পারফেক্ট প্ল্যানিং আর সময় নিয়ে যেকোন বাসাকেই তৈরি করা যাবে ট্রেন্ডি। হোম ডেকোর আমরা কম বেশি সবাই জানি এবং ইতিমধ্যে সেইসব আইডিয়া প্রয়োগও করেছি। দেয়ালের রঙ বদলানো থেকে শুরু করে মাথার উপর সিলিংটাও এখন নতুনের মত। কতশত ঘরের সাজের টিপস আমরা জানি। কিন্তু এমন ভাবনা নিশ্চয়ই মাথায় এসেছে যে, “সময়ের সাথে প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে ট্রেন্ড এমন কি করা যায় যা কিনা সবসময়ই আমার বাসাকে রাখবে সবার থেকে আলাদা আর সুন্দর”। কখনো ভেবেছেন কি দেশভেদে রয়েছে কত সংস্কৃতি! যে সংস্কৃতি আপনার ভালো লাগবে সেই সংস্কৃতির কিছু অংশ নিয়েই নিজের ঘরের সাজ বদলে ফেলতে পারেন। শুনে মনে হচ্ছে এটা অনেক ব্যয়বহুল একটা আইডিয়া। একদমই না। আপনি যেকোন লোকাল মার্কেটেই পেয়ে যাবেন ঘরে সংস্কৃতির ছোঁয়া আনার সকল উপকরণ। সঠিক প্ল্যানিং থাকলে আপনার বেশি সময় লাগবে না। এবং এই টিপসগুলো জেনে রাখলে আপনার প্ল্যানিং করতে আরও সহজ হবে।
ভিন্নতা থাকুক
হয়তো ভাবছেন, ঘরে সংস্কৃতির ছোঁয়া দিতে গেলে আগের যে ডেকোর করা আছে তার সাথে কি আদৌ মিলবে? হ্যাঁ, মিলবে না। মেলা সম্ভবও না। আর মেলবার দরকারও নেই। কারণ, ডেকোরের সাথে মিলে গেলে আপনার আনা সাংস্কৃতিক উপকরণের বিশেষত্ব কিছুটা হলেও ম্লান হয়ে যাবে। ডেকোরের সাথে সাংস্কৃতিক উপকরণের এই মেলবন্ধনটাই স্টাইলের ফিউশন তৈরি করে। আপনার বিশেষ কোন সেটআপ তৈরি করার প্রয়োজনও নেই। যেমন ধরুন আপনার আলমারিটা মুঘল আমলের নকশায় তৈরি করলে কিন্তু আপনার ঘরের চেহারাই বদলে যায়। আলমারির নকশায় মুঘল আমলের আভিজাত্য ফুটিয়ে তুলুন, সেই আভিজাত্য কিন্তু আপনার ঘরেও ছড়িয়ে পড়বে। ঠিক এভাবে অল্প কিছু ধাপ অবলম্বন করে ঘরে সংস্কৃতির ছোঁয়া আনতে পারেন।
সৃজনশীলতা থাকা চাই
ঘরের সাজে আপনি যখনই নতুন কিছু যোগ করছেন, কোথাও না কোথাও আপনার সৃজনশীলতার প্রকাশ ঘোটছে। আর এই সৃজনশীলতাই আপনাকে সবার থেকে আলাদা করে তুলবে। সৃজনশীলতা হতে পারে আপনার পছন্দের যেকোন বস্তু বা আর্টওয়ার্ক। যেমন, ধরুন রিকশা পেইন্ট! বেশ চমৎকার একটি ঐতিহ্যবাহী শিল্প এটি। এই শিল্প বাঙালী ঐতিহ্যকে অনেকটাই ধরে রেখেছে। রিকশা পেইন্টের মাধ্যমে ফুটে উঠে বাংলার গ্রাম এবং চলচিত্রের বিভিন্ন রূপ। রিকশা পেইন্টের কোন কিছু যদি আপনার ঘরে থেকে থাকে, ঘরে সবসময়ই থাকবে সংস্কৃতির ছোঁয়া। রিকশা পেইন্টের নানা আর্টওয়ার্ক বাজারে খুব সহজেই পেয়ে যাবেন, খুব বেশি দামও নিবে না। নিঃসন্দেহে, এই আর্ট ওয়ার্কগুলো আপনার ঘরের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিবে অনেক বেশি।
প্রয়োজনমত ডেকোর যোগ করুন
ঘরে সংস্কৃতির ছোঁয়া আনতে আপনার ডেকোরের ফোকাল পয়েন্টগুলো সম্বন্ধে জানতে হবে। যেকোন হোম ডেকোর স্টাইলে অতিমাত্রায় কিছু উপাদান যোগ করলে ডেকোর তেমনভাবে ফুটে ওঠে না। হোম ডেকোরের ফোকাল পয়েন্টগুলো হল, যেকোন একটি জিনিস রাখা, কয়েকটি জিনিস একসাথে রাখা এবং কিছু দূরত্ব বুঝে একেকটি জিনিস ছড়িয়ে রাখা। যেমন, একটি ঘর ভর্তি করে বিভিন্ন জিনিস রেখে দিলে ঘর যেমন ছোট দেখাবে তেমনি আপনার মনে ঘর অনেকটা গুমট। আপনি কেমন উপাদান যোগ করতে চাচ্ছেন তার উপর ঘরের ডেকোর অনেকটাই নির্ভর করছে, ঘরের মাঝখানে আপনি একটি স্ট্যাচু কিংবা মোজাইক টেবিল রাখতে চাচ্ছেন সেক্ষেত্রে, আপনাকে অবশ্যই হালকা ডেকোরের কথা ভাবতে হবে। যাতে এই স্ট্যাচু অথবা টেবিলটাই মধ্যমণি হয়ে থাকে। তাতে করে আপনি যখনই ঘরে প্রবেশ করেন না কিনা, আপনার চোখ শুধু সেই মোজাইক টেবিলে গিয়েই আটকাবে। ঘরে সংস্কৃতির ছোঁয়া রাখতে, সহজ এবং মার্জিত ডেকোর রাখার চেষ্টা করুন।
