Reading Time: 4 minutes

একটা সময় ছিল যেখানে নারীকে বিচার করা হত কেবলই তার সৌন্দর্য দিয়ে। কেবলমাত্র লিঙ্গের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হত কোন কাজটি নারীর জন্য আর কোনটি নারীর জন্য নয়। তবে সেই সংকীর্ণতা থেকে বেরিয়ে আসার সময় এখন হয়েছে। কারন পরিবর্তন আসছে। সেই পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকাও এই নারীদেরই। তাদের পরিচয় তারা নির্ধারণ করছে যোগ্যতা আর সামর্থ্যের মাপকাঠিতে। তারা বেরিয়ে এসেছে সেই সীমানা থেকে যেখানে নির্ধারণ করে দেওয়া হত তাদের কাজের পরিসীমা, নির্ধারণ করে দেওয়া হত তাদের বিচরণের বৃত্ত। যে কাজ একসময় কেবল পুরুষের কাজ হিসেবে ধরা হত এখন সেই কাজই নারীরা করে চলছে সমানতালে। পুরুষের চেয়েও তারা বেশি যোগ্যতার প্রমাণ দিচ্ছে নানা সেক্টরে।

তবে এত পরিবর্তনের মাঝেও অনেক সেক্টর রয়েছে যেখানে নারীরা তাদের অবাধ বিচরণ থেকে এখনো দূরে। ঠিক এমনই একটি সেক্টর হচ্ছে রিয়েল এস্টেট। আইনী কোনো বিধিনিষেধ না থাকা সত্বেও বাংলাদেশের অনেক নারীদের জন্য রিয়েল এস্টেট সেক্টর অনেকটা অচেনা জায়গা। এই জায়গাটিতে কেন নারীরা সমানতালে সরব হতে পারছে না? কোথায় তাদের প্রতিকূলতা? এর কারণ কি কেবলই তাদের দৃষ্টিভিঙ্গি? নাকি এর পিছনে দায়ী বহুকাল ধরে চলে আসা এ সমাজের ভ্রান্ত বিশ্বাস? নাকি রয়েছে আরও অনেক বাধা? কিংবা এইসব বাধা অতিক্রম করে নারীদের জন্য রিয়েল এস্টেট সেক্টর কী কী সম্ভবনা নিয়ে এসেছে? এসবকিছু নিয়েই আজকের আলাপন।    

রিয়েল এস্টেট সেক্টর সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব

সঠিক জ্ঞানের অভাব
রিয়েল এস্টেট সম্পর্কে সাধারণ যে কোনো মানুষেরই রয়েছে সঠিক জ্ঞানের অভাব

যে কোনোকিছু সফলভাবে করতে হলে সে সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। কোনো বিষয় সম্পর্কে সঠিক তথ্য না জানা মানেই সে বিষয়ে একটি অজানার ভীতি তৈরি হওয়া। আর এই ভীতি থেকেই তৈরি হয় অনাগ্রহ। যা চলতে থাকে চক্রাকারে। আর রিয়েল এস্টেট এর প্রশ্নেও ঠিক এমন একটি চক্রে আবর্তিত হচ্ছে বাংলাদেশের অনেক নারী। রিয়েল এস্টেট সম্পর্কে সাধারণ যে কোনো মানুষেরই রয়েছে সঠিক জ্ঞানের অভাব। নারীদের ক্ষেত্রে এই অজ্ঞানতা আরও বেশি। বিনিয়োগের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ একজন নারীর থাকলেও, সে ভয় পায় এই জায়গাটিতে বিনিয়োগ করতে। কারণ সে জানে না রিয়েল এস্টেট এ বিনিয়োগ করা কেন নিরাপদ বা কোথায় বিনিয়োগ করা তার জন্য সুবিধাজনক। অধিকাংশ নারীরই সঠিক ধারণা নেই রিয়েল এস্টেট খাতের গুরুত্বপূর্ণ আইনী কাগজপত্র সম্পর্কেও। আর এই না জানার কারণেই সে ভয় পায় প্রতারিত হবার। ভয় পায় প্রপার্টির দখলদারিত্ব নিয়ে। প্রশ্ন জাগে রিয়েল এস্টেট এর পুরো বিষয়টি ডিল করতে সে আসলেই কি সক্ষম কিনা! এসবই প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে নারীদের জন্য রিয়েল এস্টেট সেক্টরে। 

