Reading Time: 9 minutes

ঈদ-উল-আযহার রয়েছে মাত্র আর কয়েকদিন। প্রতিবছরই এই সময়টায় গরু ছাগলের হাট হয়ে ওঠে জমজমাট। বেশীরভাগ মানুষ এই সময়টাতে দরদাম করে সবচেয়ে ভালো কোরবানির পশু ক্রয় করতে চান। তবে, এ বছর পরিস্থিতি একেবারেই আলাদা। তাই পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য জানা চাই কোরবানির পশু ক্রয় করার সকল পদ্ধতি সম্বন্ধে। যাতে করে কোরবানির পশু ক্রয় করার আগে আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তাই চলমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে কোরবানির পশুর হাট কোথায় কোথায় পাবেন এবং কিভাবে সেখান থেকে কোরবানির পশু ক্রয় করবেন সে সম্বন্ধে জানাচ্ছি, জানতে পড়তে থাকুন!

কোরবানির পশুর হাট সমূহ 

গরুর হাট
পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য জানা চাই কোরবানির পশু ক্রয় করার সকল পদ্ধতি সম্বন্ধে

প্রতি বছর ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনগুলো ঈদ-উল-আযহাকে সামনে রেখে প্রায় ২০ টিরও বেশি অস্থায়ী গবাদি পশুর হাট স্থাপন করে থাকে। কিন্তু, এ বছর গাবতলীর স্থায়ী পশুর হাট বাদে হাটের সংখ্যা কমিয়ে মোট ১৬টি তে আনা হয়েছে। তার মধ্যে ১১টি স্থাপন করা হবে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অধীনে আর বাকি ৫টি উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অধীনে।  

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন

  • উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘ মাঠ
  • হাজারীবাগের ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি মাঠসংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা,
  • পোস্তগোলা শ্মশানঘাট
  • লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাবসংলগ্ন গোপীবাগ বালুর মাঠ
  • আফতাবনগরের (ইস্টার্ন হাউজিং) ব্লক ই, এফ, জি ও এইচ এবং সেকশন-১ ও ২। 
  • মেরাদিয়া বাজার
  • দনিয়া কলেজ মাঠসংলগ্ন খালি জায়গা
  • ধূপখোলা মাঠ
  • ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল
  • আমুলিয়া মডেল টাউন
  •  লালবাগের রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন

  • ডুমনী
  • উত্তরা সেক্টর ১৭ বা উত্তরা ময়নার টেক
  • কাওলা শিয়ালডাঙ্গা ভাষানটেক রাস্তার নির্মাণাধীন অব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত অংশ
  • মোহাম্মদপুর বুদ্ধিজীবী সড়কসংলগ্ন (বছিলা) পুলিশ লাইন
  • ভাটারা (সাঈদনগর) পশুর হাট

পশু ক্রয় করার আগে যা জানা জরুরী

যদিও সমস্ত অফিস আদালত শপিংমল বাজার সবকিছু খুলে দেওয়া হয়েছে। তবুও নিজেদের নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা নিয়ে এখনো আপনাকেই ভাবতে হবে। তাই সরকার আপনাদের সুরক্ষা এবং সুবিধা সামনে রেখে ছয় দফা নির্দেশিকা তৈরি করেছে। যদিও হাজার হাজার মানুষের মধ্যে এই গাইডলাইনগুলো মেনে চলা খুবই কঠিন হবে এটাই স্বাভাবিক। তবুও, মেনে চলার বিকল্প নেই।  

বেশিরভাগ বিক্রেতাদের কাছে, গবাদি পশু বিক্রয়ের জন্য কোরবানির পশুর হাট এ তোলা চিরাচরিত একটি প্রথা বা ব্যবস্থা। এবং এই গবাদি পশু রাখার জায়গা হাটে পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। এটা নিয়ে বিক্রেতাদের কোন চিন্তার অবকাশ নেই। এবং গবাদি পশুর প্রাপ্যতা নিয়েও কোন সমস্যা হবে না। কিন্তু, অনেকেই আছেন যারা দীর্ঘ পথ পাড়ি দেন কোরবানির পশু ক্রয়ের জন্য। সকলের জন্যই এখানে যথেষ্ট পরিমাণের গবাদি পশু রয়েছে। 

