Reading Time: 4 minutes

একবার ভাবুনতো, মিষ্টির রাজ্যে হারিয়ে গেছেন। বন্ধু বান্ধব নিয়ে জমপেশ আড্ডায় টপাটপ মুখে পুরে নিচ্ছেন একের পর গরম মিষ্টি। ভাবুন তো এই শীতে বন্ধু বান্ধব নিয়ে রেলষ্টেশনের কাছে বসে আছেন, আড্ডাটা জমে উঠেছে বেশ এমন সময়ে হাতে পেয়ে গেলেন গরম এক কাপ চা। বাহ, এ যেন স্বর্গীয় কোন আয়োজন। এমনই কিছু বিখ্যাত জায়গা নিয়ে আমাদের আজকের অলিগলি ভ্লগ। আমরা আজ জানবো আর অলিগলি ভ্লগে দেখব ১০০ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী বোস কেবিন আর জনপ্রিয় জগৎবন্ধু মিষ্টান্ন ভান্ডার ও আদি আদর্শ মিষ্টান্ন ভান্ডার। চলুন শুরু করা যাক।

নিউ বোস কেবিন 

বোস কেবিন
জমজমাট বোস কেবিন

সকলের প্রিয় এই বোস কেবিনের যাত্রা শুরু হয় ১৯২১ সালের দিকে। সেই থেকে এই রেস্তোরাটি রেল গেটের ১নং ও ২ নং গেটের মধ্যে অবস্থান করছে। এই বোস কেবিন প্রথমে মোটেও এমন জমজমাট ছিল না। প্রতিষ্ঠাতা নির্পেণ চন্দ্র বোস যদিও তিনি ভুলু বাবু নামেই বেশি পরিচিত তিনি প্রথমে চায়ের দোকান দিয়েছিলেন, যেখানে পাওয়া যেত বিস্কুট। সবাই সেখানে সকাল-বিকাল চায়ের আড্ডায় মেতে উঠতেন। সময়ের সাথে নারায়ণগঞ্জেনারায়ণগঞ্জের বেশ জনপ্রিয় একটি রেস্তোরা হিসেবে পরিচিতি পায় এই বোস কেবিন। প্রায় ১০০ বছর ধরে চলে আসছে এই রেস্তোরাটি। যেখানে ছোট বড় সকলে ভিড় জমায় ভোর ৭ টা থেকে রাত ৯.৩০ পর্যন্ত। সকালের নাস্তায় পাওয়া যায় স্পেশাল ডিম অমলেট সাথে থাকে পরোটা। শুধু যে ডিম অমলেট তা কিন্তু নয়। থাকে ডিমের তৈরি আরও স্পেশাল কিছু আইটেম। দুপুরের মেনু থাকে বেশ মজার। জেনে অবাক হবেন, এখানে দুপুরে রান্না করা হয়না ভাত! জিভে জল আনা পোলাও আর মজাদার মুরগী ও খাসীর মাংস, স্পেশাল কাটলেট, চপ, রোস্ট ইত্যাদি রান্না করে হয়েছেন সকলের চেয়ে আলাদা। তাদের সব আইটেম মজার হলেও এখানের কাটলেট পেয়েছে বেশ জনপ্রিয়তা। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এই মজাদার কাটলেট খেতে আসে। ইতিহাসের বিখ্যাতদের পদধূলিতে সবসময়ই মুখরিত হয়ে থাকতো এই বোস কেবিন। আড্ডায় মশগুল হয়ে কাপের পর কাপ চা উঠত প্রতি টেবিলে। চায়ের সাথে পাল্লা দিয়ে কাটলেটও  কিন্তু, কম অর্ডার হত না। এই বোস কেবিনে শেখ মুজিবুর রহমান,নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর এবং মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মত বাংলার সিংহ নেতারা এখানে সময় কাটাতেন। ইতিহাসের কালজয়ী সময়ের সাক্ষী কিন্তু এই বোস কেবিন।