কেউ যখন এ বিষয়গুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখবে ঠিক তখনই সে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে রিয়েল এস্টেট সেক্টরে পা বাড়াতে। নারীদের জন্য একথা আরও বেশি প্রযোজ্য। তাই নারীর চোখে রিয়েল এস্টেটের এই বিশাল মার্কেট তখনই সহজ হয়ে উঠবে যখন সে সঠিকভাবে এই সেক্টরটি সম্পর্কে জানতে পারবে। 

বৈষম্য 

বৈষম্য
এ সমাজের নারীরা বহুকাল ধরেই স্বীকার লিঙ্গ বৈষম্যের

শুরুতেই বলেছি, জ্ঞানের অভাব থেকেই নারীদের জন্য রিয়েল এস্টেট সেক্টর একটি অনাগ্রহের জায়গা। কিন্তু কেন এই জ্ঞানের অভাব? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে যে শব্দটি সবার আগে কানে ভাসে, সেটা হল বৈষম্য। এ সমাজের নারীরা বহুকাল ধরেই স্বীকার লিঙ্গ বৈষম্যের। অনেক পরিবারে বিশেষ করে প্রান্তিক এলাকাগুলোতে সব বিষয় নারী সদস্যকে জানানো জরুরি মনে করা হয় না। অনেক ক্ষেত্রে দমন করে রাখা হয় তার জানার আগ্রহকেও। একটি পরিবারে জমি বা বাড়ি ক্রয় বিক্রয় নিয়ে যখন কথা বলা হয়, সাধারণত সেই আলচনা পরিবারের পুরুষ সদস্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। সুতরাং বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে রিয়েল এস্টেট সেক্টর সম্পর্কে নূন্যতম যে ধারণা থাকার কথা সে ধারণা নারীদের থাকে না। তারা জানে না নারীদের জন্য রিয়েল এস্টেট সেক্টর কতটা সম্ভাবনাময়। আইনীভাবে পৈত্রিকসূত্রে নারীদের যে প্রপার্টির অধিকার রয়েছে এই ধারণাটিও অনেকের কাছে স্পষ্ট নয়। কারণ আইনীভাবে অধিকার থাকলেও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে অনেক পরিবারে বা অনেক অঞ্চলে নারীর এ অধিকারটিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয় না। ফলে পৈতৃকসূত্রে পাওয়া সম্পত্তির মালিকানা একজন পুরুষ যত সহজে বুঝে নিতে পারে, একজন নারী তত সহজে পারে না। সামাজিক বৈষম্য এখানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। অন্যদিকে নারীরাও জানে না, কেউ যদি তাকে তার উত্তরাধিকারসূত্রে সম্পত্তির মালিকানা থেকে বঞ্চিত করতে চায় তাহলে সে কোথায় যাবে বা কী কী আইনী পদক্ষেপ নেবে। এসব বৈষম্যের কারণেও রিয়েল এস্টেট সেক্টরের এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠা নারীদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।    

