Reading Time: 4 minutes

প্রতিবছর ১৮ই মে আন্তর্জাতিকভাবে উদযাপন করা হয় জাদুঘর দিবস । জাদুঘরের গুরুত্ব তুলে ধরতে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে, নানা সংস্কৃতিতে ঐতিহ্যবাহীভাবে উদযাপন করা হয় এ দিনটি। একটি জাদুঘরে যে শুধু অনেক মূল্যবান, দুষ্প্রাপ্য জিনিস রাখা থাকে তাই না, প্রতিটি জাদুঘরের বা ঐতিহাসিক স্থাপনারই থাকে না বলা অনেক গল্প। এ গল্প ছড়িয়ে থাকে  প্রতিটি কোণায়, প্রতিটি ইটে। আর এ গল্প কান দিয়ে শোনা যায় না বরং শুনতে হয় মন দিয়ে। আর এ গল্প শুনতে চাইলে ঘুরে আসতে হবে সব জাদুঘর বা প্রাচীন স্থাপনা থেকে। সেজন্য উপযুক্ত দিন হতে পারে আসছে জাদুঘর দিবস । চলুন দেখে নেই ঢাকা ও এর আশপাশে তেমন কয়েকটি গন্তব্য।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

জাদুঘর দিবস - মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

মুক্তিযুদ্ধ আমাদের হৃদয়ের খুব কাছের জিনিস। বাংলাদেশী হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে জানা উচিত আমাদের সবারই। আর সেজন্য অন্যান্য উপায়ের সাথে সাথে এই জাদুঘরও হতে পারে একটি অনন্য উপায়। আশ্চর্য্যজনক হলেও সত্য যে দেশের সবচেয়ে বড় এই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের উদ্যোগ সরকারীভাবে নয় বরং বেসরকারিভাবে নেয়া। ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ৮জনের একটি ট্রাস্টি বোর্ড উদ্যোগ নেন এটি গঠনের। প্রথমদিকে শের-ই-বাংলা নগরে অবস্থিত এই জাদুঘরে নানান সমস্যা ছিল। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল আর্থিক সমস্যা এবং একটি জাদুঘর তৈরিতে প্রয়োজনীয় যুদ্ধের সময়কার সে সরঞ্জামাদি লাগে তার অভাব। এই দুই সমস্যাই মানুষের স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণে সমাধান হয়ে যায়। ২২মার্চ ১৯৬৬ সালে সেগুনবাগিচায় ২তলা একটি ভবনে এর যাত্রা শুরু হয়।

তবে স্থান সংকুলান না করতে পেরে সম্প্রতি এই জাদুঘর আবার স্থানান্তরিত করা হয়েছে আগারগাঁওতে। নতুন এই জাদুঘর পেয়েছে প্রায় ১ একর জায়গা। স্থান সংকটের কারণে জায়গা বদলাতে হয়েছিল, তাই নতুন কমপ্লেক্সে আছে বিশাল ৩৫০০ বর্গফুটের এরিয়া। এতে আছে আলাদা মঞ্চ, অডিটোরিয়াম, ক্যান্টিন, পার্কিং স্পেস যেখানে ১০৬টি গাড়ি পার্ক করা যায়। মুক্তিযুদ্ধ শিক্ষা ইন্সটিউট এবং জেনোসাইড অ্যান্ড জাস্টিস স্টাডি সেন্টারও এখানে অবস্থিত।

গত ২১ বছরে এই জাদুঘর পরিদর্শন করেছেন প্রায় ৬ লক্ষ পরিদর্শক। তরুণ প্রজন্মের জন্য এখানে দুটি আলাদা প্রোগাম আছে যার মাধ্যমে প্রতি বছর ১৯০০ সশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৯ লাখ শিক্ষার্থী জাদুঘর পরিদর্শনের সুযোগ পায়।

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর

শাহবাগের জাতীয় জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯১৩ সালে। যদিও এর নাম তখন ছিল ঢাকা জাদুঘর। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৮৩ সালে এর নামকরণ করা হয় জাতীয় জাদুঘর। চমৎকারভাবে সাজানো এই জাদুঘরে আছে অসংখ্য প্রত্বতত্ত ও দুষ্প্রাপ্য বিভিন্ন জিনিস। আলাদা আলাদা বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে ভাগ করা জাতীয় জাদুঘর আপনার গন্তব্য হতে পারে জাদুঘর দিবসে।

