নিজের কোন স্থাবর সম্পত্তি জমা রেখে তার বিপরীতে নেয়া অর্থঋণকেই বলা হয় বন্ধকী ঋণ বা মর্টগেজ। মূলত, প্রপার্টি ক্রয় বা বিক্রয়ের ক্ষেত্রে নিজের ফান্ডকে সুরক্ষিত রাখতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল একটি দিক হচ্ছে মর্টগেজ। উদাহরণস্বরূপ, ধরুন আপনি বাড়ি বা কোনো প্রপার্টি কেনার জন্য ব্যাংক বা যে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে লোন নিতে চাচ্ছেন। এক্ষেত্রে লোনটি পেতে আপনার একটি স্থাবর সম্পত্তি ব্যাংকের কাছে জমা রাখতে হবে। প্রপার্টি কেনার জন্য লোন নেয়ার এই প্রক্রিয়াই আসলে মর্টগেজ বা বন্ধকী ঋণ। আর এই প্রক্রিয়াটি কিছুটা জটিল বলেই, আমাদের সবার মাঝেই মর্টগেজ নিয়ে সাধারণ কিছু জিজ্ঞাসা থাকে। আর সেইসব জিজ্ঞাসার সহজ উত্তর পেতে পড়তে থাকুন আজকের লেখা।
আমি কেন মর্টগেজ লোন নেবো?
উত্তরটা কিন্তু খুবই সহজ। মর্টগেজ লোনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, যে প্রপার্টির বিপরীতে আপনি লোন নিচ্ছেন সেটি আপনাকে বিক্রি করতে হবে না। লোন পরিশোধ হয়ে গেলেই প্রপার্টির মালিকানা আপনি ফেরত পাচ্ছেন। বাড়ি, নির্মাণ বা ফ্ল্যাট কেনার মত গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগের জন্য মর্টগেজ তাই দারুণ একটি অপশন।
মর্টগেজের প্রক্রিয়াটি কীভাবে শুরু করব?
একটি প্রপার্টি কেনার প্রক্রিয়ায় প্রথম ধাপগুলোর মধ্যে অন্যতম ধাপটি হল মর্টগেজ। এবং এক্ষেত্রে মর্টগেজ এর জন্য সঠিক ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান খুঁজে বের করা হচ্ছে আপনার মর্টগেজকে সুরক্ষিত করার পরবর্তী পদক্ষেপ। এক্ষেত্রে সঠিক ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান খুঁজে পেতে প্রথমেই কিছু ওয়েব রিসার্চ করে নিন। ইন্টারনেটে আপনি প্রায় সকল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মর্টগেজ নেয়ার শর্ত, ইন্টারেস্ট রেট সহ মর্টগেজ সংক্রান্ত অন্যান্য তথ্য সহজেই পেয়ে যাবেন। এবার শীর্ষ ব্যাংকগুলোর মধ্য থেকে যাচাই বাছাই করে কয়েকটি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে শর্টলিস্ট করুন। ঝুঁকি, নিরাপত্তা, প্রতিষ্ঠানটির গ্রহণযোগ্যতাসহ অন্যান্য সব দিক বিচার করে আপনার সুবিধামত সেরা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি নির্বাচন করুন। এজন্য সবচেয়ে ভালো হয়, যদি মর্টগেজ বিষয়ে অভিজ্ঞ কারো পরামর্শ নিতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, বিপ্রপার্টিতে প্রপার্টি কেনা-বেচায় মর্টগেজ সল্যুশন দিতে রয়েছে হোমলোন এক্সপার্ট। আপনি চাইলে সরাসরি বিপ্রপার্টিতে যোগাযোগ করে মর্টগেজ সংক্রান্ত পরামর্শ খুব সহজেই নিতে পারবেন।
আমি কি মর্টগেজ লোন পেতে উপযুক্ত?
