মনের মত অফিস খুঁজে পাওয়া বিশাল এক বিপদ। নিস্তার মেলেই না। আর অনেক কাঠ খর পোড়ানোর পর পাওয়া যায় মনের মত একটি অফিসস্পেস। অফিসের কাছে বাসা নেওয়ার সুবিধা সবাই তেমন পায়না। এছাড়া যারা স্টার্ট আপ শুরু করতে যাচ্ছেন, কম বেশি সকলেই নিজ বাসা থেকেই স্টার্ট আপের শুরুটা করেন। তাদের সকলেরই প্রথম পছন্দ হয়ে থাকে নিজের বাসা। পরিকল্পনা, আলোচনা, মিটিং সবকিছুই যেন এই বাসার কোন এক কর্নারে হয়ে থাকে। তাহলে সেই কর্নারটাকে হোম অফিস সেটআপ করে নিলে কিন্তু ভালই হয়। তাছাড়া অনেকেই আছেন যারা কিনা নিজের বাসা থেকে কাজ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তাই বলে কাজে কম সময় দেয়া যায় তা ভাবাটা মোটেও ঠিক নয়। বরং, ঘুরে ফিরে কাজের জন্য বেশি সময় ধরে এই ‘হোম অফিসেই’ পড়ে থাকতে হয়। দিনের বেশির ভাগ সময়ে যেখানে পার করতে হয় সে জায়গাটি কিন্তু, একটি ডিজাইন করে নিলে মন্দ হয় না। ছোটখাটো ডিজাইন হোম অফিসের চেহারা পাল্টে ফেলতে পারে। সুতরাং, আমাদের আজকের ব্লগে আপনার জন্য থাকছে হোম অফিস ডিজাইন করবার কয়েকটি আধুনিক ও সুন্দর টিপস।
কম স্পেসের যথাযথ ব্যবহার
‘হোম অফিস’ মানেই আপনার নিজের বাসার কোন এক কর্নারে একটি জায়গা যেখানে চলবে শুধুই কাজ। ঢাকা শহরের অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে স্পেস এমনিতেই একটু কম থাকে। সেই ছোট বাসাকেই আমরা বিভিন্ন উপায়ে বড় বাসা হিসেবে দেখাই। বলতে গেলে সকলের বাসা কিন্তু, তেমন বড় পরিসরের হয় না। সেই ছোট বাসায় যদি অফিস করতে হয় সেটিও কিন্তু তেমন খোলামেলা হয় না। তাই আপনার খেয়াল করতে হবে, ছোট পরিসরের জায়গার সর্বোচ্চ ব্যবহার করে একটি হোম অফিস ডিজাইন করা। ভালো মত পরিমাপ করে তবেই, অফিস স্পেসের ডিজাইন নির্ধারণ করা। স্পেস অনুযায়ী, আসবাব বা দেয়ালের রঙ বাছাই করা, যাতে করে কম স্পেসের জায়গা আরও বড় দেখায়।
সঠিক আলোর ব্যবহার
ভাবতেই পারেন, আলোর আবার সঠিক ব্যবহার কি করে হয়? অবশ্যই রয়েছে, আপনার শোবার ঘরে যে আলো ব্যবহার করে থাকেন সেই আলো যদি অফিসের জন্য ব্যবহার করেন তা কিন্তু বেমানান। অফিসের জন্য সর্বোচ্চ আলোর ব্যবস্থা থাকলে তা কর্মচারীদের মধ্যে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করে এবং পরিবেশও অনেক বদলে ফেলে। সেক্ষেত্রে প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম দুই আলোরই ব্যবস্থা পর্যাপ্ত রাখা জরুরী। এইদিকে আপনার দিতে হবে বিশেষ নজর। প্রাকৃতিক আলোর ব্যবস্থা যদি নাই থাকে সেক্ষেত্রে, পর্যাপ্ত কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা রাখতে হবে। বাজারে পাওয়া যায় অসংখ্য বাহারি বাতি, পছন্দসই যেকোন বাতি কিনে নিয়ে আসতে পারেন। সাদা এবং মৃদু আলোর সংমিশ্রণ বেশ ভালো লাগে। যেহেতু, অফিসটা বাসায় আপনি চাইলে বাসা ভেতরে কিছু অংশে মৃদু আলো (ওয়ার্ম লাইট) ব্যবহার করতে পারেন এবং শুরু অফিসের স্পেসটুকুতে ব্যবহার করতে পারেন সাদা আলো(টিউবলাইট,এনার্জি বাল্ব)। যা আপনাকে এবং বাসার সদস্যদের অফিসের পরিবেশ সম্বন্ধে অবগত করবে।
দেয়াল রঙ করুন