লালবাগ কেল্লায় জাদুঘর দিবস

লাল্বাগ কেল্লা
লাল্বাগ কেল্লা

লালবাগ কেল্লার নাম কে-ই না শুনেছে? আওরঙ্গবাদের দুর্গ নামে পরিচিত ১৭ শতকের এই মুঘল স্থাপনা অবস্থিত বুড়িগঙ্গা নদীর ধারে। দুর্গটি মূলত তিনটি ভাগে বিভক্ত, মসজিদ, বিবি পরীর কবর আর দিওয়ান-ই-আম। একটি পরিখা তিনটি স্থাপনাকে উত্তর-দক্ষিণে এবং পূর্ব-পশ্চিমে সংযুক্ত করে। এই ঐতিহাসিক স্থাপনার কাজ শুরু হয় ১৬৭৮ সালে কিন্তু একটি ঘটনার কারণে তা অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে ছিল বহু দিন। পরী বিবি ছিলেন ঢাকার সুবেদার শায়েস্তা খাঁর আদরের মেয়ে। পরীবিবির মৃত্যুর পর শায়েস্তা খাঁ এই দুর্গকে অমঙ্গলের প্রতীক বলে মনে করেন এবং এর নির্মাণ বন্ধ করে দেন। বর্তমানে এটি একটি হেরিটেজ সাইট হিসেবে সংরক্ষিত এবং প্রতিদিন হাজারো দর্শনার্থীর ভিড়ে থাকে মুখরিত।   

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পুরনো আর বিখ্যাত নাম রেসকোর্স ময়দান। তবে পরবর্তীতে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী-এর নামে এর নামকরণ করা হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। অনেক অনেক ইতিহাস জড়িয়ে এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সাথে। অনেক অনেক আগে যখন ঢাকায় ঘোড়দৌড় বৈধ ছিল, এখানে ঘোড়ার দৌড় প্রতিযোগিতা বা রেস হত, “রেসকোর্স ময়দান” নামের উৎপত্তিও সেখান থেকেই।

“এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম! এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম!” বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের রক্তে আগুন জ্বালা সেই ভাষণের সাক্ষীও এই ময়দান। এমনকি যুদ্ধে হেরে পাকিস্তানী বাহিনী আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্থনও করে এই রেসকোর্স ময়দানে। ঢাকা শহরের মাঝখানে থাকা এই ঐতিহাসিক স্থানে আপনি চাইলেই ঘুরে আসতে পারেন।

স্বাধীনতা জাদুঘরকে নিয়ে আমাদের করা ভিডিওটি দেখুন

দেশের প্রথম ও এখন পর্যন্ত একমাত্র ভুগর্ভস্থ জাদুঘর, স্বাধীনতা জাদুঘরও এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান চত্বরেই অবস্থিত। এই জাদুঘর ৫৬৬৯ বর্গ মিটারের বিশাল জায়গা জুড়ে অবস্থিত। এই অসাধারণ স্থাপনা সৃষ্টির পেছনে স্থপতি কাসেফ মাহবুব চৌধুরী এবং মারিনা তাবাসসুমের অবদান অনস্বীকার্য।

আহসান মঞ্জিল

আহসান মঞ্জিল
আহসান মঞ্জিল

আহসান মঞ্জিল ছিল বৃটিশ আমলে ঢাকার নবাবের অফিসিয়াল বাসস্থান। এই অঈতিহ্যবাহী স্থাপনাটিও বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। আহসান মঞ্জিল বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রত্মতাত্তিক নিদর্শন। এর নির্মান শুরু হয় ১৮৫৯ সালে এবং শেষ হয় ১৮৭২ সালে। তবে নবাবদের শাসনআমল শেষ হলে দীর্ঘ দিন অযত্ন অবহেলায় পড়ে ছিল এই স্থাপনাটি। পরে একে ঐতিহ্যবাহী অমূল্য স্থাপনা হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়। ১৯৯২ সালে এটি জাদুঘরের মর্যাদা পায়।   

এরকম অসংখ্য ঐতিহ্যবাহী এলাকা দিয়ে আমাদের দেশটি পরিপূর্ণ। শুধু ঢাকা নয় বরং সারা দেশে ছড়িয়ে আছে আমন নানা স্থাপনা, নানা জাদুঘর। আমরা এসব জাদুঘর নিয়ে সচেতন হলেই এগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হবে কর্তৃপক্ষের দিক থেকে। তাই বেশি বেশি ঘুরাঘুরি করুন, সময় পেলেই পরিবার পরিজন নিয়ে দেখে আসুন জাদুঘর, জাদুঘর দিবস হতে পারে সেজন্য একটি উপলক্ষ। জাদুঘর ছাড়াও ঢাকার আশেপাশে ঘুরাঘুরি করার কী কী জায়গা আছে জানতে চাইলে দেখতে পারেন আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ে ফেলতে পারেন। আর এমন চমৎকার সব আর্টিকেল পেতে বিপ্রপার্টি বাংলা ব্লগের সাথেই থাকুন।

Write A Comment