Reading Time: 4 minutes

“বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র

নানানভাবে নতুন জিনিস, শিখছি দিবারাত্র”

কবির এই মন্ত্র মেনেই যেন সারা বিশ্বে এখন ছড়িয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের লক্ষ্যে পৃথিবীর আনাচে কানাচে সব জায়গায় ছুটে চলেছে তরুণেরা।  বাংলাদেশও এ বিষয়ে পিছিয়ে নেই। পৃথিবীর অনেক দেশেই এখন প্রবাসী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা আছেন। তবে যে কারণেই হোক, জার্মানি, সুইডেন, বেলজিয়াম সহ ইউরোপের কিছু দেশ, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা এবং কানাডার মত খুব নির্দিষ্ট কিছু দেশেই বেশিরভাগ বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীর আনাগোনা। অথচ পৃথিবী কিন্তু এর চাইতেও অনেক বড়। আর বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে যাবার অর্থ শুধুমাত্র লেখাপড়া সেখা কিংবা একটি ডিগ্রি অর্জন নয়। বরং সে দেশ, সেই সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা, তাদের সাথে মিশে যাওয়া, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করা, জীবনযাপনের ধরনে অভ্যস্ত হওয়া, সবই শিক্ষার আনুষাঙ্গিক জিনিস। 

অস্ট্রিয়া

অস্ট্রিয়া
অস্ট্রিয়ার আছে পড়াশোনার দারুণ সুযোগ

বাংলাদেশ তথা বিশ্বে অনেকের কাছেই জার্মানী লেখাপড়া করার জন্য একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় গন্তব্য। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে, ব্যাংকে ব্লক অ্যাকাউন্টে টাকা রেখে জার্মানি যান উচ্চশিক্ষার্থে। হ্যা, একথা সত্য যে লেখাপড়া করার জন্য জার্মানি খুবই চমৎকার একটি দেশ কিন্তু, আমাদের এখান থেকে বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে যারা যেতে চান তারা অনেকেই এর পাশেই থাকা  আরেকটি দেশের কথা বেমালুম ভুলে যান। অথচ জিন বিজ্ঞানের জনক মেন্ডেল, ডপলার ইফেক্টের জন্য খ্যাত ক্রিশ্চিয়ান ডপ্লার, পদার্থবিজ্ঞানী স্রোডিনজার অথবা পৃথিবী কাঁপানো মনোবিজ্ঞানী সিগমন্ড ফ্রয়েড, সবাই এ দেশেরই বিজ্ঞানী। বলছি অস্ট্রিয়ার কথা। জ্ঞানে বিজ্ঞানে প্রচুর উন্নত হলেও এই দেশে লেখাপড়া করতে যাওয়া বাংলাদেশীদের সংখ্যা আসলেই কম। অথচ এদেশে অনেক ভার্সিটি আছে যেখানে জার্মানির মতই নেই কোন টিউশন ফি! বরং কিছুটা চেষ্টা করলেই আপনি পেতে পারেন স্কলারশিপ! 

নিউজিল্যান্ডঃ 

নিউজিল্যান্ড
পড়ালেখার পাশাপাশি নিউজিল্যান্ড হতে পারে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগের স্থান

নিউজিল্যান্ড দেশটি আক্ষরিক অর্থেই “ছবির মত সুন্দর”। প্রকৃতি যেন তার রূপ-সুধা লাগামহীনভাবে দান করেছে দেশটিকে। নিউজিল্যান্ড ঘুরে মুগ্ধ হননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর নিউজিল্যান্ডের মানুষ কতটা উদার, কতটা সহিষ্ণু তা কিছুদিন আগে ক্রাইস্টচার্চে হয়ে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলার পরেই মানুষ দেখেছে। আর এই ছবির মত সুন্দর, সাজানো এই দেশটি দেখতে চাইলে, স্থানীয় মানুষ যারা মাওরি জাতি হিসাবে পরিচিত তাদের সাথে মিশতে চাইলে লেখাপড়া করার জন্য এদেশে যেতে পারেন। টপ র‍্যাঙ্কড কয়েকটি ইউনিভার্সিটি আছে এখানে পড়াশুনার খরচ কিছুটা বেশি হলেও আছে বিভিন্ন বৃত্তির ব্যবস্থা। আপনাকে নিজের সাথে স্যুট করে এমন একটি প্রোগ্রাম খুঁজে তাতে আবেদন করতে হবে। সাধারণত এখানে ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্টে ভাল রেজাল্ট থাকতে হয়। 

চায়নাঃ 

মহানবী (সঃ) এর একটি বাণী আমাদের দেশে বেশ জনপ্রিয়, 

“জ্ঞান অর্জনের জন্য  প্রয়োজনে চীন দেশেও যাও”

