Reading Time: 8 minutes

যেকোনো ইনভেস্টমেন্ট বা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়াই আসলে ভীষণ জটিল। এর সাথে জড়িয়ে থাকে নানা প্রশ্ন ও জিজ্ঞাসা, কঠিন সব হিসাব-নিকাশ। রিয়েল এস্টেট সেক্টরে বিনিয়োগ করতে যারা আগ্রহী তাদেরও নিশ্চয় এমন অসংখ্য প্রশ্ন আছে, আপনারা অনেকেই হয়তো জানতে চান ঠিক কোন উপায়ে এ সেক্টরে বিনিয়োগ করলে তা লাভজনক হবে। সে কথা মাথায় রেখেই আমাদের আজকের ব্লগের মূল প্রতিপাদ্য রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্টের প্রকার গুলো। রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট করতে চাইলে কোন কোন উপায়ে তা করা যায় এবং এগুলোর সুবিধা-অসুবিধা কী কী তার সবই আজ আপনাদের জানাবো যাতে এ নিয়ে আপনাকে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে না হয়। 

রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্টঃ কী ও কেন? 

মুনাফার উদ্দেশ্যে রেসিডেনসিয়াল প্রপার্টি, কমার্শিয়াল প্রপার্টি এবং জমি ক্রয়, বিক্রয়, ব্যবস্থাপনা, ভাড়া দেয়া বা নেয়া- সবই রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্টের অন্তর্ভুক্ত। বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে রিয়েল এস্টেট গত পাঁচ দশক ধরে সমস্ত বিশ্বে এবং গত তিন দশক ধরে বাংলাদেশে একটি জনপ্রিয় সেক্টর হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। অর্থনৈতিক মন্দার সময়ও এ সেক্টরে বিনিয়োগ লাভের মুখই দেখে; কেননা আবাসিক বা বাণিজ্যিক উভয় ক্ষেত্রেই আবাসন চাহিদা কখনোই শূণ্য হয় না। এমনকি মুদ্রাস্ফীতি যখন অর্থনীতিকে চোখ রাঙায়, তখনও আনুপাতিক হারে বাড়তে থাকে রিয়েল এস্টেট প্রপার্টির মূল্যমান। এছাড়া ট্যাক্স সুবিধা, সারা বছর স্থিতিশীল ক্যাশ ফ্লো ইত্যাদি সুবিধার কারণে বলাই যায় যে, বিনিয়োগের অন্যতম লাভজনক সেক্টর রিয়েল এস্টেট। 

রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্টের প্রকার 

হাউজ ফ্লিপিং 

হাউজ ফ্লিপিং
প্রথম বারের মত যারা রিয়েলে এস্টেটে বিনিয়োগ করছেন তাদের জন্য ফ্লিপার হাউজ চমৎকার একটি বিনিয়োগের সুযোগ কারণ এখানে দরদামের সুযোগ রয়েছে

২০০০ এর মাঝামাঝি বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার সময় রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্টের প্রকার এই কনসেপ্টটিই পশ্চিমা দেশগুলোর আবাসন খাতকে রক্ষা করেছিলো। বাংলাদেশেও বর্তমানে ফ্লিপার হাউজের মাধ্যমে বিনিয়োগের ব্যাপারটি বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এখানে বলে রাখি ‘হাউজ ফ্লিপিং’ বা ‘ফ্লিপার হাউজ’ বিষয়টি ঠিক কী। সহজ করে বলতে গেলে, প্রথমে একজন ক্রেতা একটি বাড়ি বাজার মূল্যে প্রথম বিক্রেতার কাছ থেকে ক্রয় করে এবং তা সংস্কার করে। এরপর ক্রয়কৃত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে দ্বিতীয় ও নতুন বিক্রেতার কাছে বিক্রয় করা হয় বাড়িটি। যিনি বাড়িটি কিনে পরবর্তীতে বিক্রির জন্য সংস্কার করলেন, তিনিই ফ্লিপার। আর যে বাড়িটি বিক্রি করা হলো সেটিই ফ্লিপিং হাউজ বা ফ্লিপার হাউজ। এ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে পড়তে পারেন ফ্লিপার হাউজ নিয়ে আমাদের আগের ব্লগটি। 

