Reading Time: 4 minutes

দালানকোঠা থেকে আকাশ দেখা গেলেও, সবুজ ছুতে পোহাতে হয় নানান ঝক্কি। সবার মনের বৈশিষ্ট্য তো সমান না। কেউ পানির পেছনে ছোটে কেউ আবার খুঁজে ফেরে সবুজ। কিন্তু, কেউ কেউ আছেন যারা কিনা সবুজেই বসবাস করতে চায়। বর্ধমান এই শহরে আমার বাস বর্তমানে। সময়ের সাথে খাপ খাইয়ে চলা। প্রকৃতিতে থাকা যদি বিলাসিতা হয় তাহলে প্রকৃতিকে নিয়ে বসবাসই হোক বাস্তবতা। ঘরের ভেতর পায়ের পাতায় কিংবা হাতের মুঠোয় সবুজ পেতেই আমাদের যত কর্ম। এমন এক অনুষঙ্গ নিয়ে আজকের লেখা। ঘরের সাজে নানান কার্পেট আমরা অনেক দেখেছি। কিন্তু, গ্রাস কার্পেট যেনো অন্য কিছু! পায়ের নিচের সবুজকে নিজের করে রাখতে কেনা চাই এই গ্রাস কার্পেটগুলো। আরও জানতে পড়তে থাকুন! 

গ্রাস কার্পেট
একদম ঘাসের মতই

গ্রাস কার্পেট আসলে কী? 

সহজ করে বলতে, ঠিক ঘাসের মত দেখতে একটা কার্পেট কিন্তু ঘাস নয়! দূর থেকে দেখলেও মনে হবে ঘাস। আবার অনেকে আছেন বেশ কাছ থেকে দেখলেও ভাবেন যে ঘাস। সত্যিকারের ঘাসের মত করে তৈরি হলেও আসলে কিন্তু, কৃত্তিম ঘাস। এই কার্পেটের উপর হাঁটলে একদম ঘাসের মতই অনুভব হয়।

গ্রাস কার্পেটের রকমফের

রাবার প্লাস্টিক, পিভিসি, পিপি, পিই, মনোফিলামেন্ট পিই এবং পিপি ও পিই মিশ্রণের উপাদানে তৈরি। তবে এই গ্রাস কার্পেটের ম্যাটেরিয়ালে খুঁজে পাওয়া যায় ভিন্নতা। পাট, রেক্সিন, প্লাস্টিক, পাতলা রাবার ও সিনথেটিক। পছন্দ মত কার্পেট খুঁজে নিতে মৌসুমের সাথে মানিয়ে যায় এমন কার্পেটও বেছে নিতে পারেন। গরমকালে ঘরের ভেতর আরাম এনে দেয় এমন রঙের কার্পেট নিতে হবে। তেমনি, শীতকালে ঘরের ভেতর উষ্ণতা আনে বেছে নিতে হবে তেমন রঙের কার্পেট। শীতকালের জন্য বেছে নিন লাল, সবুজ, নীল, খয়েরি, বেগুনি ইত্যাদি। আর গরমের জন্য বেছে নিতে পারেন কমলা, কফি, ধূসর, কফি ও কমলার সংমিশ্রণের কোন রঙ।

গ্রাস কার্পেট
সবুজ রঙটা সহজেই সবার পছন্দ হয়

রঙ ও নকশার তারতম্য 

রঙ বেরঙের যেমন কার্পেট খুঁজে পাবেন তেমনি নকশায় খুঁজে পাবেন বৈচিত্র্য। সবুজের ভেতর ঘাস নকশার কার্পেট খুঁজে পাওয়াটা বেশ সহজ। তারপর টিয়া রঙের কার্পেটও খুঁজে পাবেন সবুজের পাশাপাশি। ধুসর রঙের ভেতর বাদামী রঙের নকশা বেশ সুন্দর দেখায়। আপনি নতুন কিছু করতে চাইলে কমলা বা কফি রঙের কার্পেটের মধ্যে ঘাস নকশা নিতে পারেন। যেহেতু, সবুজ রঙটা সহজেই সবার পছন্দ হয় এক্ষেত্রে এই রঙগুলো বেছে নিলে ঘরের ভেতর ফুটে উঠবে নতুনত্ব। এগুলো ছাড়াও আছে, খয়েরি ধূসর ও কাফির সমন্বিত রঙের, সিম্পল লাল ও সাদা লেয়ারের ঘাস ডিজাইন কার্পেটও। একেক জনের পছন্দ একেক রকমের। কেউ সিম্পল পছন্দ করেন আবার কেউ চোখ ধাঁধানো নকশা। গ্রাস কার্পেটে আপনি এই দুটোই বেশ চমৎকারভাবে খুঁজে পাবেন।

