Reading Time: 5 minutes

ঘরের ছোট মানুষটার জন্য সবকিছু হওয়া চাই সেরা! ঘরের ছোটরা আমাদের জীবনের এবং ঘরের মধ্যমণি। কি মিষ্টি এই ছোট মানুষগুলো! এরা তাদের অনুভূতি স্পষ্ট বলে দিতে পারে মুখের উপর। এরা যেকোন অবস্থানে নিজেকে মানিয়ে নিতে না পারলেও চেষ্টা করে যায়। এরা সাহসী, এরা শক্তিশালী। নিজের প্রয়োজনে এরা কঠিন থেকে কঠিন কাজটাও দ্রুত করে ফেলতে পারে। ভয় যেন তাদেরকেও ভয় পায়। এমন দুরন্ত সাহসী মানুষগুলো প্রতিনিয়ত নিজের মধ্যেই বড় হতে থাকে। এদের চিন্তা ভাবনা এবং দৃষ্টিতে আসতে শুরু করে পরিবর্তনের ছোঁয়া। রোজ এরা নতুন কিছু করতে চায়, নতুন কিছু শিখতে চায়। এমন সৃষ্টিশীল মানুষগুলোর থাকার ঘরটা তাহলে কেন হবে আমার আপনার মত একঘেয়ে বা সাধারণ? হওয়া কি উচিত বলুন আপনি?   

এই ছোট মানুষগুলো একটু একটু করে রোজ বড় হচ্ছে, প্রতি মুহূর্তে তারা নতুন কিছু ভাবছে। তাদের ভালো লাগা খারাপ লাগা তৈরি হতে থাকে সেই ছোট থেকে। দু বছর আগেও যা কিছু পছন্দ করত, আজ সেগুলো বড্ড ছেলেমানুষী তাদের কাছে। তাই, যদি ঘরের ডেকোর করতে যান তাহলে সেটা বেশি দিন তাদেরই পছন্দের তালিকায় নাও থাকতে পারে। আবার ঘনঘন ঘরের ডেকোর বদলে ফেলাও কিন্তু সম্ভব নয়। সুতরাং, এখানে আছে মজার কয়েকটি টিপস, যা দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে নিতে পারবেন বাচ্চার ঘর । 

নিউট্রাল প্যালেট এবং বেইজ রঙগুলো বেঁছে নিন 

কালার প্যালেট
নিউট্রাল প্যালেট এবং বেইজ রঙগুলো বেশ মানিয়ে যায়

সবচেয়ে প্রথমে আপনি যেটা করতে পারেন তা হচ্ছে, বাচ্চার ঘরের ভেতরটা আবার নতুন করে রাঙিয়ে তুলতে পারেন। এক দফা রঙ এখনি ঘরের দেয়ালে দিয়ে ফ্রেশ লুক আনতে পারেন। নিউট্রাল রঙগুলো বেঁছে নিন এবং বাচ্চার পছন্দের রঙগুলোর সাথে ব্যবহারের জন্য। যাতে করে একটা সময় পর আপনি সহজেই দেয়ালের রঙ পরিবর্তন করতে পারেন। এছাড়া রঙ সম্বন্ধে আমাদের সবারই জানার আছে অনেক কিছু, যেমন রঙের টেক্সচার, এবং ঘরের সাজে রঙের প্রভাব। বেইজ রঙগুলোর যেকোন শেড, সাদা, সবুজ, হলুদ এবং গোলাপি। এই রঙগুলো শোবার ঘরকে বেশ শান্তিময় করে তোলে, শোবার ঘরের ডেকোর করতে কিন্তু ৫০০০ টাকার বেশি লাগে না। সুতরাং আপনি চাইলে ঘরের রঙের পাশাপাশি আরও বেশ কিছু অনুষঙ্গ যোগ করতে পারেন যেমন, কুশন, ফ্রেম, রাগস, স্টোরেজ কনটেইনার এবং এমন কিছু যা আপনার বাচ্চার ভালো লাগার জিনিস।   

জোন তৈরি করুন  

খেলার যায়গা
জোন তৈরি করে ভাগ করে নিন!