সুবিধা 

  • প্রথম বারের মত যারা রিয়েলে এস্টেটে বিনিয়োগ করছেন তাদের জন্য ফ্লিপার হাউজ চমৎকার একটি বিনিয়োগের সুযোগ কারণ এখানে দরদামের সুযোগ রয়েছে । ফলে সাধ্যের মধ্যে প্রপার্টি ক্রয়ের দারুণ সুবিধা রয়েছে এখানে। 
  • নিজের বসবাসের জন্য বাসা বদলের কথা ভাবছেন যারা তাদের জন্যও ফ্লিপার হাউজ উপযুক্ত। কারণ সংস্কারকৃত এ ফ্লিপার হাউজগুলোতে ক্রেতাদের জিনিসপত্র ঠিক করার বিষয়ে চিন্তা করতে হয় না। 
  • হাউজ ফ্লিপিংয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক বাড়িটি আকর্ষণীয় করার জন্য সংস্কার করা। সম্ভাব্য ক্রেতার চাহিদা বুঝে এটি যথার্থ ভাবে করতে পারলে হাউজ ফ্লিপিং অত্যন্ত লাভজনক বিনিয়োগ। 

ঝুঁকি 

  • ফ্লিপার হাউজ কেনার পর তা যথার্থভাবে সংস্কার করা ও বিক্রির উপযোগী করে তোলা এক জটিল প্রক্রিয়া। এতে বড় খরচের ধাক্কাও রয়েছে। বাড়িটি ঠিকভাবে মেরামত করতে না পারায় বা যথাযথ ভাবে বাড়ির প্রচারণা করতে না পারায় বড় অর্থনৈতিক ক্ষতির ঝুঁকিও থেকে যায়। এক্ষেত্রে বিপ্রপার্টির মতো বিশ্বস্ত প্রপার্টি সলিউশন প্রভাইডারের সহায়তা নেয়ার মাধ্যমে নিশ্চিত লাভজনক বিনিয়োগের দিকে এগোতে পারেন আপনি। 

দীর্ঘমেয়াদী ভাড়া বা লীজ

কন্ট্রাক্ট সাইন
ছয়মাসের বেশি সময়ের জন্য প্রপার্টি ভাড়া দেয়াকেই সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী ভাড়া বা লীজ বলা হয়

ছয়মাসের বেশি সময়ের জন্য প্রপার্টি ভাড়া দেয়াকেই সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী ভাড়া বা লীজ বলা হয়। শুরুতেই বলেছি, অর্থনৈতিক মন্দা, মুদ্রাস্ফীতির মতো সময়েও মানুষের আবাসন চাহিদা থেকেই যায় এবং বাড়ি ভাড়া সাধারণত নিম্নগামী হয় না। তাই দীর্ঘ দিনের জন্য বাড়ি ভাড়া দেয়া বা লীজ দেয়া রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্টের প্রকার গুলোর মাঝে অন্যতম লাভজনক একটি উপায়। 

সুবিধা 

  • দীর্ঘমেয়াদী ভাড়া বা লীজ দিলে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য স্থিতিশীল ক্যাশ ফ্লো’র নিশ্চয়তা পাচ্ছেন আপনি। অর্থাৎ বাড়ি ভাড়া দেয়ার সময় চুক্তির নোটিশে যেহেতু ভাড়ার অংক লেখা থাকছে এবং নির্দিষ্ট সময়ের আগে বাড়ি ছেড়ে দিলেও যেহেতু আপনি ‘অ্যাডভান্স পেমেন্ট’ বা ‘সিকিউরিটি ডিপোজিট’ পাচ্ছেন, তাই এটি নিঃসন্দেহে দারুণ লাভজনক। 
  • দীর্ঘমেয়াদী ভাড়া দেয়ার আরো একটি সুবিধা হলো যে, দীর্ঘ দিনের জন্য বাড়ির ইলেক্ট্রিসিটি বিল, পানির বিল, সার্ভিস চার্জ অর্থাৎ সব ধরনের ইউটিলিটি বিলের খরচ থেকে মুক্তি পাচ্ছেন আপনি। কেননা এগুলো সাধারণত যিনি ভাড়া নিয়েছেন, তিনিই দিয়ে থাকেন। 
  • এছাড়া রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্টের প্রকার গুলোর সবচেয়ে নিরাপদ উপায়ের কথা চিন্তা করলেও দীর্ঘমেয়াদী ভাড়ার কথাই মাথায় আসবে। এখানে লিগ্যাল কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে ভাড়া বা লীজ দিবেন আপনি। সেখানে লেখা থাকবে যে আপনার প্রপার্টিতে কী করা যাবে ও করা যাবে না, প্রপার্টির ক্ষতি সাধন করলে কীভাবে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ফলে যত্নে থাকবে আপনার প্রপার্টি। 