এই হাটগুলোতে আপনি পরিবহন সুবিধা আশা করতে পারেন শতভাগ। এমনকি আপনি নিজে থেকেও অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহার করে পরিবহন সুবিধা নিতে পারেন। যেমন, ট্রাক লাগবে বা সহজ থেকে। এছাড়াও আপনি যদি ঢাকার বাইরে আপনার কোরবানির পশুটি নিতে চান, সেক্ষেত্রে আপনাকে ৯ দিনের (পাঁচ দিন আগে এবং ঈদ-উল-আযহার তিন দিন পরে) নিষেধাজ্ঞার আগে নিয়ে যেতে হবে। সরকার কর্তৃক ৯ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে পণ্যবাহী পরিবহনের ক্ষেত্রে। 

কোরবানির পশুর হাট কেনাবেচার পর আপনাকে মূল্য পরিশোধ করতে হবে, যদি বিক্রেতা সম্মতি প্রদান করে থাকে আপনি চাইলে মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবা ব্যবহার করে অর্থ প্রদান করতে পারেন। নাহলে আপনাকে নগদ অর্থ প্রদান করতে হবে। 

করোনার প্রকোপকালে গবাদি পশুর চাহিদা এই বছর কিছুটা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। প্রতি বছর, যেখানে ব্যবসায়ীরা উৎসব চলাকালীন সময়ে এক কোটিরও বেশি গবাদি পশু বিক্রি করেন সেখানে এ বছর এই সংখ্যা হ্রাস পেয়ে ৮০,০০০ এ গিয়ে ঠেকবে। পাশাপাশি গবাদি পশুর মূল্যও হ্রাস পাবে তীব্রভাবে।  

সরকার কর্তৃক আয়োজিত ডিজিটাল হাট

ডিজিটাল হাট স্ক্রিন শট
ডিজিটাল হাট

চলমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য সম্প্রতি সরকার “ফুডফরনেশন কোরবানি ২০২০” উদ্যোগে কোরবানির জন্য একটি ডিজিটাল হাট চালু করেছে। এই ডিজিটাল হাটে বিক্রেতারা বিনা খরচায় নিবন্ধন করতে পারবেন এবং সম্ভাব্য ক্রেতারা এই বিশাল ডিজিটাল হাট থেকে তাদের পছন্দসই পশু ক্রয় করতে পারবেন। সরকার ইতিমধ্যে ক্রমবর্ধমান চাহিদার সুবিধার্থে দারাজ, প্রিয়শপ, শোবিজ বাজার এবং বেঙ্গল মিটের মতো অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের সাথে অংশীদারিত্ব করেছে।

যৌথ উদ্যোগে ডিএনসিসি, আইসিটি বিভাগ, বাংলাদেশের ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশন “ডিএনসিসি ডিজিটাল হাট” নামে কোরবানি পশুর ব্যবসায়ের জন্য দেশের প্রথম অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বাস্তবায়ন করেছে। চাহিদা মেটাতে দেশজুড়ে প্রায় ৪০ টিরও বেশি বিক্রেতা নিয়ে প্রায় এক হাজারেরও বেশি পশু নিয়ে এই প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে।

ডিএসসিসিও শহরের দক্ষিণ পাশে বসবাসরত বাসিন্দাদের জন্য কোরবানির পশু কেনার ঝামেলা লাঘব করতে একই জাতীয় অনলাইন মার্কেটপ্লেস চালু করার কথা বলেছে। খুলনার প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ “অনলাইন কোরবানি হাট খুলনা” নামে একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ভিত্তিক কোরবানির পশুর হাট মোবাইল অ্যাপ চালু করার কথা বলেছে।

পশু ক্রয় করার আগে যা জানা জরুরী

যেহেতু এটি একটি নতুন মাধ্যম বা প্রক্রিয়া, তাই ক্রেতারা এটা ব্যবহার করতে গিয়ে এর প্রক্রিয়া সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করতেই পারে। তাই জানা দরকার এতে কী হয় এবং কিভাবে কী করা যায়। এবং এর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বেশিরভাগ প্রশ্নের উত্তর বেশ সহজভাবেই দিয়েছেন। যাতে করে সকলের আস্থা অর্জন করা সম্ভব হয়। ডিএনসিসির ডিজিটাল হাট থেকে কোরবানির পশু কেনার সময়, সম্ভাব্য ক্রেতারা ব্যাংক ট্রান্সফার, ভিসা কার্ড, মাস্টার কার্ড বা অ্যামেক্স কার্ডসহ বিভিন্ন অর্থপ্রদানের পদ্ধতি ব্যবহার করে ২৫% ডাউন পেমেন্ট দিয়ে অর্ডার দিতে পারবে। নগদ মোবাইল ব্যাংকিং এর দ্বারা এই পরিষেবাটি ব্যবহার করলে যেকোন অর্থ প্রদান করলে ১% ছাড় উপলভ্য। 

