সমুদ্রতলের জগৎ সবসময়ই মনের ভেতর কৌতূহলের জন্ম দেয়। শান্ত নিশ্চুপ সমুদ্র তলে কী রহস্য লুকিয়ে আছে জানতে অনেকেরই ইচ্ছে করে। কিন্তু, এই রহস্য আজও উদঘাটন হয়নি। সমুদ্র তলে কিছু সময় থেকে যদি সেই রহস্যের কাছাকাছি যেতে পারা যায় এটাও কম কি। সামুদ্রিক মাছের সাথে ঘুরে বেড়ানো, এমন কি ঘুমাতে যাওয়া। হতেও পারে বিকেলের নাস্তার দাওয়াতে আপনার সাথে থাকতে পারে তিমি মাছও! এমন কথা শুনে কল্প কাহিনীর মত লাগলেও। পৃথিবীতে এমন কিছু থাকার জায়গা রয়েছে যেখানে থাকতে গেলে আপনি পাবেন সমুদ্র তলের পৃথিবী ঘুরে আসার সুযোগ। রাত দিন কাটাতে পারবেন সমুদ্র তলে। সারা রাত ধরে মাথার উপর ঘুরপাক খাবে শত শত সামুদ্রিক মাছ। আকাশের নীল তো অনেকেই দেখেছেন এবার সমুদ্রের নীল দেখার পালা। কোথায় কোথায় আছে পানির নিচের হোটেল চলুন জানা যাক।
দ্যা মুরাকা – কনরার্ড হোটেল মালদ্বীপ
বিশ্বের প্রথম পানির নিচের হোটেল । বিশ্বের প্রথম পানির নিচে আবাসিক হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করে মালদ্বীপ। মুরাকাই সেই হোটেল। ৫০০ মিটার পানির নিচে অবস্থিত এই হোটেলটি গোটা বিশ্বের নজর কেড়েছে। হোটেলের প্রতিটি দেয়াল কাঁচ দিয়ে তৈরি করায় চোখের সামনে ঘুরে বেড়াতে দেখবেন সুন্দর সামুদ্রিক মাছগুলোকে। আন্ডার সি হোটেলের দিক দিয়ে এটি বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন একটি আবাসিক হোটেল। দোতলা হোটেলের ওপরের তলা পানির ওপরে হলেও নিচের তলার পুরোটাই পানির নিচে। চমৎকার এই হোটেলটি তৈরি করতে খরচ পড়েছে ১ কোটি ৫০ লাখ ডলারের মত। হোটেলের ওপরের তলা দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হলেও নিচের তলা শুধুই অতিথিদের জন্য। সাগরতলের আবাসিক হোটেলে একসঙ্গে নয়জনের থাকার ব্যবস্থা আছে। পানির নিচের হোটেল মুরাকা’য় কী নেই! শোবার ঘর থেকে শুরু করে শাওয়াররুম সবকিছু পানির নিচে থাকলেও, জিমনেশিয়াম, বার ও পুল থাকবে ওপরের তলায়। জীবনের বিচিত্র কোন অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করতে চাইলে মুরাকা হোটেল উত্তম।
জুলস আন্ডারসি লস
স্কুবা ডাইভিং করে আপনাকে ঢুকতে হবে হোটেলে। তাও আবার ২১ ফুট সমুদ্রের নিচে গিয়ে। যারা স্কুবা ডাইভিং ভীষণ পছন্দ করেন আর সমুদ্রের প্রতি রয়েছে অদ্ভুত রকমের টান তারা চাইলেই, এখানে ছুটে যেতে পারেন। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় অবস্থিত। তবে স্কুবা ডাইভিং এর সার্টিফিকেট যাদের আছে শুধু তারাই এখানে থাকতে যেতে পারবে। এই হোটেলের সবচেয়ে চমৎকার দিক হচ্ছে, বড় বড় জানালা! যার ফলে ঘরে বসেই সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ থাকছে।
