Reading Time: 4 minutes

করোনা ভাইরাস মোকাবেলা করতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। আমরা যারা হোম কোরেন্টাইনে আছি সবারই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো উচিত। ঘরের সুরক্ষার সাথে নিজের শরীরের সুরক্ষাও নিশ্চিত করতে হবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আমাদের শরীরে হওয়া প্যাথোজেনিক আক্রমণ (ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা অন্যান্য জীবাণু) থেকে রক্ষা করে এবং গুরতর রোগ যেমন ক্যান্সার, রোদে পোড়া, টিউমার ইত্যাদি থেকে সুরক্ষা দেয়। এটাই আমাদের অর্কেস্ট্রাল সিঙ্ক্রোনাইজেশন এবং এটা চলে থাকে অর্কেস্ট্রা মাস্টারের নির্দেশে। যেমন, সংগীত শিল্পীরা একত্রে একই সুরে গান করে থাকে তেমনি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও একই ধরণের কাজ করে থাকে। সুস্থ ও স্বাস্থ্যবান হওয়ার জন্য আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সচল এবং বৃদ্ধি করতে হবে। আপনার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এখানে কয়েকটি দরকারী টিপস আছে এখানে, দেখে নিন… 

স্বাস্থ্যকর খাবার ও পানি পান করা 

সবজী খাবার
স্বাস্থ্যকর খাবার

বাসায়ই আছেন যেহেতু তাই আপনাকে ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে পারেন এবং প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। আপনরা রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়া সচল রাখতে ভিটামিনের গুরুত্ব অপরিসীম। ভিটামিন এ, সি, ই, বি৬ এবং বি১২, জিংক, আয়রন, কপার জাতীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টযুক্ত খাবার খেতে হবে। দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা কার্যকারিতার ক্ষেত্রে এই ভিটামিনগুলো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।  দেহে ভিটামিন সি এর অভাব সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে। যেহেতু আমাদের দেহ জল দ্রবণীয় এবং প্রয়োজনীয় ভিটামিনগুলো উৎপাদন করতে পারে না, তাই এই প্রয়োজনগুলো নির্দিষ্ট খাবার গ্রহণের মাধ্যমে পূরণ করতে হবে। অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান হচ্ছে প্রোটিন। প্রোটিনের ভেতরে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিডগুলো আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সব ধরণের সবুজ শাক-সবজী, লেবু জাতীয় ফল এবং দুধের তৈরি খাবারগুলোতে এই সবগুলো ভিটামিনই পাবেন। এছাড়াও, রোজ প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে ভুলবেন না কোনভাবেই। কেননা, আমাদের শরীরে ৬০% ই পানি মিশ্রিত। সুতরাং, রোজ পানি পান করা দরকার।

স্ট্রেসকে না বলুন! শান্ত থেকে একটিভ হোন 

স্ট্রেস টাইপো
নিজেকে দুশ্চিন্তামুক্ত রাখুন

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়া সচল রাখতে খাবারের পাশাপাশি নিজেকে দুশ্চিন্তামুক্ত রাখাটাও বেশ জরুরী। দীর্ঘ সময়ের জন্য দুশ্চিন্তা পুষে রাখলে এর কারণে দেহে ব্যাপক পরিমাণে কর্টিসলের উত্তোলন হয়।  কর্টিসল একটি স্টেরয়েড হরমোন যা স্বল্পমেয়াদী চাপের জন্য উপকারী কিন্তু দীর্ঘমেয়াদ স্ট্রেস থাকলে এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সচল থাকায় বাঁধা সৃষ্টি করে থাকে। যার দরুন দেহে রোগ জীবাণু প্রবেশ করার সুযোগ পায়। কোয়ারান্টাইন চলাকালীন সময়ে মানসিক চাপ কিছুটা বেড়ে যায়। এইসময়ে আমাদের নিজেদের প্রতি হতে হবে আরও বেশি সচেতন।নিজেকে চাপ মুক্ত রাখতে, অ্যাকটিভ হতে হবে, রুটিন মেনে চলতে হবে, মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হবে, ভার্চুয়ালি বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে, পরিবারের সকলের সাথে সময় কাটাতে হবে। এছাড়াও আরও অনেক কিছুই করতে পারেন, বই পড়া থেকে শুরু করে গান শোনা সবকিছুই আপনাকে রাখবে চাপ মুক্ত। এবং অবশ্যই নেতিবাচক চিন্তাভাবনা থেকে দূরে থাকুন। 

পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম 

ঘড়ি
পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম দেহের জন্য বয়ে আনে সুস্থতা

ঘুম আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সচল রাখতে সাহায্য করে। ঘুমের কোন বিকল্প নেই এই প্রক্রিয়াকে সচল রাখতে। ঘুমের মধ্যে আমাদের দেহে টি-সেলের উৎপত্তি হয়, যা এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে কাজ করেন। এছাড়াও তৈরি হয়  সাইটোকাইনস, ইন্টারলেউকিন – ১২। দেহে এই সেলগুলোর সঠিক ক্রিয়াকলাপ না হলে দেশে নানারকম রোগের আগমন ঘটতে থাকে। গবেষণায় বলা হয়ে থাকে, অনিদ্রাজনিত মানুষ শরীরে টিকা দেওয়ার পরও ধীরে ধীরে মারাত্মক ঝুঁকিতে পরিণত হয়। সুতরাং, পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম দেহের জন্য বয়ে আনে সুস্থতা।

অলস সময় না কাটিয়ে, ব্যায়াম করুন 

ব্যায়ামের ইন্সট্রুমেন্ট
ব্যায়াম করুন

অ্যাকটিভ থাকার এই মানে নয় যে শুধু বাসা থেকে কাজ করলেই হিসেব চুকে গেল। আপনাকে কিছু ব্যায়াম করতে হবে সুস্থ থাকার জন্য। অনেক ফ্রী হ্যান্ড ব্যায়াম রয়েছে যেগুলো ঘরে বসেই করা যায় সেগুলো করুন নিজেকে অ্যাকটিভ  রাখুন। ব্যায়াম আপানর শরীরের শ্বেত রক্ত কণিকাকে সঞ্চালন করতে সহায়তা করে। এতে ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। সুতরাং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অ্যাকটিভ  থাকার কোন বিকল্প নেই। 

আত্ম-নিয়ন্ত্রণ করুন

স্পোর্টস পার্সন
নিয়ন্ত্রণ আনুন এবং সুস্থ থাকুন

তামাক জাতীয় দ্রব্যের কোন নেশা আপনার থেকে থাকলে তা বাদ দিতে হবে। নিজের ভেতর নিয়ন্ত্রণ আনুন এবং তামাক জাতীয় দ্রব্য থেকে দূরে থাকুন। ধূমপান সরাসরি শরীরের টি-সেল, বি-সেল এবং সাইটোকাইনগুলোর সাধারণ ক্রিয়াকলাপে হস্তক্ষেপ করে, যার কারণে, হাঁচি কাশি, হাঁপানি, ডায়াবেটিকস বা হৃদ রোগগুলো বেশি হয়। সেজন্য এই সমস্ত রোগ থেকে বাঁচতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে নিজের ভেতর তামাক বিরোধী নিয়ন্ত্রণ আনুন এবং সুস্থ থাকুন। 

এখন থেকে আপনার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বাড়ানো শুরু করুন। আপনার রুটিন পরিবর্তন এবং ভাল অভ্যাস তৈরির মাধ্যমে, নিজের জন্য বেছে নিন সুস্থ একটি জীবন। কেননা, আপনার স্বাস্থ্যকর অভ্যাসই আপনাকে এই কঠিন অবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করতে পারে। কোন পরামর্শ বা মতামত থাকলে নিচে কমেন্ট করতে পারেন। 

1 Comment

Write A Comment