Reading Time: 4 minutes

প্রশ্নটি যখন অর্থ সংক্রান্ত এবং আপনার কষ্টার্জিত  অর্থের সঠিক বিনিয়োগের, তখন অনেকগুলো বিষয়কে মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন।  বিশেষত ২০২১ সালে, এই করোনাকালীন বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে যখন সবকিছু এগিয়ে যাচ্ছে, তখন আপনার উপার্জিত অর্থগুলোকে অলস ফেলে রাখার মানে নেই। এক্ষেত্রে এমন একটি বিনিয়োগ খাত নিয়ে ভাবতে হবে যেখানে সবচেয়ে নিরাপদে বিনিয়োগ করা সম্ভব, এবং সুনিশ্চিতভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব। আর এসব দিক বিবেচনায় রিয়েল এস্টেট এর চেয়ে আদর্শ খাত আর কী হতে পারে!  আজকের লেখায় জেনে নিন, রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগ কেন আপনার বর্তমান ও ভবিষ্যতের নিরাপত্তার জন্য সেরা সিদ্ধান্ত।   

ক্যাশ ফ্লো এর নিশ্চয়তা 

মর্টগেজ এবং অন্যান্য খরচের পর রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগ এর মত দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ থেকে আসা মোট আয়কে বলা হয় ক্যাশ ফ্লো। ক্যাশ ফ্লো তৈরি করাটা এই বিনিয়োগের একটি অন্যতম ইতিবাচক দিক। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মর্টগেজ বা হোমলোন পরিশোধ করে দেওয়ার পর, সময়ের সাথে সাথে ক্যাশ ফ্লো বাড়তে থাকে। উন্নতমানের কিংবা সুবিধাজনক রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগ করা হলে এ ক্যাশ ফ্লো বৃদ্ধি পাওয়ার সুযোগ আরও বেশি থাকে। 

দেয়াল ও কয়েন
রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগ এ সময়ের সাথে সাথে ক্যাশ ফ্লো বাড়তে থাকে

ট্যাক্স বেনিফিট ও ডিডাকশন

যে কোনপ্রকার প্রদর্শিত আয়ের উপরে ট্যাক্স প্রদান বাধ্যতামূলক। তবে সবসময়ই মানুষ উপায় খোঁজে কীভাবে নিয়মের মধ্যে থেকে কম ট্যাক্স প্রদান করা যায়। আর এক্ষেত্রে রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ এক দারুণ সুযোগ। কেননা, রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগ -এ ট্যাক্স ব্রেক ও ডিডাকশনের সুবিধা পাওয়ার সুযোগ থাকে। এতে আপনার ট্যাক্সের বেশ কিছু অর্থ বেঁচে যাবে। বেঁচে যাওয়া ট্যাক্সের এ অর্থ দিয়েই কিন্তু চাইলে প্রপার্টির দেখাশোনা ও মেরামত এর খরচ বহন করা সম্ভব। নির্মিত ভবনের দাম সময়ের সাথে কিছুটা কমলেও, জমির দাম কিন্তু কখনোই কমে না। সাধারণত আবাসিক সম্পত্তির মূল্য ২৭.৫ বছর ধরে এবং ব্যবসায়ীক সম্পত্তির মূল্য ৩৯ বছর ধরে ধীরে ধীরে কমে বলে ধরে নেওয়া হয়। সুতরাং, রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ করলে, এই লম্বা সময় ধরেই কম ট্যাক্সের সুবিধা উপভোগের সুযোগ পাবেন আপনি। 

রিয়েল এস্টেটের দাম ঊর্ধ্বগামী

দি ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব রিয়ালটরস তথ্যমতে, ১৯৬৮ থেকে শুরু করে প্রতি বছর রিয়েল এস্টেটের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৬% করে, এমনকি ২০০৭ সালে অর্থনৈতিক মন্দার সময়েও তা বজায় ছিল। সুতরাং, বিনিয়োগ নিয়ে চিন্তিত থাকলে অবশ্যই তার জন্য ভালো একটি খাত হতে পারে রিয়েল এস্টেট। অনেকেই আছেন যারা অনেক বছর কাজ করে হয়তো এখন অবসর নেবেন, এমন বয়সে ঝুঁকি নেবার মতন মানসিকতা অনেকের থাকে না, তাঁরা খোঁজেন নিরাপদ বিনিয়োগের খাত। এদিক থেকে রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগ এর চেয়ে কম ঝুঁকিপূর্ণ উপায় আর কি-ই বা হতে পারে! 