ঝুঁকি 

  • দীর্ঘ সময়ের জন্য আপনার প্রপার্টি ভাড়া বা লীজ নিবেন এমন কাউকে পাওয়া তুলনামূলকভাবে কঠিন। আর পাওয়া গেলেও আপনার প্রপার্টি যত্নে রাখবেন, লিগ্যাল কন্ট্রাক্টের সবগুলো ধাপ যথার্থ ভাবে মেনে চলবেন অর্থাৎ ভাড়া দেয়ার পর আপনি নিশ্চিন্ত হতে পারবেন এমন কাউকে পাওয়া তো আরো কঠিন! এ ব্যাপারে তাই বিপ্রপার্টির মতো প্রপার্টি সলিউশন প্রভাইডারের সহায়তা নেয়াই আপনার জন্য নিরাপদ হবে। কারণ তারা আপনার জন্য উপযুক্ত ভাড়াটিয়া খুঁজে দিতে বদ্ধপরিকর। 

স্বল্পমেয়াদী ভাড়া 

ভ্যাকেশন হোম
স্বল্পমেয়াদী ভাড়া দেয়ার এ কনসেপ্টটি মূলত ট্যুরিস্ট স্পটগুলোতে বেশি জনপ্রিয়

রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্টের প্রকার গুলোর মাঝে স্বল্পমেয়াদী ভাড়া দেয়ার এ কনসেপ্টটি মূলত ট্যুরিস্ট স্পটগুলোতে বেশি জনপ্রিয়। যেমন কক্সবাজারে যদি আপনার একটি বাড়ি থাকে, তা কিন্তু আপনি চাইলেই ভ্যাকেশন হোম হিসেবে ট্যুরিস্টদের কাছে ভাড়া দিতে পারেন। বিশ্বব্যাপী এয়ার বি এন বি, হোম অ্যাওয়ের কল্যাণে ভ্যাকেশন হোম রেন্টালের এ ধারাটি এখন দারুণ প্রচলিত। তবে ট্যুরিস্ট স্পট ছাড়াও বিখ্যাত হাসপাতালের আশেপাশে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিকটবর্তী এলাকায় স্বল্পমেয়াদী ভাড়া বিনিয়োগের একটি দারুণ উপায় হতে পারে। 

সুবিধা 

  • স্থিতিশীল ক্যাশ ফ্লো’র নিশ্চয়তা না থাকলেও বাড়ির ধরণ, ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন; বিশেষত ভ্যাকেশন হোম হলে ট্যুরিস্টদের উপযোগী আয়োজনের মাধ্যমে আপনি বড় মুনাফার আশা করতে পারেন। 
  • বাড়ি সংস্কার বা মেরামতের ঝামেলা এখানে কম। কারণ যারা এখানে থাকবেন তারা কেউই দীর্ঘ সময়ের জন্য থাকবেন না।
  • ট্যুরিস্ট সিজন বা চাহিদা অনুযায়ী ভাড়া কমানো বা বাড়ানোর নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতেই থাকবে। 

ঝুঁকি

  • দীর্ঘমেয়াদী ভাড়া বা লীজের মতো আনুষ্ঠানিক লিগ্যাল কন্ট্রাক্ট পেপারের মাধ্যমে ভাড়া দেয়ার রেওয়াজ নেই এখানে। ফলে প্রপার্টির নিরাপত্তা সেভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তবে দক্ষ ব্যবস্থাপকের মাধ্যমে এ ঝুঁকি কমাতে পারবেন আপনি।
  • প্রপার্টি সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা স্বল্পমেয়াদী ভাড়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। বিশেষ করে যদি ভ্যাকেশন হোম হিসেবে ভাড়া দিতে চান, তবে ট্যুরিস্টদের চাহিদার কথা মাথায় রাখতে হবে আপনাকে। 

রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট 

রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট
রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্টে লিকুয়িডিটি এ সেক্টরের অন্য যেকোনো বিনিয়োগের তুলনায় বেশি

রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট বা আরইআইটি হলো কিছু বিশেষায়িত কোম্পানি যারা বিভিন্ন উপায়ে তাদের রিয়েল এস্টেট অ্যাসেট থেকে আয়ের ব্যবস্থা করে। এই কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজার বা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন করে। বাংলাদেশে এর প্রচলন এখনো শুরু হয়নি তবে সারা বিশ্বে রিয়েল এস্টেট সেক্টরে কম ঝুঁকিপূর্ণ ও কম টাকায় বিনিয়োগ করার উপায় হিসেবে বেশ জনপ্রিয় রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট। 

সুবিধা 

  • রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্টে বিনিয়োগে লিকুয়িডিটি এ সেক্টরের অন্য যেকোনো বিনিয়োগের তুলনায় বেশি। 
  • ডিভিডেন্ডের মাধ্যমে বেশ স্থিতিশীল ক্যাশ ফ্লো’র নিশ্চয়তা পাবেন আপনি। 
  • প্রপার্টি ম্যানেজমেন্ট নিয়ে দুশ্চিন্তা কম এ পদ্ধতির বিনিয়োগে।

ঝুঁকি 

  • আবাসন খাতের অন্যতম সুবিধা হলো ট্যাক্স সুবিধা। কিন্তু বিশ্বের যে দেশগুলোতে রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্টের প্রচলন আছে, তার সবগুলোতেই এ থেকে প্রাপ্ত ডিভিডেন্ডকে নিয়মিত আয়করের আওতায় ফেলা হয়। 
  • এ পদ্ধতির বিনিয়োগে ম্যানেজমেন্ট ও ট্র্যানজেকশন ফি’ও বেশি।

ক্রাউডফান্ডিং

ক্রাউডফান্ডিং
রিয়েল এস্টেট ক্রাউডফান্ডিংয়ের অন্যতম উল্লেখযোগ্য সুবিধা হলো যে, নন অ্যাক্রেডিটেড ইনভেস্টররাও এখানে বিনিয়োগ করতে পারে

হাল আমলে ‘ক্রাউডফান্ডিং’ শব্দটি কিন্তু দুর্দান্ত জনপ্রিয়! পরিবার-পরিজন, ভোক্তা এবং পৃথক বিনিয়োগকারীদের মাধ্যমে ব্যবসার জন্য বা সামাজিক কাজের জন্য তহবিল সংগ্রহ করার নামই হলো ক্রাউড ফান্ডিং। রিয়েল এস্টেট ক্রাউডফান্ডিংয়ে মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আর ইন্টারনেটের মাধ্যমে ইনভেস্টরদের সাথে কানেক্টেড করা হয় ও তারা রিয়েল এস্টেট প্রপার্টিতে বিনিয়োগ করে। এটি অনেকটা ইকুয়িটি ইনভেস্টিংয়ের মতোই কেননা ইনভেস্টর এখানে বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রপার্টির শেয়ারহোল্ডার বা অংশীদার হতে পারন।

সুবিধা

  • বড় অংকের বিনিয়োগ না করেও রিয়েল এস্টেট প্রপার্টির অংশীদার হবার সুযোগ পাওয়া যায়। ব্যক্তির জন্য তো বটেই ছোট কর্পোরেট কোম্পানির জন্যও এটি দারুণ সুযোগ। 
  • রিয়েল এস্টেট ক্রাউডফান্ডিংয়ের অন্যতম উল্লেখযোগ্য সুবিধা হলো যে, নন অ্যাক্রেডিটেড ইনভেস্টররাও এখানে বিনিয়োগ করতে পারে। এখানে বলে রাখি, ‘নন অ্যাক্রেডিটেড ইনভেস্টর’ ব্যাপারটি কী। সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন শেয়ার বাজারে বেশ কিছু নীতিমালা অনুসরণ করে, যার মধ্যে একটি হলো নির্দিষ্ট পরিমাণ আয় বা সম্পত্তি না থাকলে আপনি বিনিয়োগ করতে পারবেন না কারণ আপনি তখন ‘নন অ্যাক্রেডিটেড ইনভেস্টর’। কিন্তু রিয়েল এস্টেট ক্রাউডফান্ডিং এমন কোনো নীতিমালা অনুসরণ করে না। উদাহরণস্বরূপ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক রিয়েল এস্টেট ক্রাউডফান্ডিং ওয়েবসাইট ডাইভার্সি ফান্ডের কথা বলা যায়। নন অ্যাক্রেডিটেড ইনভেস্টরদের থেকে সর্বনিম্ন ৫০০ ডলার ফান্ডিংও নিয়েছে তারা, যা বিনিয়োগের সাধারণ অংকের তুলনায় অনেক কম। তবু ১৭.৬% এর মতো প্রশংসনীয় বার্ষিক রিটার্ন পেয়েছে এ প্রতিষ্ঠানটি। 

