Reading Time: 5 minutes

আবাসন ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ঢাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা সমূহের মধ্যে মহাখালী বিশেষভাবে পরিচিত। হাসপাতাল এবং গবেষণা কেন্দ্রের জন্য ঢাকার এই এলাকাটিতে রয়েছে বেশ কিছু হাসপাতাল। এছাড়া রেসিডেন্সিয়াল এবং কমার্শিয়াল ভবনের জন্য মহাখালী এলাকাটি জুড়ে রয়েছে উন্নতমানের আবাসন ব্যবস্থা এবং অফিস স্পেস। তবে অসাধারণ ব্যবস্থাপনায় গড়ে ওঠা মহাখালী ডিওএইচএস এলাকাটি এর পরিপাটি এবং ছিমছাম ব্যবস্থাপনার জন্য বরাবরই থাকে পছন্দের শীর্ষে। অন্যদিকে এই এলাকার সেন্ট্রাল জোনটি পরিচিত কমার্শিয়াল এবং সেবা বিষয়ক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য। আর তাই আজকের ব্লগে আমরা মহাখালীর হাসপাতাল সমূহ এর মধ্য থেকে কয়েকটি সম্পর্কে আপনাদের ধারণা দেয়ার চেষ্টা করবো। যেন এ সকল হাসপাতালের সেবা এবং এগুলো কেন বিশেষভাবে পরিচিত সে সম্পর্কে আপনারও ধারণা থাকে এবং প্রয়োজনের সময় আপনি এই মহাখালীর হাসপাতাল সমূহ থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে পারেন।     

জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল  

জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল
জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এর প্রবেশপথ

এই হাসপাতালটি ১৯৫৫ সালে টিবি হাসপাতাল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে ১৯৬২ সালে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল বা এনআইডিসিএইচ। বক্ষব্যাধি চিকিৎসার জন্য শুধু ঢাকার মহাখালীতেই নয়, বাংলাদেশের মধ্যে এটি অন্যতম সুপরিচিত একটি হাসপাতাল। চিকিৎসা সেবা দেয়ার পাশাপাশি গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবেও এই হাসপাতাল কাজ করে যাচ্ছে। 

শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত যেকোনো চিকিৎসার জন্য ঢাকার প্রধান হাসপাতাল গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। এই হাসপাতালে মোট ৭টি বিভাগ রয়েছে। এগুলো হল- রেসপিরেটরি বিভাগ, থোরাসিক সার্জারি, রেডিওলজি এবং ইমেজিং বিভাগ, প্যাথলজি ও মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন, ফিজিক্যাল মেডিসিন এবং রিহেবিলিটেশন। 

এছাড়া এই হাসপাতাল বিভিন্ন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং প্রশিক্ষণ সুবিধা প্রদান করে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে  যক্ষ্মা ও বক্ষব্যাধিতে ডিপ্লোমা (ডিটিসিডি), এমডি (চেস্ট), এমএস (থোরাসিক সার্জারি), এফসিপিএস (পালমোনারি), এফসিপিএস (থোরাসিক সার্জারি)। 

মহাখালীর হাসপাতাল সমূহ এর মধ্যে এই হাসপাতালে ইনডোর ও আউটডোরে রোগী দেখার ব্যবস্থা সহ জরুরি এবং ডায়াগনস্টিক সুবিধা রয়েছে। প্রায় ৬৮৫ জন রোগীর থাকার ব্যবস্থা রয়েছে এই হাসপাতালে। এর মধ্যে নন-টিউবারকুলার বক্ষব্যাধি রোগীদের জন্য ১৭০টি শয্যার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া পালমোনারি যক্ষ্মা রোগীদের জন্য ৩৩০টি, হাঁপানি রোগীদের জন্য হাঁপানি কেন্দ্র ভবনে ৮৫টি এবং এমডিআর টিবি রোগীদের জন্য ৭০টি শয্যা সংরক্ষিত রয়েছে।

বক্ষব্যাধি এবং টিবি রোগে যারা ভুগছেন, তারা উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা পেতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই হাসপাতালে চলে আসেন। কেননা বাংলাদেশে জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালই একমাত্র, যেখানে রেসপিরেটরি চিকিৎসার জন্য অত্যাধুনিক মেডিকেল সুবিধা এবং সার্জারির সরঞ্জামের ব্যবস্থা রয়েছে।    