সিদ্ধান্তহীনতা 

রিয়েল এস্টেট সেক্টরে যে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণের জন্যই প্রয়োজন সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ। অথচ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের নারীরা আসলেই কি সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ পায়? বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার সাহস রাখে? দুঃখজনক হলেও সত্যি, এদেশের সিংহভাগ নারীর কাছ থেকেই এই প্রশ্নের নেতিবাচক উত্তর আসবে। জন্মের পর থেকেই অধিকাংশ মেয়ে শিশু দেখে এসেছে পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো পরিবারের পুরুষ সদস্যদের নিতে। বড় হবার পরেও এই প্রেক্ষাপটটা একই রকম থেকে যায়। বড়বেলায়ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি নারী নিতে দেখে তার বাবা, স্বামী কিংবা ভাইকে। ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর নির্ভর করতে অভ্যস্ত হয় পরিবারের পুরুষ সদস্যটির উপর। রিয়েল এস্টেট সেক্টরে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয় না। ফলে নারীর নিজস্ব যে ইচ্ছা কিংবা সিদ্ধান্তের প্রতিফলন এই সেক্টরে থাকা উচিৎ, তা এখানে থাকে না। এ কারণেই নারীর জন্য রিয়েল এস্টেট সেক্টর ততোটা সহজ হয়ে ওঠে না, তৈরি হয় সিদ্ধান্তহীনতা নামক প্রতিবন্ধকতা। 

সম্ভাবনা

সম্ভাবনা
বহুকাল ধরে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গল্প জমা হচ্ছে রিয়েল এস্টেট খাতে নারীর সফল বিনিয়োগের

প্রতিবন্ধকতার গল্পটা দীর্ঘ হলেও নারীর জন্য রিয়েল এস্টেট সেক্টর এর সম্ভাবনার গল্পও কম উজ্জ্বল নয়। অসংখ্য নারী এখন আগ্রহী হচ্ছেন রিয়েল এস্টেট সেক্টরে। তারা তাদের সঞ্চিত অর্থ বিনিয়োগ করছেন এই খাতে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা ও তারা অর্জন করছেন। কারন উল্লিখিত সব প্রতিবন্ধকতা তারা কাটিয়ে উঠছেন সদর্পে। সচেতন হচ্ছেন প্রপার্টিতে তাদের আইনী অধিকার সম্পর্কে। সেইসাথে জানছেন প্রপার্টি ক্রয় বিক্রয়ের নানা আইনী বিষয়গুলো সম্পর্কেও। বহুকাল ধরে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গল্প জমা হচ্ছে রিয়েল এস্টেট খাতে নারীর সফল বিনিয়োগের।

প্রতিকূলতা কাটানো সম্ভব হচ্ছে কারণ এখন তথ্য উন্মুক্ত সবার জন্য। পুরুষ এবং নারী সবার জন্যই তথ্য এখন হাতের মুঠোয়। তাই সচেতন নারীরা এখন আর পরনির্ভরশীল নন। তারা জানেন কোথায় যেতে হবে, কীভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর রিয়েল সেক্টরে নারীদের সক্রিয়তা আরও বেশি বৃদ্ধি পেতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে বিপ্রপার্টির মতো নির্ভরযোগ্য রিয়েল এস্টেট কোম্পানি। যেখানে তারা বিনা বাধায় পেয়ে যাচ্ছেন ফিন্যান্সিয়াল সাপোর্ট। পাচ্ছেন লিগ্যাল সাপোর্ট। তাদের প্রপার্টি কেনাবেচার সিদ্ধান্তও সহজ হয়ে যাচ্ছে প্রপার্টি এক্সপার্টদের পরামর্শে। নিজের একটি বাড়ির স্বপ্ন, এখন আর কোনো নির্দিষ্ট লিঙ্গের জন্য সীমাবদ্ধ নয়। স্বপ্ন দেখা থেকে স্বপ্নপূরণ পুরোটাতে নারীদেরও থাকছে সমান দখল। বাবার বাড়ি কিংবা স্বামীর বাড়ি বলার বদলে নারীরা এখন “আমার বাড়ি” বলতে শিখছে। 

রিয়েল এস্টেট সেক্টরের প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে সময় এখন এক পা, দুই পা করে অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে যাওয়ার। সেই এগিয়ে যাওয়ার পথেই হাঁটছে বর্তমানের নারীরা।  নারীদের এই এগিয়ে যাওয়ার গল্পে চাইলে আপনিও মতামত যুক্ত করতে পারেন মন্তব্যের ঘরে।  

Write A Comment

Author