Reading Time: 4 minutes

রেসিডেনসিয়াল প্রপার্টি কেনার সময় সাশ্রয়ী মূল্যে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাওয়ার দিকেই মনোযোগী হই আমরা। অর্থাৎ প্রপার্টির দাম এখানে বেশ বড় একটি বিষয়। কিন্তু ঠিক কোন বিষয়গুলোর ওপর ভিত্তি করে রেসিডেনসিয়াল প্রপার্টির মূল্য নির্ধারণ হয় তা কী কখনো ভেবে দেখেছেন? আপনি হয়তো ভাবছেন, ভেবে দেখা কেন জরুরি! এখানে বলে রাখি, কোন বিষয়গুলো রেসিডেনসিয়াল প্রপার্টির মূল্যমান বাড়ায় বা কমায় সেসব জেনে রাখলে কিন্তু ক্রেতা ও বিক্রেতা দুজনই সুবিধা পাবেন। ক্রেতা হিসেবে এক্ষেত্রে বোঝা সহজ হবে যে কতটুকু দর কষাকষি করবেন, আর যদি বিক্রেতা হন তবে যথার্থ মূল্যমান নির্ধারণে এগুলো জানার গুরুত্ব তো অনেক বেশি! তবে আসুন জেনে নেই কোন বিষয়গুলোর ওপর নির্ভর করে রেসিডেনসিয়াল প্রপার্টির মূল্য নির্ধারণ। 

লোকেশন 

গুলশান ১
গুলশানে বাড়ির দাম মিরপুরের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি হবে কারণ নাগরিক সুবিধা গুলশানে অপেক্ষাকৃত উন্নত ও আধুনিক

লোকেশন বলতে দুটো জিনিস বোঝাচ্ছি। একটি হলো প্রপার্টিটি কোন এরিয়া বা এলাকায় অবস্থিত। আর আরেকটি হলো অ্যাপার্টমেন্ট বা বিল্ডিংয়ের কত তলায় প্রপার্টির অবস্থান। প্রথমে আসি এলাকার আলোচনায়। একই আয়তনের দুটো বাড়ির কথা ধরা যাক। একটি বাড়ি গুলশানে, আরেকটি মিরপুরে। গুলশানে কিন্তু বাড়িটির দাম মিরপুরের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি হবে। কারণ নাগরিক সুবিধা গুলো সেখানে অপেক্ষাকৃত উন্নত ও আধুনিক। 

এবার বলি কত তলার প্রপার্টি সেটি কীভাবে রেসিডেনসিয়াল প্রপার্টির মূল্য নির্ধারণ করে। এক তলায় প্রপার্টি হলে অনেক সময় কম আলো বাতাসের কারণে প্রপার্টির দাম কমে যায়। আবার ওপর তলায় প্রপার্টির দাম বেশি হলেও অনেক সময় লিফট না থাকায় বেশি ওপরতলার প্রপার্টির দাম কম হয়। সহজ ভাবে বলা যায়, যে এলাকায় রেসিডেনসিয়াল প্রপার্টিটি রয়েছে সেখানকার সুযোগ সুবিধা, জীবনব্যবস্থা ইত্যাদির ওপর এবং সুবিধাজনক ফ্লোরে এর অবস্থানের ওপর রেসিডেনসিয়াল প্রপার্টির মূল্য অনেকাংশেই নির্ভরশীল। 

আয়তন ও ব্যবহারযোগ্য স্থান 

লিভিং রুম
আয়তনের পাশাপাশি ব্যবহারযোগ্য স্থান কতটুকু সেটিও কিন্তু রেসিডেনসিয়াল প্রপার্টির মূল্য নির্ধারণ এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

বাড়ির দাম যেহেতু স্কয়ার ফুটের হিসাবে নির্ধারিত হয়, বড় আয়তনের বাড়ির মূল্য সাধারণত বেশিই হয়। যেমন, ১৪৫০ স্কয়ার ফুটের বাড়িতে প্রতি স্কয়ার ফুটের দাম ৩১৭২ টাকা হলে, মোট দাম হবে প্রায় ৪৬ লাখ টাকা। আবার প্রতি স্কয়ার ফুট একই দামের হলেও ২২০০ স্কয়ার ফুটের বাড়ির দাম হবে প্রায় ৬৯,৭৮,৪০০ টাকা। 

