Reading Time: 3 minutes

ব্যস্ত জীবনে কাজের ফাঁকে একটু সময় পেলেই সমুদ্র সৈকত ও লেকের খোঁজে যারা ছুটে যেতে চান প্রকৃতির মাঝে, তাদের কাছে ঘোরাঘুরির জন্য অন্যতম পছন্দের শহর চট্টগ্রাম। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই শহরে রয়েছে দারুণ সুন্দর সৈকত, বিশাল বিশাল পাহাড়, লেক, মজাদার খাবারের রেস্তোরাঁ, জাদুঘর আরও কত কী! পরিবারের সবাই মিলে কিংবা সপ্তাহের ছুটিতে কর্মব্যস্ত এই জীবন থেকে কিছুটা ছুটি নিয়ে মন ভালো করার জন্য দারুণ একটা ট্যুর দিয়ে আসতে পারেন সমুদ্রের বিশালতায় বন্দরনগরী হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম শহর থেকে। 

চট্টগ্রামের অলিগলি ঘুরে প্রকৃতির দেখা যেমন মিলবে, তেমনি পাহাড়ি এই এলাকায় ঘুরেফিরে বেশ শান্তিও লাগবে। এখানে রয়েছে মনোমুগ্ধকর ফয়েজ লেক, আছে পতেঙ্গা, পারকি, গুলিয়াখালীর মতো মনমাতানো সমুদ্র সৈকত, আছে  চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বিনোদন পার্ক এবং জাদুঘর-সহ আরও কত কী! তবে চলুন আজকের আয়োজনে চট্টগ্রামের বিভিন্ন সমুদ্র সৈকত ও লেক সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নেয়া যাক। 

ফয়েজ লেক

চট্টগ্রামের পাহাড়তলী রেলস্টেশনের অদূরে খুলশী এলাকায় অবস্থিত ফয়েজ লেক। এটি মানবসৃষ্ট একটি হ্রদ, যা একসময় পাহাড়তলী লেক হিসেবে পরিচিত ছিল। চারিদিকে পাহাড় ঘেরা এই জায়গার মাঝখানে রয়েছে অরুণাময়ী, গোধূলী, আকাশমনি, মন্দাকিনী, দক্ষিণী, অলকানন্দা নামের বেশ কিছু লেক। এক লেক থেকে আরেক লেকে ঘোরার জন্য রয়েছে সারি সারি নৌকার ব্যবস্থা।  সবুজ ঘেরা এই লেকের মাঝ দিয়ে যাওয়ার সময় হরেক রকমের পাখির ডাক এবং সূর্যের সাথে লুকোচুরি খেলা যেন মন ভালো করে দেবে নিমিষেই। থাকার জন্য ফয়েজ লেকে রয়েছে চমৎকার রিসোর্টের ব্যবস্থা। এছাড়া পাহাড় ঘেঁষা অপূর্ব সুন্দর এই লেক ঘিরে বানানো হয়েছে থিম পার্ক, আছে রেস্তোরাঁর ব্যবস্থা। এছাড়া চট্টগ্রামের সুপরিকল্পিত এলাকা  ঘিরে থাকা চট্টগ্রামের প্রধান কয়েকটি সড়ক এবং এভিনিউ সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন এই লিংকে।  

গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত 

স্থানীয় মানুষের কাছে মুরাদপুর সৈকত নামে পরিচিত গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত অবস্থিত চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলায়। সীতাকুণ্ড বাজার থেকে এর দূরত্ব মাত্র ৫ কিলোমিটার।  অন্য আর দশটি সমুদ্র সৈকত থেকে গুলিয়াখালী বেশ আলাদা। এর এক দিকে পানির স্রোত আর অন্যদিকে কেওড়া বন। রাশি রাশি সবুজের এই বন একটা সময় পুরো পানিতে ঢাকা পড়ে যায়, আবার ভাটায় ভেসে উঠে সবুজের নয়নাভিরাম গালিচা। এই সবুজের মাঝ দিয়ে তৈরি হওয়া রাস্তা দিয়েই আপনি সৈকতের মধ্যে হেঁটে চলতে পারবেন, দেখা মিলবে নাম না জানা সুরেলা অনেক পাখির সাথে। সমুদ্র সৈকত ও লেকের খোঁজে যারা থাকেন, তারা জেনে খুশি হবেন যে এই সৈকতে জনসমাগম কিছুটা কম হলেও, এর সৌন্দর্য নিজ চোখে না দেখলে উপলব্ধি করা কখনোই সম্ভব নয়। তাই চট্টগ্রাম ভ্রমণের একটা আকর্ষণীয় জায়গা হতে পারে গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত। 

