Reading Time: 3 minutes

জমি বা অ্যাপার্টমেন্ট কেনা হোক কিংবা বিদ্যমান কোন ভবনের সংস্কার, প্রপার্টিতে বিনিয়োগ এর জন্য বেশ ভালো অংকের অর্থেরই প্রয়োজন হয়। আর ঠিক তখনই আমরা হোম লোন নেয়ার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা শুরু করি। এমনকি যাদের কাছে যথাযথ মূলধন আছে তারাও কিন্তু প্রপার্টিতে বিনিয়োগের আগে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে লোন নিয়ে তবেই কাজটি শুরু করাকে নিরাপদ মনে করেন। আর এর পেছনে অন্যতম একটি প্রধান কারণ হল, লোন এর টাকা আপনি ইন্সটলমেন্টে ভাগে ভাগে পরিশোধ করতে পারছেন। তবে লোন না নিলে আপনাকে একবারেই বিশাল অংকের অর্থ খরচ করতে হবে, যা কিছুটা চ্যালেঞ্জিংও বটে! 

আর এক্ষেত্রেই হোম লোন হচ্ছে দারুণ এক সমাধান। তবে বাংলাদেশে হোম লোন নেয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে বেশ কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখতে হয়। তাহলেচলুন এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক। হোম লোন নেয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিক এবং শর্ত আছে। হোম লোন নেয়ার আগে সে বিষয়গুলো সম্পর্কে তাই যথাযথ ধারণা রাখা প্রয়োজন।    

প্রপার্টির স্থায়িত্বকাল 

পুরানো ভবন
বাড়ি যত পুরানো হবে, তা ঋণদাতাদের ততটাই কম আকৃষ্ট করবে

সাধারণত প্রপার্টির রেজিস্ট্রেশন এর তারিখ দেখে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রপার্টির স্থায়িত্বকাল আসলে কতদিনের তা নির্ধারণ করতে পারে। যদিও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বেশিরভাগ শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকগুলো নবনির্মিত রিয়েল এস্টেট প্রপার্টি সমূহের বিপরীতে হোম লোন দেয়ার ব্যাপারে আগ্রহী থাকে। তবে শুধু ব্যাংকই নয়, এনবিএফআই বা নন-ব্যাংকিং ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউট গুলো থেকে লোন নেয়ার ক্ষেত্রেও বিষয়টি একইরকম।  

আর এ কারণেই যেসকল প্রপার্টির বয়সকাল ২০ বছরের কম সেগুলোর বিপরীতেই মূলত হোম লোন দিতে আগ্রহী থাকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। যদিও ইস্টার্ন ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া এর মতো ব্যাংক সমূহ পুরনো অ্যাপার্টমেন্ট এর বিপরীতে হোম লোন ইস্যু করার ক্ষেত্রে অন্যান্য ব্যাংক এর চেয়ে কিছুটা হলেও নমনীয় থাকে।          

মাসিক আয় 

টাকা
আয়ের উপর নির্ভর করবে কত টাকা লোন নিতে পারবেন

হোম লোন মঞ্জুর করার ক্ষেত্রে আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল লোনগ্রহীতার মাসিক আয়। কেননা গ্রাহকের আবেদন করা লোন অনুমোদন করার আগে ব্যাংক এর রিকয়ারমেন্ট অনুযায়ী গ্রাহকের প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ আয় থাকা প্রয়োজন। আর যার ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো মিলে যাবে তাকে লোন দিতেই ব্যাংকগুলো মূলত আগ্রহী হয়ে উঠে।   

বাংলাদেশে বেশিরভাগ ব্যাংকই চাকুরিজীবী এবং প্রফেশনাল ব্যক্তিদের লোন দেয়ার ক্ষেত্রে যাদের আয় প্রতি মাসে ৪০,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা তাদেরকেই অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। সেলফ এমপ্লয়েড ব্যক্তি যেমন- ডাক্তার, ফ্রিল্যান্স প্রফেশনাল, কনসালটেন্টদের ক্ষেত্রে মাসিক এই আয়ের পরিমাণ আরও বেশি হতে হয়। তবে গভর্নমেন্ট অফিশিয়ালদের ক্ষেত্রে এই নিয়মে কিছুটা শিথিলতা লক্ষ্য করা যায়। 