মর্টগেজ নিয়ে সাধারণ কিছু জিজ্ঞাসা এর মধ্যে অন্যতম জিজ্ঞাসাটি হচ্ছে, “আমি কি লোন পেতে উপযুক্ত?” আসলে সে কোনো লোন প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে লোন নিতে হলে, আপনার নির্ধারিত কিছু যোগ্যতা থাকতে হবে। আবার বিভিন্ন ধরনের হোমলোন এর জন্য যোগ্যতার মাপকাঠি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ভেদে হতে পারে ভিন্ন ভিন্ন। তবে, সাধারণ যে যোগ্যতাগুলো প্রায় সব ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানই যাচাই করে থাকে তা হচ্ছে, মর্টগেজ লোনের জন্য আবেদনকারীকে উপার্জনক্ষম হতে হবে এবং আবেদনকারীর বয়স ২১ বছর বা তার বেশি হতে হবে।
এই দুইটি মুখ্য বিষয় ছাড়াও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখতে হয় বন্ধকী লোন বা মর্টগেজ নেওয়ার সময়। যেমন আপনি যদি চাকুরিজীবী হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার কোম্পানিটি কী ধরনের, সেটি মর্টগেজ নেয়ার ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রাখে। কোম্পানির ধরন বলতে বুঝাচ্ছি, কোম্পানির ফিক্সড অ্যাসেট, কর্মী সংখ্যা, ব্যবসায়ের সময়সীমা সহ আরো অন্যান্য বিষয়। এছাড়াও, আপনার মাসিক আয়, বিনিয়োগ, ক্রেডিট স্কোর, সঞ্চয়, চাকরির অভিজ্ঞতার সময়সীমা, প্রপার্টির মূল্য সহ এমন আরো অনেক বিষয়কে ব্যাংক লোন দেয়ার ক্ষেত্রে বিবেচনায় নিয়ে থাকে।
অর্থাৎ, আপনার কোম্পানি যদি টপ ক্যাটাগরিতে পড়ে থাকে তাহলে মর্টগেজ প্রক্রিয়া আপনার জন্য অনেক সহজ হয়ে যাবে। দ্বিতীয়ত, কোম্পানিতে আপনার কর্মসংস্থানের সময়কালও এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি আপনার চাকরিতে যত বেশি সময় থাকবেন, মর্টগেজ পাওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি হবে। এবং অবশেষে, আপনার মাসিক আয়, বিনিয়োগ, ক্রেডিট স্কোর, সঞ্চয়, সবই ঋণদাতার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করবে।
মর্টগেজ লোন নিতে কী কী ডকুমেন্ট লাগবে?
বাংলাদেশে হোম লোন পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলো ক্রেতা অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাধারণ কিছু ডকুমেন্ট থাকে যা, সব ক্রেতার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। বিশেষত, আপনি যখন মর্টগেজের জন্য আবেদন করবেন তখন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি কিছু প্রাথমিক কাগজপত্র আপনার কাছে চাইবে। আপনার সুবিধার জন্য আবেদন করার সময় জমা দিতে হবে এমন ডকুমেন্টের তালিকা নিচে দিয়ে দেয়া হল-
সাধারণ ডকুমেন্ট যা সবার জন্য প্রযোজ্য
- গত ১ বছরের হালনাগাদকৃত ব্যাংক স্টেটমেন্ট
- হালনাগাদকৃত ট্যাক্স ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
