Reading Time: 4 minutes

হিসাব করলে দেখা যাবে যে দেশের বেশিরভাগ মানুষই বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। অতি দ্রুত নগরায়নই মূলত এই অবস্থার সৃষ্টি করেছে। প্রচুর মানুষের ক্ষেত্রে শহরে থাকার জন্য বাসা ভাড়া নেয়াই এখন একমাত্র উপায় হয়ে উঠেছে। এক হিসাব মতে শুধু ঢাকা মেট্রোপলিটন এরিয়াতেই  প্রায় দেড় কোটি মানুষ বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকেন। আর ঢাকামূখী মানুষের চাপে এ সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। চাহিদার বিপরীতে যোগানের স্বল্পতা থাকায়, ভাড়া ও সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে বাসার মালিকের সাথে দ্বন্দ্বের বিষয়টি প্রতিনিয়ত সামনে আসছে। ভাড়াটিয়াদের অনেকেই বলেন যে বাড়ি ভাড়া বাড়ানো হয় অযৌক্তিকভাবে। বাধ্য হয়ে ভাড়াটিয়ারা বর্ধিত ভাড়া দিয়ে যান। এছাড়াও অতিরিক্ত অ্যাডভান্স দেয়া, ঠিক মত মেরামত না করা, বিনা নোটিশে বাড়ি ছাড়তে বলা সহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে ভাড়াটিয়াদের। কিন্তু আমাদের দেশের বাড়ি ভাড়ার আইন সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত সবধরণের পরিস্থিতি সম্পর্কে ১৯৯১ সালের, ৩৬টি সেকশনের এই আইনে আলোচনা করা হয়েছে। তাই চলুন দেখে নিই সচেতন একজন ভাড়াটিয়া হিসেবে আপনার ন্যায্য পাওনা কী কী।

লিখিত চুক্তি

কলম লেখা
বাড়ি ভাড়া নেয়ার আগে অবশ্যই লিখিত চুক্তি করুন

আইন অনুযায়ী ভাড়াটিয়ার সাথে বাড়িওয়ালার একটি লিখিত চুক্তিপত্র থাকা বাধ্যতামূলক। তাই অবশ্যই নিশ্চিত করুন আপনি ভাড়াটিয়া হিসাবে একটি চুক্তিপত্র পাচ্ছেন কী না। এটি শুধু ভাড়াটিয়া নয় বরং বাড়ির মালিকেরও দায়িত্ব।  একটি লিখিত চুক্তিপত্র দুই পক্ষের মধ্যে শর্তাবলি সম্পর্কে নিশ্চিত করে যা আইন দ্বারা সংরক্ষিত। কোন সমস্যা নিয়ে মতৈক্যে পৌঁছাতে না পারলে এই চুক্তিপত্রটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অনেক সময় দেখা যায় চুক্তি স্বাক্ষর হলেও বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়াকে চুক্তির একটি ফটোকপি প্রদান করেন। মনে রাখা দরকার যে, ফটোকপি নয় বরং অরিজিনাল একটি কপি ভাড়াটিয়া নিজের কাছে সংরক্ষণ করবেন। কেননা কোন প্রয়োজনে আদালতে ফটোকপি না, মূল কপির প্রয়োজন পড়বে। তাই ভাড়াটিয়ার উচিত মূল কপি আদায় করা।

বাড়ি ভাড়ার রশিদ

রশিদ
সবসময় আদায় করুন বাড়ি ভাড়ার রশিদ

প্রতিমাসে ভাড়া পরিশোধের পর বিস্তারিত উল্লেখ করে একটি ভাড়ার রশিদ প্রদান করা আইনানুগভাবে বাধ্যতামূলক। নিয়মিত ভাড়া প্রদান ও আদায়ের প্রমাণস্বরূপ এই রশিদটি দুই পক্ষেরই সংরক্ষণ করা উচিত। বিশেষ করে, বাড়ির মালিকের জন্য এটি সংরক্ষণ করা অতীব জরুরী। বাড়ি ভাড়ার আইনের ২৭তম ধারা অনুযায়ী, কেউ যদি এই রশিদ প্রদান করতে অপরাগ হন, তবে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। 

