Reading Time: 4 minutes

হেমন্তে কোন্‌ বসন্তেরই বাণী
পূর্ণশশী ওই-যে দিল আনি॥
বকুল ডালের আগায়
জ্যোৎস্না যেন ফুলের স্বপন লাগায়।
                                       -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 

সাদার মায়া আর মন মাতানো সুবাসে ছেয়ে থাকা শিউলি ফুল যখন আপনার আঙিনায় উজার হয়ে পড়ে থাকে তখনই হেমন্তের শুরু! শুধু কি শিউলি ফুল? দোলনচাঁপার হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া সুগন্ধ আমাদেরকে হেমন্ত কালে আবদ্ধ করে রাখার জন্য যথেষ্ট। সাদার পবিত্রতা আর সুবাসে মোহিত হয়ে চলুন হেমন্ত কালকে বরণ করে নেই। ঋতু রানী হেমন্ত এমনিতেই তো আর রানীর মুকুট পায়নি। তার এমন প্রাচুর্য্যের ঢের তাকে এনে দিয়েছে এই খ্যাতি। শরৎকাল বর্ষার কিছুটা পরে আসে। শরতের শেষ ভাগে এসে বৃষ্টি কিছুটা কমতে থাকে। সারি সারি মেঘ ভেসে বেড়ানো আকাশের গায়ে এসে পড়ে কুয়াশার আলতু স্পর্শ। হেমন্তের শুরুটা সেখান থেকেই। তবে শহরে হেমন্তের ঋতুর বৈশিষ্ট্য কিছুটা ভিন্ন। দিনগুলো একটু একটু করে কীভাবে যেন ছোট হয়ে আসে। বেলা পড়ে গেলেই সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে দ্রুত। রোদও হারিয়ে ফেলতে থাকে তার তেজ। এসব দেখেই সকলের অনুভব হয় বদলে যাচ্ছে ঋতু। হেমন্ত চলে এসেছে। মনমুগ্ধকর এই ঋতুতে চাইলে আপনি অনেক কিছু করে সময় কাটাতে পারেন। যে কারণগুলোর জন্য হেমন্ত কাল সকলের কাছে প্রিয় জানতে লেখাটি পড়তে থাকুন।  

আকাশের রঙ বদল

একটি গাছের ছবি
আকাশের এই সৌন্দর্য যেন পৃথিবীর বাকী সবকিছুকেই হার মানায়

মন জুড়িয়ে যাওয়া সৌন্দর্যের বর্ণনা দেয়া কি সহজ? মোটেও না। রঙ নিয়ে এমন নিখুঁত খেলা খেলবার ক্ষমতা কেবল প্রকৃতিরই আছে। আকাশের এই সৌন্দর্য যেন পৃথিবীর বাকী সবকিছুকেই হার মানায়। এমন ঝলমলে প্রাণবন্ত আকাশ যে কারও মন মূহুর্তেই ভালো করতে পারে। মেঘের রাজ্যে টুকরো টুকরো নীলকে হারিয়ে যেতে দেখবার জন্য এই হেমন্ত কাল সেরা। কাশফুলে যেমন ছেয়ে যায় এই মাটি, তেমনি সাদা মেঘে ভরে যায় আকাশ। মেঘের ভেলায় বাস্তবে হারিয়ে যেতে ঘুরে আসুন খোলা মেলা কোন জায়গা থেকে, যেখান থেকে দূরের আকাশও যেন মনে হবে বেশ কাছের। আর এমন উজ্জ্বল দিন যখন পূর্ণিমা রাতে ঢলে পরে সেই দৃশ্য মনে ছাপ ফেলার জন্য যথেষ্ট।  

হেমন্তের খাবার-দাবার

খাবার
তৈরি হয় মজার খাবার

হেমন্ত কাল এর খাবারের সমাহার বেশ পুরানো এবং মজাদার। মানুষ সারা বছর অপেক্ষা করে এই দিনের খাবারগুলোর জন্য। যারা খেতে ভালোবাসেন তারা হলফ করে বলতে পারবেন, এ সময়ের খাবারগুলো কতটা সুস্বাদু। নানা রকম পিঠা পুলি আর খাবারের আয়োজন থাকে এ সময়ে। এত এত বাহারি পিঠা এক এক করে খেতে যান তাতেও কিন্তু, সময় লেগে যাবে। খেয়ে শেষ করা যাবে না এত শত খাবার। ফসল কাটার পরপরই নিজ হাতে সময় নিয়ে বানানো হয় এই পিঠাগুলো তাই স্বাদে এতটা চমৎকার।  

নবান্ন উৎসব

ধান
“নবান্ন উৎসব” মানে “নতুন চাল বা অন্নের উৎসব”