আয় ও লোনের অনুপাত

আয় ও লোনের অনুপাত নির্ধারণে ডিবিআর বা ডেট-বার্ডেন রেশিও অন্যতম। একজন সম্ভাব্য লোনগ্রহীতার মাসিক মোট আয়ের ভিত্তিতে তার দায়বদ্ধতা কতটুকু রয়েছে তা নির্ধারণ করাই ডিবিআর এর প্রধান কাজ। ডিবিআর এর কিছু নির্দিষ্ট সীমা রয়েছে, যা অতিক্রম হয়ে গেলে ব্যাংকগুলো সাধারণত ঋণ দিতে আগ্রহী হয় না। তবে গ্রাহকের আয়ের উপর নির্ভর করে ডিবিআর এর পরিবর্তন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন ব্যক্তি ৪০,০০০ টাকা আয় করেন এবং তার আয় ও লোন নেয়ার অনুপাত যদি ৪৫%-এর বেশি হয়, তবে স্বাভাবিকভাবেই, ব্যাংকগুলো সেই ব্যক্তিকে লোন প্রদান করবে না। তবে এই একই ব্যক্তির মাসিক আয় যদি ২ লাখ টাকা হয়, সেক্ষেত্রে আয় ও লোন নেয়ার অনুপাত ৬০% হলেও ব্যাংক হোম লোন নেয়ার অনুমতি দিতে পারে।

বয়সসীমা 

লোনের টাকা পরিশোধের সময়সীমা যেহেতু দীর্ঘ সময়ের জন্য অব্যাহত থাকে, তাই হোম লোন অনুমোদন করার ক্ষেত্রে ব্যাংক সাধারণত লোনগ্রহীতার বয়সসীমার ওপর জোর দিয়ে থাকে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ ব্যাংকই সর্বোচ্চ ৬৫ বছর বয়সী ব্যক্তিদের জন্য হোম লোন অফার করছে। যদিও হোম লোন নেয়ার ন্যূনতম বয়স ব্যাংক থেকে ব্যাংকে পরিবর্তিত হয়ে থাকে।      

কাজের অভিজ্ঞতার সময়সীমা 

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে হোম লোন নেয়ার ক্ষেত্রে কাজের অভিজ্ঞতার সময়সীমা বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চাকরিজীবী এবং ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে সাধারণত বেশিরভাগ ব্যাংকই ২-৩ বছরের অভিজ্ঞতা আছে কিনা তা দেখে থাকে। অনেক ব্যাংক আবার ব্যবসায়ের মালিকদের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার এই মার্জিন এর চেয়েও বেশি নির্ধারণ করে রাখে।        

সুদের হার এবং প্রসেসিং ফি 

রিয়েল এস্টেট
সুদের হার এবং প্রসেসিং ফি সম্পর্কে যথাযথ ধারণা থাকা প্রয়োজন

সুদের হার এবং হোম লোন এর প্রসেসিং ফি সম্পর্কে ধারণা রাখা খুব কঠিন কোন বিষয় নয়। হোম লোন নেয়ার আগে তাই সবসময়ই উচিত আপনি যে প্রতিষ্ঠান থেকে লোন নিচ্ছেন তার সাথে অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুদের হার এবং প্রসেসিং ফি এর তুলনা করে নেয়া। যদিও বর্তমানে, সব ধরনের লোনের ক্ষেত্রে সুদের হার ফিক্সড করা (ক্রেডিট কার্ড ব্যতীত) এবং এর কোন পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনাও নেই, তবে সুদের হার এবং প্রসেসিং ফি এর ক্ষেত্রে ব্যাংক এবং নন-ব্যাংকিং ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউট গুলোর মধ্যে বেশ ভালো রকমেরই প্রতিযোগিতা চলতে থাকে।  

বাংলাদেশে হোম লোন নেয়ার ক্ষেত্রে উপরে উল্লেখিত এই বিষয়গুলো তাই অবশ্যই বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন। কেননা, বাড়ি নির্মাণ কিংবা সংস্কার, বড় ধরনের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে হোম লোনই একমাত্র উপায়।   

Write A Comment

Author