Reading Time: 4 minutes

উত্তরাধিকার সূত্রে আমরা সবাই কিছু না কিছু প্রপার্টি পেয়ে থাকি।  কিন্তু, উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত এসব প্রপার্টির মালিকানা আইনীভাবে বুঝে পেতে, সবার আগে প্রয়োজন সাকসেশন সার্টিফিকেট বা উত্তরাধিকার সনদ। কেননা যে ব্যক্তি মারা গেলেন, তার বৈধ উত্তরাধিকার যে আপনি সাকসেশন সার্টিফিকেট তারই প্রমাণপত্র। শুধুমাত্র  উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত প্রপার্টির আইনী অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই নয়, সঠিকভাবে প্রপার্টি বণ্টনের জন্যও এই ডকুমেন্টটি গুরুত্বপূর্ণ। সাকসেশন সার্টিফিকেট আসলে কী? কেন এটি জরুরি? কীভাবে এটি বুঝে পাবেন? এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে পড়তে থাকুন আজকের আর্টিকেল।  

পার্টির মালিকানা আইনীভাবে বুঝে পেতে প্রয়োজন সাকসেশন সার্টিফিকেট বা উত্তরাধিকার সনদ

সাকসেশন সার্টিফিকেট কী

সাকসেশন সার্টিফিকেট হচ্ছে মৃত ব্যক্তির স্থাবর সম্পত্তি, ব্যাংকে জমানো টাকা, কোম্পানীর শেয়ার, ডিবেঞ্চার, রয়্যালটি সর্বোপরি মৃত ব্যক্তির সম্পত্তির বৈধ উত্তরাধিকার প্রমাণ করার প্রমাণপত্র। সাধারণত নিজেকে মৃত ব্যক্তির বৈধ উত্তারাধিকার প্রমাণ করার জন্য প্রয়োজন হয় এই ডকুমেন্টের। সাকসেশন অ্যাক্ট ১৯২৫ এর ধারা ৩৭০-৩৮৯ এ সাকসেশন সার্টিফিকেট এর ব্যপারে বলা আছে। এই আইনে সাকসেশন সার্টিফিকেট গ্রহনের জন্য আবেদনের কোন সময়সীমা নির্দিষ্ট করা নেই। 

কীভাবে সংগ্রহ করবেন

সার্টিফিকেটটি পাবার জন্য জেলা জজ এর আদালতে যথাযথ কাগজপত্র সহ আবেদন করতে হয়। এ আবেদনে অবশ্যই মৃত ব্যাক্তির মৃত্যুর সময়, বাসস্থান, সব বৈধ উত্তরাধিকার, ঋণ এবং সম্পত্তি যে জন্য সার্টিফিকেট চাওয়া হয়েছে তার সস্পূর্ণ বিবরণ থাকতে হয়। 

যে সকল কাগজপত্র সরবরাহ করতে হবে

সাকসেশন সার্টিফিকেট পাবার জন্য চেয়ারম্যান বা কমিশনার এর কাছ থেকে  ওয়ারিশিয়ান সার্টিফিকেট সংগ্রহ করুন। সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা চেয়ারম্যান অফিস বা কমিশনারের কাছ থেকে প্রয়াত ব্যক্তির মৃত্যুর প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করুন। এক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তিকে যে কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছে, সে মর্মেও একটি প্রত্যয়নপত্র লাগবে। মৃত ব্যক্তি যদি কোনো হাসপাতাল বা ক্লিনিকে মৃত্যুবরণ করেন, তাহলে সেখান থেকে প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করুন। এছাড়া, মৃত ব্যক্তি কোন ব্যাংকে কত টাকা রেখে গেছেন, সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে তার একটি সনদ বা ব্যালেন্স কনফারমেশন লেটার ওঠাতে হবে। এই সমস্ত ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে একজন দক্ষ লিগ্যাল এক্সপার্ট কিংবা আইনজীবীর সহায়তা নিন এবং তাকে সমস্ত ডকুমেন্ট সরবরাহ করুন। এছাড়া আবেদনকারী, মৃত ব্যক্তিসহ সকল ওয়ারিশদের ভোটার আইডি কার্ড/জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপিও সরবরাহ করা ভাল। কেননা এই সকল কাগজপত্রাদি আইনজীবী আবেদনের সাথে আদালতে দাখিল করবেন।