অনেক আগের কথা তখন বাদশা আকবরের রাজত্ব, সে সময় পহেলা অগ্রহায়ণকে (মধ্য নভেম্বর) বাংলা নববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই সময়ে প্রধান দুটি খাদ্য শস্য রোপণ করা হতো একটি আউশ এবং অন্যটি আমন। বেশিরভাগ সময় হেমন্ত কালে এই শস্যটি রোপণ করা হয় বলে অন্য কোন শস্য উৎপাদন হতো না। তখন সমস্ত দেশ এই শস্যে ছেয়ে যেতো। সে সময়ে আউশ বেশ জনপ্রিয় এবং ব্যাপক চাহিদা সম্পন্ন একটি শস্য। সারাদেশে এর চাহিদা ছিল প্রচুর। এদিক দিয়ে আমন চালের শস্যটি সারা বছরই কম বেশি উৎপাদন হয়ে থাকত বলে এই শস্যটি পাওয়া যেত সারা বছরই। অগ্রহায়ণ এর কিছুটা আগে মানে কার্তিক মাসে আউশ শস্যটি রোপণ করা হতো যার ফলে, হেমন্ত কাল এসে পোঁছাতেই শস্যের মাঠ হলুদে ছেয়ে থাকতো। ধান পেকে মাঠ হলুদ হয়ে আছে এই দৃশ্যের চেয়ে সুখকর কোন দৃশ্য পরিশ্রমী কৃষকরা দেখেনি। হলুদ মাঠ দেখে কৃষকদের মুখে ফুটে উঠত রাজ্যের হাসি। এ আনন্দ যেন থামবার নয়। তখনই ঐ সময়টাকে উৎসবে পরিণত করা হল, নাম দেয়া হয় “নবান্ন উৎসব” মানে “নতুন চাল বা অন্নের উৎসব”। এই সময় ধান কেটে শুকিয়ে সিদ্ধ করে তৈরি করা হয় নানা ধরনের পিঠাপুলি বা খাবার। সবাই এক হয়ে উপভোগ করে এই উৎসব। এবং মিলেমিশে নবান্ন উৎসব উদযাপন করে।      

হেমন্তের ছন্দ ও তালে

ধানখেত
স্নিগ্ধতা চারিদিকে বিরাজ করে

হেমন্ত কাল এমনই এক ঋতু যে আপনি চিরদিকে একটু খেয়াল করলেই এই ঋতুর সৌন্দর্য মোহিত করবে। এতটা স্নিগ্ধতা চারিদিকে বিরাজ করে যে তার মোহ কাটিয়ে ওঠা সহজ নয়। নইলে কি সাধেই এই হেমন্ত কাল সকলের মনে গেঁথে আছে, সবুজে সবুজে প্রতিটি ফুল এত সুন্দর করে ফুটে থাকে তা দেখতে বেশ সুন্দর লাগে। ফুলের রঙ গুলো দেখতে ভীষণ মিষ্টি। ফুলের রঙগুলো কখনো কমলা, হালকা লাল কিংবা রানী গোলাপি। এর মাঝে সাদা রঙের ফুলের কথা বলতে ভুলে গেলে হবে নাকি? সাদার মায়া বরাবরই স্নিগ্ধ আর শুভ্র। শরতের ফুল কাশফুলের কথা না বললে হয়ে যাবে অন্যায়। কেননা শরৎকাল যেতে না যেতেই চলে আসে হেমন্ত কাল। এমন এক সময়ে ঘরের ভেতরটা না বদলে নিলে হয় বুঝি? হেমন্তের ছোঁয়া ঘরের ভেতরেও প্রবেশ করুক। 

হেমন্তে নদীকথন                                       

নদী
নদীর ঝলমলে পানিতে ইলিশের চাষ শুরু হয়

বছরের এই সময়ে জেলেদের মুখে ফুটে ওঠে অকৃত্রিম এক হাসি। কেননা, ইলিশ চাষের জন্য এই সময়টার জন্য অপেক্ষায় থাকে দেশের সব জেলেরা। সামনেই আ্সছে বৈশাখ মাস, জাতীয় মাছ ইলিশের চাহিদা সে সময়ে প্রায় সর্বোচ্চ থাকে। যার ফলে জেলেদের তুমুল ব্যবসা হয়। নদীর ঝলমলে পানিতে ইলিশের চাষ শুরু হয়। জেলেদের জন্য এই সময়টা যেন কোন উৎসবের থেকে কম নয়। দিন রাত এক করে তারা ইলিশের চাষ করে যায়। যাতে করে বৈশাখ মাসে এই কষ্টের প্রতিফলন দেখতে পারে।  ইলিশ মাছ খেতে ভালোবাসেন না এমন কেউ নেই এই দেশে। এই মাছের স্বাদ সকলের কাছেই কম বেশি প্রিয়। এই মাছ খান না এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। গরমের প্রখরতা হেমন্তের শীতল আবেশে শেষ হয় বলেই এই ঋতুটা মন ও চোখের জন্য এতটা শান্তিময়। এই সুন্দর সময়টা অতিক্রম করলেই সামনে অপেক্ষা করছে শীতকাল। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শীতকালের মেয়াদটা দীর্ঘ বলেই মনে হয় কেবল এই তিনটা ঋতুই আছে আসলে তা নয়! অল্প সময়ের জন্য ঘুরতে এলেও হেমন্তের প্রভাব প্রকোপ সকলের হৃদয়ে। অনেকেই অপেক্ষা করে এবং সময় নিয়ে উপভোগ করে। 

আপনার কেন এবং কিভাবে এই ঋতু প্রিয় আমাদের জানাতে ভুলবেন না।এখনই কমেন্ট করুন!  

1 Comment

Write A Comment