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত 

পাহাড়, হ্রদ, বন ঘেরা বাংলাদেশের বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রামে রয়েছে বেশ কিছু সমুদ্র সৈকত। যার মধ্যে বেশ জনপ্রিয় পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে সুপরিচিত এই সৈকতে সূর্যাস্ত দেখতে ছুটে আসেন অনেক মানুষ। সমুদ্র সৈকত ও লেকের খোঁজে চট্টগ্রাম শহরে এসে জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই পতেঙ্গা সৈকত। এই সৈকতের খুব কাছেই রয়েছে বাংলাদেশ নেভাল একাডেমী ও নেভাল সমুদ্র সৈকত। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত নেভাল একাডেমী ও এর সমুদ্র সৈকতে জনসাধারণের প্রবেশের কোন অনুমতি নেই। তাই এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে আপনাকে পতেঙ্গা সৈকত থেকেই তাকিয়ে দেখতে হবে। সুন্দর একটি বিকেল বা সূর্যাস্ত দেখার জন্য হলেও চট্টগ্রামে আসলে তাই এই সমুদ্র সৈকত থেকে অবশ্যই ঘুরে যাওয়া উচিত।

বাটালি হিল 

চট্টগ্রাম শহরের সবচেয়ে উঁচু পাহাড় বাটালি হিল, যা চট্টগ্রামের জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার দূরে টাইগারপাস এলাকায় অবস্থিত। বাটালি হিলের রাস্তা বেশ প্যাঁচানো, আর তাই তো অনেকেই এটিকে জিলাপি পাহাড়ও বলে থাকে। ২৮০ ফুট উচ্চতার এই পাহাড় থেকে দেখা যায় পুরো চট্টগ্রাম শহর। শুধু তাই-ই নয়, এই পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখার অভিজ্ঞতা সে যেন অন্যরকম এক অনুভূতি। তাই চট্টগ্রামে যদি ঘুরতে যাওয়া হয়, তবে বাটালি হিলে ট্র্যাকিং করে সূর্যাস্তের অপরূপ সৌন্দর্য দেখার সুযোগ কিন্তু কোনভাবেই হাতছাড়া করা যাবে না! 

সমুদ্র সৈকত ও লেকের খোঁজে চট্টগ্রামে ঘুরতে যাবেন, আর জিভে জল আনা চট্টগ্রামের খাবারের স্বাদ নেয়া হবে না, তা তো হয় না! আপনার জন্য রেস্তোরাঁ খোঁজার কাজটা আরও সহজ করে দিতে, এই আর্টিকেলে চট্টগ্রামের যে রেস্তোরাঁগুলোয় আপনার অবশ্যই যাওয়া উচিত তার বিস্তারিত দেয়া হল।   

প্রজাপতি পার্ক 

শাহ আমানত বিমানবন্দর এবং পতেঙ্গা নেভাল একাডেমীর মধ্যে প্রায় ৬ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত দেশের প্রথম প্রজাপতি পার্ক। প্রায় ২০০ প্রজাতির ১ হাজারেরও বেশি প্রজাপতি রয়েছে এই পার্কটিতে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রজাপতি, তাদের প্রজনন এবং বৈচিত্র্যতা নিয়ে বেশ ভালোই ধারণা পাওয়া যাবে বিশাল এই পার্কটি ঘুরে। এখানে সত্যিকারের প্রজাপতি দেখার পাশাপাশি প্রজাপতির মিউজিয়ামও রয়েছে, যেখানে অন্যান্য দেশের প্রজাপতির ছবি এবং স্ট্যাম্পও দেখতে পারবেন। এছাড়া বাচ্চাদের খেলার জন্য বেশ কিছু রাইডও রয়েছে পার্কের অন্য অংশে। তাই  সমুদ্র সৈকত ও লেকের খোঁজে চট্টগ্রামে ঘুরতে আসলে অবশ্যই ঘুরে যেতে পারেন দারুণ এই প্রজাপতি পার্কটি থেকে।  

মহামায়া লেক 

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম কৃত্রিম লেক মহামায়া। পাহাড়ের মাঝে গড়ে ওঠা অসম্ভব সুন্দর এই লেক প্রায় ১১ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। এ লেকের টলটলে পরিষ্কার পানি, চারিদিকে সবুজের সারি এবং পাখির কলতান নিঃসন্দেহে আপনার মন শক্তির সঞ্চার করবে। প্রকৃতির মাঝে এ যেন এক অদ্ভুত রকমের শান্তি! এই লেকের কাছেই পাহাড় ঘেঁষে নেমে চলেছে অপূর্ব ঝর্ণার ধারা। সমুদ্র সৈকত ও লেকের খোঁজে চট্টগ্রামের এই জায়গায় এসে নৌকায় করে এর আশেপাশে ঘুরে দেখা যাবে খুব সহজে, এছাড়া রয়েছে কায়াকিং করারও সুবিধা। এমনকি রাতে তাঁবুতে ক্যাম্পিং করেও থাকতে পারবেন লেকের কাছাকাছি জায়গায়। 

অসাধারণ সৌন্দর্যে ভরপুর চট্টগ্রাম শহরে রয়েছে আরও অনেক ঐতিহাসিক স্থান। চট্টগ্রামে ঘুরতে যাওয়ার আগে চলুন সেসব ঐতিহাসিক জায়গা সম্পর্কেও কিছুটা ধারণা নেয়া যাক এই আর্টিকেলের লিংকে ক্লিক করে। 

Write A Comment

Author