Reading Time: 4 minutes

এই শহরে বসবাস করে প্রায় লক্ষ লক্ষ মানুষ। বেশিরভাগ মানুষই এখানে থাকে ভাড়া বাসায়। কিন্তু এই ভাড়া বাসার কিছু সমস্যা আছে যেগুলো কম বেশি সবাইকেই উত্যক্ত করে থাকে। এবং এই সমস্যাগুলো অতিদ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন। এত মানুষ যেখানে ভাড়া বাসায় থাকে, সেখানে সব বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের উচিত কিছু নিয়ম মেনে চলা। কিছু নিয়ম কানুন মেনে চললেই দুই পক্ষের জন্যেই জীবন অনেকটা সহজ হয়ে দাড়ায়। তবুও কিছু বিধি নিষেধ তো থেকেই যায় যেগুলো মেনে চলা অত্যাবশ্যকীয়।

আপনি যদি খুব শীঘ্রই বাড়িওয়ালা হতে যাচ্ছেন কিংবা বাড়ি ভাড়া নিতে যাচ্ছেন, দুইভাবেই আপনাকে কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। আবার এমন অনেকে আছেন যারা কিনা অনেক দিন ধরেই এই সমস্যাগুলো দেখে যাচ্ছেন। দুই ভাবেই আপনার জানা প্রয়োজন এই সমস্যাগুলো সম্বন্ধে এবং এগুলোর সমাধান সম্বন্ধে। চলুন তাহলে আজকে আমরা জেনে নেই, ঢাকা শহরে বাড়িওয়ালাদের যে ৪ টি সমস্যা তে বেশি পড়তে হয় এবং এগুলোর সমাধান কী কী! 

বাড়ি পাল্টানোর প্রবণতা 

একজন মানুষের ছবি
ঘনঘন বাসা বদল মোটেও ভাল লক্ষণ নয়!

সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটা সেটা হলো, দ্রুত বাসা বদল করা। বাসা বদলের অনেক কারন থেকে থাকলেও, বাসা মেরামত জনিত কারণে ভাড়াটিয়ারা বাসা অতি দ্রুত বদলে ফেলেন। সেক্ষেত্রে মেরামত সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতিগুলো এমনভাবে করতে হবে যেগুলো আপনার দ্বারা পূরণ করা সম্ভব হবে। যখন আপনি আপনার প্রতিশ্রুতিগুলো রক্ষা করবেন তখনই আপনার ভাড়াটিয়া আপনার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে। এবং এতে করে বাসা বদল করার প্রবণতাও কমে আসবে। আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, মেরামত সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করলে আপনার নিজের প্রপার্টিই আরও বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। আপনি চাইলে প্রতি মাসে, একটা করে নোটিশ পাঠিয়ে ভাড়াটিয়াদের জানাতে পারেন, যে এই মাসে আমরা এটা মেরামত করব এবং আগামী মাসে ঐ অংশ মেরামত করা হবে। এইভাবে আপনি আপনার ভাড়াটিয়ার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে পারবেন এবং একই সাথে আপনার বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণও করা সম্ভব।

মেরামত

আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে, যখনই কোন অভিযোগ জমা পরবে সেটা সাথে সাথে সমাধান করার চেষ্টা করবেন। আপনার ইউনিটে যদি কোন সমস্যা থেকে থাকে সেটা দ্রুত সমাধান করতে হবে। যেকোন সমস্যা বেশি সময় ধরে রেখে দেওয়া যাবে না। এতে কিন্তু ক্ষতি আপনারই। অভিযোগ পাবার সাথে সাথে সেটা সমাধান করাটা কিন্তু আপনার ভাড়াটিয়ার প্রতি আপনার শ্রদ্ধাশীলতা প্রদর্শন করাকে বোঝায়। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখা সবারই উচিত। যেমন, গ্যাস, পানি বা ইলেক্ট্রিসিটির সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা করবেন। এগুলো ভাড়াটিয়াদের বেশ ভুগিয়ে থাকে।

সমসাময়িক সুযোগসুবিধা যোগ করুন 

সময়ের সাথে আপনাকে খোঁজ রাখতে হবে, আশে পাশের বিল্ডিং এ কেমন সুযোগসুবিধা যোগ হচ্ছে। যতটা সম্ভব সেই সুযোগসুবিধামত আপনার বাড়িতেও সেই সুযোগসুবিধাগুলো যোগ করুন। অধিকাংশ ভাড়াটিয়ারা এক্সট্রা কিছু সুবিধা পেতে পছন্দ করেন। এবং এই বাড়তি সুবিধাগুলোর জন্যই ভাড়াটিয়ারা অন্য বাড়িতে শিফট করে। সেজন্য আপনাকে বাড়িতে ভাড়াটিয়াদের ধরে রাখতে চাইলে বাড়তে বাড়তি সুবিধা যোগ করতে হবে।

সামাজিক বন্ধন তৈরির সুযোগ রাখুন 

কমিউনিটি মিলমেলার আয়োজন করতে হবে। যে বিল্ডিং এ আপনি থাকছেন, সেখানে আরও যারা আছেন তাদের সাথে একটা সু-সম্পর্ক রক্ষা করার দায়িত্ব আপনারই। যদিও আমাদের দেশে কমিউনিটির প্রচলন টা বেশি দেখা যায় না, কিন্তু সঠিক ভাবে প্রয়োগ করতে পারলে এটি অনেক ফলপ্রসূ হতে পারে। 

দেরিতে ভাড়া পাওয়া 

ডলার
দেরিতে ভাড়া পাওয়া এখনকার সময়ের তীব্র সমস্যা!

বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়ার মধ্যেকার সম্পর্ক অনেকটাই খারাপ হতে দেখা যায় দেরিতে ভাড়া পাওয়ার কারনে। বাড়িওয়ালাদের জন্য একই ভাবে খুবই দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে ওঠে কিভাবে ঠিক সময়ে ভাড়া পাওয়া যায়। এই সমস্যাটি আমাদের দেশে অনেক দেখা যায়। অনেক সময় ভাড়া দেওয়ার সঠিক সময় না জেনেই অনেকে ভাড়া নিয়ে নেয়, সেখানেই শুরু হয়ে যায় নানা সমস্যা। এই সকল সমস্যা থেকে বাঁচতে- 

  • ভাড়া জমা দেওয়ার তারিখ উল্লেখ করুন 
  • সম্ভব হলে ভাড়াটিয়ার সাথে দু একবার ভাড়ার বিষয়ে আলাপ করুন 
  • প্রয়োজন হলে ভাড়াটিয়াদের যাচাই করুন 

নগদ ব্যবস্থা

একজন ভাড়াটিয়ার অনেক কারণই থেকে সঠিক সময়ে ভাড়া না দেওয়ার ব্যাপারে। সুতরাং আপনি যদি এমন সমস্যার মুখে পড়ে থাকেন সেক্ষেত্রে এখনই আপ্নার ভাড়াটিয়ার সাথে যোগাযোগ করুন। দুজনের সুবিধা বুঝে ভাড়া আদায়ের তাখির নির্ধারণ করে নিন। এমন হতে পারে মাসের শুরুতে অর্ধেক টাকা নেওয়া হল আর বাকী অর্ধেক মাসের শেষে। এইভাবে ভাড়া পাওয়ার ক্ষেত্রে যে দেরিটা হয় সেটা এড়ানো সম্ভব। কিংবা বছরে একসাথে অর্ধেক ভাড়া আদায় করে নেওয়া যায়।

খারাপ রেপুটেশন সম্বন্ধে 

আপনার বাড়িটি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই একটি খারাপ পরিস্থিতিতে পৌঁছে যেতে পারে যদি না আপনি সঠিক ভাবে সেটা দেখাশোনা করেন। এবং বাড়িওয়ালা হিসেবে আপনি কেমন সেটা যদি আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে সেক্ষেত্রে এটা বেশ খারাপ প্রমানিত হবে আপনার ভাড়াটিয়াদের জন্য। অনেক সময় দেখা যায়, এলাকার নেতিবাচক কিছু মানুষ থাকবে যারা কিনা আপনার সম্বন্ধে রটনা রটাবে, যাতে করে আপনি একজন ভালো ভাড়াটিয়া খুঁজে না পান। এমন অবস্থা থেকে বাঁচার জন্য আপনাকে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে যা কিনা আপনার রেপুটেশন অনেকটা ঠিক করবে। যদি প্রপার্টির কোন ড্যামেজ থাকে তা দ্রুত ঠিক করে ফেলতে হবে। নতুন কোন সুবিধা যোগ করতে হবে, এই পরিবর্তনগুলো সবসময় ভাড়াটিয়াদের বাড়ি ভাড়া নিতে আগ্রহী করে।

অবৈধ উপায়ে বাড়িতে থাকা  

স্টিকার
আইনের সাহায্য নিন

আপনার ভাড়াটিয়া যদি আপনার কথা না শুনে বাসায় দীর্ঘ সময় থাকে সেক্ষেত্রে, আপনি আইনের সহায়তায় যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারেন। নিজে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করেই শ্রেয় এখানে। এবং ভাড়াটিয়া থেকে যেকোন ধরণের প্রতিক্রিয়া এড়াতে আপনাকে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতেই হবে। অন্যদিকে, আপনার কোনও ভাড়াটে থাকতে পারে যারা কিনা আপত্তিকর কাজে লিপ্ত আছে, এমন অবস্থায় আইনের সহায়তা নিতে হবে দ্রুত। যাতে করে কোন নেতিবাচক কিছু ঘটে না যায়।

বাড়িওয়ালাদের যে ৪ টি সমস্যা বেশি দেখা যায় সেগুলোর সমাধান কোথাও না কোথাও আপনাদের হাতেই রয়েছে। এছাড়া ঘনঘন বাসা বদল কখনই ভালো রেপুটেশন বয়ে আনে না। সুতরাং খেয়াল রাখতে হবে আপনার ভাড়াটিয়ার প্রতি। এখানে বলা বাড়িওয়ালাদের যে ৪ টি সমস্যা সম্বন্ধে আলোচনা করা হল সেটার সাথে কি আপনার মিল রয়েছে?

Write A Comment