সতর্ক থাকতে হবে, অর্থ প্রদানের পরে যদি অর্ডারটি বাতিল করেন তবে, ২৫% অর্থ আপনার প্রদান করা অর্থ থেকে কেটে নেওয়া হবে। আপনি তাদের ওয়েবসাইট থেকে “পশু জবাই” পরিষেবাটিও পেতে পারেন। সেক্ষেত্রে, মোট ব্যয়ে ২৩% অতিরিক্ত চার্জ যুক্ত করা হবে। অর্ডার দেওয়ার পরে, আপনি তাদের কল সেন্টার থেকে কল পাবেন। তারা আপনাকে আপনার ক্রয় সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য দিয়ে আপডেট করবে। যে কোনও প্রাসঙ্গিক তথ্য জানতে আপনি যে কোনও সময় ০৯৬১৪ ১০২০৩০ কল করতে পারেন। গবাদি পশুর দর দাম বিষয়ে আরেকটি জিনিস সম্বন্ধে আপনাকে সচেতন হতে হবে। এই প্ল্যাটফর্মগুলিতে কোনও দর কষাকষি নেই। সুতরাং, যারা বাজেট নির্ভর কেনাকাটা করেন তাদের জন্য এটা বেস্ট অপশন নাও হতে পারে। ডেলিভারির সময় এবং চার্জ, বিক্রেতার উপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। তবে, আপনি চাইলে ডেলিভারির জন্য নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা ব্যবহার করতে পারেন। যেহেতু, আপনি অনলাইনে কেনাকাটা করবেন, তাই নির্ভরযোগ্যতা এবং বিশ্বাস অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই আপনি চাইলে নিজের ক্রয়কৃত পশু দেখতেও যেতে পারেন, তার আগে নিতে হবে অ্যাপয়েন্টমেন্ট। 

সোশ্যাল মিডিয়ার বিক্রেতা 

ফেসবুক পেজ
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিতে দুই ধরণের বিক্রেতার সন্ধান পাওয়া যাবে

ফেসবুকের মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিতে দুই ধরণের বিক্রেতার সন্ধান পাওয়া যাবে। একটি, তাদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সরাসরি বিক্রি করবে এবং অন্যটি, তাদের গবাদি পশু বিক্রি করার জন্য একটি নামী ফেসবুক গ্রুপের সহায়তা নেবে। প্রতিদিন প্রায় কয়েক মিলিয়ন সক্রিয় ব্যবহারকারীর সাথে, ফেসবুকের মাধ্যমে আপনি ঘরে বসেই পশুর হাটে যাবার সুযোগ পাচ্ছেন। বেশিরভাগ লোকেরা হাটে যাওয়া এবং হাসিল চার্জ এড়ানোর লক্ষ্যে ফেসবুকে কোরবানির পশু খোঁজেন। এই প্রক্রিয়াটি অন্য অনলাইন মার্কেটপ্লেসের তুলনায় কিছুটা নির্ভরযোগ্য। এমনকি আপনি বিক্রেতার সাথে দর কষাকষিতেও যেতে পারেন। এই বিষয় গুলো সম্বন্ধে আপনাকে আরও সচেতন হতে হবে। 

পশু ক্রয় করার আগে যা জানা জরুরী

আপনি যদি ফেসবুকের মাধ্যমে গবাদি পশু কিনে থাকেন তবে অর্থ প্রদান সংক্রান্ত কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। ফেসবুকের সাথে কোনও ইউনিফাইড প্রোডাক্ট ট্র্যাকিং সিস্টেম না থাকায় আপনি জালিয়াতির শিকার হতে পারেন এমন সম্ভাবনাও কিন্তু রয়েছে। এক্ষেত্রে, ফেসবুককে আপনার যেকোন সমস্যা জানানো হলে সত্যিই ফেসবুক উপযুক্ত সহায়তা করবে কিনা এ নিয়ে সন্দেহ রয়েই যায়। সুতরাং, বিক্রেতাদের খুঁজুন এবং প্রয়োজনে ফোনে তাদের সাথে যোগাযোগ করুন। অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য জিজ্ঞাসা করুন, যাতে আপনি নিজে গবাদি পশু দেখতে পারেন। মূল্য পরিশোধের সময় সম্ভব হলে পশুটিকে সাথে রাখুন। এইভাবে যেকোন অর্থ কেলেঙ্কারী এড়াতে সক্ষম হবেন।

