রমজান মাস চলছে, প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী মুসলমানরা রোজা রাখার মাধ্যমে পবিত্র রমজান মাসটি পালন করে থাকে। হয়তো আপনারা এরই মধ্যে পড়েছেন রমজান মাসের প্রস্তুতি শীর্ষক আর্টিকেলটি এবং জেনেও গেছেন রমজান মাসে সুস্থ থাকার কিছু টিপস। এবার ভাবছি আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলাপ করবো। রমজান মাসের মর্মার্থই হলো, রোজা রেখেও দৈনন্দিন জীবনের সকল কাজ সেই আগের উদ্যমে চালিয়ে যাওয়া। আর এটা তখনই সম্বব যখন আপনি একটি স্বাস্থ্যকর রুটিনে চলবেন। প্রায়শই দেখা যায় ইফতারের সময় খাওয়া হয়ে যায় নানা ধরণের খাবার। পরিবার পরিজন নিয়ে ইফতারের সময় নিজেকে সংযম করাও যেন কঠিন হয়ে ওঠে! কিন্তু আমরা ভুলে যাই যে রমজান মাস তো সংযমেরই মাস। সেটা ইফতারেও যেন বর্তায়। তাই ইফতারের জন্য আমাদের বেছে নিতে হবে স্বাস্থ্যকর ইফতার। আপনি যদি এই পবিত্র মাসে খাওয়ার ভাল অভ্যাস বজায় রাখার চেষ্টা করছেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি কেবল আপনার জন্য!
নিজেকে হাইড্রেট করুন
প্রথমে, সময় হওয়ার সাথে সাথেই রোজা ভেঙে নিন। আপনার শরীরের যতটুকু প্রয়োজনের ঠিক ততটুকুই গ্রহণ করুন বাকি সবধরনের খাবার এড়িয়ে চলুন। পারত পক্ষে পানি দিয়ে রোজা ভাঙ্গুন।
ইফতারের শুরুতে পানি পান করলে তা ডিহাইড্রেশন রোধ করবে এবং আপনার দেহকে প্রয়োজনীয় তরল সরবরাহ করবে।পানির পাশাপাশি আপনার শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় তরল পূরণ করতে বিকল্প হিসেবে বেছে নিতে পারেন তাজা ফলের শরবত রস বা দুধ। খাবারের আগে ১ থেকে ২ গ্লাস পানি পান করুন, অন্যথায় এটি হজম প্রক্রিয়াটি জটিল করে তুলবে। এবং রমজানে আপনি কী পান করছেন সে সম্পর্কে যত্নবান হোন। রোজা ভাঙার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চিনি এবং ক্যালোরি পান করা একেবারেই আদর্শ নয়। পানি পান করুন বেশি এটা খুবই স্বাস্থ্যকর।
ইফতারে খেজুর রাখুন
ইফতারের সময় খেজুর খাওয়া একটি ঐতিহ্য যা কিনা মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলিতে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। সাধারণত ইফতারের সময় পানি পান করার পরে খেজুর খাওয়া হয়ে থাকে। খেজুর নিয়মিত খেলে তা শরীরকে প্রয়োজনীয় শক্তি দিয়ে থাকে এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টিও যোগান দিয়ে থাকে। খেজুর অনেক ক্ষেত্রেই চিনির প্রাকৃতিক উৎস হিসেবে পরিচিত এবং এতে চমৎকার কিছু উপাদান থাকে যা শরীরের জন্য বেশ উপকারী। সুতরাং রোজার রাখার পরে কয়েকটি খেজুর আপনার ক্ষুদা যন্ত্রণাকে কমানোর সাথে শরীরের উপকারও করবে।
কার্ব এবং শাকসবজি রাখুন
