Reading Time: 3 minutes

দিনে দিনে পৃথিবীতে বাড়ছে মানুষের সংখ্যা আর মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো হয়ে উঠছে দুষ্প্রাপ্য। পৃথিবীতে এখনো প্রায় কয়েক কোটি মানুষ উন্নত আবাসনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত। জনসংখ্যা যেমন বাড়ছে তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আবাসনের চাহিদা। পুরোনো উপায়ে বাসা নির্মাণ এবং ডিজাইন সরিয়ে রেখে মানুষ এখন খোঁজ করছে নতুন, আধুনিক কোন প্রযুক্তি। থ্রিডি প্রিন্টেড বাসা তেমনই একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি।

অন্ন – বস্ত্রের পরেই আমাদের মৌলিক চাহিদা হল বাসস্থান। আর থাকার জন্য একটি ভাল মানের বাসস্থানের ব্যবস্থা সুলভ মূল্যে কীভাবে করা যায় তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা কাজ করছেন বহুদিন ধরে। এবং থ্রিডি প্রিন্টেড বাসা নির্মাণ সেই সমস্যা সমাধানের একটি উপায় হতে পারে বলেই অনেকের বিশ্বাস।

কী কারণে থ্রিডি প্রিন্টেড বাসা ?

থ্রিডি প্রিন্টিং টেকনোলজি
থ্রিডি প্রিন্টিং টেকনোলজি

উন্নত মানের বাসাবাড়ির যে সংকট তার পেছনে কারণ হিসেবে অনেক কিছুকেই দেখানো যায়। তবে সেই তালিকার উপরের দিকেই নিশ্চিতভাবে থাকবে কোন বাড়ি তৈরি করতে যে বিশাল সময় এবং অর্থ খরচ হয় সেই বিষয়টি। এর সাথে যোগ হয় তুলনামূলক কম হারে বিনিয়োগ উঠে আসার বিষয়। আর এর চমৎকার সমাধান হতে পারে থ্রিডি প্রিন্টেড বাসা।

থ্রিডি প্রিন্টিং এর কেতাবি নাম “স্ট্রেরিওলিথোগ্রাফী”।  ১৯৮০ সালে চাক হল নামের এক ব্যক্তি এটি আবিষ্কার করেন। এই প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এটি কয়েক লেয়ারে একটি প্রোডাক্ট তৈরি করে এবং তা অসম্ভব দ্রুতগতিতে। সেজন্যই যে শিল্পের সাথেই এটি যুক্ত হয়েছে, সেই শিল্প গিয়েছে একটি বিপ্লবের মধ্য দিয়ে এবং হয়ে উঠেছে আধুনিক। যদিও এই থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি একটি তুলনামূলক নতুন প্রযুক্তি, অনেক অনেক পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে এখনো, তবুও নানা শিল্পে এর গুরুত্ব দিন দিন চলেছে বেড়ে।

কারণ, যে শিল্পেই এর প্রয়োগ হোক না কেন, সেখানকার গড় খরচ এবং সময় দুটোই কমিয়ে আনতে পারে এই ত্রিমাত্রিক প্রিন্টিং প্রযুক্তি। যা বানাতে একসময় কয়েকদিন, সপ্তাহ, এমনকি মাস লেগে যেত তা এখন কয়েক ঘন্টা কিংবা একদিনেই সম্ভব হচ্ছে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল লেভেলে প্রডাকশন শুরু হলে খরচ কমে আসবে অর্ধেকেরও নিচে।

শুরুটা হয়েছিল খুব সিম্পল কিছু বানানো দিয়ে, বর্তমানে এই থ্রিডি প্রিন্ট দিয়ে বাসা, গাড়িও নির্মাণ করা যাচ্ছে। এমনকি জীববিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছেন থ্রিডি প্রিন্ট দিয়ে শরীরের কৃত্রিম অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বানানোর।  

রিয়েল এস্টেটে থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি

থ্রিডি প্রিন্টেড বাসা
আবাসন খাতে ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে থ্রিডি প্রিন্টেড প্রযুক্তির ব্যবহার

