ পানিতে নিমোজ্জিত। দিনে দিনে মানুষ যেমন বাড়ছে তেমনি বাড়ছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উপর মানুষের দখল। তাই বাড়তি প্রয়োজনের চাহিদা মেটাতে মানুষ ছুটছে নতুন নতুন উপায়ের দিকে। আর নদী, খাল বা সমুদ্রের অগভীর অংশে থাকা মাটি যেমন উর্বরর তেমনি একে পানির তোলা থেকে উদ্ধার করে মানুষের নিজের কাজে ব্যবহার করার মত প্রযুক্তিগত সক্ষমতাও চলে এসেছে মানুষের হাতের মুঠোয়। তাই এমন ল্যান্ড রিক্লেমেশনের মত ব্যাপারগুলো নিয়মিতই ঘটে চলেছে। 

কীভাবে এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন হয়?

এটি আসলেই একটি অতি বিশাল কর্মযজ্ঞ। এর মূল আইডিয়া দুটি, হয় চারিদিকে বাঁধ দিয়ে ভেতর থেকে পানি সেঁচে ফেলা। তবে এর চেয়ে অধিক কার্যকর ও জনপ্রিয় মেথড হল যে ভূমি পূনরুদ্ধার করা হবে, সেখানকার উচ্চতা বাড়িয়ে সাধারণ জমির লেভেলে নিয়ে আসা। সোজা বাংলায় এ হল নতুন জমি সৃষ্টি। তাই বিশাল একটি অঞ্চলকে প্রথমে কল্পনাতীত পরিমাণে পাথর বা সিমেন্ট দিয়ে ভোরে ফেলা হতে থাকে। এরপর এর সাথে যুক্ত হয় কাদামাটি, যতক্ষণ পর্যন্ত না কাঙ্ক্ষিত লেভেল পর্যন্ত উচ্চতা না পাওয়া যায়।  

এ পদ্ধতি প্রয়োগে পৃথিবীর কয়েকটি সফল উদাহরণনদীর তীর

পুরোপুরি প্রফেশনাল লেভেলে ভূমি পুনরুদ্ধার করার উদাহরণ যে পৃথিবীর জন্য খুব পুরাতন, তেমন কিন্তু নয়। সর্বপ্রথম নেদারল্যনান্ডস ১৯৭০ সালে বড় স্কেলে ল্যান্ড রিক্লেমেশনের কাজ করে, তাদের একটি বন্দরের সম্পরসারণের সময়। এরপর ১৯৭৫ সালে সিংগাপুর বিশাল একটি সফল ভূমি পুনরুদ্ধার প্রকল্প হাতে নেয় এবং শেষ করে। দেশটির পশ্চিমপ্রান্তে থাকা চাংগি বিমানবন্দরের সম্প্রসারণে তাঁরা প্রায় ৪ কোটি ঘনমিটার ভূমি সমুদ্রের তলদেশ থেকে পুনরুদ্ধার করে। এছাড়া হংকং, জাপান, চায়না, সংযুক্ত আরব আমিরাত ইত্যাদি দেশেরও জলমগ্ন জমি উপযোগী করে তোলার রেকর্ড আছে। 

জলমগ্ন ভূমি পুনরুদ্ধার নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান

সমুদ্রের গড় উচ্চতা বাড়ায় বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে ঝুকিপূর্ণ দেশের মধ্যে একটি এখন। এছাড়া প্রাকৃতিকভাবেই নদীভাঙ্গন ও অন্যন্য ক্ষয়ে প্রায় ২০০০০ একর জমি নষ্ট হয়ে যায়। তাই যেভাবে সম্ভব আমাদের নতুন ভূমির জন্য চেষ্টা করতে হবে। এক্ষেত্রে জলমগ্ন ভূমি পুনরুদ্ধার হতে পারে ভাল একটি অপশন।  বাংলাদেশে অতীতে এমন অনেক প্রকল্প নেয়া হয়েছে, ভবিষ্যতেও নেবার পরিকল্পনা চলছে। বাংলাপিডিয়ার দেয়া তথ্যমতে দেশের বৃহৎ এমন দুটি প্রকল্প হল মেঘনা ক্রস ড্যাম ১ ও ২। নোয়াখালি ও রামগতির মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত মেঘনা নদীতে ড্যাম বা বাধ নির্মাণ করে প্রথম বিশাল অংশের ভূমি পুনরুদ্ধার করা হয়। এরপর এর বিস্তৃতি গিয়ে থেকে বঙ্গোপোসাগরে। বাংলাদেশ সরকারের তথ্যমতে দেশে ১হাজার বর্গকিলোমিটারেরও বেশি ভূমি এই উপায়ে পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। এই প্রযুক্তির শুরু যাদের হাত ধরে, সেই নেদারল্যান্ডের সাথেও বাংলাদেশের বিশেষ চুক্তি হয়েছে, দেশে এই পদ্ধতি প্রয়োগ সংক্রান্ত সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা, পরিকল্পনা এবং এর প্রয়োগের বিভিন্ন দিক নিয়ে। 

বাংলাদেশের বেশ ভাল সম্ভাবনাময় একটি দিক হতে পারে সঠিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে উপযুক্ত পরিমাণ ভূমি পুনরুদ্ধার করা গেলে। বাংলাদেশের পানিসম্পদ মন্ত্রীর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে জানা যায় যে আগামী ২০ বছরে ১০হাজার বর্গকিলোমিটার ভূমি এভাবে পাবার পরিকল্পনা বাংলাদেশের আছে। আমরাও আশা করি সে পরিকল্পনা সফলতার মুখ দেখবে কেননা তা হলে সেটি সমগ্র দেশের জন্যই হবে ভাল।  এরূপ বিভিন্ন ধরণের লেখা পড়তে চোখ রাখুন বিপ্রপার্টি ব্লগে

Write A Comment