Reading Time: 4 minutes

ঢাকা শহরে সুপরিকল্পিত আবাসিক এলাকার কথা উঠলে সেখানে বাধ্যতামূলকভাবে আসবে উত্তরার কথা। শুধু ঢাকা তো বটেই, বরং সারাদেশেই এমন চমৎকারভাবে পরিকল্পনা করে গড়ে উঠা প্ল্যানড এরিয়া মোটামুটি হাতে গোণা। চমৎকার সব ডুপ্লেক্স, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট কিংবা চমৎকার সাজানো গোছানো রাস্তাঘাট এবং এভিনিউ থেকে শুরু করে চিত্তবিনোদনের জন্য পার্ক বা বাচ্চাদের খেলার জায়গা, কী নেই এই এলাকায়? আবার সময় কাটানোর বা ঘুরতে যাবার জন্য জন্য সেক্টরের ভেতরে এবং উত্তরার আশেপাশের বিভিন্ন স্থান আছে। আর এজন্যই উত্তরাবাসী যেমন সুযোগসুবিধা উপভোগ করেন, উত্তরার আশেপাশের এলাকায় বসবাসকারী লক্ষাধিক মানুষও প্রায় একই ধরণের সুবিধা উপভোগ করেন। আমাদের আজকের আলাপ উত্তরার আশেপাশে থাকা সেই সব এলাকার বিভিন্ন সুবিধাবলী নিয়েই। 

উত্তরার আশেপাশের কোন কোন এলাকা?

কসাইবাড়ি রেলগেট
উত্তরার আশেপাশের এলাকাতেও থাকে বেশ গাড়ির চাপ

উত্তরা মডেল টাউন নিজেই এক বিশাল এলাকা। আশির দশক থেকে শুরু হয়ে ইতোমধ্যেই দুইধাপে এই এলাকার ১৪টি সেক্টর পুরোপুরি নির্মিত হয়ে গিয়েছে এবং পুরোদমে এখানে মানুষের বসবাস শুরু হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে পুরোদমে চলছে উত্তরা তৃতীয় পর্বের কাজ, যা প্রায় শেষের পথে। এমন একটি এলাকার আশেপাশের অঞ্চলে ঘনবসতি গড়ে উঠবে তা সহজেই অনুমেয়।

উত্তরাকে পূর্ব ও পশ্চিমে দুটো ভাগে বিভক্ত করেছে আড়াআড়ি উত্তর-দক্ষিণে চলে যাওয়া ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক। এই রাস্তার আরও পূর্বে রয়েছে রেললাইন যা মূলত সেক্টর ও নন সেক্টরের মধ্যে বিভাজক রেখা হিসেবে কাজ করে। উত্তরার আশেপাশের এলাকা হিসেব করলে সিংহভাগ পড়ে এখানেই। সুবিশাল উত্তরখান এবং দক্ষিণখান এলাকা আছে এখানে। হিসেব করলে এয়ারপোর্টে রেলওয়ে স্টেশনের প্রবেশ মুখে থাকা হাজি ক্যাম্প থেকে শুরু করে উত্তরে একদম টঙ্গী তুরাগপার পর্যন্ত বিস্তৃত উত্তরার সেক্টরের বাহিরের এই এলাকা।

এছাড়াও ১০ নম্বর সেক্টর সংলগ্ন কামারপাড়া ও রানাভোলা আর এয়ারপোর্টের পেছন দিকে থাকা দলিপাড়া ও বাউনিয়া এলাকাদুটো হয়ত সম্পূর্ণ উত্তরা থানার অধীনে পড়েনি, কিন্তু উত্তরার আশেপাশের এলাকা হিসেবে এগুলোর নামও চলে আসে সহজেই। চলুন দেখি অসংখ্য মানুষ  কী কারণে এই এলাকাগুলোকে থাকার জায়গা হিসেবে বেছে নেন?

সুবিধাসমূহ

উত্তরার সেক্টরের আশেপাশের এলাকায় বসবাসের ক্ষেত্রে প্রথমেই যেসকল সুবিধার কথা বলা চলে সেগুলো হল

শহরের মাঝেই কমিউনিটি জীবনের স্বাদ

গ্রাম্য বাড়ি
শুধু সুউচ্চ দালানই নয় বরং আছে খোলা জায়গা এবং বিভিন্ন ধরণের বাড়িঘর

মানুষ সামাজিক জীব, তা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু ব্যস্ত, যান্ত্রিক নাগরিক জীবন আমাদেরকে ক্রমেই সামাজিকতা থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। একই বিল্ডিং এ হয়ত বিশটি পরিবারের বাস কিন্তু তারা কেঊ কাউকে চেনে না, ক্রমেই মুঠোফোনের দুনিয়ায় আটকা পড়ছে হয়ত সবাই। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা নিয়ে এ অভিযোগ শুনতে পাওয়া গেলেও উত্তরার আশেপাশের এলাকাগুলো অনেকাংশেই এ অভিশাপ থেকে মুক্ত। উত্তরা মডেল টাউনের মত উত্তরখান, দক্ষিণখানের এলাকাগুলোতে মূলত সব বিল্ডিংই সুউচ্চ নয়, বরং অনেক ভবনই ১ তলা থেকে ৩ তলা। আর এমন বাসায় দেখা যায় সবাই সবাইকে চেনে। এর ফলেই উত্তরার আশেপাশের এই এলাকাগুলোর মানুষের মধ্যে দেখা যায় চমৎকার সামাজিক বন্ধনের বিষয়টি।