দ্য মানতা রিসোর্ট
মানতা রিসোর্টটি পেম্বা আইল্যান্ডে অবস্থিত। এটি সমুদ্র কিনারা থেকে প্রায় ৮০০ ফুট দূরে ৪০ ফুট পানির নিচে অবস্থিত। পানির নিচে এই হোটেলের তিনটি তলা রয়েছে। নৌকা বা বোট ছাড়া আপনি হোটেল প্রান্তরে কখনই পৌঁছতে পারবেন না। সমুদ্র পৃষ্ঠে একেকটি ভিলা ভেসে থাকতে দেখা গেলেও, এই হোটেলে রয়েছে আন্ডারওয়াটার বেডরুম যেখানে আপনি রিলাক্স করবেন এমন সময় আপনার সামনে দিকে ঘোরাফেরা করবে দুর্লভ সব সামুদ্রিক মাছ। সমুদ্রের উপর থাকবে ভিলার লিভিং রুম এবং বাথরুম। এছাড়াও, আপনি চাইলে ভিলার ছাদ ব্যবহার করতে পারেন রোদ পোহাবার জন্য। এখানে রাতে চাঁদের আলো কাচ ভেদ করে ছড়িয়ে পড়বে আপনার বিছানায়।
ফ্লটিং সি হর্স রিট্রিট
এটিও দুবাইয়ে অবস্থিত। সমুদ্রের নিচে থাকার জন্য এই হোটেলটি সবচেয়ে সুন্দর। এটি তিন তলা ভবন। এর মধ্যে এক তলা পানির নিচে এবং বাকি দুই তলা পানির উপরে। প্রতিটি ভিলাতে রয়েছে আলাদা করে তিনটি লেভেল। বেডরুম রয়েছে আন্ডার ওয়াটার লেভেলে, সি লেভেলে রয়েছে লিভিং রুম এবং রুফটপ লেভেলে রয়েছে লাউঞ্জ এরিয়া আর কিচেন। গ্লাস ডোর ইনটেরিয়রের সাথে ভিলায় রয়েছে নিউট্রাল কালার প্যালেট। আন্ডার ওয়াটার থেকে যে ভিউ আপনি পাবেন সেটা এতটা মনোমুগ্ধকর যা কখনো ভোলার মত নয়। আপনি একই সাথে পানির নিচে আনন্দ করতে পারবেন, আবার চাইলে উপরেও সময় কাটাতে পারবেন।
ওয়াটার ডিসকাস আন্ডারওয়াটার এই হোটেলটি এখনো তৈরি হয়নি। দুবাই এ তৈরি হতে যাচ্ছে অসাধারণ নকশায় এই হোটেলটি। হোটেলের এক অংশ সমুদ্রের উপর আর বাকি অংশ সমুদ্রের নিচে থাকবে। এটা থাকার ফলে ঘুরতে আসা অতিথিরা যেমন সাগরের গভীরে সময় কাটাবার সুযোগ পাবেন তেমনি সাগরের উপরে থাকার উষ্ণতাও পাবেন। ২১ টির মত রুম নিয়ে এই হোটেলটি সাগরের মধ্যেখানে নির্মান হতে যাচ্ছে। হোটেলের নকশায় এত আধুনিকতা দেখে এই হোটেলে অনেকেই ছুটে যেতে চাইবেন প্রথম দেখায়। পানির নিচের প্রাণীদের জীবনাচরণ দেখার জন্য এটি সবচেয়ে সুন্দর হোটেল।
পানির নিচের হোটেল গুলো এতটাই সুন্দর গেলে মনে হবে আপনি হয়তো স্বপ্ন দেখছেন! পানির নিচে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মাছেরা আপনার চারপাশ দিয়ে ঘোরাঘুরি করছে। অথবা আপনি ঘুমিয়ে আছেন কোনো জলপরীর আবাসস্থলে। এমন কোন অভিজ্ঞতা নিজের জন্য চাইলে ঘুরে আসুন এই পানির নিচের হোটেল গুলো থেকে। গেলে কোথায় যেতে চান সেই গন্তব্য আমাদের কমেন্ট করে জানিয়ে দিন।