Reading Time: 4 minutes

অনেকেই আছেন নিজের বাড়ি বা অফিসের নির্মাণকাজটি নিজের তত্ত্বাবধানে করতে চান। কাঁচামাল আনা থেকে শুরু করে বাকি সকল গুরুত্বপূর্ণ কাজ নিজেরাই করেন।। আর এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করাটাও অস্বাভাবিক নয়। নিজের কষ্টে অর্জিত বাড়ি বা স্থাপনা এটি। নিজের তত্ত্বাবধানে পুরো নির্মাণ কাজটা করাও জরুরী। প্রথম ইটের গাঁথুনি থেকে শুরু করে রঙ করা সবকিছুতেই থাকা চাই নিজেদের সন্তুষ্টি। আর এই প্রক্রিয়াগুলো একে একে করতে গেলেই দেখা যায় ব্যস্ততায় বা সঠিক নির্দেশনা না জানার ফলে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ নষ্ট হতে দেখা যায়, এর মধ্যে নির্মাণ কাজে  ব্যবহৃত কাঁচামাল অন্যতম। নির্মাণকাজে ব্যবহৃত কাঁচামাল আসলে কোনগুলো? এটাও একটা প্রাথমিক প্রশ্ন আসতে পারে। তাহলে জেনে রাখা ভালো যে, সিমেন্ট, বালু, রড, ইট, পাথর, টাইলস, পাইপ ইত্যাদি সবকিছুই ভবন নির্মাণের কাঁচামাল। তাই এগুলো কীভাবে সংরক্ষণ করবেন সে সম্বন্ধে জানা অতিজরুরী। চলুন জানা যাক এক এক করে!

রড

রড
সঠিক উপায়ে সংরক্ষণ করাও অনেক জরুরী

একটি ইমারত শক্তিশালীভাবে দাড় করাতে রড আইরনের গুরুত্ব অপরিসীম। এই রড যেমন পরিমাণে বেশি ব্যবহৃত হয় তেমনি ক্রয় করতেও অধিক অর্থ ব্যয় হয়। একেকটি ইমারতে ব্যবহার হয় হাজার টনের মত রড। রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে এগুলোকে এখানে সেখানে ফেলে রাখাও হয়। যেহেতু একটা ইমারত করতে যথেষ্ট সময়ের প্রয়োজন হয় তাই অনেক সময় কাজ শুরু করার আগেই কাঁচামালগুলোকে নির্মাণ সাইটে এনে রাখা হয়। এত মূল্যবান এই সামগ্রীগুলো যেমন যাচাই বাছাই করে ক্রয় করা উচিত তেমনি ক্রয়ের পর সঠিক উপায়ে সংরক্ষণ করাও অনেক জরুরী। অনেকেই জানি না কীভাবে সংরক্ষণ করা যায়! এই কাঁচামালগুলো এমন ভাবে সংরক্ষণ করতে হবে যাতে জং, মরিচা বা কোন রকম ক্ষয়ক্ষতির মুখে যেন না পড়ে। অর্থাৎ, রডগুলো যেন বেঁকে না যায় সেইদিকেও খেয়াল রাখুন। বেশি বৃষ্টির পানি তে এগুলো না ভেজানোই শ্রেয়। পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখুন বা ছাউনি দেয়া আছে এমন জায়গায় এই রড আইরনগুলো গুছিয়ে রাখুন। সঠিক ভাবে গুছিয়ে না রাখলেও রডগুলো বেকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

