সেই দিনগুলো আর নেই যখন বাসনকোসনের জন্য শুধু আয়রন আর অ্যালুমিনিয়ামকেই বেছে নেওয়া হতো। আধুনিক সময়ের রাঁধুনীদের পছন্দের পরিসর এখন বিশাল। তারা যেমন ভেঙেছে নিয়মের শেকল তেমনি রান্নাঘরের জন্য বেছে নিচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ও আর্টিস্টিক নানা বাসনকোসন। মা, নানীদের থেকে আমাদের অপশন যদিও অনেক বেশি এবং অনেক বৈচিত্র্যময়। আর কেনই বা হবে না। কনটেম্পোরারি ডিজাইনার এবং ইঞ্জিনিয়াররা এখন নারীদের জীবনের এই অংশটাতে দৃষ্টি ফিরিয়েছেন। তাই প্রতি মৌসুমেই বাজারে ধরা দিচ্ছে বাহারি নকশার নানারকম বাসনকোসন। বাসনকোসনে যেমন এসেছে নতুনত্ব তেমনি রান্নাঘরেও এসেছে নানারকম পরিবর্তন। রান্নাঘরে যোগ হয়েছে কেবিনেট ও কালার স্কিম। ২০২০ সালে বাসনকোসনের ট্রেন্ড কেমন এবং নতুন কী এসেছে জানতে পড়তে থাকুন।
স্টেইনলেস স্টিল যুগের সমাপ্তি
আগের সময়ে স্টিলের বাসন ব্যবহার করা ছিল সাধরণ ঘটনা। প্রায় সব বাসা বাড়িতেই এই বাসনকোসনগুলো ব্যবহার করা হতো, রান্নার পাতিল থেকে শুরু করে থালা, গ্লাস ও বাটিও নিয়মিত ব্যবহার করা হতো। তখন এই স্টিলের বাসনকোসন ব্যবহারের মধ্যেই বিরাজ করত আভিজাত্য। একটা দীর্ঘ সময় ধরে এই বাসনকোসন ব্যবহার করা হয়েছে। এগুলোর যত্ন আত্তিও হত বেশ সুন্দর করেই। কিন্তু সময়ের সাথে এখন স্টিলের বাসনকোসনের ব্যবহার একদম নেই বললেই চলে। ঠিক, ২০২০ সালের এই স্টিলের বাসনকোসন আবার ফিরে এসেছে নতুন রূপে। তবে পুরো স্টিলের বাসন নয় বরং হালকা প্যাটার্ন যুক্ত, বিভিন্ন রঙের সাথে মিলিয়ে এগুলো বিভিন্ন আকৃতিতে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।
পরিবেশ বান্ধব কুকওয়্যার
স্বাস্থ্যকর জীবনধারার জন্য মানুষ এখন পরিবেশ-বান্ধব জীবন যাপনে ঝুঁকে পড়েছে। স্বাস্থ্যকর খাবার এবং চলাফেরার পাশাপাশি অনেকে এখন পরিবেশগত তৈজসপত্র ব্যবহার করছেন। কেননা, এই তৈজসপত্রও আপনার স্বাস্থ্যকর জীবনধারার একটি অংশ। তাই এই বছরে, মাটি, কাঠ এবং কাঁচের পণ্য ব্যবহারের প্রতি বেশ প্রবণতা দেখা গিয়েছে। এই বাসনকোসন তৈরি করাতে উচ্চ মাত্রার ক্ষতিকারক পদার্থ ব্যবহৃত হয় না। তাই এগুলোর ব্যবহার রান্নাঘরে ব্যাপকভাবে বেড়েই চলেছে। এছড়াও, কাঠের ট্রে বা মাটির পাত্রে খাবার পরিবেশন করলে তা কেবল নিরাপদই না একধরণের ইতিবাচক শক্তিও ছড়ায়।
মিশ্র বাসনকোসন
২০২০ সালে বাসনকোসনের ট্রেন্ড এর মাঝে অন্যতম একটি ট্রেন্ড হচ্ছে, সবরকম বাসনকোসন মিলিয়ে ব্যবহার করা। আগে যেকোন বাসনে একটা প্যাটার্ন বা সেট মেনে চলা হতো। ঘরের ভেতর নিজেরা যেভাবেই সেগুলো ব্যবহার করা হতো না কেন, অন্তত মেহমানদের সামনে পেশ করা হতো এক নকশায়। কিন্তু, এই প্রথা বা ট্রেন্ড এখন একদমই নেই। বিভিন্ন রকম বাসনকোসন এক সাথে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। রান্নার পাতিল যদি নন-স্টিক হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে ব্যবহারের বাসন কাঁচের স্টিলের বা মাটিরও হতে পারে। এমন বৈচিত্র্য দেখা গেছে, পরিবেশনের ক্ষেত্রেও। ডিনার সেট বা টি সেট নির্দিষ্ট করে ব্যবহার করতে দেখা যায়নি তেমন। বাসনকোসন ব্যবহার করতে গেলে যেটা দেখা যায়, স্টিল দীর্ঘমেয়াদী আবার কাঁচ নিয়মিত ব্যবহার করার জন্য আরমদায়ক নয়। ব্যবহারের কার্যকারিতার উপরও অনেক সময় এই মিশ্র বাসনকোসনের কনসেপ্টটা চলে আসে। দিনশেষে আমরা যতটা পারি নিজেকে আরাম দিতে চাই। এই কনসেপ্ট এই ভাবনারই প্রতিফলন।