আপনি যদি পশু ডেলিভারির জন্য বিক্রেতার উপর নির্ভর করেন, তবে এটা একটু চিন্তার বিষয় হয়ে উঠতে পারে। এছাড়াও বিক্রেতার উপর নির্ভর করলে, তারা মোট অংক ডেলিভারি চার্জ হিসেবে সামনে পেশ করতে পারে। এক্ষেত্রে, আপনাকে অতিরিক্ত চার্জও করতে পারে। যেহেতু, আপনি চুক্তির সময় সেখানে থাকবেন, তাই চাইলে আপনি নিজেই খেয়াল করতে পারবেন। এবং বাড়তি চার্জ বা গবাদি পশুর মান নিজেই নিশ্চিত করতে পারছেন। এই প্রক্রিয়ায় ক্রয় করলে আপনি অনেক মানুষের সংস্পর্শেও আসলেন না এবং স্বাস্থ্যের প্রতি ঝুঁকিও কমে আসলো।  

অনলাইন মার্কেটপ্লেস

গরুর হাট ডটকম
অনলাইন প্ল্যাটফর্ম

বর্তমান মহামারী পরিস্থিতির কারনে বেশীরভাগ মানুষ অনলাইন শপিং এর দিকে ঝুঁকে পড়েছে। ই-কমার্স সাইটগুলি এই বিশাল বাজার দখলের জন্য অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রির জন্য বিশাল অংক বিনিয়োগ করেছে। যদিও অনলাইনের কেনাকাটার প্রবণতা নতুন নয়। এর আগেও অনলাইনে কোরবানির পশু ক্রয় ও বিক্রয় করা হয়েছে। বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলি তাদের বিশাল কালেকশন থেকে ক্রয়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরণের পশু সরবরাহ করেছে।  

গবাদি পশু কেনার জায়গাগুলির কথা বললে, গত বছর দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ই-কমার্স সাইট দারাজ (যা চীনা জায়ান্ট ই-কমার্স সাইট আলিবাবার সহযোগী সংস্থা) তাদের সাইটের মাধ্যমে ৭০ টিরও বেশি গবাদি পশু বিক্রি করেছে। বাংলাদেশের আরেকটি বড় ই-কমার্স সাইট, বিক্রয় ডটকম বিক্রি করেছে ৩০০০ টি গরু। অনলাইন সেবা সরবরাহকারী প্ল্যাটফর্ম সেবা এক্স ওয়াই জেড গ্রাহকদের জন্য বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে, যাতে লোকজন ব্যয় ভাগ করে অন্যের সাথে মিলে কোরবানির গরু কিনতে পারে। তাই এক্সপার্টরা ধারণা করছেন, এই বছর ই-কমার্স সাইটগুলি নতুন রেকর্ড তৈরি করবে। কারণ, আরও ই-কমার্স সাইটগুলো এই পথে এক সাথেই যোগ দিচ্ছে। 

এই সাইটগুলোতে যাওয়ার আগে যা জানা জরুরী

বেঙ্গল মিট, দারাজ, অথবা, বিক্রয়, সেবা এক্স ওয়াই জেড, সবজিবাজার, সাদেক এগ্রো, দেশীগরুবিডি, আজকেরডিল এবং প্রিয়শপ সহ আরও বেশ কিছু অনলাইন সাইট রয়েছে যারা আপনার জন্য হাজার হাজার গবাদি পশু সরবরাহ করছে। এবং এখানে আপনি পাচ্ছেন হাজারো অপশন থেকে পছন্দসই কোরবানির পশু ক্রয় করার সুযোগ। কোরবানির  পশুর হাট এ না গেলেও চলবে, এখন ঘরে বসেই কোরবানির পশু ক্রয় করতে পারছেন।  