চায়নার আছে হাজার বছরের ইতিহাস

শুধু শিক্ষা নয়, হয়ত দুরত্ব, বন্ধুর যাত্রাপথ এবং জীবনযাত্রার তফাৎ সব মাথায় রেখেই মহানবী এই মন্তব্যটি করেছিলেন। তবে চায়নায় ঐতিহ্যও কিন্তু ৫ হাজারেরও বেশি পুরানো। এই বিচিত্র দেশটির পদে পদে ছড়িয়ে আছে আশ্চর্য সব উপাদান। আর বিশ্ব-অর্থনীতি একপ্রকার নিয়ন্ত্রণই করে চায়না। সব মিলিয়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে চায়না হতে পারে এক চমৎকার গন্তব্য। চাইনিজ ভাষা, যার আসল নাম ম্যান্ডারিন ভাষা, ব্যবসাবাণিজ্যের ক্ষেত্রে অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র চায়নার ভাষা আর ইংরেজি ভাষা জানা থাকলেই প্রফেশনাল অনুবাদক হিসাবে প্রচুর আয় করা সম্ভব। আর সবচেয়ে বড় বিষয় হল, চায়না সরকার সম্প্রতি শিক্ষাখাতে প্রচুর ব্যয় করতে শুরু করেছে। ২০১২ সালে চায়না তাদের মোট জিডিপির ৪শতাংশ খরচ করে শিক্ষা খাতে। বর্তমানে চায়নাতে প্রায় ৩ হাজারের মত কলেজ ও ইউনিভার্সিটি রয়েছে। চায়না এখন চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত “আইভি লীগের” মতই তাদের একটি “সি৯ লীগ” দাড়া করানোর। অর্থ্যাৎ জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসারে দিনদিন আরও এগিয়ে যাবার প্ল্যান তাদের। এজন্যই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ট্যালেন্টেড মানুষদের নিজেদের দেশে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে চায়না। তাই আছে বিভিন্ন স্কলারশিপের সুযোগ। বর্তমানে বাংলাদেশের খুব কম ছাত্রছাত্রী চায়নাতে থাকলেও সবার উচিত ভাষাগত বৈষম্যকে জয় করার চ্যালঞ্জ নিয়ে এগিয়ে যাওয়া।

তুরস্কঃ 

তুরস্ক
তুরস্ক এগিয়ে যাচ্ছে জ্ঞান-বিজ্ঞানে

তুরস্ক, পৃথিবীর সবচাইতে পুরানো অঞ্চলগুলোর একটি। খ্রিষ্টের জন্মের প্রায় ১০ হাজার বছর আগে এর কোন কোন জায়গায় মানবসভ্যতার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। আন্তঃমহাদেশীয় এই দেশটি জ্ঞান বিজ্ঞানেও বেশ এগিয়ে। তবে বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে চান এমন খুব কম বাংলাদেশিকেই পাওয়া যাবে যারা তুরস্ককে তাদের হিসাবের মধ্য রেখেছেন। অথচ গত কয়েক বছর হল তুরস্কে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। এক হিসাবমতে এদেশে এখন সাড়ে ছয় লক্ষেরও অধিক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের লক্ষ্যে পড়ালেখা করছে।

তুরস্ক যা টার্কি নামেও বেশ পরিচিত, এই দেশে কেন পড়তে যাবেন? কারণ অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের চেয়ে এখানে দৈনন্দিন জীবনযাত্রার খরচ অনেক কম। তাছাড়া স্কলারশিপ আর মাসিক খরচের ব্যবস্থা তো আছেই। এখানকার জীবনযাত্রার মান এতটাই সহজলভ্য যে বৃত্তির টাকা দিয়েই থাকা-খাওয়া, হেলথ ইনস্যুরেন্স এমনকি দৈনন্দিন যাতায়াতের খরচও চলে যায়। অর্থাৎ সরকারিভাবেই চেষ্টা করা হচ্ছে একটি আন্তর্জাতিক পরিবেশ তৈরি করার। তাই বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য চমৎকার সুযোগ হতে পারে তুরস্কে। কম খরচে মিলতে পারে কোয়ালিটি হায়ার এডুকেশন।

মালয়েশিয়াঃ

বিদেশে উচ্চশিক্ষা - মালেয়শিয়া
বিদেশে উচ্চশিক্ষা পেতে মালেয়শিয়া হতে পারে আপনার গন্তব্য

কিছুদিন আগ পর্যন্ত আমাদের মতই থাকলেও সম্প্রতি জ্ঞানে বিজ্ঞানে অনেক এগিয়ে যাওয়া এশিয়ারই একটি দেশের নাম মালয়েশিয়া। বাইরে থেকে অনেক শিক্ষার্থী পড়তে আসছেন এখানে। আর লিভিং কস্ট হিসাব করলে পৃথিবীর সবচেয়ে কম খরচের দেশ এটি। দেশের রাজধানী কুয়ালালামপুরে থাকতে প্রতি বছর আপনার প্রয়োজন সাড়ে ১৪ হাজার মালেশিয়ান রিঙ্গিত যা বাংলাদেশি টাকায় ৩লাখ টাকার মত। এখানে টিউশন ফি-ও বেশ কম। তাছাড়া মালয়েশিয়াতে আন্তর্জাতিকভাবে বিখ্যাত বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসও আছে। ফলে যুক্তরাজ্যের মত খরুচে দেশে না থেকেও সেই দেশের কোন ইউনিভার্সিটির ডিগ্রি আপনি পেতে পারেন মালয়েশিয়া থেকে। তাই বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে চাইলে এটি হতে পারে আপনার জন্য আদর্শ। 

বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য কম খরচ ও মানসম্মত কয়েকটি দেশের তালিকায় এই পাঁচটি ছিল আমাদের চয়েস। এ নিয়ে আপনার মতামত কী? আমাদের জানিয়ে দিন কমেন্টে। 

Write A Comment