আমরা এখন আছি বছরের সবথেকে পবিত্র একটি সময়ে। হ্যাঁ, এখন চলছে পবিত্র মাহে রমজান। আপনারা এরই মধ্যে পড়েছেন রমজান মাসের প্রস্তুতি শীর্ষক আর্টিকেলটি এবং জেনেও গেছেন রমজান মাসে সুস্থ থাকার কিছু টিপস। এবার ভাবছি আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলাপ করবো। রমজান মাসের মর্মার্থই হলো, রোজা রেখেও দৈনন্দিন জীবনের সকল কাজ সেই আগের উদ্যমে চালিয়ে যাওয়া। কিন্তু, রোজা রেখে স্বাভাবিক কাজ কর্ম চালিয়ে নিতে আমাদের কিছুটা মুশকিলের সম্মুখীন হতে হয়। এখনকার সময়ে আমরা সবাই মাল্টিটাস্কার, এক হাতে সামলাতে হয় সংসার অফিস, বাচ্চাকাচ্চা, ব্যবসা এবং নিজেকেও। এই সবকিছু সামলাতে প্রয়োজন কিছু টিপস। তাই আমাদের আজকের বিষয় রমজান মাসে অ্যাকটিভ থাকা নিয়ে কিছু টিপস। এই টিপস গুলো আপনি অফিস কিংবা বাসায়, যেকোন ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে পারেন। চলুন তবে শুরু করা যাক।
প্রতিদিনকার কাজের একটি তালিকা তৈরি করুন
যেকোন কাজ সঠিক ভাবে সম্পাদনার জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা। রোজার দিনে আপনি কি কি কাজ করবেন তার একটি তালিকা আগেই তৈরি করে ফেলুন। তালিকা তৈরি থাকলে যে সুবিধাটি আপনি পাবেন তা হলো, আপনি আগে থেকেই জানবেন আপনার হাতে কি কি কাজ রয়েছে। এবং সেই কাজ অনুযায়ী আপনি সময়ও সঠিক ভাবে ভাগ করতে পারবেন। কোন কাজে আপনার প্রাধান্য দেয়া উচিৎ বেশি সেটারও একটা মানসিক প্রস্তুতি থাকবে। যার ফলে তালিকার সব কাজ আপনি সময়ের মধ্যে আরাম করে সেরে ফেলতে পারবেন। রোজা রেখে কাজের চাপও অনুভব করবেন না, এমনকি আপনার সব কাজই সময়ের আগেই সম্পূর্ণ করতে পারবেন। রোজার কর্তব্য ও দৈনন্দিন জীবনের দায়িত্বের মধ্যেকার ব্যালেন্স ধরে রাখার জন্য রমজান মাসে অ্যাকটিভ থাকা নিয়ে এই টিপসটি খুব উপকারী।
খণ্ড কালীন লক্ষ্য ঠিক করুন
আপনার রোজকার দায় দায়িত্বের তালিকা থেকে সব কাজ সময়মত করবার জন্য সব থেকে ভালো বুদ্ধি হল, প্রতিটি কাজ আপনি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্ধারণ করে ফেলুন। যাতে করে আপনি সময় নিয়ে একেকটি কাজ সম্পন্ন করতে পারেন। কোন কাজ যদি তালিকা থেকে ছিটকে পড়ে আপনি কোন এক অবসরে সেরে ফেলতে পারবেন। বড় কাজকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করার এই এক সুবিধা, আপনার কাজের চাপ অনুভবও হবে না, কিন্তু দেখবেন সব কাজ সময়মত শেষ হয়েও গেছে।
নিজের জন্য কাজের রুটিন তৈরি করুন