বাড়ি ভাড়া নির্ধারনের নিয়ম

কলম ও ক্যালকুলেটর
ভাড়া নির্ধারনেরও আছে নির্দিষ্ট নিয়ম

কোন এলাকার বাড়ি ভাড়া কেমন হওয়া উচিত? সবার ধারণা এলাকাই হল বাড়ি ভাড়া নির্ধারণের মূল মাপকাঠি, কিন্তু বাড়ি ভাড়ার আইন আসলে কী বলে? দেশের প্রচলিত বাড়িভাড়া আইন অনুসারে, আদর্শ বাড়িভাড়া নির্ধারণের কিছু মাপকাঠি ঠিক করে দেয়া আছে। কোন বাড়ির ভাড়া নির্ধারণের প্রথম মাপকাঠি হবে সেই বাড়ির নির্মাণ খরচ এবং জমির দামের ১৫ শতাংশ। এরপরেই কেবল এলাকা, ফ্ল্যাট বা বাড়ির আয়তন, মার্কেটে অন্য বাড়ির ভাড়া কেমন সেই বিষয়গুলো যুক্ত হবে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, অধিকাংশ মানুষই এই নিয়মটি জানেন না অথবা জানলেও মানেন না।

অগ্রিম ভাড়া প্রদানের নিয়ম

হাতুড়ি
অগ্রিম ভাড়া দেয়ার নিয়ম জেনে নিন

অনেকেই অভিযোগ করেন যে বাড়ি পছন্দ হলেও তারা উঠতে পারছেন না অতিরিক্ত অগ্রিম (অ্যাডভান্স) ভাড়া দাবী করার কারণে। ২ থেকে ৩ মাসের অগ্রিম ভাড়া দাবী করা খুবই সাধারণ একটি বিষয় আজকালকার দিনে। অথচ আইন অনুযায়ী এক মাসের চেয়ে বেশি ভাড়া অগ্রিম দাবী করা যাবে না কোনভাবেই। আবার অ্যাডভান্স দেয়া থাকলেও প্রতিমাসেই ভাড়াটিয়াকে নিয়মিত ভাড়া প্রদান করতে হবে। ভাড়া সঠিক সময়ে প্রদানে ব্যর্থ হলে আদালত সেই ভাড়াটিয়াকে ১৫ দিনের মধ্যে বাসা ছাড়ার নির্দেশ দিতে পারেন। 

ভাড়া বাড়ানোর নিয়ম

ঠেলে তোলা
অতিরিক্ত ভাড়ার বোঝা ঠেলতে হয় সবাইকেই

সম্ভবত বাড়ি ভাড়া করে থাকা মানুষগুলোর সবচেয়ে বড় অভিযোগের ক্ষেত্র এটি। কোন অগ্রিম নোটিশ ছাড়াই হুট করে বাড়ি ভাড়া বাড়িয়ে দেন মালিক। কিছু কিছু গবেষণায় তো উঠে এসেছে আরও আশ্চর্য তথ্য, গত ২০-২৫ বছরে ঢাকায় বাড়ি ভাড়া বেড়েছে ২০০% এরও বেশি! অথচ ১৯৯১ সালে প্রণীত আইনের দিকে নজর দিলে কোনভাবেই যা সম্ভব না। আইন অনুসারে বড় কোন সংস্কার কাজ না হলে অথবা বাড়িতে বড় কোন পরিবর্তন না আসলে ভাড়া বৃদ্ধি করা যাবে না। বৃদ্ধির সময় তা পূর্বের ভাড়ার ১০ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত নয়। অথচ বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রতিনিয়ত অযৌক্তিকভাবে ভাড়া বেড়েই চলেছে। তাই বাড়ি ভাড়ার আইন নিয়ে সচেতন হবার এখনই সময়।

আইন প্রণয়নই করা হয় সবার ভালোর দিকে লক্ষ্য রেখে। আইন মেনে চললে সবাই-ই ভাল থাকবেন। কিন্তু আইন প্রণয়ন হলেও সমস্যা ঘটে এর প্রয়োগের সময়ে এসে। তাই দেশে বাড়ি ভাড়ার আইন নিয়ে আমাদের সবার সচেতন হতে হবে। নাহলে আপনি বাড়ি ভাড়া দিতে চান অথবা ভাড়া করতে চান, সমস্যা সবসময়ই থেকে যাবে। বাড়ি ভাড়া সম্পর্কিত নানান সমস্যার সমাধান করতে দেশের এক নম্বর প্রপার্টি মার্কেটপ্লেস বিপ্রপার্টি অফার করছে রেন্টাল সার্ভিস।  

1 Comment

  1. MD Mohsin Hossin

    আমি আমার বাড়িতে বাচ্যালার ভাড়া দিই। এতে আমার
    পাশের বাড়িওয়ালা আমার সাথে বিভিন্ন ধরনের গ্যাঞ্জাম করে। এমন নয় যে আমার ভাড়াটিয়া ব্যাচেলররা তাদের কোনো সমস্যা করে। তারপরও তারা
    এ নিয়ে তারা বিভিন্ন ধরনের ঝামেলা করতেছে। তো এখন আমি কি করতে পারি।

Write A Comment