Reading Time: 5 minutes

ঘর থেকে শুরু করে আসবাব সবকিছুরই কিন্তু একটু যত্নআত্তি প্রয়োজন। তেমনি দিন রাত এক করে রিসার্চ করে যে হোম অ্যাপ্লায়েন্সগুলো কিনে আনছেন সেগুলোর কিন্তু বিশেষ যত্ন প্রয়োজন! এগুলো ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রপাতি, টাকার হিসেবেও বেশ দামী। সবাই বছরের পর বছর ব্যবহার করার উদ্দেশ্য নিয়ে তবেই কেনে। তাই ব্যবহার এবং পরিষ্কার দুটোই করতে হবে বেশ সাবধানে। হোম অ্যাপ্লায়েন্স কিভাবে ব্যবহার করছেন এবং কিভাবে পরিষ্কার করছেন তার উপরই নির্ভর করছে আপনার এই মূল্যবান হোম অ্যাপ্লায়েন্সটি কত দিন টেকসই হবে! সুতরাং, দেরি না করে টিপসগুলো সম্বন্ধে জানা যাক! হোম অ্যাপ্লায়েন্স পরিষ্কার  করার বেশ কিছু উপকারী টিপস আছে, সেগুলো হল –

ফ্রিজ পরিষ্কার করতে : পানি এবং ভিনেগার মিশিয়ে স্প্রে বানিয়ে নিন! 

পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হোম অ্যাপ্লায়েন্স বা আসবাব ঘরের পরিবেশটাই অন্যরকম করে ফেলে। দেখতে যতই সুন্দর আর পয়সায় দামী হোক না কেন, অপরিষ্কার ফ্রিজ ঘর ও খাবার দুটোর জন্যই বেশ ক্ষতিকর! এবং আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ফ্রিজের ব্যবহার অনেক। মাছ, মাংস, দুধ, ডিম এগুলো কয়েকদিনের জন্য কিনে ফ্রিজে জমিয়ে রাখি আমরা সবাই। যারা খুব ব্যস্ত থাকেন তারা সারা সপ্তাহ এমনকি মাসের বাজারটাও একবারে করে জমিয়ে রাখেন। হোম অ্যাপ্লায়েন্স পরিষ্কার করাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং, ফ্রিজ সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা উচিত। এখন কিভাবে পরিষ্কার রাখবেন আসুন জেনে নেই-

ফ্রিজ
পরিষ্কার ফ্রিজ রান্না ঘরের শোভা বাড়ায়

টিপস- 

একটি পাত্রে পানি আর ভিনেগার মিশিয়ে একটি স্প্রের বোতলে রাখুন। এরপর, এই স্প্রে ছিটিয়ে দিন যখন কোন ময়লা কিংবা ধূলা জমতে শুরু করবে। এই স্প্রেটি আপনি ফ্রিজের ভেতর ও বাইরে ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু, অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যেন খাবারের গায়ে গিয়ে না পরে। এবং স্প্রের গায়ে ভিনেগার স্প্রে লিখতে ভুলবেন না! নয়তো বা, ক্ষুধা পেটে কেউ এই স্প্রে ই দেখবেন খেয়ে ফেলবে! সেক্ষেত্রে আগে থেকেই সাবধান।  এছাড়া ফ্রিজের সকল রিমুভএবল পার্ট’স গুলো আলাদা করে খুলে রাখুন। অল্প পরিমানে বেকিং সোডা ও বেশি পরিমানে পানি মিশিয়ে সেই খুলে রাখা পার্ট’স গুলো ধুয়ে নিন বাজারের ক্লিনারগুলো ব্যবহার করলে তা আপনার খাবারেও মিশে যেতে পারে। কিন্তু, এই বেকিং সোডা ও পানির মিশ্রণটি খাবারের জন্য তেমন ক্ষতিকর নয়। 

মাইক্রোওভেন পরিষ্কার করতে : পাত্রে ভ্যানিলা এসেন্স নিয়ে মাইক্রোওভেনে গরম করুন এবং ৩০ মিনিট দরজা বন্ধ রাখুন! 