রমজান মাসে সারা দিনের তুলনায় সেহরিতে আমরা বেশি অ্যাকটিভ থাকি, কেননা সারাদিনের এই সময়ে আমরা পরিপূর্ণ খাবার গ্রহণ করি। অফিসের ইমেইল লেখা থেকে শুরু করে ঘরের কাজ কিংবা কোরআন তালাওয়াত বা হতে পারে আপনার নিজের যেকোন কাজ সকালে করলে দ্রুত সম্পন্ন হবে কারণ, আপনি সবথেকে বেশি অ্যাকটিভ থাকেন সকালে। তাই হয়তো অনেকেই সেহরির পর বিশ্রাম নেয়া পছন্দ করেন এবং ইফতারের পর থেকে সেহরি পর্যন্ত কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। খাবার খাওয়ার পর স্বাভাবিক শরীরে শক্তি সঞ্চারিত হয় বেশি। তাই এসময়ে অ্যাকটিভ থাকাটাও খুব ই জরুরী। তাই এই সময় গুলোতে নিজের কাজ যথাযথ শেষ করবার জন্য প্রয়োজন যথাযথ রুটিন।
নিজেকে একটু সময় দিন
রোজা রেখে ঘড়ির কাটার তালে তালে সারাদিনের কাজ করতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। ঘরের কিংবা অফিসের কাজ থেকে বিরতি নিয়ে ছোট্ট করে একটু ঘুমিয়ে নিন। এতে করে সারাদিনের জন্য পুনরায় আবার শক্তি সঞ্চার করতে পারবেন। ঘুমানোর যদি কোন উপায় না থাকে, তবে আপনি নিজের মত করে সময় পার করতে পারেন। হোক তা টিভিতে প্রিয় অনুষ্ঠান দেখে কিংবা ফোনে ভিডিও দেখে বা কোন বন্ধুর সাথে খুদে বার্তায় কথা বলে। যেটা মুখ্য তা হল নিজেকে একটু সময় দেয়া। সেটা যে উপায়েই হোক না কেন।
স্বাস্থ্যকর সেহরি এবং হালকা ইফতার করুন
মন আমাদের পেটের সাথে জড়িত থাকলেও, যা মনে চাইবে আমরা তা কখনই খেতে পারি না। বিশেষ করে রমজান মাসে তো একদমই না। সুস্থ থাকতে হলে খাওয়ার পরে কি হতে পারে তা খাবার খাওয়ার আগেই ভাবতে হয়। আমরা যে খাবারই খাইনা কেন তার সরাসরি প্রভাব পড়ে আমাদের শারীরিক অবস্থার ওপর। মাত্রাতিরিক্ত খাবার গ্রহণ এবং ভাজাপোড়া খাবার দুটোই আমাদের শরীরে এনে দেয় অলসতা এবং ক্লান্তি। সেজন্য সেহরি এবং ইফতারে ব্যালেন্স ডায়েট খুবই জরুরী। ব্যালান্সড ডায়েটে উপস্থিত থাকবে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিনযুক্ত খাবার, ফলমূল এবং শাকসবজি। সেহরি এবং ইফতারে এই সকল খাবার গ্রহণ করলে রমজান মাসে অ্যাকটিভ থাকা যাবে অনায়াসে।
দৈনন্দিন জীবনের সকল কাজ আগের উদ্যমে সম্পন্ন করার পেছনে আপনার সঠিক খাদ্যাভাসের অনেক ভূমিকা রয়েছে। রমজান মাসে আমাদের দায়দায়িত্ব বেড়ে যায় অনেকাংশে। অফিসের সময় কমে আসলেও কাজ থেকে যায় আগের মতই। একই অবস্থা ঘরের কাজেও বরং কাজ বেড়ে আরও দ্বিগুণ হয়ে যায়। তাই রমজান মাসে অ্যাকটিভ থাকা খুব প্রয়োজন। আশা করি আমার লেখা রমজান মাসে অ্যাকটিভ থাকা নিয়ে কিছু টিপস আপনার কাজে আসবে। অবশ্যই, জানাতে ভুলবেন না। কমেন্ট সেকশনে লিখে জানিয়ে দিতে পারেন।