অফিস হোম ডিজাইন এর ক্ষেত্রে দেয়ালের রঙের রয়েছে বিশাল ভূমিকা। দেয়ালের এক কোট রঙই কাজের একটি পরিবেশ তৈরি করে দিতে পারে। আমরা সাধারণত ঋতু বদলের সাথে ঘরের সাঁজ কিংবা নিজের পছন্দমতও ঘরের রঙ বদলে নেই। তাই, হোম অফিস যে অংশটুকু নিয়ে তৈরি সেই অংশটুকু উজ্জ্বল সাদা বা ঘিয়া রঙ করলে বেশি উজ্জ্বল দেখায়। এই রঙগুলো ছাড়াও অনেক উজ্জ্বল এবং স্পোর্টিং কিছু রঙ আছে। যেমন, হলুদ, নীল, লাল বা সবুজ। যেকোন রঙই এখন অফিসের জন্য মানানসই। এই সব রঙের টেক্সচার সম্বন্ধে জানতে ব্লগটি পড়ুন।
গুছিয়ে রাখুন
হোম অফিস ডিজাইন আপনি যতই করুন না কেন, অফিসের জিনিসপত্র যদি ঠিকমত গোছানো না থাকে তাহলে সবরকম ডেকোরেশনই যেন বৃথা। তাই জায়গামত সবকিছু গুছিয়ে রাখুন দেখবেন আগের থেকে অনেক খোলামেলা লাগছে। কাজ করতেও অনেক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। এতে করে প্রয়োজনীয় সবকিছুই হাতের লাগালে সহজেই পেয়ে যাবেন। কাজের যেমন সুবিধা হবে তেমনি বেঁচে যাবে অনেকটুকু সময়।
সঠিক আসবাবপত্র বাছাই করুন
অফিসে আসবাবপত্র বলতে শুধু চেয়ার টেবিল বোঝায় না। আরও অনুষঙ্গ রয়েছে যেমন, ফাইল রাখার র্যাক, ড্রয়ার আরও অনেক কিছুই হতে পারে। বিশেষ নজর দিতে হবে আপনার চেয়ারের দিকে। কেননা, এই চেয়ারেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে আপনি কাজ করে যাবেন। তাই চেয়ারটি আপনার জন্য কতটুকু আরামদায়ক তা যাচাই করা জরুরী। চেয়ারে যতটুকু সময় ব্যয় করবেন তার উপর নির্ভর করছে আপনার স্বাস্থ্য। সেক্ষেত্রে সময় নিয়ে ভেবে চেয়ার বাছাই করুন।
টুকরো সবুজ ছড়িয়ে রাখুন
অফিস হোম ডিজাইন করতে যে কাজটি আপনার সবচেয়ে আগে করতে হবে, তাহলো অফিসের ডেস্কে কিংবা ডেস্কের কোণায় টুকরো টুকরো সবুজ রাখতে হবে। পরিবেশবান্ধব পদক্ষেপও হয়ে গেল আবার, অফিসেও ছড়িয়ে গেল একটুখানি প্রকৃতি। বেশি সময় ধরে কাজ করতে করতে কখনও এক ঘেয়ে লাগলে এই টুকরো টুকরো সবুজগুলো আপনাকে এনে দিবে কিছুটা সজীবতা।
কার্পেট ব্যবহার করুন
বাসা কিংবা অফিস যেকোনটাই ডিজাইন করতে যান না কেন, একটি সঠিক কার্পেট আপনার স্পেসের চেহারাটাই পাল্টে দিবে। আর যখন আপনি হোম অফিস ডিজাইন করতে যাচ্ছেন সেক্ষেত্রে, কার্পেট অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাসার মধ্যে অফিসের জন্য বরাদ্দ জায়গাকে কার্পেটের মাধ্যমে সহজেই আলাদা করতে পারবেন। সঠিক কার্পেট ব্যবহার করার মাধ্যমে বাসার পরিবেশ সহজেই অফিসের পরিবেশে রুপান্তর হবে। আপনার ফ্লোর যদি উডেন বা টাইলসের না হয় সেক্ষেত্রে, কার্পেট ব্যবহার করতে পারেন। বাজারে পাওয়া যায় নানা ধরনের কার্পেট যেগুলো, আপনার হোম অফিস করে তুলবে আরও, আকর্ষণীয়। লুপ পাইলের কার্পেটগুলো বেশ ভালো মানিয়ে যায়, দামেও সাশ্রয়ী আছে।
স্টার্ট আপ হোক কিংবা প্রতিষ্ঠিত জব, দুটো ক্ষেত্রেই স্টইলিস অফিস কিন্তু সময়ের চাওয়া। আগের মত শুধু টেবিল-চেয়ার দিয়ে রাখলেই কিন্তু অফিস হয়ে যাবে না। সঠিক উপায়ে অফিস স্পেসের ব্যবহার, মার্জিত আসবাব, আল-বাতাসের ব্যবস্থা, পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ, মানানসই আসবাব পত্র, দেয়ালের রঙ সবকিছুই এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাড়িয়েছে। হোম অফিস ডিজাইন এই জন্যই জরুরী কারণ বাসার ডিজাইনের সাথে মিলিয়ে আপনার অফিসটাও সাজানো থাকলে, দেখতে ভালো দেখায়। এই টিপসগুলো থেকে আপনার কোন টিপসটি বেশি ভালো লেগেছে তা জানাতে ভুলবেন না।