আয়তনের পাশাপাশি ব্যবহারযোগ্য স্থান কতটুকু সেটিও কিন্তু রেসিডেনসিয়াল প্রপার্টির মূল্য নির্ধারণ এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মূলত রেসিডেনসিয়াল প্রপার্টিতে যত বেশি বেডরুম আর যত বেশি বাথ্রুমের ব্যবস্থা থাকবে দাম ততই বেশি বাড়বে। ব্যবহারযোগ্য স্থান বলতে মূলত কয়টি বেডরুম ও বাথরুম রয়েছে সেটিই বোঝানো হয়। এলাকাভেদে এসব ক্ষেত্রে খানিকটা ভিন্নতা দেখা যায়, তবে আয়তন ও ব্যবহারযোগ্য স্থান রেসিডেনসিয়াল প্রপার্টির মূল্য নির্ধারণ এর সময় লক্ষ্য রাখা উচিত। 

নির্মাণ সামগ্রী 

নির্মাণ সামগ্রী
রেসিডেনসিয়াল প্রপার্টির মূল্য নির্ধারণ এর ক্ষেত্রে নির্মাণ সামগ্রীর কোয়ালিটি, প্রকৃতি, নিরাপত্তা এসব দেখতেই হয়

রেসিডেনসিয়াল প্রপার্টির মূল্য নির্ধারণ এর ক্ষেত্রে নির্মাণ সামগ্রীর কোয়ালিটি, প্রকৃতি, নিরাপত্তা এসব দেখতেই হয়। যেমন, কংক্রিট কাঠামোর বাড়ির দাম অবশ্যই কাঠের কাঠামোর বাড়ির তুলনায় বেশি। বিভিন্ন ধরনের ফ্লোরিংয়ের মূল্যও বিভিন্ন। এমনকি দরজা জানালার ফ্রেম, কাচের ধরন, উপাদান ইত্যাদিও রেসিডেনসিয়াল প্রপার্টির মূল্য নির্ধারণ এর সময় জরুরি ফ্যাক্টর। কারণ বাড়ি টেকসই হবে কিনা তা এসবের ওপর নির্ভরশীল। 

নকশা ও কার্যকারিতা 

সাজানো ডাইনিং রুম
আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর বাড়ির দাম অবশ্যই অপেক্ষাকৃত বেশি

রেসিডেনসিয়াল প্রপার্টির মূল্য নির্ধারণ এ বাড়ির নকশা ও এর কার্যকারিতা ভীষণ প্রয়োজনীয়। যেমন আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর বাড়ির দাম অবশ্যই অপেক্ষাকৃত বেশি। আর কার্যকারিতার ব্যাপারটিও লক্ষণীয়। কারণ বাড়ি যত ব্যবহার উপযোগী সুবিধা  সম্বলিত হবে দাম ততই বাড়বে। ফুল ফার্নিশড বাড়ি, বিশেষত যেখানে এইচভিএসি বা হিটিং, ভেন্টিলেশন ও এয়ার কন্ডিশনিং অর্থাৎ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণের সকল সুব্যবস্থা আছে সে বাড়ির দাম অবশ্যই সাধারণ বাড়ির চেয়ে বেশি হবে। 

বয়স ও বর্তমান অবস্থা 

রেসিডেনসিয়াল প্রপার্টি নির্মাণ
রেসিডেনসিয়াল প্রপার্টির বয়স ও বর্তমান অবস্থাও মূল্য নির্ধারণের সময় জরুরি বিষয়

নতুন রেসিডেনসিয়াল প্রপার্টির দাম যে বেশি হবে সেটি তো জানা কথা! কারণ নতুন বাড়িতে আছে নতুন প্লাম্বিং, নতুন ইলেক্ট্রনিক সিস্টেম, নতুন যন্ত্রপাতি ও নতুন ছাদ; ফলে সেখানে কিছু নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কম। আর তাই বেঁচে যাবে সেসব মেরামতের খরচও, যা যেকোনো বুদ্ধিমান বিক্রেতার কাছে আকর্ষণীয় ব্যাপার। হোম ইন্সপেকশনে যা যা দেখবেন সে তালিকায় তাই এগুলো থাকা জরুরি। 

এগুলো রেসিডেনসিয়াল প্রপার্টির মূল্য নির্ধারণ এর সময় খেয়াল রাখার মতো দৃশ্যমান বিষয়াদি। তবে আরো কিছু ব্যাপার যেমন বাজারের অবস্থা, চাহিদা ও যোগানের পরিস্থিতি, সুদের হার এবং জনসংখ্যার প্রকৃতির ওপর রেসিডেনসিয়াল প্রপার্টির মূল্য নির্ধারণ এর ব্যাপারটি অনেকটুকুই নির্ভর করে। 

আশা করছি, আজকের ব্লগ থেকে রিয়েল এস্টেট মার্কেটের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক সম্বন্ধে জানতে পেরেছেন আপনি। সব সময়ের মতো, কমেন্টে এ সম্পর্কে আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না! 

Write A Comment