বাচ্চারা মানেই রাজ্যের দুষ্টামি এক সাথে। এদিক থেকে সেদিক ছুটোছুটি, দৌড়াদৌড়ি, খেলনা থেকে ঘরের সবকিছু এদিক সেদিক ছড়িয়ে রাখাই তাদের কাজ। আপনি চাইলে ঘরের ভেতর “জোন” তৈরি করতে পারেন। জোন তৈরি করলে যা হবে আপনি সহজেই ঘরের সবকিছু একসাথেই গুছিয়ে রাখতে পারছেন। অনেকটা এলোমেলো ভাব কমে আসবে! এবং কোথায় কী আছে সেই খবর কিন্তু এখন মনে রাখাও যাবে।  

ধরুন, ঘরের একটি কর্নারে টেবিল এবং বুকশেলফ রাখলেন, বাচ্চাদের জন্য এটি একটি “লার্নিং জোন” হয়ে গেল। স্টোরেজ বিনের কাছাকাছি একটি রাগস বিছিয়ে রাখুন। যাতে করে আপনার বাচ্চা সেই স্টোরেজ বিনের কাছেই খেলাধুলা করতে পারে। এতে করে কিন্তু খেলার জিনিসপত্র বেশি ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না। এছাড়া আপনার বাচ্চার লেখাপড়া বা আঁকাআকি করার সকল উপকরণ সেই শেলফেই গুছিয়ে রাখলেন। আপনার বাচ্চার সৃজনশীলতার জায়গাটি কিন্তু এভাবেই আরও মজবুত হবে দিনকে দিন। ঘরের ভেতর এই সমস্ত জোন তৈরির মাধ্যমে ঘরের ভেতর সবকিছুর আলাদা একটা জায়গা হয়ে গেল। যেটা কিনা ঘরের সবকিছুকে জায়গা মত গুছিয়ে রাখতে সাহায্য করবে।

ব্যক্তিত্বের ছোঁয়া রাখুন 

ছোট বাচ্চা খেলাধুলা করছে
পছন্দের থিমে সাজিয়ে নিন

বাচ্চাদের নানা রূপ! এই তারা সুপারম্যান আবার এই তারা ডাক্তার! এদের নানা রূপ নানা বৈচিত্র্য! তাহলে এমন প্রাণবন্ত ব্যক্তিত্বে সম্পন্ন এই মানুষগুলোর ঘরও কিন্তু হওয়া চাই একটু অন্যরকম। হতে পারে তাদের পছন্দের কোন কার্টুন ক্যারেক্টারের থিমে ঘরটি সাজিয়ে নিলেন কিংবা ঘরে কোন দেয়ালে রেখে দিলেন, পরিবারের সকলের বাঁধাই করা ছবি। কিংবা কোন সুভিনিরও জায়গা করে নিতে পারে আপনার বাচ্চার ঘরের দেয়ালে। আরও চমৎকার হয় যদি আপনি এই ছোট্ট সদস্যটিকে জিজ্ঞেস করতে পারেন যে, সে কী কী ক্যারেক্টার পছন্দ করে? তার পছন্দমত কোন ক্যারেক্টারের থিম অনুযায়ী ঘর সাজিয়ে রাখুন।

