Reading Time: 3 minutes

বাংলাদেশ কেমন সুন্দর? আমার কাছে শিল্পীর আঁকা ছবির মত সুন্দর। যে ছবিতে আকাশ নীল আর সাদায় মাখামাখি হয়ে আছে, আর সবুজ চোখ ধাঁধালো শান্তিময় সুন্দর! এই সবুজের মাঝেই উঁকি দেয় আমাদের ছোট্ট একটি দেশ বাংলাদেশ। সমুদ্র পাহাড় পর্বত বিশ্বের সব বিস্ময় আপনি অচিরেই বাংলার বুকে খুঁজে পাবেন চমৎকার সব জলপ্রপাত এবং ঘন বনের এমন সমারোহ সম্ভবতই কোথাও আছে। কোলাহল আর ব্যস্ততায় যখন মন অশান্ত হয়ে ওঠে নিজের অজান্তেই একটা নির্জন জায়গা খুঁজে ফিরি। তেমনই, কয়েকটি জায়গার সন্ধান এনেছি আমাদের আজকের ব্লগে। বাংলাদেশের যে জায়গাগুলো নির্জন সে সম্বন্ধে জানা যাক।

সিংপা

সিংপা গ্রামের একটি প্রতীকী ছবি
সিংপা গ্রামের একটি প্রতীকী ছবি

বান্দরবানের ঘন বনের ভেতরে লুকিয়ে থাকা একটি নির্জন জায়গা এই সিংপা। যারা খুব বেশি একটা ঘুরে বেড়ান না বা ঘোরাঘুরি নিয়ে ঘাঁটেন না তাদের জন্য এই জায়গাটি একদম নতুন। কিন্তু, যারা ভ্রমণপিপাসু তাদের এই জায়গার কথা ঠিক জানা। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত এই গ্রামটি এতটাই বিচ্ছিন্ন যে, মৌসুমের উপর নির্ভর করে এখানকার স্থানীয়দের রেমাক্রির কাছের যেকোন শহরে পোঁছাতে সময় লাগে প্রায় অর্ধেক দিন! আর বান্দরবানের একটি উপজেলা থানচি পৌঁছাতে প্রায় দেড়দিন লেগে যায়। এখানকার মানুষরা যেমন সংখ্যায় কম তেমনি তাদের শিক্ষার হারও স্বল্প। পুরো গ্রামের জীবিকা জুম চাষ এবং মাছ ধরার উপর নির্ভর। তবে আপনি যদি এই জায়গার সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান তাহলে, আপনাকে নৌকায় একটা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। কেননা, এখানে যাবার আর কোন বিকল্প পথ নেই। কেবল নৌকা আর পায়ে হাটাই সম্বল। তাই সতর্কতা অবলম্বন করে তবেই ঘুরে আসুন। 

ছেঁড়াদ্বীপ

ছেঁড়াদ্বীপ
ছেঁড়াদ্বীপ এ একটি দিন

সূর্যাস্ত বা সূর্যোদয় যদি নিজের চোখে দেখতে চান তাহলে, ছেঁড়াদ্বীপ আপনার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য। ছেঁড়াদ্বীপের সন্ধান করলে বেশীরভাগ মানুষই বলবে সেন্ট মার্টিনের কথা। কিন্তু এই ছেঁড়াদ্বীপ সেন্ট মার্টিন থেকে কিছুটা ভিতরে। দ্বীপটি বাংলাদেশের সবচেয়ে দক্ষিণে এবং বঙ্গোপসাগরের ৯ কি মি গভীরে অবস্থিত। সুতরাং আপনার এখানে যেতে হলে নৌপথেই যেতে হবে। এই দ্বীপকে এক আরবীয় নাবিক প্রায় ২৫৯ বছর আগে আবিষ্কার করেছিলেন তখন নাম রাখা হয়েছিল “জাজিরা”। তবে স্থানীয়রা একে “নারিকেল জিঞ্জিরা” বলে ডাকে। দ্বীপের আবহাওয়া একেক সময় একেক রকম, আবহাওয়ার প্যাটার্ন পরিবর্তন হওয়ার সাথে সাথে দ্বীপের দৃশ্যও বদলে যায়। একই দিনের বিভিন্ন রকম লাগে দেখতে। ছেঁড়াদ্বীপ সেন্ট মার্টিনের সবচেয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত। জোয়ারের সময় এই দ্বীপটি পানিতে ভাগ হয়ে যায় আর জোয়ার নামার পর এই দ্বীপে যেতে আপনার সময় লাগবে ২ ঘণ্টা। তবে এখানে যাবার জন্য, মোটরবোট, ট্যুরিস্ট বোট, ভ্যান, এমনকি বাইসাইকেল সহ আরও পরিবহনের ব্যবস্থা রয়েছে। 