আমরা দৈনন্দিন কাজে মাইক্রোওভেন অনেক ব্যবহার করে থাকি। খাবার গরম করা থেকে শুরু করে খাবার রান্না করা সবকিছুতেই মাইক্রোওভেনের ব্যবহার অনেক। সুতরাং এর যত্নে কেন অভাব রাখবেন? কিন্তু এটা গতানুগতিক নিয়মে পরিষ্কার করাতে কিছুটা ঝুঁকি থাকতে পারে। অনেকদিন মাইক্রোওয়েভে কাজ করার ফলে ভিতরটায় একটু দুর্গন্ধের সৃষ্টি হতে পারে।

মাইক্রোওভেন
মাইক্রোওভেন পরিষ্কার রাখুন

টিপস – 

একটি পাত্রে কিছুটা ভ্যানিলা এসেন্স নিয়ে মাইক্রোওভেনে গরম করুন। গরম করার পরে অন্তত ৩০ মিনিট মাইক্রোওয়েভের দরজা খুলবেন না। দেখবেন দুর্গন্ধ দূর হয়ে গিয়েছে। ভ্যানিলা এসেন্স না থেকে থাকলে, একই উপায়ে লেবু ব্যবহার করুন ভ্যানিলার জায়গায়। এবং প্রত্যেকবার ওভেনের কাজ শেষ হলে একটি কাপড় বা টিস্যু দিয়ে মুছে ফেলুন। আপনি চাইলে ভিনেগার এবং পানিও এই একই পদ্ধতিতে ব্যবহার করতে পারেন। 

ওয়াশিং মেশিন পরিষ্কার করতে : গরম পানির সাথে ২ কাপ ভিনেগার, মেশিন ড্রামে মিশিয়ে ১৫ মিনিট ওয়াশিং মেশিন চালু রাখুন! 

ওয়াশিং মেশিনের বাহিরটা কিভাবে পরিষ্কার করতে হয় কমবেশি সবাই জানি। লিকুইড সোপ এবং কুসুম গরম পানি এক সাথে মিশিয়ে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে নিলেই ওয়াশিং মেশিনের বাহিরটা পরিষ্কার হয়ে যায়। কিন্তু, মেশিনের ভেতরটা পরিষ্কার কিভাবে করবে অনেকেই তা জানে না। খুব বেশি পরিশ্রমের কাজ নয় তাহলে চলুন জেনে নেই কিভাবে পরিষ্কার করবেন।

ওয়াশিং মেশিন
ওয়াশিং মেশিন পরিষ্কার করুন

টিপস- 

গরম পানিতে দুই কাপ ভিনেগার মিশিয়ে, মেশিন ড্রামে ঢেলে দিন। এরপর, ১৫ মিনিট ওয়াশিং মেশিন চালু রাখুন। কিছু ময়লা যদি জেঁকে বসে সেক্ষেত্রে, অল্প পানিতে চার ভাগের এক ভাগ ভিনেগার মিশিয়ে পরিষ্কার কাপড় কিংবা ব্রাশ দিয়ে ঘষে তুলে ফেলুন। মেশিনের ভেতরে ভিনেগারটা শুকাতে দিবেন। এরপর, পরিষ্কার কুসুম গরম পানি মেশিন ড্রামে ঢেলে আবার মিনিট ওয়াশিং মেশিন চালু রাখুন। খেয়াল করবেন, এবার কিন্তু কোন ডিটারজেন্ট বা ভিনেগার ব্যবহার করবেন না।

এখন দেখুন তো আপনার ওয়াশিং মেশিনটা চক চক করছে কিনা? ঠিক এভাবেই কিছু সময় অন্তর অন্তর পরিষ্কার করুন।   

ব্লেন্ডার পরিষ্কার করতে : লিকুইড সোপ ব্লেন্ডারে ঢেলে ১০ সেকেন্ড ব্লেন্ডার চালু রাখুন! 