অনলাইনে পশু ক্রয় করার ক্ষেত্রে যে জিনিসটা আপনাকে বেশি কষ্ট দিতে পারে তা হচ্ছে, অধিক মূল্য। বেশীরভাগ পশুর দাম থাকবে মাত্রাতিরিক্ত বেশি। ৬০,০০০ হাজার টাকার মধ্যে কেবলমাত্র কয়েকটি পশু পাওয়া যাবে। যদিও কোরবানির পশুর হাটের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। সেখানে আপনি দর দাম করার শতভাগ সুযোগ পাচ্ছেন। অন্যদিকে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের কথা বলতে গেলে সেখানে দরদামের কোন সুযোগ নেই। এখানে বিক্রেতারা হাটের থেকে বেশি লাভবান হবার সম্ভাবনা খুঁজে পাবেন।  

যেহেতু এগুলো, ই-কমার্স সাইট যে কোনও জায়গা থেকে যে কেউ এগুলো অ্যাক্সেস করতে পারবে। অনেকের মনেই প্রশ্ন আসতে পারে ডেলিভারি প্রক্রিয়াটি আসলে কেমন? ক্রয় করার পরে, প্রাথমিকভাবে আপনাকে যে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের দ্বারা ক্রয় করেছেন তার উপর নির্ভর করতে হবে, ঈদের ২-৩ দিন আগে আপনি চাইলে তারা ডেলিভারি দিতে পারবে। এবং খেয়াল করতে হবে, তারা শহরের বাইরে পশু ডেলিভারি নাও দিতে পারে। তবে আপনি এই জাতীয় পরিস্থিতিতে সর্বদা নিজের পরিবহনের ব্যবস্থা নিজেই করতে পারেন। এবং অনলাইনে ক্রয়ের সুবিধা হচ্ছে, এই প্রক্রিয়া চলাকালীন সময়ে আপনার অন্য কোন ব্যক্তি বা বস্তুর সংস্পর্শে আসতে হচ্ছে না। 

এই ই-কমার্স সাইটগুলিতে আপনার অর্ডার ট্র্যাক করার জন্য ইউনিফাইড প্রোডাক্ট ট্র্যাকিং সিস্টেম নিয়ে তৈরি করা। নির্ভরযোগ্যতা এবং বিশ্বাসের বিষয় নিয়ে ভাবলে অনলাইনে কেনাকাটা নিয়ে একটা না একটা সমস্যা থাকবেই, তবে এটা পুরোটাই আপনার উপর আপনি কতটা সচেতন হয়ে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছেন। চুক্তির সময় আপনাকে আংশিক অর্থ প্রদান বা সম্পূর্ণ অর্থ প্রদান করতে হতে পারে তবে তা বিক্রেতার উপর নির্ভর করবে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আংশিক প্রদানের বিকল্প পাওয়া যায়। ব্যাংক ট্রান্সফার, ভিসা কার্ড, মাস্টার কার্ড এবং আমেরিকান এক্সপ্রেস কার্ড সহ বিভিন্ন ধরণের অর্থ প্রদানের পদ্ধতি রয়েছে। যেমন, বিকাশ, রকেট ইত্যাদির মাধ্যমেও মূল্য পরিশোধ করা যাবে। 

গবাদি পশুর খামার (গরুর খামার)

গরুর খামার
কোরবানির পশুর হাট হিসেবে শহরের ভেতরে ও বাইরের হাটগুলো বেশ জনপ্রিয়

শহরের ভেতর ও বাইরের কোরবানির পশুর হাট গুলো সবসময়ই সবার প্রথম পছন্দ। অনেকের কাছে গবাদি পশুর মান এবং খামারের রক্ষণাবেক্ষণ প্রক্রিয়া জেনে গবাদি পশু কেনা অত্যন্ত জরুরী। তাই কোরবানির পশুর হাট হিসেবে শহরের ভেতরে ও বাইরের হাটগুলো বেশ জনপ্রিয়। আপনি চাইলে এই গবাদি পশুর খামার থেকেও কোরবানির পশু ক্রয় করতে পারেন। গুগল বা ফেসবুকে  অনুসন্ধানের ফলে দেশজুড়ে শত শত “পশুর খামার” এর খোঁজ আপনি নিমিষেই পেয়ে যাচ্ছেন।   

