Reading Time: 3 minutes

মানুষের চাহিদার উপরেই বাসাবাড়ির নির্মাণ এবং এর দাম নির্ভর করে সবচেয়ে বেশি। বাড়ি বা ফ্ল্যাট বানানোই হয় এজন্য যাতে মানুষ বসবাস করতে পারে। যদি মানুষের চাহিদাই না থাকে, মার্কেট থাকে নিম্নমুখী, তাহলে আবাসন শিল্প পড়বে হুমকির মুখে। তবে আশার কথা হল, সাম্প্রতিক মন্দা কাটিয়ে উঠে এবছর আমাদের আবাসন শিল্পকে অনেক চাঙ্গা মনে হচ্ছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির মত বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন চোখে পড়ছে ইতোমধ্যেই। সাধারণ বাসা বাড়ি বা আবাসন ক্রেতাদের জন্য এর অর্থ কী? ২০২০ সালের আবাসন শিল্পের অবস্থাই বা কেমন হতে পারে? দেশের আবাসন শিল্পের বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে পড়ে ফেলুন এই লেখাটি।

বর্তমান অবস্থা

গ্রাফ
আবাসন শিল্প ২০১৮ এর সাময়িক ধাক্কা কাটিয়ে উঠছে

২০১৮ এর শেষ কোয়ার্টারে আবাসন শিল্পের প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা কমে গিয়েছিল দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে। নানারকম অনিশ্চয়তার কথা ভেবে অনেকেই রিয়েল এস্টেট খাতে বিনিয়োগ করতে দ্বিধা করছিলেন। তবে এই অবস্থার অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে ২০১৯-এ এসে। আর অবস্থা যেভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে তাতে আশা করাই যাই ২০২০ সালের আবাসন শিল্প হবে আরও চাঙ্গা। এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়, নতুন নিয়ম অনুসারে সরকারি চাকুরীজীবীরা সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত গৃহ ঋণ পেতে পারেন এখন। এতসব ইতিবাচক পরিবর্তনের মাঝে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, সরকার যদি ব্যাংক সুদের হার কমিয়ে ৭-৮% এ নিয়ে আসে, তাহলে তা আরও বেশি ভাল হবে এই শিল্পের জন্য।  

তবে এসবের সাথে বর্তমানে আরও একটি বিষয় যুক্ত হয়েছে। আপনি যদি এখন কোন নতুন অ্যাপার্টমেন্ট কিনতে ছান, আপনাকে আর সবকিছুর সাথে ৩% স্ট্যাম্প ডিউটি, ২% রেজিস্ট্রেশন ফি, ৪% গেইন ট্যাক্স এবং ২% স্থানীয় ট্যাক্স পরিশোধ করতে হবে। অন্যান্য ভ্যাট ও ট্যাক্স যুক্ত হয়ে সর্বোমোট ট্যাক্স গিয়ে দাড়ায় ১৩.৫ থেকে ১৪%-এ যা সত্যিই অনেক বেশি। আপনি কোন লোকেশনে প্রপার্টি কিনতে চাচ্ছেন তার উপর নির্ভর করে এই ট্যাক্সের পরিমাণে আসবে পরিবর্তন। আর ট্যাক্সের পরিমাণ যতদিন না কমবে, অনেকেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন আবাসন খাতে। 

২০২০ সালের আবাসন শিল্পে কী হতে পারে 

২০২০ সালের আবাসন
ভবিষ্যতে আবাসন খাতে আসবে ইতিবাচক পরিবর্তন

এতসব নেতিবাচক খবরের মাঝেও আশার আলো হল, অর্থমন্ত্রীর পরামর্শে সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশনের এসব ট্যাক্স ও ফি কমানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। A possibility of the Gain tax reduction from the current 4% is also anticipated. প্রদত্ত তথ্যমতে বর্তমানের স্ট্যাম্প ডিউটি – ৩.০% থেকে কমে ১.৫%, ভ্যাট – ৩.০% থেকে কমে ২.০% এবং স্থানীয় সরকার ট্যাক্স – ২.০% থেকে কমে ১.০% করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে আরও বেশ কিছু ক্ষেত্রে ভ্যাট ও ট্যাক্স হয়ত কমানো হবে। এনবিআর বিভিন্ন সরকারী সংস্থাকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে যাতে করে আবাসন খাতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে। তাই সংশ্লিষ্ট সবাই আশা করছে, আগামী অর্থবছরে এসব ফি এবং ট্যাক্স অনেকটাই সহনীয় পর্যায়ে আসবে।

এটি পরিষ্কার যে সম্ভাব্য ক্রেতারা জমিজমা এবং ফ্ল্যাট কেনার আগ্রহ অনেকাংশেই কমে যায় অতিরিক্ত ট্যাক্স ও করের বোঝায়। ফলশ্রুতিতে চাহিদা থাকা সত্যেও অসংখ্য ফ্ল্যাট ও জমি খালি পড়ে থাকে। এমনকি বাংলাদেশে সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশনের খরচ আশপাশের দেশ থেকেও ৪-৭% বেশি!

ইতিবাচক সম্ভাবনা

গাছ
আবাসন খাত সম্ভাবনাময়

উপরিল্লিখিত কারণে বিভিন্ন সংস্থা অনুরোধ ও দাবী জানিয়ে আসছে কর ও রেজিস্ট্রেশন ফি সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে। তাই মোটামুটি নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে এই অতিরিক্ত খরচ ধীরে ধীরে কমে আসবে। তবে এলাকাভিত্তিক এই খরচ আলাদা হবে। যেমন, গুলশান, বনানী, মতিঝিলের মত এলাকায় প্রতি স্কয়ার মিটার ৫০০০ টাকা থেকে কমিয়ে ট্যাক্স নামিয়ে আনা হবে ৪০০০ টাকাতে। ধানমন্ডি, লালমাটিয়া, উত্তরা এবং বন্সুন্ধরা আবাসিক আলাকায় যা হবে ৩০০০ হাজার টাকা। অন্যান্য এলাকায় তা ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে থাকবে। 

অনেকের মতেই প্রস্তাবিত বাজেট আমাদের অর্থনীতি এবং রিয়েল এস্টেট খাতের জন্য লাভজনক হবে। একমাত্র সময়ই বলতে পারে এ ভবিষ্যৎবানীর কতটা সত্য।

Write A Comment