শীতের আগমনে প্রকৃতির মাঝে যে বিষণ্ণতা নেমে আসে, তা দূর করতেই মূলত প্রয়োজন হয় আলোর। গ্রীষ্মকালের মতো সূর্যের প্রখরতা শীতকালে অতটা না থাকায়, কুয়াশায় ঢাকা প্রকৃতির আবহ ঘরের ভেতরের পরিবেশে যেন প্রভাব ফেলতে না পারে, সেজন্য প্রয়োজন ঘরের ভেতরে যথাযথ আলোকসজ্জা কিংবা লাইটিং এর ব্যবস্থা করা। বসার ঘর, শোবার ঘর, ড্রইং-ডাইনিং কিংবা কিচেন এরিয়া; ঘরের একেকটি কর্নারে একেক ধরনের আলো হয় মানানসই। তবে চলুন শীতকালে ঘরের ইন্টেরিয়র ডিজাইন এর জন্য লাইটিং বা শীতকালে ঘরের আলোকসজ্জা কেমন হতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই আজকের ব্লগ থেকে।
লিভিং এরিয়া
ইন্টেরিয়র ডিজাইন এর জন্য বরাবরের মতোই আলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই আলো দিয়ে ঘর সাজানোর ক্ষেত্রে সবসময়ই এই বিষয়টি বিবেচনায় রাখা জরুরি যে ঘরের আকার-আয়তন, আসবাবপত্র এবং ধরন অনুযায়ী লাইটিং বা আলোকসজ্জায় ভিন্নতা থাকবে এমনটাই স্বাভাবিক। তবে চলুন, শীতকালে ঘরের আলোকসজ্জা এর বিষয়ে আলোচনা লিভিং রুম দিয়েই শুরু করা যাক। সাধারণত লিভিং এরিয়ায় জানালার ব্যবস্থা থাকে। ফলে আলো-বাতাস প্রবেশের সুযোগও থাকে অনেক। তবে কুয়াশাচ্ছন্ন শীতকালে জানালা বা ব্যালকনি দিয়ে আলো প্রবেশের সুযোগও কমে আসে। তাই ফ্যামিলি লিভিং এর এরিয়াতে আলোর ব্যবস্থাও থাকা উচিত শতভাগ।
এক্ষেত্রে ঘরের মাঝে বিশাল কোন ঝাড়বাতি না রেখে, ঘরের একেক কর্নারে রাখা জিনিসের সাথে মানানসই হবে এমন ল্যাম্প বা অ্যাকসেন্ট লাইট ব্যবহার করতে পারেন। একেক কর্নারে লাগানো এই লাইটগুলো নির্দিষ্ট দেয়ালের পাশাপাশি পুরো ঘর আলোকিত করে রাখবে। শীতের সময় আশপাশ যেহেতু অনেকটা বিমর্ষ হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে ছোট ছোট লাইটগুলো ‘মুড চেঞ্জার’ হিসেবে কাজ করবে। ঢাকার এক্সক্লুসিভ ইন্টেরিয়র ডেকোর স্টোর থেকে আপনি আকর্ষণীয় ডেকোর আইটেমের পাশাপাশি নান্দনিক ডিজাইনের লাইটিং ও কিনতে পারবেন।
ডাইনিং এরিয়া
ডাইনিং এরিয়া, পরিবারের সবার একসাথে আড্ডা দেয়ার জন্য দারুণ জায়গা। সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে খাবার খাওয়ার আর সাথে জম্পেশ আড্ডার এই জায়গাটি তাই আলো ঝলমলে রাখা জরুরি। শীতের সময়ে প্রকৃতি যেহেতু বিমর্ষ রূপ ধারন করে, তাই এই সময়টাকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলতে যথাযথ আলোক ব্যবস্থা থাকা জরুরি। ডাইনিং এরিয়ার জন্য তাই মাঝারি সাইজের আকর্ষণীয় ঝাড়বাতি এর ব্যবস্থা করতে পারেন। এছাড়া আপনি যদি মডার্ন ভাব ফুটিয়ে তুলতে চান, তবে পেনডেন্ট লাইট ব্যবহার করতে পারেন। সাধারণত ডাইনিং টেবিলের ঠিক উপরেই পেনডেন্ট লাইটের সেট আপ করা হয়। যেখানে একটি বাল্ব কিংবা সর্বোচ্চ ৩টি বাল্ব পর্যন্ত লাগানো যেতে পারে। যেহেতু পেনডেন্ট লাইটে একটি নির্দিষ্ট জায়গা ফোকাস পায়, তাই ডাইনিং টেবিলের উপর এই লাইট সেটআপ করার মাধ্যমে শীতকালে ঘরের আলোকসজ্জা আরও উষ্ণ এবং প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে।