ব্লেন্ডার যেমন আমাদের দৈনন্দিন জীবন সহজ করে তোলে। তেমনি এটা পরিষ্কার করা বিরাট এক ঝামেলার কাজ। ব্লেন্ডার ব্লেডের ভেতরে একদম কোণায় কোণায় ময়লা জমে থাকে। সেগুলো ঠিক মত পরিষ্কার করাও সময়ের ব্যাপার। সেজন্য সহজ একটি উপায়ে ঝটপট ব্লেন্ডার পরিষ্কার করা যাবে। সঠিকভাবে পরিষ্কার না করলে দুর্গন্ধ ও দাগের তৈরি হতে পারে। 

ব্লেন্ডার
সহজ একটি উপায়ে ঝটপট ব্লেন্ডার পরিষ্কার করুন

টিপস- 

ব্লেন্ডার ব্যবহারের পর হালকা গরম পানিতে লিকুইড শোপ একটু ঢেলে দিন। ব্লেন্ডারের সুইচ অন করে ১০ সেকেন্ডের জন্য ব্লেডগুলোকে চালু রাখুন। এরপর ভালো করে পানিতে ধুয়ে নিন। দেখবেন ব্লেন্ডার একদম পরিষ্কার হয়ে গেছে এবং জং ধরারও সম্ভাবনা নেই। ব্লেন্ডারের যে পার্ট’স গুলো খুলে ফেলা যায় সেগুলোকে ডিশ ওয়াশিং সোপ ও কুসুম গরম পানিতে ডুবিয়ে রাখুন। ব্লেডে যদি কিছু দাগ থেকে থাকে সেক্ষেত্রে, নায়লনের কাপড়ে লিকুইড সোপ মাখিয়ে ব্লেডগুলো ধুয়ে ফেলুন। এরপর পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে নিন।  

কিচেন স্টোভ পরিষ্কার করতে : কুসুম গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে পরিষ্কার করুন! 

কিচেন স্টোভ আমাদের জীবনে কতটুকু কাজে আসে তা আমরা সবাই জানি। রোজ এই স্টোভে  আমরা রান্নার হাজার কাজ সেরে নেই। সকাল থেকে রাত সবসময়ই এটি রান্নার কাজে ব্যবহার হচ্ছে। তাই দাগ কিংবা ময়লা সবকিছুই এখানে জমে থাকে বেশি। যথারীতি পরিষ্কার করতেও পরিশ্রম করতে হয় বেশি। রোজ রান্নার পর স্টোভ পরিষ্কার করে ফেললে অনেকটাই ময়লা জমতে পারে না। কিন্তু কিছু দাগ এমনভাবে লেগে থাকে যা কিনা শুধু কাপড় দিয়ে মুছে ফেললে উঠতে চায় না। সুতরাং, এই জেদি দাগগুলো উঠানোর একটি চমৎকার টিপস নিচে আছে।

কিচেন স্টোভ
কিচেন স্টোভ রোজ পরিষ্কার করুন

টিপস- 

পুরো স্টোভটিতে লিকুইড ক্লিনার দিয়ে দিন। কিছুক্ষণ রেখে দাঁত মাজার ব্রাশ দিয়ে ঘষে মেজে দাগগুলো উঠিয়ে ফেলুন। এরপর পরিষ্কার কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করে ফেলুন। এই কাজটি করতে খুব বেশি হলে ২০ থেকে ৩০ মিনিট সময় লাগবে। প্রাকৃতিক উপায়ে পরিষ্কার করতে চাইলে, কুসুম গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে যেকোন দাগের উপর ছিটিয়ে দিলেই নিমিষেই দাগগুলো উঠে আসবে। 

ঘর পরিষ্কারের জাদুকরী কয়েকটি উপায় আমরা ইতিমধ্যেই জেনে গেছি। জেনে গেছি রান্নাঘর পরিষ্কারের চমৎকার টিপস তাহলে আর  হোম অ্যাপ্লায়েন্স পরিষ্কার করার টিপস তো পেয়েই গেলেন! 

Write A Comment