স্টোরেজ অপশন যোগ করুন  

টেবিল স্টোরেজ
স্টোরেজ অপশন রাখুন

বাচ্চাদের ঘর নানান কারনে এলোমেলো থাকতে পারে। এরা নিজের মত করে খেলতে কিংবা থাকতে ভালোবাসে। এরা কিন্তু এলোমেলো করার জন্যই খেলে না। এদের ভুবনটাই এমন, এরা নিরিবিলি ও নিশ্চিন্তে নিজের মত খেলতে ভালোবাসে। কোনো কোনো বাচ্চা আছে ছোট জিনিস সংগ্রহ করতে ভীষণ ভালোবাসে। নিজের মত করে সংগৃহীত জিনিসপত্র নিজের ঘরে জমিয়ে রাখে। সারাক্ষণ তার পেছনে আপনাকে করতে হয় ছোটাছুটি। আপনি যদি খেয়াল না রাখেন সেক্ষেত্রে ঘর কিন্তু মূহুর্তেই এলোমেলো হয়ে যায়। সুতরাং সেই সমস্ত জিনিসগুলো আপনাকে সংগ্রহ করতে হবে, এবং স্টোরেজে ঠিকমত রেখে দিতে হবে। ছোটরা যখন বড় হতে থাকে একের পর এক খেলনা বা অন্যান্য জিনিস বাড়তে থাকে। তাই খেলনা রাখার জন্য ঝুড়িগুলো সংগ্রহ করতে পারেন। সেখানে সব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রগুলো গুছিয়ে রাখতে পারেন। তাদের সকল জিনিস হোক তা খেলনা কিংবা অন্যকিছু, দৈনন্দিন আপনি দেখে ঝুড়িতে রেখে দিন। তাহলে ঘরের ভেতর অপ্রয়োজনীয় কিছুর স্তূপ থাকবে না। আপনি চাইলে কিছু বক্সগুলোও ব্যবহার করতে পারেন। নানারকম নামে এই বক্সগুলো জমিয়ে রাখতে পারেন। এই বক্সগুলো যত্নে রেখে দিতে পারেন। কেননা, আপনার ঘরের সবচেয়ে আদরের মানুষটির যত স্মৃতি এখানেই বন্দী হয়ে আছে।   

পুরনো কিছু নতুন ভাবে ব্যবহার করুন 

আপনার বাচ্চার ঘর সাজিয়ে নেওয়ার জন্য ঘরের বেশ কিছু পুরনো জিনিস পুনরায় ব্যবহার করুন। এটা কিন্তু বেশ কম খরচেই সম্ভব। ঘরের পুরনো আসবাব দিয়েই সাজিয়ে নিন বাচ্চার ঘর । নতুন কিংবা পুরনো যেকোন আসবাবই আপনার বাচ্চার জন্য কিছুটা অনিরাপদ থেকেই যায়। বাচ্চারা খেলার ছলে ব্যথা পাবেই। খেলার সময় এটা সেটা তারা ভেঙ্গে ফেলবেই বা নষ্ট করবেই। সুতরাং পুরনো আসবাব ব্যবহারের ফলে এইসব ভয়গুলো আর থাকছে না। পুরনো আসবাব ফেলে না দিয়ে বরং নতুন করে ব্যবহার করুন । পুরনো চেয়ারে নতুন একটা কুশন যোগ করুন। এভাবে পুরনো আসবাবে নান্দনিকতা যোগ করুন। আপনি চাইলে বাজার থেকেও পুরনো আসবাব ক্রয় করতে পারেন। ঘরের ব্যবহারের পুরনো সুটকেসটি আপনি স্টোরেজের জন্য ব্যবহার করতে পারেন। ঘরের নানান কিছু সেখানে রাখতে পারেন। 

এছাড়াও, ঘরের ভিনটেজ জিনিসপত্রগুলো “ডি আই ওয়াই” (ডু ইট ইউরসেলফ) এর মাধ্যমে নতুনের মত করে নিতে পারেন। আসবাবের রঙ নিয়ে নতুন কিছু করতে পারেন। বাচ্চার পছন্দের কোন থিম নিয়েও আগাতে পারেন। আচ্ছা, তাদেরকেও এই কাজগুলোতে নিলে কেমন হয়? তারাও কিছু আইডিয়া যোগ করল। খারাপ হয় না কিন্তু! দিনশেষে  এটা তাদেরই ঘর। 

এই কয়েকটি মজার টিপসে সাজিয়ে নিন বাচ্চার ঘর । ঘরের ছোট সদস্যটি যে কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ আপনার কাছে তাকে সেটা আপনি তারই ঘর সাজিয়ে বোঝাতে পারেন। তাদের এই সুন্দর পৃথিবীতে নিজের একটি ছোট্ট পৃথিবী গড়তে সাহায্য করুন। কেমন লাগল এই টিপসগুলো? জানাতে কিন্তু ভুলবেন না।

Write A Comment