Reading Time: 3 minutes

আমরা মানুষ , স্বভাবতই আমরা সবার মাঝে থাকতে এবং বেড়ে উঠতে পছন্দ করি।  আমরা সামাজিক জীব। কেউ কেউ বলেন এটা নাকি আমাদের জিনেই আছে। আশ্চর্য হলেও সত্যি যে, আমরা যখন কোন গ্রুপে কাজ করার সময়েই আমাদের সেরাবের হয়ে আসে! তাই এই দূর্যোগের সময়ে একটা দীর্ঘ সময় লোকালয় কিংবা সমাজ থেকে দূরে থাকার কারণে, আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর এর বড় একটা প্রভাব পড়বে। যেটা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং কর্মক্ষমতা দুটোর জন্যই ক্ষতিকর। দীর্ঘ সময়ের জন্য কোয়ারেন্টাইন হলে আপনি কমিউনিটি কিংবা কর্মক্ষেত্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন। যার কারণে আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের উপর পড়তে থাকে নানা প্রভাব। মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং বিভ্রান্তির মত বিষয়গুলো দেখা দিতে শুরু করে। প্রোডাকটিভিটি কমানো কিংবা কাজের ক্ষতির পাশাপাশি এগুলো আপনার শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্যও অনেক ক্ষতিকর। এজন্য মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া অতীব গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং, চলুন জানা যাক দীর্ঘ সময়ের কোয়ারেন্টাইন এ যেভাবে প্রোডাকটিভিটির জন্য মানসিক সুস্থতা বজায় রাখবেন!   

মানসিক স্বাস্থ্য
মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতিও আমাদের হতে হবে যত্নশীল

মানসিক চাপ 

যখন হঠাৎ করে কোন কিছুর প্রয়োজন হয় এবং আমরা বুঝে উঠতে পারি না কীভাবে এই প্রয়োজন মেটাবো, তখন তা আমাদের শরীর এবং মনের উপর প্রচুর চাপ সৃষ্টি করে, এটাই স্ট্রেস বা মানসিক চাপ। হোম কোয়ারেন্টাইন চলাকালীন সময়ে আমরা নিয়মিত জীবন থেকে বিছিন্ন হয়ে থাকি এবং একটা পরিস্থিতিতে পরে যাই যা অপরিচিত, যেখানে খাপ খাইয়ে নিতেই আমাদের মধ্যে তৈরি হয় মানসিক চাপ। মানসিক চাপ কর্মক্ষমতা কমিয়ে আনার পাশাপাশি আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্যেও আনে ঝুঁকি। এই ঝুঁকি এড়াতে এবং কোয়ারেন্টাইন চলাকালীন সময়কালে, মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে আমাদের কিছু “পজিটিভ রিল্যাক্সেশন” কৌশল জানতে হবে। মেডিটেশন, ডিপ ব্রিদিং বা ইয়োগা করা যেতে পারে যা মানসিক চাপ কমিয়ে আনতে সহায়ক!  

উদ্বেগ বা অ্যাংজাইটি  

এমন কখনো অনুভব হয়েছে যে আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে সবকিছু, কোন ভাবেই থামাতে পারছেন না? এমনকি আপনার হৃদস্পন্দনও বেড়ে গেছে, শরীর কাঁপছে, ঝরঝর করে ঘাম ঝরছে! এমন হয়ে থাকলে আপনি নিঃসন্দেহে উদ্বেগ বা অ্যাংজাইটিতে ভুগছেন। এমন তখনই হয় যখন আপনার পরিকল্পিত উপায়ে কিছু হবে না কিংবা অস্বাভাবিক কিছু হতে শুরু করবে। যা কিনা দীর্ঘ সময়ের কোয়ারেন্টাইন থাকাকালীন সময়ে হওয়া খুবই স্বাভাবিক। এ অবস্থায় আপনাকে যা করতে হবে, ধীরে ধীরে অনিয়ন্ত্রিত সবকিছু আপনার নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। আপনি একা নন এই সাহস রাখতে হবে। এবং এমন কিছু ভাবা যাবে না যা এখনও হবার বাকী। বরং বর্তমান নিয়েই ভাবুন। 

