ঈদুল ফিতর উদযাপন হল বেশ আনন্দ এবং উত্তেজনার মধ্য দিয়ে। দীর্ঘ ৯ দিনের ছুটি নিয়ে আমরা সকলেই ঈদ উদযাপন করেছি যার যার মত। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার ফলে আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের আনন্দ ঈদুল ফিতরকে করে তোলে আরও বিশেষ। ঈদের এই দিনগুলোতে ভালোবাসা, আনন্দ এবং উৎসবের আমেজে পরিপূর্ণ হয়ে থাকে। কেমন কেটেছিল ঈদুল ফিতর অবশ্যই জানিয়ে দিবেন। আমাদের আজকের লেখার বিষয় কোরবানির ঈদ উদযাপন । সেই সাথে বিশ্বব্যাপী এই দিনটি কিভাবে পালিত হয় এবং এর গুরুত্ব সম্বন্ধে আলোচনা করব। শুরু করা যাক তাহলে।
কোরবানির ঈদ
বছরে আমরা পেয়ে থাকি মাত্র দুটি ঈদ। একটি ঈদুল ফিতর যেটি সকলের কাছে রমজানের ঈদ হিসেবে পরিচিত এবং অন্যটি ঈদুল আযহা যেটি সকলের কাছে কোরবানির ঈদ হিসেবে পরিচিত। কুরবান থেকে কোরবানি শব্দটির উৎপত্তি। যার অর্থ আল্লাহ্ তালার নৈকট্য লাভ করা। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায়, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আল্লাহ প্রেমে বিভোর হয়ে আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের জন্য যে হালাল পশু কোরবানি দেয়া হয় তাকে কোরবানি বলে। ইসলামে বলা আছে, জ্বিলহজ মাসের ১০-১২ তারিখ সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত কোরবানি করার সময়। এই তিন দিনের যেকোনো দিনই কোরবানি করা যাবে। তবে, ১০ তারিখে কোরবানি করাই সর্বোত্তম। সমাজের সকল মানুষের মধ্যে আল্লাহ্র বিধান মেনে সমানভাব আনন্দ ভাগাভাগির মাধ্যমে আল্লাহ্ তালার সন্তুষ্টি লাভ করাই কোরবানির মূল্য উদ্দেশ্য। কোরবানি দেওয়া পশুর মাংস তিন ভাগের এক ভাগ দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দিতে হয়। এই কোরবানির মাংস বিলিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে আমরা ভ্রাতৃত্ববোধের শিক্ষা গ্রহণ করি। তবে মনে রাখতে হবে সামর্থ্যবানের জন্য কোরবানি ওয়াজিব। ঈদুল ফিতর আনন্দ ও সুখের প্রতীক অপরদিকে ঈদুল আযহা ত্যাগ ও সংযমের প্রতীক। নিজের কষ্টে অর্জিত অর্থে পশু ক্রয় করে তা আল্লাহ্ তালার সন্তুষ্টির জন্য ত্যাগ করার মধ্যেই রয়েছে আসল আনন্দ।
সংস্কৃতিতে কোরবানির ঈদ
বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ মুসলিম ধর্মাবলম্বী হওয়াতে ঈদ দেশের সবচেয়ে বৃহৎ উৎসবের মধ্যে একটি। এই দেশের কাঠামো ইসলামিক সংস্কৃতিতে গড়ে উঠার কারণে বছরের দুটি ঈদকে দেয়া হয় প্রাধান্য। ঐতিহ্য থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত ও জাতীয় চিন্তা ভাবনা, সবকিছুতেই রয়েছে ইসলামিক চেতনা। তাইতো, অন্য ধর্মাবলম্বীরাও অংশগ্রহণ করে এই খুশির দিনে এবং ভাগাভাগি করে নেয় সমান আনন্দ।
১১ ই আগস্ট সৌদি আরবে ঈদ উদযাপন হতে পারে। সাধারণত, সৌদি আরবের সাথে মিলিয়ে তার পরের দিন বাংলাদেশে কোরবানির ঈদ পালিত হয়ে থাকে। তাই বলাই যায় ১২ ই আগস্ট পালিত হতে যাচ্ছে কোরবানির ঈদ ! এখনই কোরবানির হাট জমজমাট হতে দেখা যাচ্ছে। আনা হচ্ছে দেশি বিদেশী নানা গরু। অন্যান্য দেশে দুম্বা এবং উট বা খাসি কোরবানির জন্য বেছে নেওয়া হয়ে থাকে। যদিও বাংলাদেশে কোরবানির পশু হিসেবে গরুকেই বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়ে থাকে! যাকাত ও ফিতরা প্রদানের মাধ্যমে এই দিনটি বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে থাকে।
