পৃথিবী জুড়ে একটি বিষয় সবার সাথেই মিলে যাবে তা হচ্ছে, উৎসব পালন করার আনন্দ বা উৎসাহ। খাবার, আর্ট, বিজ্ঞান কারণ যাই হোক না কেন উৎসব পালন করার প্রতি একটা ঝোঁক সবার মাঝেই দেখা যায়। অদ্ভুত কিছু উৎসব আছে যেগুলো বিশ্বজুড়ে সমান আনন্দ আর উৎসাহ নিয়ে পালন করা হয়ে থাকে। এই ধরুন, ফিনল্যান্ডের বৌ কোলে নিয়ে দৌড় চ্যাম্পিয়নশিপ, সাউথ কোরিয়ার মাড ফেস্টিভ্যাল এগুলো শুনেই আবাক হতে হয়। এমনও কোন উৎসব কি হতে পারে নাকি? কিন্তু, বাস্তবে এই উৎসবগুলো কেবল পালনই করা হয়ে থাকে না বরং, জনপ্রিয়ও বটে। ফিলিপাইনের মতো দেশে উৎসব উদযাপনের সংখ্যা বছরে ৪২,০০০ এর বেশি। এগুলো ছাড়াও আর কিছু উৎসব রয়েছে যেখানে উজ্জ্বল রং ছড়িয়ে দিয়ে উদযাপন করা হয়ে থাকে আনন্দ। মজাদার খাবার উপভোগ করার সুযোগ করে দেয়া। তবে এই সকল উৎসব এক সাথে সাড়া বিশ্বে উদযাপণ করা হয় না, বেশ কিছু স্থানীয়ভাবে উৎযাপন করা হয় আবার কিছু বিশ্বজুড়ে। বিশ্বজুড়ে উদ্ভট সব উৎসব কোনগুলো এবং কীভাবে তা উদযাপন করা হয় জানা যাবে একটু পরেই!
ডিয়া ডে লস মুয়ারটোস (মেক্সিকো)
“মৃতের দিন” বা ডে অফ ডেড! মূলত একটি ছুটির দিন যা মৃত আত্মীয়ের স্মরণে উদযাপিত হয়। উৎসবটি ভয়ংকর শোনালেও এমনটাই ঘটে আসছে মেক্সিকোতে। এই উৎসবটি উদযাপন করা বা শোকের থেকেও বেশি কিছু। এই দিনে সকলে নিজেকে রাঙিয়ে তোলে নানা রঙে রঙে এবং পরিধান করেন রঙিন কাপড়। উৎসবটা এতই আনন্দের সাথে উদযাপন করা হয়ে থাকে যে কেও বলবেই না এটা কোন মৃত ব্যক্তির শোকে পালন করা হচ্ছে। মৃত ব্যাক্তিকে ফুল দিয়ে সম্মান জানানোর পাশাপাশি আরও রীতিনীতি পালন করা হয়ে থাকে। আয়োজন করা হয়ে থাকে সুস্বাদু খাবারের। বছরের পর বছর এই দিনটি পালন করার ফলে, এই উৎসবটি এখন স্কুল পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। যা এখন মেক্সিকোর জাতীয় পরিচয় হয়ে উঠেছে! ২০০৮ সালের হামের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় নাম লিখিয়েছিল।
হোলি উৎসব (ইন্ডিয়া, নেপাল)
বিশ্বের কোন উৎসব এতটা রঙিন নয় যতটা ইন্ডিয়া ও নেপালের রঙের উৎসব হোলি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া (বেশিরভাগ ভারত এবং নেপাল), ফিজি, মালয়েশিয়া, জামাইকা, যুক্তরাজ্য এবং আমেরিকা জুড়ে পালিত হয় এই মজার উৎসবটি। হোলিকে বলা হয়ে থাকে রঙ, প্রেম এবং মমতার উত্সব। হলির আগের রাতে সকলে মিলিত হয়ে মনের ভেতরের খারাপকে মুছে দিতে ঘরের আঙিনায় আগুন জ্বালিয়ে কাঠ কয়লা পুড়িয়ে এই প্রথা পালন করে থাকে। সেই সাথে পরিবারের সাথে গান,নাচে সময় দিয়ে অতিবাহিত করা হয়ে থাকে। পরদিন সকালে শুরু হয় হলি খেলা। একে অপরকে রং মাখিয়ে এই দিনটি সকলে মিলে হাসিতে খুশিতে উদযাপন করা হয়ে থাকে। ছোট থেকে বড় সকলে মিলে এই দিনটি একসাথে কাটিয়ে থাকেন। এছারাও মজাদার খাবারের আয়োজন তো আছেই!