যোগাযোগের তথ্য- 

ঠিকানা- মহাখালী, ঢাকা, বাংলাদেশ 

ফোন- ৮৮-০২-৫৫০৬৭১৩১ – ৪০

ফ্যাক্স- ৮৮-০২-৫৫০৬৭১৪৬

ইমেইল- nidch@hospi.dghs.gov.bd

জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল

জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল

জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এর যাত্রা শুরু হয় ১৯৮২ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টিনশেড ভবনে। চার বছরের মধ্যেই অর্থাৎ, ১৯৮৬ সালে হাসপাতালটিকে মহাখালীর বর্তমান স্থানে স্থানান্তরিত করা হয় এবং এর পর থেকে এই হাসপাতালকে ঘিরে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় ।

২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) এর সহায়তায় জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এর শয্যা সংখ্যা ৩০০ -তে বাড়ানো হয়, যা কিনা মহাখালীর অন্যতম প্রযুক্তিগত ভাবে উন্নত একটি হাসপাতাল।

মহাখালীর হাসপাতাল সমূহ এর মধ্যে এটি বর্তমানে দেশের সবচেয়ে উন্নতমানের ক্যান্সার গবেষণা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এই গবেষণা কেন্দ্রে রেডিয়েশন অনকোলজি, মেডিকেল অনকোলজি, সার্জিক্যাল অনকোলজি, গাইনোকোলজিক্যাল অনকোলজি, পেডিয়াট্রিক হেমাটোলজি এবং অনকোলজি সহ মোট ২৪টি বিভাগ রয়েছে।

এছাড়াও, হাসপাতালটি নিয়মিত ক্যান্সার বিষয়ে গবেষণা পরিচালনা করছে এবং ক্যান্সার-সম্পর্কিত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে সব ধরনের আধুনিক চিকিৎসা সুবিধার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আর এ সকল কারণেই দীর্ঘ সময় ধরে দেশের মানুষ ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য এ হাসপাতালের উপর নির্ভর করে আসছে।

যোগাযোগের তথ্য- 

ঠিকানা- মহাখালী, টিবি গেট রোড ঢাকা, বাংলাদেশ 

ফোন- (+৮৮)০২৭৯১৩৯৭৫, (+৮৮)০২৭৯১৪৪০৯ 

ফ্যাক্স- +৮৮৪৬৬৫৫৪৬৫৪ 

ইমেইল- Info@Nicrh.Gov.Bd 

ন্যাশনাল সেন্টার ফর হিয়ারিং অ্যান্ড স্পিচ ফর চিলড্রেন 

ন্যাশনাল সেন্টার ফর হিয়ারিং অ্যান্ড স্পিচ ফর চিলড্রেন
ন্যাশনাল সেন্টার ফর হিয়ারিং অ্যান্ড স্পিচ ফর চিলড্রেন

এই ইনস্টিটিউটটি মূলত সাহিক এর একটি প্রকল্প, যা ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং উদ্বোধন করা হয়। শ্রবণশক্তির অবস্থা দ্রুত শনাক্তকরণের জন্য ইয়ারমোল্ড প্রস্তুত সহ, শ্রবণযন্ত্রের ফিটিং এবং বহিরাগত রোগী বিভাগে সকল ধরনের ইএনটি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে রয়েছে বিশেষ সুবিধা। মাত্র ১০০ টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি জমা দিয়ে এই হাসপাতাল থেকে আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা পাওয়া সম্ভব, যে রেজিস্ট্রেশনটি ৩০ দিনের জন্য কার্যকর থাকবে। শ্রবণ পরীক্ষা এবং হিয়ারিং এইড লাগানোর জন্য এই হাসপাতালের চার্জ সমূহও বেশ সাশ্রয়ী।

যারা আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল, সেসকল রোগীদের এই হাসপাতালে বিনামূল্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা এবং চিকিৎসা দেয়া হয়। তবে যাদের সামর্থ্য আছে তারা ২০০ টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি (ফাস্ট ট্র্যাক) দিয়ে ৩০ মিনিটের মধ্যে এবং ৪০০ টাকা (এক্সিকিউটিভ ফাস্ট ট্র্যাক) দিয়ে ১৫ মিনিটের মধ্যে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে পারেন।

তবে যাদের অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয় তাদের জন্য, সেন্টার বিল্ডিংয়ের প্রথম তলায় আধুনিক সরঞ্জাম সহ ৮টি কেবিন এবং ২০টি সাধারণ শয্যার ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়া কোক্লিয়ার ইমপ্লান্ট সহ কান, নাক, গলা, মাথা এবং ঘাড়ের মাইক্রোসার্জারির সব ধরনের সুবিধা রয়েছে এই হাসপাতালে।