যেভাবে ঈদ উদযাপিত হয়
নারীদের ক্ষেত্রে যেকোন উৎসবের সাথেই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে মেহেদী দেয়া। বিয়ে কিংবা বাঙালী কোন উৎসব সবকিছুতেই নারীদের হাতে ফুটে ওঠে মেহেদী। আর আগের রাতে হাতে মেহেদী আঁকা এখন ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। নানা রকম মেহেদী হাতে আঁকা হয়ে থাকে চাঁদ রাতে। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এখন কোরবানির ঈদ উদযাপন করে। এটি একটি সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে তাই কোন অ্যাকটিভিটির অভাব নেই। তবে কোরবানির ঈদে ঈদুল ফিতরের মত আনন্দ উল্লাস থাকে না। এই ঈদটি স্বভাবতই ত্যাগের তাই, সকলের কর্তব্য পালনের দিকে মনোযোগ থাকে বেশি। কিন্তু তাইবলে আনন্দের রথ থেমে থাকে না।
সকালের ঈদের নামায শেষে সকলে একত্রিত হয়ে কোরবানির পশু কোরবানি করার মাধ্যমে, এই ঈদের প্রধান দায়িত্ব পালন করে থাকেন। কোরবানির ঈদের একটি বিশেষ ব্যাপার হল, কোরবানির আগ পর্যন্ত বাসার ছেলেরা উপোস থাকেন। কোরবানি সম্পন্ন হলে তবেই তারা মুখে খাবার নেন। তারপর কোরবানির পশু কাটাকাটি ও ভাগাভাগির কাজ শুরু হয়ে যায়। কোরবানির মাংসের তিন ভাগের এক ভাগ নিজেদের জন্য রেখে বাকি ২ ভাগ সমাজের সকল শ্রেণী পেশার মানুষদের মধ্যে বিতরণ করা হয়ে থাকে। এরপর ভাগ করা মাংস নিয়ে এলাকায় কিংবা আত্বীয় স্বজনদের বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। কোরবানির ঈদ চলে ৩ দিন যাবত এই ৩ দিনই বেশ উৎসব আমেজে কাটে। দাওয়াত খাওয়া এবং ঘুরাফেরার মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হয়। বড় ছোট সকলে বেশ আনন্দে এই দিনগুলো উপভোগ করে থাকে। ছোটরা সালামী সংগ্রহ করতেও বেড়িয়ে পড়ে ঈদের সকাল থেকেই। সবমিলিয়ে কোরবানির ঈদ কাটে বেশ উৎসব আমাজে।
৯ দিনের দীর্ঘ ছুটি
দেশের সবস্তরের মানুষ ঈদ উপলক্ষে পেয়ে থাকে তিন দিনের সরকারী ছুটি, ঈদের আগের রাত হতে ঈদসহ ঈদের পরদিন অব্দি চলে এই সরকারী ছুটি। তবে এই বছর ঘটছে কিছুটা ভিন্ন। দীর্ঘ ৯ দিনের ছুটি পেতে যাচ্ছে সরকারী চাকরীজীবিরা। অতিরিক্ত ১ দিনের ছুটি ম্যানেজ করতে পারলেই পেয়ে যাবেন ৯ দিনের টানা ছুটি। এবার কোরবানির ঈদ এর আগে পড়ে গিয়েছিল সাপ্তাহিক ছুটি এবং শোক দিবস তার মধ্যে রয়েছে এক দিনের কর্মদিবস। যেটার ছুটি নিতে পারলেই পেতে পারেন টানা বন্ধ। এমন লম্বা ঈদুল ফিতরেও পাওয়া হয়েছিল।
কোরবানির ঈদ মুসলিম ধর্মাবলাম্বীদের জন্য দ্বিতীয় বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব। তাই ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে রেল, বাস কিংবা নৌ পথে সকলেই রওনা হয় যার যার গ্রামের বাড়িতে। আপনি এই ঈদটি কোথায় উদযাপন করতে যাচ্ছেন? এবং আপনার ঈদের দিনটি স্বভাবত কিভাবে কাটে? সবকিছু জানিয়ে দিন কমেন্টে।
ঈদ মোবারক!