জগৎবন্ধু মিষ্টান্ন ভান্ডার  

জগৎবন্ধু মিষ্টান্ন ভান্ডার
জগৎবন্ধু মিষ্টান্ন ভান্ডার

মিষ্টির সাথে বাঙালীর এক অদ্ভুত সম্পর্ক আছে। রসগোল্লা, চমচম এগুলোর নাম শুনলেই যেন জিভে জল এসে যায়। মন ভরে খেতে কে না ভালোবাসে? আর তা যদি হয়ে থাকে বাহারি মিষ্টি, তাহলে তো কথাই নেই। জগৎবন্ধু মিষ্টান্ন ভান্ডার এমনই এক মিষ্টির আস্তানা, যা কিনা সমগ্র নারায়ণগঞ্জে বিখ্যাত। তা নাহলে মিষ্টি বানানোর সাথে সাথে এমন করে শেষ হয়ে যাওয়ার দৃষ্টান্ত একটু কমই মিলবে। নারায়ণগঞ্জ মিষ্টান্ন ভান্ডার এর মধ্যে অন্যতম জগৎবন্ধু মিষ্টান্ন ভান্ডার। এই দোকানের রসগোল্লা, ক্ষিরচপ, হাড়িভাঙ্গা মিষ্টির চাহিদা সবচেয়ে বেশি। সেই সাথে মালাইকারিও কিন্তু বেশ জনপ্রিয়। খেতে খেতে আঙুল চিবিয়ে ফেলার উপক্রম হতে পারে। এত মজার সব মিষ্টি একটু একটু করে খেতেও পকেট হওয়া চাই ভারী আর হাতে থাকা চাই সময়। মিষ্টি কখনও টক হয় নাকি? নারায়ণগঞ্জ মিষ্টান্ন ভান্ডার এর মিষ্টিতে আপনি পাবেন একটু টকের স্বাদ। সব মিষ্টি একটু করে স্বাদ পেতেও আসতে হবে কিছুটা আগেই নাহলে শেষ হয়ে যাবার ভয় থাকে। কেননা এই মিষ্টিগুলোর চাহিদা থাকে শহর জুরে। তাই মিষ্টি তৈরি করার কিছুক্ষণ পরই শেষ হয়ে যায়। জনে জনে সকলে ঘুরে যেতে থাকে।    

আদি আদর্শ মিষ্টান্ন ভান্ডার 

 দই
আদর্শ মিষ্টান্ন ভান্ডারের দই সবচেয়ে সুস্বাদু

কালিবাজারের আদি আদর্শ মিষ্টান্ন ভান্ডার হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে পুরনো ও বিখ্যাত একটি মিষ্টির দোকান। তাদের তৈরি মিষ্টি আর টক দই যেন দেশজুড়ে বিখ্যাত। এখানের লোকজন এক নামে চিনবে  এই আদর্শ মিষ্টান্ন ভান্ডারকে। এতটাই নামকরা এই মিষ্টান্ন ভান্ডার। এখানের স্পেশাল দই খেতে ভীষণ মজা, লোকে বলে কেউ নাকি একবার খেয়ে উঠতে পারে না এতটাই নাকি সুস্বাদু। শহরের অনেকেই এই মজাদার দই তৈরির রেসেপিটা জানতে চায় কিন্তু এই দই তৈরির রেসেপিটা আদি আদর্শ মিষ্টান্ন ভান্ডার ছাড়া আর কেউ জানে না। তারা এই বিষয়টিতে বেশ গোপনীয়তা বজায় রাখে। তবুও, সকলের জানার আগ্রহের যেন শেষ নেই! এই মিষ্টান্ন ভান্ডারের প্রায় সব মিষ্টি বেশ সুস্বাদু। সময় করে একদিন এই মজাদার মিষ্টিগুলো খেয়ে দেখা যায় তাইনা।

যেভাবে যাবেন সেখানে 

ম্যাপ
যেভাবে যাবেন এখানে

ঢাকা শহর থেকে মাত্র ৩২ কিঃ মিঃ দূরে অবস্থিত এই আকর্ষণীয় খাবার জায়গাগুলো। ঢাকা থেকে চাইলে সহজেই রওনা হতে পারেন যেকোন গাড়ি বা বাস দিয়ে। কমলাপুর থেকে ট্রেনে সময় লাগবে প্রায় ১ ঘন্টা। যেকোন উপায়েই আপনি পৌঁছে যেতে পারেন এখানে। এছাড়া অজস্র বাস গুলিস্তান থেকে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। সুবিধা মত যানবাহন নিয়ে পোঁছে যেতে পারেন সেখানে।

খাদ্য রসিক আমরা কম বেশি সকলেই। মন খারাপ তবুও কিছু একটা খেতে হবে। মন ভালো হলে তো অবশ্যই খেতে হবে। আর যারা মিষ্টি কিছু খেতে ভালোবাসে তাদের কথা না বললেই নয়। নারায়ণগঞ্জ মিষ্টান্ন ভান্ডার  হয়ে ঘুরে আসা আপনার জন্য অত্যাবশকীয়। একদিনের একটা ছোট ট্যুরও হয়ে গেল আবার সেই সাথে মজাদার খাবার উপভোগ করে ফেললেন। আমরা অবশ্যই জানতে চাই বোস কেবিন, জগৎবন্ধু এবং আদি আদর্শ এর মত সেরা রেস্তোরাগুলো আপনাদের কতটুকু ভালো লেগেছে। যত জলদি সম্ভব জানিয়ে দিন কমেন্টে।

Write A Comment