বেডরুম ডেকোর
বেডরুমের ইন্টেরিয়র ডিজাইন করার ক্ষেত্রে গতানুগতিক লাইটিং ডেকোর থেকে কিছুটা ভিন্নতা আনতে বেড সেট করা দেয়ালটি অ্যাকসেন্ট লাইট দিয়ে ডিজাইন করে নিতে পারেন। বিশেষ করে, ওয়ালপেপার বা ব্রিক ডিজাইন করা দেয়ালের ক্ষেত্রে অ্যাকসেন্ট লাইট বেশ দারুণ এক আবহ তৈরি করে। আর অ্যাকসেন্ট লাইটের সাপোর্ট সিস্টেম হিসেবে ঘরের বিভিন্ন কর্নারে ফোকাস লাইট এর ব্যবস্থা করতে পারেন। শীতের সময় ঘরে উষ্ণ আবহ ধরে রাখতে ওয়ার্ম লাইট বা হলদে আলোর উপস্থিতি ঘরের ভেতরটা আরও মায়াবী করে তুলবে। আর তাই শীতকালে ঘরের আলোকসজ্জা -তে হলদে আলোর প্রভাব যত বেশি রাখা যাবে ততটাই আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে অন্দরের প্রতিটি কর্নার। এমনকি দেয়ালে আলোর এই সেটআপের পাশাপাশি বেড টেবিলের পাশে ল্যাম্প বা টাস্ক লাইটও রাখতে পারেন।
কিচেন এরিয়া
ডাইনিং এর ঠিক পাশে কিচেন এরিয়ার জন্য বেছে নিতে পারেন সিলিং স্পট লাইট। এই লাইট লাগানোর সবচেয়ে সুবিধার দিক হল শীতকালে ঘরের আলোকসজ্জায় স্পট লাইট যেমন অনেক বেশি চোখেও লাগবে না। তেমনি সিলিং এর নির্দিষ্ট কয়েকটি জায়গা নির্ধারণ করার ফলে মেইন লাইটের পাশাপাশি সম্পূর্ণ কিচেন এরিয়াটিও আলোকিত হয়ে থাকবে। আর অনান্য সব রুমের চেয়ে কিচেনে রান্নার কাজের জন্য হলেও আলো কিছুটা বেশি প্রয়োজন হয়। তাই লাইটিং আইডিয়া হিসেবে স্পট লাইট এবং এক্সপোসড বাল্ব হবে কিচেন এরিয়ার জন্য একদম পারফেক্ট লাইটিং সেটআপ।
ঘরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই রুমগুলো ছাড়াও শীতকালে ঘরের আলোকসজ্জার জন্য ফ্লোর ল্যাম্প, শেডেড দেয়াল ল্যাম্প অথবা পোর্টেবল ল্যাম্পও ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে যখন যে রুমে প্রয়োজন হবে সেখানে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা যাবে। আলোর অযথা এবং অতিরিক্ত ব্যবহার যেমন নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, তেমনি ঘরের বিভিন্ন কর্নারে আলোর ব্যবহার শীতের সময় ঘরের ভেতর উষ্ণতা ধরে রাখবে। এছাড়া ঘরের ইন্টেরিয়র ডিজাইনে ক্ল্যাসিক ভাব ধরে রাখতে শীতকালে ঘরের আলোকসজ্জা এর জন্য পারফিউম ক্যান্ডেল এর ব্যবহার হবে আরও আকর্ষণীয়।
আর তাই আপনার ব্যক্তিত্ব এবং রুচি অনুযায়ী শীতকালে ঘরের আলোকসজ্জা করতে পারেন একেক রুমের জন্য একেক ডিজাইন অনুযায়ী। আর এভাবেই পেনডেন্ট লাইট, অ্যাকসেন্ট লাইট কিংবা চমৎকার ফ্লোর ল্যাম্প ব্যবহারে শীতকালে ঘরের আলোকসজ্জা-তে পরিবর্তন আনতে পারেন খুব সহজেই।