আপনার যদি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের লক্ষ্য থাকে তবে শাকসবজি এবং শর্করা জাতীয় খাদ্যের কোন বিকল্প নেই। আপনাকে তা গ্রহণ করতেই হবে। রমজানে স্বাস্থ্যকর ইফতার তৈরি করার ক্ষেত্রে কার্ভ আর শাকসবজির কোন বিকল্প নেই। রোজা রেখে আপনার শরীর থেকে যে শক্তি হারিয়ে যায় তা ফিরিয়ে আনতে এবং স্বাস্থ্যকর উপায়ে তা পুনরায় পূরণ করতে ইফতারের খাবারে অবশ্যই ভালো পরিমাণে শর্করা এবং শাকসবজী থাকতে হবে। গম, আলু এবং ব্রাউন রাইস আপনাকে শক্তি সরবরাহ করে যা আপনার শরীরকে দীর্ঘ সময়ের জন্য পরিপূর্ণ রাখে। অন্যদিকে শাকসবজি আপনার সু-স্বাস্থ্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কারণ এতে কোনও ক্যালরি নেই বরং রয়েছে ভিটামিন, খনিজ এবং তন্তু। শাকসবজির সাথে ভাল কার্বস যোগ করুন। এমন অনেক রেসেপি রয়েছে যেখানে আপনি খুঁজে পাবেন কার্ব এবং সবজির সমান উপস্থিতি এবং স্বাদ।
চর্বিহীন প্রোটিন
চর্বিহীন প্রোটিন খাবারগুলো এমন যেখানে প্রোটিন বেশি তবে এতে পুষ্টি কম থাকে, যেমন স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং ডায়েটারি কোলেস্টেরল। চর্বিহীন প্রোটিনযুক্ত খাবারগুলি আপনার ইফতারের জন্য প্রথমেই বেছে নেওয়া উচিত যেহেতু প্রোটিন আপনার শরীরকে পেশী তৈরি করতে সাহায্য করে এবং পাশাপাশি পেশি বজায় রাখতে সহায়তাও করে।
চর্বিযুক্ত প্রোটিনের খাবারের কয়েকটি উত্সের মধ্যে রয়েছে চর্বিহীন গরুর মাংস, সাদা মাংসযুক্ত মাছ, ত্বকহীন হাঁসের মাংস এবং ডিম। তারপরও যদি আপনি নিরামিষভোজী হয়ে থাকেন তবে মটরশুটি, মটর এবং মসুর জাতীয় খাবার থেকেও প্রোটিন নেওয়া যেতে পারে। আপনি স্বল্প ফ্যাটযুক্ত দই এবং পনিরও বেছে নিতে পারেন।
চর্বি, চিনি এবং লবণের পরিমাণযুক্ত খাবারগুলি এড়িয়ে চলুন
ফ্যাট, চিনি এবং লবণের পরিমাণযুক্ত খাবার আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। এই খাবারগুলি কেবল হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায় না বরং অতিরিক্ত ওজনও বাড়ায়। ডায়াবেটিস এবং ক্যান্সারসহ অন্যান্য রোগের ঝুঁকিও বাড়িয়ে তোলে। সুতরাং চর্বি, লবণ এবং চিনির পরিমাণযুক্ত খাবারগুলি এড়ানো ভাল। তাই খাবারে যতটা সম্ভব উদ্ভিজ্জ তেল এড়িয়ে চলুন। সেই সাথে এড়িয়ে চলুন প্রক্রিয়াজাত খাবার। পরিবর্তে, স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার জন্য ইফতারের সময় বেকিং, ফুটন্ত বা স্টিমিং খাবার প্রস্তুত করার চেষ্টা করবেন। আপনি খাবারে লবণ, চিনি এবং এমএসজি (স্বাদ বৃদ্ধিকারী) এর পরিবর্তে স্বাদ যুক্ত করতে প্রাকৃতিক মশলা এবং ভেষজ মিশ্রণগুলি ব্যবহার করতে পারেন।
বলে রাখা ভালো, একেক মানুষের স্বাস্থ্যের অবস্থা একেকরকম। তাই কোন ধরনের অসুস্থতা থাকলে রোজা রাখার ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। আশা রাখি এই সকল রমজানে স্বাস্থ্যকর ইফতার তৈরির টিপসগুলো আপনাকে সহায়তা করবে। সকলের রমজান মাসে সুস্থ থাকা কামনা করছি।