হাতের কাছেই সবকিছু

দক্ষিণখান বাজার
মুদি দোকান থেকে শুরু করে সবধরনের কেনাকাটা একদম হাতের মুঠোয়

রাজউকের তত্ত্বাবধানে পরিকল্পিত একটি এলাকা হওয়াতে উত্তরার সেক্টরের ভেতরে চাইলেই যেখানে সেখানে কোন দোকান বা কমার্শিয়াল স্পেস নির্মাণ করা যায় না। ফলে সবকিছুর সহজলভ্যতা থাকলেও, অনেকসময় দেখা যায় ঠিক বাসার কাছেই যে সেসব পাওয়া যায় না নয়। বরং সামান্য মুদি দোকানের কেটাকাটার জন্যও হয় অনেক দূরে গমণ করতে হচ্ছে যা উত্তরাতে কিছুটা আর ডিওএইচএস, গুলশান, বনানীর মত পুরোদস্তুর অনেক আবাসিক এলাকার জন্যই সমস্য। কিন্তু উত্তরার সেক্টরের বাইরের এলাকাগুলো এরূপ সমস্যা থেকে একদম মুক্ত। প্রায় প্রতি গলিতেই রয়েছে কোন না কোন মুদির দোকান। এছাড়া যে কোন ধরণের দোকান হোক তা বৈদ্যুতিক সামগ্রী, কোন কিছু মেরামত, কাঠের জিনিস মেরামত বা তৈরি, কাঁচের জিনিস, বাড়ি নির্মাণ সামগ্রী কিংবা টিভি, ফ্রিজ বা এসি মেরামত, সবই পেয়ে যাবেন হাতের কাছেই।

প্রাত্যহিক জীবনের খরচ তুলনামূলক কম

ঢাকার মত নগরে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি নিয়ে পরিবারের কর্তারা চিন্তিত থাকেন তা হল জীবনযাপনের খরচ। এই শহর পৃথিবীর মাঝেই অন্যতম খরুচে শহর। আর উত্তরার মত পরিকল্পিত এলাকার খরচ একটু বেশি হবে তা তো স্বাভাবিকই। আর ঠিক এখানেই উত্তরার আশেপাশের এলাকাগুলো বেশ আলাদা। যদিও এসব এলাকার মানুষজন প্রায় উত্তরার সেক্টরের লোকেদের মত প্রায় সমান নাগরিক সুযোগসুবিধা ভোগ করে, তারপরেও, তুলনামূলকভাবে জীবনযাপনের খরচ এখানে অনেকটাই কম। যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি ভাবায়, সেটি হল থাকার খচর বা বাড়ি ভাড়া। সেদিকের তুলনায় এলাকায় বাড়ি ভাড়াও অনেকটাই সহনশীল। উদাহরণস্বরুপ বিপ্রপার্টির ওয়েবসাইট থেকে দক্ষিনখান এলাকায় ভাড়ার জন্য বাসাগুলো দেখুন। 

যোগাযোগব্যবস্থা ও ভাড়া

রাস্তা
এলাকাগুলোর রাস্তাঘাটও বেশ উন্নত

কোন একটি এলাকার অন্যতম বড় বিষয় হল সেখানকার যোগাযোগব্যবস্থা। যদিও সেক্টরের বাইরে থাকা এলাকাগুলোর রাস্তাঘাটের অবস্থা একদম টপ কন্ডিশনের তা বলা যাবে না, বরং রাস্তাঘাটের অবস্থা অনেকক্ষেত্রেই বেশ নাজুক। তবে ব্যাপার যদি হয় যানবাহনের সহজলভ্যতা এবং চলাচলের পথ তথা রুট, তবে উত্তরার আশেপাশের এই এলাকাগুলো চমৎকার। দক্ষিণখানে সাথে আশকোনা হাজীক্যাম্প হয়ে এবং সেক্টরের কসাইবাড়ী রেলগেট হয়ে চমৎকার যাতায়াতব্যবস্থা রয়েছে। চলে রিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উত্তরখানের সাথে আব্দুল্লাহপুরের রয়েছে চমৎকার যোগাযোগ। জসীমউদ্দিন এভিনিউ ব্যবহার করে বাউনিয়া, দলিপাড়ার বাসিন্দারা চলাচল করেন আর রানাভোলার সাথে সুইচগেট বা ১০ নম্বর সেক্টর থেকে আছে চমৎকার যাতায়াতব্যবস্থা। এছাড়া সব এলাকাতেই চলে সিএনজি, উবার, পাঠাওএর মত অ্যাপে  বা ভাড়ায় চালিত যানবাহন।

সেক্টরের মতই পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সুবিধা

অনেকের মধ্যেই একটি ভ্রান্ত ধারণা আছে যে, সেক্টরের অভ্যন্তরের এলাকার মত সেক্টরের বাইরের এলাকাগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ থাকে না। এই ধারণাটি নিতান্তই অমূলক। বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি একই লাইনে সেক্টর ও নন-সেক্টর এলাকায় সরবরাহ করা হয়। তাই সেক্টরের অভ্যন্তরের মতই একইরকমের সেবা পেয়ে থাকে এসব এলাকার মানুষজনও।

এই ছিল উত্তরার আশেপাশের এলাকায় বসবাসের সুবিধা নিয়ে আমাদের আলোচনা। আপনি কি এই এলাকার বাসিন্দা? তাহলে আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন আমাদের সাথে। অথবা যে কোন মন্তব্য থাকলে জানাতে পারেন মন্তব্যের ঘরে। বিপ্রপার্টি ব্লগে আমরা প্রতিদিন হরেক রকমের লেখা প্রকাশ করি আপনার জন্যই, বাংলা এবং ইংরেজি উভয় ভাষাতেই! তাই প্রতিদিন চোখ রাখুন আমাদের ব্লগে।

Write A Comment