অনিদ্রা 

মানসিক চাপ বা উদ্বেগের সাথে অনিদ্রা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কাজের সময়কাল কিংবা স্থানের পরিবর্তনের কারণে অনিদ্রার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। দেখা যায় যিনি অনিদ্রায় ভুগছেন তিনি রাতে জেগে আছেন অথবা ঘুমাতে পারছেন না। আপনি ভাবতেও পারবেন না এর প্রভাব কতটুকু পড়তে পারে আপনার স্বাস্থ্যের উপর। অনিদ্রা বা নিদ্রাহীনতা আমাদের মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর। মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণ করলে, আপনার স্বাস্থ্যের উপর পড়বে ইতিবাচক প্রভাব এবং আপনি ভালোভাবে ঘুমাতে সক্ষম হবেন। হালকা ব্যায়ামও শরীরের জন্য ভালো, এতে ঘুম ভালো হবে।

বিভ্রান্তি

কোয়ারেন্টাইন সময়ে বিভ্রান্তির অনুভূতিটা আপনার বার বার অনুভব হবে। দীর্ঘ সময়ের কোয়ারেন্টাইনে ঘুম থেকে উঠে দিশাহারা লাগতেই পারে। কিন্তু এতে বিরক্ত হলে হবে না। বাসা থেকে যখন কাজ করছেন তখন আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে আপনার হাতে কী কাজ আছে এবং কখন তা ডেলিভারি দিতে হবে। বিভ্রান্তি থেকে বাঁচার সবচেয়ে চমৎকার উপায় হচ্ছে, রুটিন বানিয়ে ফেলা। পাশাপাশি আপনার সুবিদার্থে একটা টাস্ক-লিস্ট তৈরি রাখা।

খিটখিটেভাব

যারা এক্সট্রোভার্ট তাদের জন্য বাসায় থাকা কিছুটা মুশকিল হয়ে দাড়ায়! তাদের মেজাজ হয়ে যায় খিটখিটে। এটাও ঠিক একটা দীর্ঘ সময়ের জন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকাতে এমন খিটখিটে মেজাজ হওয়াটাও স্বাভাবিক। আর যখন আপনি বাসা থেকে কাজ করছেন তখন সামান্য ভুল ধারণা বা ভুল ত্রুটিগুলো সমস্যা তৈরি করতে পারে। এমন পরিস্থিতি এড়াতে আপনার দিনকে কয়েকটি অংশে ভাগ করতে হবে। একসাথে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ থেকে বিরত থাকুন এবং বিরতি নিন। আপনি চাইলে পরিবারের সাথে একটু সময় কাটিয়ে নিন এবং আবার কাজে ফিরে আসুন। 

হতাশা জনিত লক্ষণ

এক জায়গায় বেশি সময় ধরে থাকার কারণে একঘেয়েমি চলে আসে আবার কখনো আসে হতাশা। এক জায়গায় ১০ দিনের বেশি থাকার কারণে প্রোডাকটিভিটির জন্য মানসিক সুস্থতা ধরে রাখা কিছুটা কঠিন হয়ে যায়। যা আপনাকে ভেতর থেকে দূর্বল করে দিতে পারে। যার দরুন একঘেয়েমি এবং একঘেয়ে দৈনিক জীবন আপনাকে ক্রমশ হতাশার দিকে ঠেলে দিতে পারে। এজন্য আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি নিতে হবে অধিক যত্ন। এই সময়ে হতাশাজনক লক্ষণগুলো এড়ানোর জন্য আপনাকে বাকি ইতিবাচক দিকগুলোতে ফোকাস করতে হবে। যেমন শেষবার কখন আপনি পুরো পরিবার নিয়ে চা খেয়েছিলেন? 

আবেগের বহিঃপ্রকাশ  

সর্বশেষে আপনি দীর্ঘ সময়ের কোয়ারেন্টাইনে থাকলেও, আপনি চাইলেই সবার সাথে ভার্চুয়ালি যোগাযোগ করতে পারছেন! এই মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে আপনি সামাজিক ভাবে তাদের থেকে দূরে থেকেও থাকতে পারছেন কাছে। ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মের সাহায্যে আপনি যখন তখন যোগাযোগ করতে পারছেন। সুতরাং এই সুযোগটাও কম কিসের!  

বাংলাদেশের মানুষ এখন এমন এক সময়ে আছে যেখানে সবার জায়গা থেকে এগিয়ে আসতে হবে।  প্রোডাকটিভিটির জন্য মানসিক সুস্থতা আমাদের নিজেদেরই নিশ্চিত করতে হবে। দেশ ও দশের জন্য এই যুদ্ধ আমাদের নিজেদের! 

Write A Comment