Reading Time: 3 minutes

বিগত কয়েক বছরে অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ অর্জন করেছে বিশাল এক সমৃদ্ধি। আমরা এখন একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি যেখানে দারিদ্র্যের হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে এবং এটা একটি জাতি হিসেবে আমাদের জন্য বিশাল প্রাপ্তি। তবে এই দ্রুত বেড়ে উঠা নগরায়ণ এবং শিল্পায়নের সাথে পরিবেশগত কিছু অবনতিও ঘনিয়ে এসেছে। যার জন্য ঢাকা বারবার শীর্ষ দূষিত শহরগুলোর তালিকায় প্রথমেই অবস্থান করছে, যা একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে মোটেও ভালো দেখায় না। সৌভাগ্যবসত আমরা অনেকেই এই অবস্থা সম্বন্ধে দিন দিন আরও সচেতন হচ্ছি এবং যথাযথ পদক্ষেপও নিচ্ছি। তবে চলুন পড়ে নেই, জাতি হিসেবে বাংলাদেশের “ পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশ ” হয়ে ওঠার গল্প। 

পরিবেশবান্ধব ইট উৎপাদন   

সবুজে ঘেরা
পরিবেশবান্ধব চারিদিক গড়ে তুলুন

প্রচলিত পদ্ধতিতে ইট উৎপাদন খুবই ক্ষতিকর আমাদের পরিবেশের জন্য। হাউস বিল্ডিং রিসার্চ ইন্সটিটিউট (এইচএসবিআই) ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ইট উৎপাদনের বিকল্প পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছে। এখন ৩০ টির মত ব্যবসাক্ষেত্রে সেই বিকল্প ইট উৎপাদনের পদ্ধতি উৎপাদন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির এক ভয়াবহ তথ্যে উঠে এসেছে, প্রতিবছর ভাটায় তৈরি হচ্ছে ৭০০০ ইট যার সিংহভাগ তৈরি হয় উর্বর মাটি দ্বারা। বাংলাদেশের মত একটি দেশে যেখানে অধিকাংশ মানুষ কৃষি পেশায় নিয়োজিত সেখানে মাটির এমন অপচয় সত্যিই হতাশাজনক।

তাদের কোন উৎপাদন পদ্ধতিতে মাটির ব্যবহার অন্তর্ভুক্ত থাকে না বরং এইচএসবিআই উৎসাহিত করেছে ইটের বিপরীতে কংক্রিটের ব্লক ব্যবহার করাকে। এই কংক্রিটের ব্লকগুলো নির্মিত হয় বালু এবং নদীর নিচ থেকে টেনে আনা মাটি থেকে। এটাই অবাক করা ব্যাপার মাটির কোন প্রকার উপস্থিতি ছাড়াই ২৫ ধরনের কংক্রিট ব্লক উৎপাদিত হচ্ছে। বর্তমানে, এইচএসবিআই কারখানা শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে যাতে তারাও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে ইট উৎপাদনের উপকরণ তৈরি করতে পারে।

পরিবেশবান্ধব স্থাপত্য 

গাছ
পরিবেশবান্ধব ভবন তৈরি করুন

আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কখনই স্থিতিশীল অবস্থায় রইবে না, যে পর্যন্ত না আমরা আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা না করছি! যদিও সবকিছুতে পরিবেশবান্ধব আচরণ এবং উপাদান বজায় রাখার কেবল মাত্র একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস। অনেক কোম্পানি ইতিমধ্যেই পরিবেশবান্ধব ভবন তৈরি করেছে এবং সার্বিক সচেতনতা গড়ে তুলেছে। 

উদাহরণস্বরূপ, আমরা সবাই সিটিস্কেপ টাওয়ারের কথা শুনেছি, কেননা আমরা অনেকেই সেখানে নর্থ এন্ডে কফি খেতে যাই প্রায়, সেই টাওয়ারের নিজস্ব পানি রেগুলেশন সিস্টেম রয়েছে যেটি পানির অপচয় ৬০% এবং বিদ্যুতের অপচয় ৪০% কমিয়ে আনে। আমরা চাইলেই একটু একটু করে এই রকম উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারি। তাছাড়া, বেশ কিছু বিল্ডিং ও অফিসকে গাছ দিয়ে সাজিয়ে রাখাও হচ্ছে। অফিসের ভেতরেও আমরা চাইলেই হালকা সবুজ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখতে পারি। এটি যেমন অফিসের ভেতরে একটি সবুজ আবেশ তৈরি করবে তেমনি একই সাথে পরিবেশবান্ধবও হয়ে উঠবে।  

পরিবেশবান্ধব ব্যাংকিং 

বাল্ব ও সবুজ
কর্মক্ষেত্রেও পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে কাজ করা সম্ভব

অনেক ব্যাংক এখন নিচ্ছে নানা পরিবেশবান্ধব পদক্ষেপ, যেমন তাদের কাস্টমারদের “পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশ” সম্বন্ধে উৎসাহিত করা, ব্যাংকের সকল কাজ কাগজে না করা। এবং ই-স্টেটমেন্ট এবং মেইল এর মাধ্যমে ব্যাংকের কাজ সেরে কাগজের ব্যবহার কমিয়ে আনছে, এতে করে সকল কাজ করতে যেমন কাগজের অপচয় কমে আসছে তেমনি সময়ও নষ্ট কম হচ্ছে। আমরা চাইলে এভাবেই আমাদের সম্পদগুলোর যথাযথ ব্যবহার করতে পারি। 

পরিবেশবান্ধব পোশাক উৎপাদন 

সবুজে ঘেরা
ছোট ছোট উপায়ে সময়ের সাথে পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।

আমাদের দেশ চীনের পর দ্বিতীয় পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বিখ্যাত। আমাদের ৬৭ টির মত সার্টিফাইড পোশাক কারখানা রয়েছে এবং প্রায় ২২০ টির মত পোশাক কারখানা সার্টিফিকেট গ্রহণ করতে যাচ্ছে খুব শীঘ্রই। আমরা কেবল পোশাক তৈরির পদ্ধতিতে পরিবেশবান্ধব উপায়ই আনছি না বরং, শহরের বাইরেও ছোট ছোট দোকানের কর্মীরা পোশাকে বোতলজাত রঙের পরিবর্তে প্রাকৃতিক রং ব্যবহার করছেন। হয়তো সম্পূর্ণ প্রসেসে পরিবেশবান্ধব উপায় অবলম্বন করা সম্ভব হবে না তবে এমন ছোট ছোট উপায়ে সময়ের সাথে পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।  

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে আমরা প্রতিনিয়ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করছি। কিভাবে সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশ গড়ে তোলা যায়, সে বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাই। মতামত জানাতে অবশ্যই কমেন্ট করুন।

Write A Comment