গ্রাস কার্পেটের ব্যবহার ও সুবিধা

ইদানিং গ্রাস কার্পেট ঘরে বাইরে অফিস সব জায়গায়ই সমান ভাবে ব্যবহার হয়ে থাকে। ঐ যে বললাম, ঘরের ভেতর থেকে আকাশ দেখা গেলেও সবুজ খুঁজে পেতে একটু বেগ পেতেই হয়। তাই ছাদে, আউটডোর স্পেসে, বারান্দায় মেঝেতে, দোকানের মেঝেতে বা শপিংমলের মেঝেতে। সব জায়গায়ই ঘরের ডেকোরের সাথে মানিয়ে ব্যবহার করা যায় বলে সবাই এই গ্রাস কার্পেট কেই বেছে নেয়। অনেকে আবার ম্যাট বা শতরঞ্জির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। বাসাবাড়ির দেয়ালেও কিন্তু এই কার্পেট ব্যবহার হতে দেখা যায়। সবুজ দেয়াল করার শখ থাকলে অনায়াসে বেছে নিতে পারেন এই কার্পেটগুলো। বাগানে চাইলে ব্যবহার করতে পারেন। কৃত্তিম বাগান করতে চাইলে এই কার্পেটগুলো বেশ উপকারে আসে। এমনকি অনেকেই ইন্টেরিয়রের উপকরণ হিসেবেও এই কার্পেট বেছে নেন। অ্যাকুরিয়ামেও এই কার্পেটগুলো ব্যবহার হয়ে থাকে। এই কার্পেট ব্যবহারের বেশকিছু সুবিধাও রয়েছে। যেমন, দেখতে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক গাছের মত। তাই ঘরের ভেতরও থাকে সবুজের আমেজ। যারা প্রকৃতি ভালবাসেন তাদের কাছে সবুজ বেশ প্রিয় একটি রঙ। তাই ঘরের সৌন্দর্যবর্ধনেও বেশ চমৎকার। এমনকি বাইরের শব্দ কমিয়ে আনতে ও ইনস্যুলেটর হিসেবে বেশ কার্যকরী। দামেও উল কার্পেটের চেয়ে বেশি সাশ্রয়ী। দেখভাল করার ক্ষেত্রেও স্বল্প সময় লাগে। কিছু কিছু কার্পেটে আগুনরোধী কোটিংও রয়েছে। বৃষ্টি বা শীত যেকোন সময়ে ব্যবহারের উপযোগী। ইনডোর ও আউটডোরে ব্যবহার করা যায়।

গ্রাস কার্পেট
ঘরের ডেকোরের সাথে মানিয়ে ব্যবহার করা যায় বলে সবাই এই গ্রাস কার্পেট কেই বেছে নেয়

দরদাম 

গ্রাস ডিজাইনের কার্পেটের দাম নির্ভর করে আয়তনের উপর অর্থাৎ, দৈঘ্য প্রস্থ ও পুরুত্বের উপর। ১০ এমএম থেকে শুরু ৫০০ এমএম পর্যন্ত ঘাস ডিজাইনের কার্পেট রয়েছে। রোলের প্রস্থ  ২ থেকে ৪ মিটার হয়। এক রোলে ১০০, ২০০ ও ৫০০ বর্গফুট করে ঘাস কার্পেট থাকে। প্রতি বর্গফুট ১২০ থেকে শুরু করে ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। 

যত্নআত্তি

কার্পেটের চেয়ে আপন কোন অনুষঙ্গ নেই হোম ডেকোরে! ঘরের সাজে কার্পেটের ব্যবহারও যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। ঘরের ভেতর সেই ওয়ার্ম আর কোজি ফিলিং কে না ভালোবাসে। তাইতো বিভিন্ন ঘরের জন্য নানারকমের কার্পেট আমরা খুঁজে বেড়াই। আর এই কার্পেটের যত্ন আত্তিও কিন্তু বেশ দরকারি। ওয়াটার প্রুপ হওয়ায় পানি দিয়ে এগুলো বেশ সুন্দর করে ধোঁয়া যায়। আর ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে ধুলা-ময়লা দূরও করা যায়। কার্পেটের যত্নআত্তি করুন এই সব উপায়ে। 

কোথায় পাবেন

ঘরের সাজের অনেকটাই নির্ভর করে আপনার মেঝের সজ্জার উপর। মেঝে কীভাবে সাজাচ্ছেন এটাও অনেক মুখ্য একটি বিষয়। আর মনের মত কার্পেট খুঁজে পেতে ঘুরে আসতে পারেন মহাখালী, বনানী, মোহাম্মদপুর, উত্তরা, ফার্মগেট, পুরান ঢাকা, মিরপুর, রামপুরা, কারওয়ান বাজার, মালিবাগসহ দেশের সব মার্কেটগুলো থেকে।  

তাহলে, আজই পছন্দসই গ্রাস কার্পেট কিনে ঘরে পেতে ফেলুন। ঘরের সৌন্দর্য অনেকটা বাড়িয়ে দেয় এই বাহারি কার্পেটগুলো। এমনকি মেহমান এলেও ঝুলিতে পড়ে অনেক প্রশংসা। কার্পেট পরিষ্কার রাখাও কিন্তু আপনার রুচির প্রকাশ।

Write A Comment