- গ্যারান্টর এর ক্রেডেন্সিয়াল
- জাতীয় পরিচয়পত্র/পাসপোর্ট এর কপি (আবেদনকারী ও গ্যারান্টর এর)
- ইউটিলিটি বিলের কপি
- সঞ্চয়/বিনিয়োগ এর কপি (যদি থাকে)
এছাড়াও, আবেদনকারীর ধরন অনুযায়ী আপনাকে আরও কিছু ডকুমেন্ট সাবমিট করতে হবে।
বেতনভুক্ত ব্যক্তি হলে,
- লেটার অব ইন্ট্রুডাকশন (এলওআই)
- হালনাগাদকৃত গত ১ বছরের স্যালারি সার্টিফিকেট
ব্যবসায়ী হলে,
- গত ৩ বছরের ট্রেড লাইসেন্স
- গত ১ বছরের হালনাগাদকৃত ব্যাংক স্টেটমেন্ট
- পার্টনার কোম্পানির ক্ষেত্রে রেজিস্টার্ড পার্টনারশিপ ডিড
- আইএমওএ এবং সার্টিফিকেট অব ইনকোর্পোরেশন
স্বনিযুক্ত ব্যক্তি (ডাক্তার, স্থপতি এবং এ ধরনের অন্যান্য) হলে,
- সংশ্লিষ্ট প্রফেশনাল এসোসিয়েশনের মেম্বারশিপ সার্টিফিকেট
- সিল সহ সেলফ-প্যাড এর ডিক্লেয়ারেশন
- প্রফেশনাল ডিগ্রির সার্টিফিকেট
প্রপার্টি সংক্রান্ত ডকুমেন্ট
- ডিড অব এগ্রিমেন্ট
- রাজউক অনুমোদিত প্ল্যান
- অ্যাপার্টমেন্ট বুকিং সংক্রান্ত ডকুমেন্ট
- রেজিস্ট্রেশনের কপি (প্রযোজ্য হলে)
- প্রয়োজন অনুসারে সংশ্লিষ্ট সকল আইনী ডকুমেন্ট
মর্টগেজ লোন পেতে কত সময় লাগে?
মর্টগেজ নিয়ে সাধারণ কিছু জিজ্ঞাসা এর মধ্যে সাধারণ মানুষের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ জিজ্ঞাসা হলো, মর্টগেজ লোন এর অনুমোদন পেতে আসলে কত সময় লাগে। আসলে মর্টগেজ লোনের জন্য আবেদন ও এর অর্থায়ন পাওয়ার সময়সীমা নির্ভর করে ঋণ দাতার উপর। এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ভেদে এ সময়সীমাও ভিন্ন হতে পারে। তবে একটি ভালো মানের ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান সাধারণত আবেদন করার ৩০-৩৫ দিনের মধ্যেই তার ফান্ড থেকে লোন দিতে পারে।
মর্টগেজ লোন পেতে কেন দেরি হচ্ছে, তার কারণ অনুসন্ধান আসলে একটি জটিল বিষয়। নানা কারণে লোন এর অনুমোদন পেতে আপনার দেরি হতে পারে। এক্ষেত্রে লোন দাতার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখলে এবং আর কোনো ডকুমেন্ট প্রয়োজন কিনা জেনে নিয়ে তা সরবারহ করলে, লোন পাওয়ার প্রক্রিয়াটি আরও দ্রুততর হবে বলে আশা রাখা যায়।
মর্টগেজ নিয়ে সাধারণ কিছু জিজ্ঞাসা কী কী ও এর সঠিক সমাধান কীভাবে আসবে, নিশ্চয়ই লেখাটি পড়ে আপনি বুঝতে পেরেছেন। তবে, এটাও সত্যি যে কাগজে কলমে সব ঠিক থাকার পরেও মর্টগেজ এর এই প্রক্রিয়াটিতে দেখা দিতে পারে নানা জটিলতা। আর এতসব জটিলতায় না পড়ে আপনি যদি সহজে ও দ্রুততর সময়ে মর্টগেজ লোন পেতে চান তাহলে কিন্তু যোগাযোগ করতে পারেন বিপ্রপার্টিতে। আমাদের পার্টনার ব্যাংকগুলো থেকে বিশেষ হোমলোন সুবিধা দিতে আপনাকে সহায়তা করতে রয়েছে আমাদের মর্টগেজ এক্সপার্ট টিম। তারপরও আপনার এ সংক্রান্ত আরও যদি কোনো জিজ্ঞাসা থাকে, তাহলে লিখে জানান কমেন্টে।