যোগাযোগের তথ্য- 

মহাখালী হেলথ কমপ্লেক্স, মহাখালী, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ 

ফোন- +৮৮০২২২২২৮২০০৭, ০২২২২২৮১৫৩৫, ০২২২২২৮৬৫৩৭  

মোবাইল- ০১৭৫৪৮৬৭১৮৮ 

ইমেইল- solaris.dhaka@gmail.com 

সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, ঢাকা

সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, ঢাকা
সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল

এই হাসপাতালটি ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই হাসপাতালে ডিপথেরিয়া, টিটেনাস, হাম, এইডস, জলাতঙ্ক, টাইফয়েড জ্বর, চিকেনপক্স, ভাইরাল হেপাটাইটিস, জন্ডিস, মাম্পস, হাম ইত্যাদি থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংক্রামক রোগের চিকিৎসা প্রদান করা হয়।

এ হাসপাতালে ১০০টি শয্যার ব্যবস্থা রয়েছে। যার মধ্যে ৪০টি পেয়িং বেড এবং ৬০টি ফ্রি বেড আছে। প্রতিদিন (এমনকি ছুটির দিনেও) জরুরী পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য এর আউটডোরে একটি জরুরি বিভাগ রয়েছে। এছাড়া ভ্যাকসিন শটের জন্য মাত্র ১০ টাকায় টিকিট কেনা যাবে, আর ভর্তি ফি এর জন্য খরচ হবে মাত্র ১৫ টাকা। তবে ভর্তির পর বেড এর ব্যবস্থা করার জন্য আপনাকে প্রায় ৩০০ টাকা খরচ করতে হবে।

যোগাযোগের তথ্য- 

মহাখালী, ঢাকা-১২১২

মোবাইল- ০১৩১৩৭৯১১১৬  

ইমেইল- didh@hospi.dghs.gov.bd 

মহাখালীর অন্যান্য হাসপাতাল সমূহ 

আইসিডিডিআর,বি
আইসিডিডিআর,বি

উপরে উল্লেখিত হাসপাতালগুলো ছাড়াও মহাখালীতে আরও বেশ কিছু চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র রয়েছে, যেখানে সব ধরনের রোগের রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হয়। ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, আয়শা মেমোরিয়াল হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মেট্রোপলিটন মেডিকেল সেন্টার এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হাসপাতাল। এছাড়াও সরকারী অনুদানপ্রাপ্ত অন্যান্য হাসপাতাল এর মধ্যে রয়েছে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এবং কুষ্ঠো নিয়ন্ত্রন ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল।  

অন্যদিকে, ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়ারিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) মহাখালীর উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের মধ্যে একটি। এটি একটি আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য গবেষণা সংস্থা, যা মূলত বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক রোগের উপর গবেষণা পরিচালনার সহ চিকিৎসা সেবাও প্রদান করে থাকে।

এ বছর ডিএনসিসি কোভিড-১৯ হাসপাতাল নামে একটি অস্থায়ী হাসপাতালও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর নির্মাণ সম্পূর্ণরূপে শেষ হলে এই হাসপাতালে ১,১০০টি শয্যা থাকবে এবং এতে একটি নতুন প্যাথলজি এবং রেডিওলজি ইউনিটও যুক্ত করা হবে৷ যদিও প্রাথমিকভাবে, ২৫০ শয্যার সীমিত জায়গা নিয়ে হাসপাতালটি এর কার্যক্রম শুরু করেছিল। এর মধ্যে, ১৫০টি শয্যা অক্সিজেন সরবরাহ সহ সাধারণ কাজের জন্য, ৫০টি আইসিইউ এর জন্য এবং ৫০টি জরুরি প্রয়োজন পূরণের জন্য। তবে মহামারীর পর এই হাসপাতালটিকে সাধারণ হাসপাতালে রূপান্তর করার পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে, এই হাসপাতালটিই বাংলাদেশের বৃহত্তম কোভিড-১৯ হাসপাতাল।

ঢাকা শহরের কোভিড পরিস্থিতি মোকাবেলায় এই হাসপাতালগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল এবং এখনও করছে। আর তাই আগারগাঁও শেরে-ই-বাংলা নগর এর হাসপাতাল গুলোর পরই রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল গুলোর তালিকায় রয়েছে মহাখালীর হাসপাতাল সমূহ ।  

Write A Comment

Author