Reading Time: 3 minutes

রিয়েল এস্টেট এমন একটি খাত যা অন্য যেকোন খাতের তুলনায় এতই দৃঢ় যে দেশের পুরো অর্থনীতিকে পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে। বিশ্বের বৃহত্তম দেশ কানাডা এবং ভারতের মতো দেশের অর্থনীতি এই আবাসন খাতের উপর নির্ভর করছে। এটা বাংলাদেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। এবং এই ক্ষেত্রকে কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে যে রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ করে অর্থ উপার্জন সবচেয়ে নিরাপদ একটি উপায়। অন্যান্য সেক্টরের তুলনায় রিয়েল এস্টেট এ সময়ের সাথে সাথে এসেটের মূল্য হ্রাস হয় না। ফল স্বরূপ, বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীরা রিয়েল এস্টেট খাতে অর্থ বিনিয়োগ করতে বেশি ঝুঁকে পড়ছে।  

তবে এটা সত্যি যে, সর্বদা বিদেশী বিনিয়োগকারীরা কেবল মাত্র “একটি উদীয়মান খাতে” তাদের পরিশ্রমের উপার্জিত অর্থ বিনিয়োগে আগ্রহী হন না। তাদের জন্য বিবেচনা করার মতোও আরও অনেক বিষয় থাকে। সেগুলো থাকলেও তারা বিনিয়োগের জন্য এগিয়ে আসেন। রিয়েল এস্টেট খাতে বিদেশী বিনিয়োগ আনার ৩ টি চমৎকার উপায় রয়েছে সেগুলো জানতে পড়ুন এখানে…

যথাযথ নিয়ম-কানুন

আইনী বই
যথাযথ নিয়ম-কানুন

যথাযথ বিধান এবং নির্দেশিকা না থাকা একটা অন্যতম কারণ হয়ে দাড়ায় বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য। রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগকারীরা যখন অর্থ বিনিয়োগের জন্য কিছু খুঁজে পান, তারা আশা করেন যে তাদের এই বিনিয়গের অভিজ্ঞতা যেন ভালো এবং সহজ হয়। তবে দূর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা হয় না। বিনিয়োগকারীদের বাইরে থেকে বিনিয়োগ করতে হলে প্রথমে একটি যৌথ অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। তবে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, এই অ্যাকাউন্ট খোলার প্রক্রিয়াটি ততোটা সহজ নয়। যা তাদের পথে পথে অনেক বাধার মুখোমুখি হতে বাধ্য করে। এমনটা হয় মূলত বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ নীতির কারণে। যা বিদেশী বিনোগকারীদের গ্রহণকৃত ঋণ এদেশের রিয়েল এস্টেটে ব্যবহার করতে দেয় না। ফলস্বরূপ, বিদেশী বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে সীমাবদ্ধ করতে বাধ্য হন। এখন যদি আমরা বিশ্বের অন্যান্য দেশের রিয়েল এস্টেটের পটভূমি পর্যালোচনা করি তবে বিদেশী সম্পত্তি বিনিয়োগের নীতিটি এতটা কঠোর নির্দেশিকা মেনে চলে না। তারা সাশ্রয়ী মূল্যের অর্থায়নের প্রস্তাবও দেয়। উদাহরণস্বরূপ, জার্মানিতে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বছরে ১.৫-২% হার সুদে যে কোনও জার্মান ব্যাংক থেকে মোর্টগেজ পেতে পারেন, যা মোট সম্পত্তি ব্যয়ের ৭০% পর্যন্ত কাভার করবে। এ কারণেই রিয়েল এস্টেট খাতে এ জাতীয় সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সহজ এবং আগ্রহী প্রস্তাবনা প্রয়োজন। 

বিনিয়োগ প্রকল্পের মাধ্যমে নাগরিকত্ব

পাসপোর্ট
বিনিয়োগ প্রকল্পের মাধ্যমে নাগরিকত্ব প্রদান

বাংলাদেশের বিদেশী রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করার জন্য যদি এই জাতীয় প্রকল্পগুলো সত্যই গ্রহণ করা হত তাহলে তা বিদেশী রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগকারীদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারত! যদিও এই প্রক্রিয়াটি নতুন নয় তবে বিদেশী রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করার জন্য এর যথেষ্ট ক্ষমতা রয়েছে। এবং অনেক দেশ সক্রিয়ভাবে এই প্রকল্পটি অনুশীলন করছে। উদাহরণস্বরূপ, মাল্টা এবং সাইপ্রাস বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য বিনিয়োগের বিনিময়ে স্থায়ীভাবে নাগরিকত্ব প্রদান করছে। কেউ যদি সাইপ্রাসে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পেতে চান তবে একজনকে পাঁচ লক্ষ ইউরো বা ২ মিলিয়ন ইউরোর বেশি মূল্যের একটি প্রপার্টি কিনে নিতে হবে (এক্ষেত্রে অন্যান্য প্রপার্টিতে বিনিয়োগের দরকার নেই)। এমনকি মাল্টায়, এই পরিমাণটি ৩৫,০০০ ইউরোরও বেশি! প্রপার্টি ভাড়া দিতে হবে নাহলে পাঁচ বছরের মধ্যে ১৬,০০০ ইউরোর বেশি জমা দিতে হবে। তবে গ্রিসে এর পরিমাণ আরও কম। আবাসনের অনুমতি পাওয়ার জন্য সবচেয়ে ব্যয়বহুল উপায় হল, আবাসিক পারমিট পেতে রিয়েল এস্টেট প্রপার্টি ক্রয়ের জন্য একজনকে আড়াই হাজার ইউরোর বেশি ব্যয় করতে হবে। এই জাতীয় বিনিময় কর্মকান্ড সত্যিই কার্যকরী। আমাদের সরকারও বিদেশী রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে এই জাতীয় পরিকল্পনা চালু করার বিষয়ে ভাবতে পারে

আরও বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করা 

বিনিয়োগ
আরও বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করতে হবে

বিদেশী রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করার জন্য আরও ভালো বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করতে হবে। প্রপার্টি কেনা ব্যতীতও রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগের প্রচুর উপায় রয়েছে। রিয়েল এস্টেট ইটিএফ (এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ড) বা আরআইআইটি (রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট) সংস্থাগুলোতে বিনিয়োগ করা একটি দুর্দান্ত উপায় হতে পারে! রিয়েল এস্টেট মিউচুয়াল ফান্ড এর মাধ্যমে রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগর উপায়টিও কিন্তু চমৎকার প্রমানিত হতে পারে, তবে অনলাইন রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগ প্ল্যাটফর্মগুলো রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ করাকে সত্যি আরও সহজ করে তুলছে। বিদেশী বিনিয়োগকারীরা এই প্ল্যাটফর্মগুলোর পুরো সুবিধা নিতে পারে। রিয়েল এস্টেট খাতে বিদেশী বিনিয়োগ এর  সুযোগ তৈরি করে বিদেশী রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগকারীদের মনোযোগ আকর্ষণ করা যেতে পারে।  

এই উপায় গুলো ছাড়াও, বিশেষ কিছু অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোকে প্রস্তুত করাও বিনিয়োগের সুযোগ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আমাদের মূল লক্ষ্য রিয়েল এস্টেট খাতে বিদেশী বিনিয়োগ কারীদের আগ্রহ বাড়িয়ে তোলা এবং বাংলাদেশকে একটি বড় রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।

Write A Comment