লিগ্যাল সাপোর্ট
সমস্ত ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে একজন দক্ষ লিগ্যাল এক্সপার্ট কিংবা আইনজীবীর সহায়তা নিন

যিনি আবেদন করতে পারবেন

মৃত ব্যক্তির বৈধ উত্তরাধিকারীরা প্রত্যেকে কিংবা তাদের পক্ষে যিনি প্রপার্টি বুঝে নেবেন, তিনি আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন। সাকসেশন মামলা জেলা জজ আদালত বা জেলা জজের মনোনীত অন্য কোনো আদালত নিষ্পত্তি করেন। ঢাকায় তৃতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতকে এ সনদ-সংক্রান্ত বিষয় নিষ্পত্তির এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। কাজেই ঢাকার ক্ষেত্রে তৃতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে সাকসেশন মামলা দায়ের করতে হবে। 

আবেদনের সঙ্গে একটি হলফনামা দিতে হবে, যাতে উল্লেখ থাকবে—

১। তিনি মৃত ব্যক্তির সম্পর্কে কী হন

২। মৃত ব্যক্তির এ টাকা কাউকে দান বা উইল করে যাননি

৩। উইলের জন্য কোনো প্রবেট বা লেটার অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন দরখাস্ত দাখিল করে যাননি

৪। তাঁকে অন্য উত্তরাধিকারীরা টাকা তোলার ক্ষমতা দান করেছেন। 

এক্ষেত্রে, মৃত ব্যক্তির টাকার হিসাবের বিবরণও তফসিল আকারে দিতে হবে।

আদালতে আবেদন করার পর নির্ধারিত সময়ে আদালত আবেদনকারীর জবানবন্দি নেবেন এবং সকল তথ্যের সত্যতা যাচাই করবেন। এসময়, আদালত মৃত ব্যক্তির নিকট আত্বীয়দের নোটিশ প্রদান করে কারো কোন দাবি/আপত্তি আছে কিনা তা জেনে নিয়ে থাকেন। কারো কোন আপত্তি থাকলে এই সময়েই সেই আপত্তি দাখিল করতে হয়। কারো কোন আপত্তি না থাকলে আদালত আবেদনকারীর পক্ষেই সাকসেশন সার্টিফিকেট দিয়ে থাকেন।  

কারো কোন আপত্তি না থাকলে আদালত আবেদনকারীর পক্ষেই সাকসেশন সার্টিফিকেট দিয়ে থাকেন

কত টাকা খরচ হতে পারে

আদালতে সাকসেশন মামলা দায়ের করার পর আদালত উত্তারাধিকার সনদের আবেদন মঞ্জুর করলে কোর্ট ফি দাখিল করতে হবে। সে ক্ষেত্রে আবেদনকারী ব্যাংক থেকে কত টাকা ওঠানোর জন্য আবেদন করছেন, তার ভিত্তিতে কোর্ট ফি নির্ধারিত হয়। দাবিকৃত অর্থের পরিমাণ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত হলে কোনো কোর্ট ফি দিতে হয় না। কিন্তু ২০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত এক শতাংশ কোর্ট ফি দিতে হয়। আবার এক লাখ এক টাকা থেকে যে কোনো পরিমাণ অর্থের ওপর দুই শতাংশ কোর্ট ফি জমা দিতে হয়। কোর্ট ফি জমা দেওয়া হলে নির্ধারিত সময়ে আদালত থেকে সনদ ইস্যু করা হয়।

আবেদনকারী ব্যাংক থেকে কত টাকা ওঠানোর জন্য আবেদন করছেন, তার ভিত্তিতে কোর্ট ফি নির্ধারিত হয়

তবে, সকল ঝামেলা এড়িয়ে সহজে ও ঝামেলাবিহীনভাবে সাকসেশন সার্টিফিকেট সংগ্রহের জন্য রয়েছে বিপ্রপার্টি লিগ্যাল সার্ভিস। যেখানে থেকে শুধুমাত্র সাকসেশন সার্টিফিকেটই নয়, ঢাকার মাঝে প্রপার্টি সংক্রান্ত যে কোনো লিগ্যাল সাপোর্ট নিতে পারবেন আপনি। তাই প্রপার্টি সংক্রান্ত যে কোনো আইনী সহায়তায় যোগাযোগ করুন আমাদের সাথে।  

Write A Comment

Author