সাজেক

সাজেক
সাজেক

যেখানে মেঘ ছুঁয়ে দেখা যায়, যেখানে আকাশ অনেক কাছে। এমন এক জায়গার নাম সাজেক। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১,৪৭৬ ফুট উপরে এমন একটি উপত্যকা আর কোথাও কি আছে? আমার জানা নেই! সাজেক অনেকের কাছে পাহাড়ের রানী হিসেবেও পরিচিত। সাজেক ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের নিকটে এবং রাঙ্গামাটি জেলার কাসালং পর্বতমালার পাহাড়ের মধ্যে অবস্থিত। সাজেকের স্থানীয় বাসিন্দারা চাকমা, মারমা, ত্রিপুরার মতো বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সুতরাং সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যে আপনি খুঁজে পাবেন বৈচিত্র্য। খাগড়াছড়ি মূল শহর থেকে চান্দের গাড়ি দিয়ে ৬৭ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে যেতে হবে। যদিও সাজেক উপত্যকা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলির মধ্যে একটি অন্যতম। মেঘের সৌন্দর্য এবং মনোরম দৃশ্যের জন্য এটা বিখ্যাত। 

দুবলার চর 

দুবলার চর
দুবলার চর

বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের ভেতরে অবস্থিত দুবলার চর একটি বিচ্ছিন্ন জায়গা। বাংলাদেশের যে জায়গাগুলো নির্জন তার মধ্যে দুবলার চর অন্যতম। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত এই দুবলার চর বাংলাদেশের অন্যতম প্রত্যন্ত অঞ্চল। এই দ্বীপটি “জেলে গ্রাম (জেলেদের গ্রাম)” নামেও পরিচিত কারণ সেখানে বসবাসরত বেশিরভাগ মানুষ পেশায় জেলে। মাছ ধরার পাশাপাশি এরা মাছ শুকানোর কাজও করে থাকেন। দেশজুড়ে নানান জেলে এখানে মাছ ধরতে ও মাছ শুকাতে আসে। দুবলার চর অন্য কারণেও বেশ আকর্ষণীয় একটি জায়গা। প্রতি বছর, নভেম্বর মাসে চারপাশ থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এখানে রাশ মেলা উত্সবের জন্য সমবেত হন। তবে এই চর ঘুরে দেখা সহজ নয়। প্রথমে আপনাকে মংলা বন্দরে যেতে হবে এবং তারপরে ট্রলার বা লঞ্চ নিয়ে পৌঁছাতে হবে। যার জন্য সময় লাগবে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা। 

বাংলাদেশের যে জায়গাগুলো নির্জন সেখানে যাওয়া সহজ নয় কিন্তু, এই জায়গাগুলো এতই সুন্দর যে না গেলে বড়ই আফসোস রয়ে যাবে। আর আপনি যদি অ্যাডভেঞ্চার-প্রেমী হন যিনি অজানাতে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন তাহলে এই জায়গাগুলো কেবল আপনার জন্য! আপনার মতামত আমাদের জানাতে কমেন্ট করুন!

Write A Comment