আপওয়ার্ড গ্রাফ
রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগ সবচেয়ে নিরাপদ ও লাভজনক বিনিয়োগ

ভাড়ার মাধ্যমে আয়

অনেকেই রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগ করেন, প্রপার্টি ভাড়া দেয়ার মাধ্যমে প্রতি মাসে একটা ভালো অঙ্কের অর্থ উপার্জন করতে। ভাড়ার জন্য এ বিনিয়োগ আবাসিক বা কমার্শিয়াল যে কোনো প্রপার্টিতেই হতে পারে।  আপনি যদি ওই এলাকায় আর থাকতে না চান, বা ভাড়া দিয়ে অন্য কোথাও শিফট করতে চান, সেক্ষেত্রেও রিয়েল এস্টেট এ বিনিয়োগ একটি সেরা উপায়।   এছাড়াও, আপনি যদি প্রপার্টি বিক্রি করে দিতে চান কিন্তু ভালো দাম পাবেন না বলে আশংকা করেন, তাহলেও কিছু সময়ের জন্য তা ভাড়া দিয়ে রাখতে পারেন এবং দাম বাড়লে বিক্রি করে দিতে পারেন। যেভাবেই চিন্তা করুন না কেন, এই খাতে আপনার লোকসানের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।  

অন্যান্য সম্পত্তির তুলনায় ঝুঁকি কম

স্বর্ণ, শেয়ার মার্কেট বা ইলেকট্রনিকস এর মতো সম্পত্তিগুলোয় বিনিয়োগ, অনেক সময় বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। কারণ, এ ধরনের প্রপার্টির মার্কেট ভ্যালু রাতারাতি পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু রিয়েল এস্টেটের মূল্য খুব সহজে ওঠানামা করে না। বরং রিয়েল এস্টেটকে বলা চলে দীর্ঘমেয়াদী অথচ লাভজনক বিনিয়োগ। যারা বড় ধরনের লাভের আশা করেন, এবং দীর্ঘ সময় ধরে বিনিয়োগ করতে চান, তাদের জন্য সেরা বিনিয়োগ হচ্ছে রিয়েল এস্টেট।  

Agrabad, Chattogram
দীর্ঘ সময় ধরে বিনিয়োগ করতে চান, তাদের জন্য সেরা বিনিয়োগ হচ্ছে রিয়েল এস্টেট

ইম্প্রুভমেন্টের সুযোগ 

রিয়েল এস্টেটের একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো, সামান্য কিছু অর্থায়নে প্রপার্টির ইম্প্রুভমেন্ট করা যায় এবং এর ফলে প্রপার্টির মূল্য বৃদ্ধি পায়। যেহেতু বাড়ি নির্মাণে সিমেন্ট, ইট, কাঠ, কাঁচ ও কংক্রিটে তৈরি, তাই আপনি যে কোনো সময়ে আরো আধুনিক উপকরণ ব্যবহার করে এর উন্নতিসাধন করতে পারেন। যদি কোনো কারণে রিয়েল এস্টেটের কোনো অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এক্ষেত্রে সেটিও মেরামত করার সুযোগ থাকে। 

মুদ্রাস্ফীতির শঙ্কামুক্ত বিনিয়োগ 

বর্তমান বিশ্বে আর্থিক শঙ্কার একটি বড় কারণ মুদ্রাস্ফীতি। তবে, এ আশঙ্কা থেকে আপনাকে মুক্তি দিতে পারে রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ।  কারণ, নগদ টাকার মূল্য যেভাবে কমে যায় কোন একটি রিয়েল এস্টেট প্রপার্টির মূল্য সেভাবে কমে না। আপনি নগদ অর্থ ব্যাংকে রেখে দিলে মুদ্রাস্ফীতির কারণে তার মূল্যমান কমে যেতে পারে। কিন্তু, নিজেই ভেবে দেখুন, ১০ বছর আগে আপনি কত টাকা দিয়ে একটি জমি ক্রয় করেছিলেন আর আজকে তার দাম কত। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে দেখতে পারেন নিচের ভিডিওটি। 

বিগত কয়েক দশকে রিয়েল এস্টেট সেক্টর এ মূল্যবৃদ্ধির  তারতম্যটা ছিল চোখে পরার মত। সাথে ব্যাংক লোন এর সহজলভ্যতা, রাজনৈতিক অবস্থার স্থিতিশীলতা এ সবকিছুই রিয়েল এস্টেট মার্কেটে একটি ইতিবাচক প্রভাব রেখেছে।। এসব দিক বিবেচনা করে, নিশ্চয়ই আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কেন রিয়েল এস্টেট এ বিনিয়োগ করবেন আপনি। আজকের ব্লগটি নিয়ে আপনার যে কোনো মতামত জানান মন্তব্যের ঘরে।  

Write A Comment

Author