সিলিকনের বাসনকোসন ও আনুষঙ্গিক
সিলিকন ব্যবহারের ট্রেন্ড এই বছরে বেশি দেখা গিয়েছে। এগুলো ব্যবহার করা যেমন সহজ তেমনি টেকসই। তাই এগুলোর চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আর যারা বেকিং ভালবাসেন তাদের জন্য সিলিকনের বাসনকোসনের কোন বিকল্প নেই। বেকিং ডিশ, হিট-রেজিস্ট্যান্ট মিটস এবং রান্নার জন্য নানান পাত্র এই সিলিকন দিয়েই তৈরি করা হয়ে থাকে। রান্নাঘরের জন্য সিলিকন যেমন নমনীয়, স্বাচ্ছন্দ্যময়, তাপমাত্রা প্রতিরোধক ও নন-স্টিক। এই সকল সুবিধার জন্যই সিলিকনের বাসন সকলে ব্যবহার করতে আগ্রহী হচ্ছেন।
আকৃতিতে বৈচিত্র্য
২০২০ সালে বাসনকোসনের ট্রেন্ড এর মধ্যে থালা-বাটি, গ্লাস বা কাপে দেখা গিয়েছে বেশ বৈচিত্র্য। সেই চিরাচরিত গোল আকৃতির থালা এখন আর নেই! চায়ের কাপেরও রূপ বদলেছে। গোলাকৃতির ভেতরের দিকে দাবানো রাইস বোলগুলোর চল থাকলেও বর্তমানে চ্যাপ্টা ছড়ানো ডিশের চলনই বেশি। মুরগির রোস্ট পরিবেশন করতে মাঝারি আকৃতির হালকা ডিপ বাটি ব্যবহার করা হয়। এমন সবকিছুতেই এসেছে নতুনের ছোঁয়া। ভাত, পোলাও, মাছ, মাংসসহ নানা ধরনের খাবারই মূল খাবার হিসেবে পরিচিত। এই খাবার পরিবেশনের সময় ডিনার প্লেট, ডিনার নাইফ, ডিনার ফর্ক দিয়ে পরিবেশন করতে হয়। ১০ থেকে ১১ ইঞ্চি আকারের ডিনার প্লেটগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় গোলাকার প্লেট। তবে বর্গাকার (স্কয়ার), ছয়কোনা প্লেটও ব্যবহার করা যেতে পারে। যেকোন কিছু যেকোন আকারের বা নকশায় ব্যবহার করার স্বাধীনতা আপনার পুরোটাই রয়েছে। এগুলো কোথায় এবং কী রকম দামে পাবেন সেটাও বলে দিচ্ছি।
কোথায় পাবেন :
নিউ মার্কেটের ৩ ও ৪ নম্বর গেট-সংলগ্ন চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের ক্রোকারিজ শপ, এলিফ্যান্ট রোড ও গুলশান ডিসিসি মার্কেট এবং মিরপুর মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটসহ ক্রোকারিজের দোকানে। এ ছাড়াও অনলাইনে দারাজ.কম, আজকের ডিল.কম, আলী বাবা.কম-এ অর্ডার করে ঘরে বসেই পেতে পারেন আপনার পছন্দের পণ্য।
দরদাম :
বাটির সেট পাওয়া যাবে আকার অনুযায়ী ২৫০ থেকে ৪৫০ টাকার মধ্যে। পোলাও ডিশ ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা। কারি বাটি ৯০ থেকে ১০০০ টাকা। রঙিন কাপ ৫০০ থেকে ৬৪০ টাকা। লেবু বা সস বাটি ৪০ থেকে ৮০ টাকা। ঈদ যেহেতু গেলই কয়দিন আগে শাইনপুকুর ও মুন্নু সিরামিকে পেতে পারেন বেশ কিছু ডিনার সেট। পোলাও ডিশ পড়বে ৭০০ থেকে ২০০০ টাকা। নিউ মার্কেটের বিভিন্ন দোকানে ক্রিস্টালের কারি সেট ১৮০০ থেকে ২৫০০ টাকা। ওয়াই আকৃতির মিষ্টির বাটি ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা। পোলাও ডিশ ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা। সালাদ বাটি ৩০০ থেকে ৫০০ ও মাছ আকৃতির বাটি ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা। এ ছাড়া ক্রিস্টালের জগ ও গ্লাস সেট ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে পাবেন।
রান্নাঘর আর প্রিয় বাসনকোসন যেন একে অপরের সাথে জড়িয়ে আছে। একটি ছিমছাম রান্নাঘর হবে কিন্তু তাতে মনের মত বাসকোসন হবে না তা কি হয়? কেমন লেগেছে আজকের এই ব্লগটি? আপনার মতামত জানাতে কমেন্ট করুন।