Reading Time: 4 minutes

বর্তমান যুগে তরুণদের মধ্যে রুম শেয়ার করে থাকার অভ্যাস ধীরে ধীরে বাড়ছে। পড়াশুনা হোক কিংবা চাকরি, যুবক ও তরুণেরা গ্রাম অথবা মফস্বল থেকে ধীরে ধীরে বড় শহরগুলোতে বাস করতে শুরু করেছে। যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে, সেই হারে গড়ে উঠেনি বাসস্থান। ঢাকা, চটগ্রাম বা সিলেটের মত ব্যস্ত নগরীতে বাসা ভাড়াও বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। আর সেজন্যই বড় শহরগুলোতে রুম শেয়ার হয়ে উঠছে খুবই কমন একটি ব্যাপার।

সম্পূর্ণ অপরিচিত অথবা স্বল্প পরিচিত কারো সাথে একটি নতুন বাসায় উঠে রুম শেয়ার করে থাকাটা প্রথম প্রথম কিছুটা কঠিন এবং অস্বস্তির হতে পারে। প্রতিটি মানুষই একে অপরের চাইতে আলাদা। আর আলাদা একজন মানুষের সাথে শোবার ঘর, রান্নাঘর এমনকি বাথরুম ভাগাভাগি করে থাকাটা অনেকের জন্যই হতে পারে চ্যালেঞ্জিং। তবে মানুষ সবচেয়ে বুদ্ধিমান সামাজিক জীব। আগে থেকেই বোঝাপড়া করে নিয়ে, সময়ে সময়ে কিছুটা ছাড় দিয়ে এবং উপস্থিত বুদ্ধি খাটিয়ে আপনি আপনার থাকার জায়গাটিকে করে তুলতে পারেন আনন্দময় স্থান। আর আজকের লেখাও এমনই ৫টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট নিয়ে, রুম শেয়ার করে থাকতে হলে যা আপনার জেনে রাখা উচিত।

বোঝাপড়া করে নিন একদম শুরুতেই

ভাঙ্গা ঘর
একদম শুরুতেই নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া করে নিন

তুলনা দেয়াটা হয়ত সম্পূর্ণ যৌক্তিক না তবে, কোন রিলেশনশিপে যেমন একজন আরেকজনের সাথে অনেক বোঝাপড়া করে নিতে হয় ঠিক তেমনি আপনি যখন রুম শেয়ার করবেন, আপনার উচিত আপনার রুমমেটের সাথে কিছু জিনিস নিয়ে বোঝাপড়া করে নেয়া। আর তা হতে হবে একদম শুরুতেই। হতে পারে আপনি সিগারেটের ধোঁয়া সহ্য করতে পারেন না অথচ আপনার রুমমেটের আছে ধূমপানের অভ্যাস। আপনি হয়ত রুম গুছিয়ে রাখতে পছদ করেন অথচ আপনার সাথের জন এলোমেলো, আপনি বেশি রাত করে ঘুমান না কিন্তু রুমমেট জাগে সারা রাত। যেহেতু প্রতিটি মানুষই আলাদা, আপনি চাইলেও হয়ত অনেকের অভ্যাস বদলাবে না। কিন্তু যেটি সম্ভব সেটি হল, এক রুমে দুজনের যাত্রা শুরু করার আগেই নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া করে নেয়া। দুজনেই দুজনের চাওয়া পাওয়া সম্পর্কে আগেভাগে জানলেই পরবর্তীতে অনেক সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

রুম শেয়ার করতে ঠিক করে নিন কিছু অলিখিত নিয়ম

একসাথে থাকতে গেলে দুজনেরই প্রয়োজন পড়বে অনেককিছুর। আর বাসা শেয়ার করে থাকতে গেলে দৈনন্দিন জিনিস নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি অসম্ভব কিছু না। গানের ভলিউম, অতিথির আনাগোনা, ঘুমানোর সময় লাইট অন-অফ রাখা, ঘর ঝাড় দেয়া বা পরিষ্কার রাখা থেকে শুরু করে টুথপেস্ট বা টয়লেট পেপার কেনা, সমস্যা হতে পারে অনেক কিছু নিয়েই। কিন্তু কিছু গ্রাউন্ড রুল সেট করলেই এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে সহজেই। হতে পারে মাসের শুরুতে একসাথে টাকা তুলে জিনিসপত্র কিনে ফেললেন দুজনে, পালাক্রমে ঘর পরিষ্কারের দায়িত্ব নিলেন, সাধারনভাবে রুমে ঢোকার একটি সময় নির্ধারন করে নিলেন। এভাবে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে যদি কিছু কমন নিয়ম সেট করে নেন, আপনাদের জীবন হয়ে উঠবে অনেক সহজ।  