ঝুঁকি 

  • ক্রাউডফান্ডিং যেহেতু ইন্টারনেট দ্বারাই বেশিরভাগ সময় পরিচালিত হয় তাই ডকুমেন্টস বা আইনি কাগজপত্র আছে কিনা সেসব দেখে নেয়া ভালো। 
  • বেশিরভাগ রিয়েল এস্টেট ক্রাউড ফান্ডিং শুধুমাত্র নন অ্যাক্রেডিটেড ইনভেস্টরদের জন্যই করা হয়। ফলে বড় অংকের বিনিয়োগে ইচ্ছুক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জন্য এটি তেমন সুবিধাজনক হয় না। 

কনস্ট্রাকশন পার্টনারশিপ

কনস্ট্রাকশন পার্টনারশিপ
কনস্ট্রাকশন পার্টনারশিপে চুক্তি অনুযায়ী বড় অংকের ক্যাশ ফ্লো ও নির্দিষ্ট সংখ্যক ফ্ল্যাটের মালিকানা পাবেন আপনি

কনস্ট্রাকশন পার্টনারশিপ আমাদের দেশে বহুল প্রচলিত। মনে করুন, আপনার একটি প্লট আছে। সেই প্লটটি ডেভেলপার বা বিল্ডার কোম্পানিকে দেয়া হয়, তারা দেখানে অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ করেন। বিনিময়ে চুক্তি অনুযায়ী অর্থ ও সেই অ্যাপার্টমেন্টে নির্দিষ্ট সংখ্যক ফ্ল্যাটের মালিকানা পান আপনি। এটিই মূলত কনস্ট্রাকশন পার্টনারশিপ, যেখানে আপনার পার্টনার বিল্ডার কোম্পানি। 

সুবিধা

  • চুক্তি অনুযায়ী বড় অংকের ক্যাশ ফ্লো ও নির্দিষ্ট সংখ্যক ফ্ল্যাটের মালিকানা পাবেন আপনি। যা অবশ্যই বিনিয়োগকারীর জন্য লাভজনক। 
  • ভালো ডেভেলপার কোম্পানির অধীনস্থ প্রজেক্ট সুপরিকল্পিত, আধুনিক সুবিধা সম্বলিত হয়। ফলে কনস্ট্রাকশনের সময় সাধারণত যেসব খুঁটিনাটির দিকে খেয়াল দিতে হয়, সেসবের দুশ্চিন্তা থেকে রেহাই মিলবে  রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্টের প্রকার টিতে। 
  • আইনি চুক্তির মাধ্যমে পার্টনারশিপ হয় বলে স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তার দিকটি নিয়েও তেমন দুর্ভাবনা থাকে না। 

ঝুঁকি

  • অনেক সময় বিল্ডার কোম্পানি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারে না। তাই এ কথা বলাই যায় যে,  কনস্ট্রাকশন পার্টনারশিপ সময়সাধ্য বিনিয়োগ পদ্ধতি। 
  • যেহেতু ডেভেলপার কোম্পানির করা ডিজাইন অনুযায়ী অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি হয়, অনেক সময় বিনিয়োগকারীর মনে হতে পারে যে তার অধিকার বা মালিকানা কমে যাচ্ছে। 

প্রাইভেট ইকুয়িটি ফান্ড ও অপরচুনিটি জোন ফান্ড

প্রাইভেট ইকুয়িটি ফান্ড ও অপরচুনিটি জোন ফান্ড
ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট কর্তৃক প্রত্যায়িত ও রাষ্ট্র কর্তৃক অনুমোদিত ‘অপরচুনিটি জোন’ গুলোর আবাসন প্রকল্পে বিনিয়োগ করে দেশের ধনী নাগরিকেরা

 