লা টোম্যাটিনা (ভ্যালেন্সিয়া, স্পেন)
আনন্দ উত্তেজনা আর পাগলামির কিছু উপভোগ করতে চান? লা টোম্যাটিনা হল এমনই এক উৎসব। আগস্ট মাসের শেষ বুধবারে অনুষ্ঠিত হয় দুনিয়া কাপানো লা টমাটিনা ফ্যাস্টিভাল। ১৯৪৫ সালে একটি প্যারেডে সত্যিকারের সবজির লড়াই শুরু হয়েছিল। সেই তখন থেকেই পুরো বিষয়টি উৎসব হিসেবেও পালন করা হতে লাগলো। এই উত্সবে অংশগ্রহণকারী হিসাবে আপনাকে কিছু নিয়ম অনুসরণ করতেই হবে। নাহলে আপনি এই খেলা থেকে বাদ পড়ে যেতে পারেন। তাদের মধ্যে ছিল শক্ত কোন বস্তু নিক্ষেপ করা যাবে না এবং একে অপরের দিকে ছোঁড়ার আগে টমেটোগুলো স্কোয়াশ করে নিতে হবে। এই নিয়মগুলো মেনে চললেই আপনি এই মজার উৎসবটি উদযাপন করতে পারবেন। যিনি এই উৎসবটি প্রথম বারের মত অভিজ্ঞতা করতে যাচ্ছেন তার কাছে এই উৎসবের স্মৃতি না ভোলার মত!
হারবিন ইন্টারন্যাশনাল আইস এবং স্নো স্কাল্পচার ফেস্টিভাল (হারবিন, চীন)
বিশ্বজুড়ে উদ্ভট সব উৎসব গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম একটি মজার উৎসব। চীনে শীতকালে এই উত্সবটি উপভোগ করা হয়ে থাকে। হারবিন ইন্টারন্যাশনাল আইস এবং স্নো স্কাল্পচার ফেস্টিভাল ডিসেম্বর মাস থেকে শুরু করে ফেব্রুয়ারীর শেষ অব্দি প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে বিস্ময়কর বরফ এবং তুষার ভাস্কর্যগুলির প্রদর্শিত হয় সংহুয়া নদীর তীরে সান দ্বীপ অঞ্চলে। যে শিল্প ভালোবাসেন এবং শীত উপভোগ করেন তার কাছে এই উৎসব কোন রূপকথার চেয়ে কম নয়। সব জায়গায় মনোমুগ্ধকর সংগীত এবং আকর্ষণীয় আলোকসজ্জার সাথে পুরো শহর এমনভাবে বদলে যায় যেন কোন রূপকথার রাজ্য। নদীর তীরে উত্সব চলাকালীন সময়ে আলোকিত এই ভাস্কর্যগুলি আপনাকে অবাক করতেই পারে।
কার্নিভাল (রিও ডি জেনেরিও, ব্রাজিল)
এটি বিশ্বের বৃহত্তম উত্সব কিনা তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও এটা নিঃসন্দেহে বিশেষ উদ্ভট একটি উৎসব। এই উৎসবটি এতই আকর্ষণীয় যে প্রতি বছর ৫ দিন ধরে চলা এই উৎসবটি প্রায় ৫ মিলিয়নের মত দর্শক আকৃষ্ট করে থাকে যার ভেতর অর্ধ-মিলিয়ন কেবল পর্যটকই। অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা, দর্শনার্থীদের আনাগোনা ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকলাপ এই উৎসবকে করে তুলেছে “পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব”। এই উৎসবটি নানারকম রোমাঞ্চে ভরপুর। নানারকম চমক, নাচ, গান ওপেন-এয়ার পারফরমেন্স সবকিছু মিলিয়ে এটি একটি চমৎকার উৎসব।
বার্নিং ম্যান (ব্ল্যাক রক ডিজার্ট, নেভাডা)
বার্নিং ম্যান উত্সবে যারাই অংশ নিয়েছে তারা সকলেই এই উৎসবকে তাদের জীবনের সবচেয়ে অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা হিসাবে বর্ণনা করে থাকে। ১৯৮৬ সালের গ্রীষ্মে সান ফ্রান্সিসকোতে বার্নিং ম্যান ফেস্টিভাল শুরু হয়েছিল। যখন এক শিল্পী ৯ ফুট লম্বা কাঠের স্থাপত্য আকার তৈরি করেছিলেন। যাকে পরবর্তিতে টেনে টেনে “বেকার” বিচে নিয়ে যান এবং আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়ে থাকে। এরপর থেকে এই কাঠের স্থাপত্যটি ৭৯ ফুট উচ্চতায় তৈরি করা হতে লাগলো। এবং সকলে মিলে এই কাঠের স্থাপত্যকে পোড়ানো শুরু করলেন। সময়ের সাথে এই উৎসবটি দেশ থেকে দেশান্তরে ছড়িয়ে পরে দ্রুত গতিতে এবং বিশ্বজুড়ে উদ্ভট সব উৎসব এর মধ্যে একটি হয়ে উঠে।
এই ছিল আজকের বিশ্বজুড়ে উদ্ভট সব উৎসব এর তালিকা। আপনি কোনটা শুনে অবাক হয়েছেন বেশি? জানিয়ে দিতে কমেন্ট করুন।