প্রাত্যহিক কাজ ভাগ করে নিন

রান্নাঘর
রুম শেয়ার করতে হলে নিজেদের মধ্যে কাজ ভাগ করে নেয়ার মানুষিকতা থাকতে হবে

একটি রুম পরিষ্কার রাখা, সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা, ঝাড়ু দেয়া বা মোছা, রুমের প্রতিটি বাসিন্দার সমান দায়িত্ব। এগুলো ছাড়া প্রাত্যহিক অনেক কাজ রয়েছে দৈনন্দিন জীবনে যা নিয়মিত করতে হয়। আর একসাথে থাকতে হলে নিশ্চিত করতে হবে এগুলো ঠিকঠাক মত চলছে। সুনির্দিষ্ট নিয়ম ছাড়া যে কোন ব্যবস্থাই ভেঙ্গে পড়তে বাধ্য। প্রাত্যহিক কাজ ভাগ করে নেয়ার মাধ্যমে দুজনের মধ্যে বোঝাপড়া যেমন বাড়বে তেমনই সব কিছু চলবে ঠিকঠাকমতন। আর যে মানুষের সাথে আপনি শোবার ঘর, রান্নাঘর এমনকি বাথরুম ভাগাভাগি করছেন, তার সাথে বোঝাপড়াটা আসলেই অনেক জরুরী।

সমস্যা মিটিয়ে ফেলুন ছোট থাকতেই

নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন সমস্যা ছোট অবস্থাতেই মিটিয়ে ফেলুন

সামান্য কয়েলের ধোঁয়া বা লাইট অফ করা, রুমের আসবাব ঠিকমত রাখা বা জানালা বন্ধ করা, একসাথে থাকতে গেলে রুমমেটদের মাঝে ঠুকোঠুকি লাগবেই! মাথা ঠাণ্ডা রেখে এসব পরিস্থিতি খুব সহজেই আয়ত্বে নিয়ে আসা যায়, কিন্তু কোন কারণে এড়িয়ে যেতে থাকলে একসময় এমন ছোট ছোট সমস্যাই হয়ে উঠে মহীরুহ। তাই দুজনের ভুল বোঝাবুঝি বা ভবিষ্যতে হতে পারে এমন কোন সমস্যাকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে ফেলতে হবে। যত ছোটই হোক না কেন, সমস্যাকে সমস্যার মূল্য দিতে হবে আর তার সমাধান করতে হবে নিজেদের মাঝেই।

নিশ্চিত করুন পারসোনাল স্পেস

যেহেতু রুমে দুজন মানুষ থাকছেন, একে অপরের অনেক কিছুই হয়ত জানা থাকবে যা আলাদা থাকলে কখনোই জানা সম্ভব না। একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে, সেগুলোকে নিজের মধ্যেই রাখুন। এক সাথে থাকতে হলে যতটুকু কাছে আসতে হয় আসুন কিন্তু একে অপরের ব্যক্তিগত স্পেসে কখনোই হস্তক্ষেপ করবেন না। এই পারসোনাল স্পেস মানুষ ভেদে আলাদা হয়। তাই সাথে থাকতে থাকতে একজন আরেকজনকে চিনে নিন। কে কোন বিষয়কে কতটা গুরুত্বসহকারে নেয় তা দেখুন এবং সেভাবে নিজেকে ঠিক করে নিন। মোদ্দাকথা, আপনার রুমের অন্য বাসিন্দার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখুন, তাহলেই আপনি তার কাছে থেকে একই রকম ব্যবহার আশা করতে পারেন।

প্রতিনিয়ত মানুষ বৃদ্ধি পাওয়া এই এই যুগে রুম শেয়ার হয়ে উঠছে খুবই কমন। আর একসাথে থাকতে হলে কিছু না কিছু ছাড় তো দিতেই হয়। এজন্যই এই ৫টি নিয়ম হয়ত আপনার জীবনে কাজে লাগবে। আর যদি তাই হয় আমাদের মন্তব্যে তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার রুম শেয়ারের অভিজ্ঞতা থাকলে সেটি শুনতেও আমরা আছি অপেক্ষায়!

Write A Comment