পশু ক্রয় করার আগে যা জানা জরুরী

এই গবাদি খামারে যাওয়ার আগে আপনাকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করতে হবে। এই খামারগুলি আপনাকে প্রচুর দেশী এবং বিদেশী জাতের গবাদি পশু দেখাতে পারে। খামারগুলির গবাদি পশুগুলো বেশ উন্নতভাবে লালিত পালিত হওয়াতে গুণগতমান নিয়ে কারও কোন প্রশ্ন থাকবে না। যেহেতু, এই খামারগুলির বেশিরভাগই শহরের প্রান্তে বা শহরের বাইরে অবস্থিত তাই খামারে যেতে হয়তো একটু সমস্যার সম্মুখে পড়তে হতে পারে, এজন্যই পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে একটু ভাবুন। বিক্রেতার উপর নির্ভর করলে আপনাকে অতিরিক্ত চার্জ করতে পারে, এক্ষেত্রে আপনি পরিবহনের ব্যবস্থা করতে পারেন বা কোন অনলাইন পরিষেবা যেমন, ট্রাক লাগবে, সহজ বা সেবা এক্স ওয়াই জে এর সাহায্য নিতে পারেন। আপনি যদি শহরের বাইরে থেকে কোনও গবাদি পশু কেনার পরিকল্পনা করছেন, তবে পণ্যবাহী যানবাহন ৯ দিনের জন্য চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হওয়াতে আপনাকে এখনই ভাবতে হবে। কোনও চুক্তি বা অর্থ প্রদানের পরিকল্পনা এবং অর্থপ্রদানের পদ্ধতি সম্পর্কে বিক্রেতাকে জিজ্ঞাসা করুন। বিক্রেতার উপর নির্ভর করলে হয়তো আপনার সুবিধা মত নাও হতে পারে তাই সেদিকে খেয়াল করুন। এই খামারগুলো থেকে গবাদি পশু কেনা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই এই করোনার পরিস্থিতির মধ্যে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক।   

অতিরিক্ত (বিশেষায়িত কোরবানি পরিষেবা)

কসাইয়ের ঝামেলা এড়াতে  চান না এমন কেউ নেই। কোরবানির সময়ে এটা সবচেয়ে ঝামেলাপূর্ণ একটি কাজ। এবং এখন চাইলে আপনি অনলাইনে “সম্পূর্ণ কোরবানি পরিষেবা” অর্ডার করতে পারেন। যদিও এটি বাংলাদেশে একটি স্বল্প পরিচিত সেক্টর, তবে বেশ কয়েকটি সংস্থা এই বছর এই পরিষেবা দিচ্ছে। ঈদের আগেই আপনাকে বুকিং দিতে হবে এবং বুকিং এর পরে একজন পেশাদার কসাই তাদের নির্দিষ্ট কসাইখানায় মাংস কেটে পরিষ্কার করে সহজেই আপনার কাছে প্রেরণ করবে।  

বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যে, এই জাতীয় পরিষেবা যেমন জনপ্রিয় সময়ের সাথে এর চাহিদা আরও বাড়তে পারে। দেশের অন্যতম বেঙ্গল মিট অনলাইনে অর্ডার নিচ্ছে। গবাদি পশুর আকার এবং দামের উপর নির্ভর করে তাদের পরিষেবা চার্জ ২২,০০০ টাকা থেকে ২৫,০০০ টাকার মধ্যে। মাদল নামের আরেকটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এ বছরই যাত্রা শুরু করেছে তারা, একটি গবাদি পশুর ১০% চার্জ করে থাকে। অন্যদিকে সেবা এক্স ওয়াই জেড এক ধাপ এগিয়ে গেছে। তারা কেবল তাদের ওয়েবসাইটে গবাদিপশু বিক্রি করছে না, তারা এই বছর “সম্পূর্ণ কোরবানি পরিষেবা” চালু করেছে। পূর্বে পরিষেবাটি কেবল গ্রাহকদের জন্য কসাই সরবরাহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। অনলাইনে কেনাকাটা আপনি পছন্দ করুন আর নাই করুন। এই সময়ের তাগিদে অনলাইন থেকে কোরবানির পশু ক্রয় করাই শ্রেয়। ঈদের সময় মারাত্মক ভাইরাসের সংক্রমণ বন্ধ করার জন্য সরকার অনলাইনে কোরবানির পশু কেনার জন্য জনগণকে উৎসাহিত করছে। এবং এটাই সময় উপযোগী একটি পদক্ষেপ।

এই সঙ্কটের সময়ে কোরবানির পশুর হাট সম্বন্ধে একটি ওভারভিউ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আপনি আমাদের জানিয়ে অবশ্যই কমেন্ট করুন এই ব্লগ থেকে আপনার কোন সহায়তা হয়েছে কিনা!  

Write A Comment