সাংস্কৃতিক ছোঁয়া যেভাবে পাওয়া যাবে
সাও খরচ হবে না। আশেপাশের যেকোন লোকাল মার্কেট কিংবা অ্যান্টিক শপগুলোতে রয়েছে এমন হাজারো অপশন। অনলাইনেও রয়েছে এমন অনেক পেইজ যেগুলোতে পাওয়া যায় নানারকম ঘর সাজানোর জিনিস। এছাড়া ফুটপাথে পাওয়া যায় মাটির তৈরি নানারকম ডেকোর আইটেম। এখন ইনডোর ফেয়ারগুলোতে পাওয়া যায় নানারকম সাংস্কৃতিক ডেকোর আইটেম। আপনি চাইলে ঢাকা বাণিজ্য মেলায় দেখতে পারেন, সেখানে শুধু বাংলাদেশের সংস্কৃতির নয় বরং থাকে বিদেশী সংস্কৃতির অনেক উপাদান। হাতের কাছে এত অপশন থাকতে খেই হারানোর কোন অবকাশ নেই।
ঘরের পরিবেশ
আপনার পছন্দ অপছন্দ ও জীবনযাত্রা সবকিছুতেই ব্যক্তিত্বের ছাপ ফুটে উঠে। আর সেই জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে “আপনার বাসা”। সেখানে আপনার ব্যক্তিত্ব যেন আরও নিখুঁত ভাবে ফুটে উঠতে পারে। কোথাও না কোথাও নিজের বাসায় ইতিবাচক পরিবেশ গড়ে তুলতে সকলেই চাই। আর সংস্কৃতির ছোঁয়া ঘরে তৈরি করতে পারে সেই ইতিবাচক পরিবেশ। ধরুন রান্নাঘরের আসবাব যদি কিছুটা সাংস্কৃতিক ধাঁচের হয় দেখতে ভীষণ সুন্দর লাগবে। বলা যায় মাটির তৈরি থালা বাসন কিন্তু ভিন্ন একটা ভাব তৈরি করতে পারে। কিংবা আপনি যদি সিলেটি হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে সিলেটের বিখ্যাত কিছু রেসেপি রান্না করতে পারেন। আপনার প্রিয়জন কিন্তু নতুন কিছু খেতে পিছপা হবে না। ঢাকায় থাকা বন্ধুদের যদি অন্য শহরের কিছু রেঁধে খাওয়ান তাহলে ঢাকায় বসে ছোটখাটো একটা টাইম ট্রাভেল হয়ে যায় আরকি। খাবার খেয়ে এই বন্ধুরা আপনার পিছু কখনও ছাড়ছে না তা অন্তত জোর দিয়ে বলা যায়।
ঘর সাজানোর জিনিসের যেন অভাব নেই। সময় নিয়ে ভাবলে আপনি সহজেই আশেপাশে পেয়ে যাবেন ঘর সাজানোর অনেক কিছু। আপনি চাইলে রাগস ব্যবহার করতে পারেন কিংবা ওয়ালম্যাট। নকশীকাথায় আমাদের ঐতিহ্য বরাবরই বেশ ফুটে উঠেছে। এমন কিছু যদি আপনার দেয়ালে থাকে দেখবেন ঘরটা আরও বেশি আপন মনে হবে। অবাক হবার কিছু নেই, আপনার বন্ধুরা যদি ঠিক একইরকম হোম ডেকোর করতে চায়। বরং নিজেকে ইন্টেরিয়ের ডিজাইনার হিসেবে বাহবা দিতে পারেন।
ভিন্ন ভাবনা
ঘরের সাজে ভিন্নতা আনতে এবার নাহয় সংস্কৃতি থেকে কিছু অংশ সংগ্রহ করলেন। আপনি যে সংস্কৃতিরই ভক্ত হয়ে থাকুন না কেন তা সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলা কেবল আপনারই দায়িত্ব। সময়ের সাথে হোম ডেকোরের ট্রেন্ড যেমনই হোক না কেন কিছু সময় পর তা বদলে যাবে। কিন্তু, সংস্কৃতি কখনই পুরোনো হয় না। কেননা, আমরা আমাদের সংস্কৃতিকে নিজেদের ঘরেও ছড়িয়ে দেই। তৈরি হোক এক অন্য ভুবন।
আপনি কিভাবে আপনার ঘরে সংস্কৃতির ছোঁয়া আনতে চান জানিয়ে দিন কমেন্টে। কিংবা এই আইডিয়াটি কেমন সেটাও জানিয়ে দিন।