রিয়েল এস্টেট সেক্টরে আন্তর্জাতিকভাবে বেশ ভালো সাড়া ফেলেছে থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি। ফ্রান্সের রিয়েলটর ম্যাগাজিনের এই রিপোর্ট এর কথাই ধরা যাক। এই রিপোর্ট বলছে যে ফ্রান্সের একটি পরিবার শীঘ্রই এমন একটি বাসাতে বসবাস করতে শুরু করবে যা সম্পূর্ণ নির্মিত হয়েছে একটি থ্রিডি প্রিন্টার দিয়ে। এই চার বেডরুমের, ১০২২ বর্গফুটের বাসাটি নির্মিত হয়েছে সিটি কাউন্সিল, একটি হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন এবং স্থানীয় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ প্রচেষ্টায়। মজার বিষয় হল এই থ্রিডি প্রিন্টেড বাসা সম্পূর্ণ প্রিন্ট করতে সময় লেগেছে ৫৪ ঘন্টা অথচ বাসাটির অন্যান্য উপকরণ যেমন দরজা, জানালা কিংবা ছাদ বসাতে সময় লেগেছে কয়েক মাস। এরপরেও গড়পড়তা একই মানের অন্যান্য বাসা থেকে এতে খরচ হয়েছে প্রায় ২০% কম। আগ্রহী পাঠকেরা চাইলে এ নিয়ে বিবিসির করা বিস্তারিত ইংরেজি প্রতিবেদনটি পড়ে দেখতে পারেন।

শুধু ফ্রান্স নয় বরং নেদারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়ার মত উন্নত দেশও বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে এই ত্রিমাত্রিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাসা নির্মাণের। নেদারল্যান্ডের আইনহোভেন ইউনিভার্সিটি ৫ বছর মেয়াদী একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে যা বড় স্কেলে থ্রিডি প্রিন্টেড বাসা কমপ্লেক্স তৈরী করবে। এই কমপ্লেক্সে থাকবে একতলা বাংলো থেকে শুরু করে বহুতল বাড়িও। এই বাসাগুলো ভাড়া নেয়া যাবে বা কিনেও নেয়া যাবে।

অন্যদিকে আমেরিকা এবং রাশিয়া যৌথ উদ্যোগ নিয়েছে এমন থ্রিডি প্রিন্টেড বাসা নির্মাণের। এই উদ্যোগে আমেরিকান কন্সট্রাকশন কোম্পানী সানকনোমি এবং রাশিয়ান থ্রিডি প্রিন্টিং কোম্পানী আপিস কর্পোরেশন একসাথে পরিকল্পনা করছে মাত্র একদিনের মাঝে সম্পূর্ণ একটি বাসা নির্মাণের। আবার আমেরিকার আরেকটি স্টার্ট-আপ, আইকন দাবী করছে যে তারা ২৪ ঘন্টার মধ্যে ৮০০ স্কয়ার ফিটের একটি বাসার স্ট্রাকচার বানিয়ে দিতে পারবে মাত্র ৪০০০ ডলার খরচে। সাধারণ উপায়ে যা বানাতে ব্যয় হবে ৬ মাসের চাইতেও বেশি সময়।

আগামীতে চোখ রাখা

একটি থ্রিডি প্রিন্টেড বাসা
একটি থ্রিডি প্রিন্টেড বাসার কনসেপ্ট

অনেক কম নির্মাণ খরচ তাও আবার কয়েক ভাগ কম সময়ে? থ্রিডি প্রিন্টেড বাসাই খুব সম্ভবত ভবিষ্যতে আবাসন সমস্যা সমাধানের চাবিকাঠি। দ্রুতবর্ধনশীল শহর বা যেখানে চলছে থাকার জায়গার তীব্র সংকট, তেমন একটি জায়গায় থ্রিডি প্রিন্টেড বাসা হতে পারে পার্ফেক্ট সমাধান। এই সেক্টরে পায়োনিয়ার যেসব কোম্পানী আছে তাদের অনেকেই চিন্তা করছে অনগ্রসর মানুষের জন্য জন্য আবাসন নির্মাণের। তাই বলাই যায় যে থ্রিডি প্রিন্টেড বাসাই হতে যাচ্ছে আগামীর আবাসন ট্রেন্ড। এবং নিশ্চিতভাবেই এটি এখন আর কল্পনা নয় বরং সম্পূর্ণ বাস্তব।

এই থ্রিডি প্রিন্টেড বাসা নিয়ে আপনার মতামত কী? সুযোগ পেলে আপনি কি থাকবেন একটি থ্রিডি প্রিন্টেড বাসায়? আপনার মতামত জানিয়ে দিন কমেন্টে। থ্রিডি প্রিন্ট বাসা নিয়ে আমাদের পরবর্তী লেখা হবে এর সুবিধা আর অসুবিধা নিয়ে, তাই সাথে থাকুন বিপ্রপার্টি ব্লগের

Write A Comment