প্রাইভেট ইকুয়িটি ফান্ড আসলে অ্যাক্রেডিটেড বিনিয়োগকারীদের জন্য উদ্ভাবিত রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্টের প্রকার। কমার্শিয়াল রিয়েল এস্টেটের জন্য বিশাল অংকের ইনভেস্টমেন্ট করা হয় প্রাইভেট ইকুয়িটি ফান্ডে। একজন ফান্ড ম্যানেজার সাধারণত এর ব্যবস্থাপনার দিকটি দেখে। 

রিয়েল এস্টেট সেক্টরে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রাইভেট ইকুয়িটি ফান্ড হলো অপরচুনিটি জোন ফান্ড। বাংলাদেশে এটি এখনো প্রচলিত না হলেও বাইরের দেশগুলোতে দেখা যায়, ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট কর্তৃক প্রত্যায়িত ও রাষ্ট্র কর্তৃক অনুমোদিত ‘অপরচুনিটি জোন’ গুলোর আবাসন প্রকল্পে বিনিয়োগ করে দেশের ধনী নাগরিকেরা। অপরচুনিটি জোন হিসেবে সাধারণত নিম্ন আয়ের এলাকাগুলোকে নির্ধারণ করা হয়, কেননা বিনিয়োগকৃত অর্থ এসব এলাকায় আবাসন সুবিধা উন্নত করতে ব্যবহৃত হয়। বিনিয়োগকারীরা এখানে ইনভেস্ট করতে উৎসাহিত হয় মূলত হ্রাসকৃত প্রপার্টি ট্যাক্সের কারণে। 

সুবিধা

  • রাষ্ট্র কর্তৃক অনুমোদিত জমিতে প্রকল্পের কাজ চলে বলে অন্যান্য বিনিয়োগের তুলনায় এখানে নিরাপত্তা ঝুঁকি কম। 
  • অ্যাক্রেডিটেড বিনিয়োগকারীদের অনেকেই ট্যাক্স কমাতে চান। তাদের জন্য হ্রাসকৃত প্রপার্টি ট্যাক্স একটি দুর্দান্ত সুযোগ। 

ঝুঁকি

  • স্বল্পোন্নত জায়গাকে ‘অপরচুনিটি জোন’ ধরা হয় বলে অনেক সময় এসব প্রপার্টি বিক্রয় বা ভাড়া দেয়ার ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত বেশি জটিলতায় পড়তে হয় বিনিয়োগকারীকে। 
  • ‘অপরচুনিটি জোন’ গুলোতে জীবনযাপনের সুবিধা বাড়ানো হচ্ছে কিনা বা অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হচ্ছে কিনা এসব দিকেও বিনিয়োগকারীকে খেয়াল রাখতে হয়। অনেক সময় রাষ্ট্রআয়ত্ত্ব প্রতিষ্ঠানের সাথে এ নিয়ে আলোচনা ও সুপারিশও করার নজির দেখা যায়। 

রিয়েল এস্টেট এমন একটি খাত যা অন্য যেকোন খাতের তুলনায় এতই দৃঢ় যে দেশের পুরো অর্থনীতিকে পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে। বিশ্বের বৃহত্তম দেশ কানাডা এবং ভারতের মতো দেশের অর্থনীতি এই আবাসন খাতের উপর নির্ভর করছে। এটা বাংলাদেশের জন্যও অন্যতম সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। আমাদের দেশে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্টের প্রকার প্রচলিত। আর হাউজ ফ্লিপিং, ভ্যাকেশন হোম রেন্টাল বা ক্রাউডফান্ডিংয়ের মতো নতুন ধরনের বিনিয়োগ পদ্ধতির প্রচলনও হয়তো খুব জলদিই শুরু হবে এটিও আশা করা যায়। কেননা রিয়েল এস্টেট খাতে বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ করা সম্ভব কিনা এ নিয়েও চলছে আলোচনা। এছাড়া আবাসন খাতের নিয়মনীতিতে বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আনা হয়েছে যা নতুন বিনিয়োগকারীদের রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ করতে উৎসাহী করবে। 

রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্টের প্রকার গুলো নিয়ে আমাদের এ আলোচনা আপনার কেমন লাগলো তা কিন্তু আমাদের জানাতে ভুলবেন না। কমেন্টস বক্সে জানিয়ে দিন এ সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত!

Write A Comment