সিমেন্ট

সিমেন্ট
সিমেন্ট রাখার জায়গাটি অবশ্যই ছাউনিযুক্ত হতে হবে

ইমারত তৈরির আর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে সিমেন্ট। নির্মাণ কাজ শুরু করার আগেই সাধারণত বিপুল সংখ্যায় মজুত করতে দেখা যায়। নির্মাণ সাইটের আশেপাশেই সিমেন্টগুলোকে রাখতে দেখা যায়। কিন্তু এইভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখলে সিমেন্ট নষ্ট হবার নিশ্চয়তা থাকে। তাই সিমেন্ট মজুদ করার আগে সিমেন্ট কোথায় রাখবেন সেই সম্বন্ধে আগে পদক্ষেপ নিতে হবে। সিমেন্ট এমন জায়গায় সংরক্ষণ করতে হবে যেখানে পানির কোন ছিটে ফোটাও থাকবে না। সিমেন্ট রাখার জায়গাটি অবশ্যই ছাউনিযুক্ত হতে হবে এবং শুকনা থাকবে। এবং এই জায়গার দরজা জানালা বন্ধ রাখতে হবে। শুধু তখন দরজা জানালা খোলা হবে যখন সিমেন্টের প্রয়োজন পড়বে। মেঝে থেকে কম করে হলেও ৭ থেকে ৮ ইঞ্চি উচ্চতায় কাঠের তক্তায় রাখা শ্রেয়। এবং চারপাশের দেয়াল থেকে সিমেন্টকে ১২ থেকে ১৩ ইঞ্চি দূরে সরিয়ে রাখতে হবে। এবং বর্ষাকালে খেয়াল করতে হবে কোনভাবেই যেন পানি না ঢুকে ঘরের ভেতর। এছাড়াও, বিভিন্ন রকম সিমেন্টকে আলাদা করে রাখতে হবে। যেমন প্লাস্টিক ব্যাগের সিমেন্ট, কাগজের ব্যাগের সিমেন্ট এই ধরণের সমস্ত সিমেন্ট আলাদা করে রাখাই ভালো।   

ইট 

দেয়াল
অনেক সময় দেখা যায় খোলা আকাশের নিচে রাখলেও ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে

ভবন নির্মাণের জন্য কাঁচামাল সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরী নাহলে গুনতে হবে বাড়তি অংকের টাকা। বেশীরভাগ সময়ে দেখা যায় ইটগুলোকে খোলা আকাশের নিচে রাখা হচ্ছে। বেশি সময় ধরে রাখলে যা হয় এতে করে ক্ষয় হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়াও দৈঘ্য হিসেবে একটার উপর একটা এমন করে মোট ১০ টির মত ইট রাখা যায় এবং প্রস্থে পাশাপাশি মোট ৪ টি লাইন করে ইট রাখা যায়। খোলা আকাশের নিচে রাখলেও পিলিথিন পেপার দিয়ে ঢেকে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। কিংবা মাটিতে গর্ত করে এরপর ইটগুলো সাজিয়ে গর্তের ভেতরে রাখতে হবে তারপর আবারও পলিথিন পেপার দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় খোলা আকাশের নিচে রাখলে যেমন ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে তেমনি, চুরি হয়ে যাওয়ারও ভয় থাকে। সকল ধরণের ইটকে আলাদা করে গুছিয়ে রাখা উচিত। এবং ইট আনা নেওয়া বা নামানো কিংবা উঠানো সকল কাজই অতি যত্নের সাথে করা উচিত।  

ইট ও পাথরের চূর্ণ (খোয়া)

খোয়া
কখনো শ্রমিকের হাতে আবার কখনো মেশিনে ভাঙা হয়ে থাকে এই খোয়া

একেক জায়গায় একেক নামে পরিচিত হলেও আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ইট ও পাথরের এই টুকরাগুলোকে খোয়া বলা হয়। ইমারত তৈরির কাজে এই খোয়ার ব্যবহার অনেক। এবং ইট ও পাথর এর টুকরা দিয়েই এই খোয়া তৈরি করা হয়ে থাকে। কখনো শ্রমিকের হাতে আবার কখনো মেশিনে ভাঙা হয়ে থাকে এই খোয়া। খোয়া সংরক্ষনের ক্ষেত্রেও একই পদক্ষেপ, খোলা আকাশের নিচে রাখলে অবশ্যই ঢেকে রাখতে হবে, নয়তো ভারী বৃষ্টি বাদলের সময় ক্ষয় হওয়ার যেমন ভয় থাকে তেমন সম্ভাবনা থাকে পানির স্রোতে ভেসে যাওয়ার। তাই পলিথিন দিয়ে ভালো ভাবে মুড়িয়ে বা ঢেকে রাখতে হবে। এছাড়াও যেহেতু ছোট ছোট টুকরা করা হয় সেক্ষেত্রে মাটিতে ছড়িয়ে না রেখে পলিথিনের বস্তায় ভরে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। ইট বা পাথরকে ভেঙেই এই খোয়া তৈরি করতে হয় তাই ভাঙার সময় অবশ্যই খেয়াল করতে হবে যেন কোন খোয়ার অংশ যেন এদিক সেদিক পড়ে না থাকে। এটাতেও ক্ষতির পরিমাণ অনেক।

টাইলস

টাইলস
পলিথিন পেপার দিয়ে ভালো করে মুড়িয়ে রাখতে হবে

টাইলস যেমন দেখতে সুন্দর তেমনি খুব সাবধানে ব্যবহার করতে হয়। ভবন নির্মাণের জন্য কাঁচামাল সংরক্ষণ করার জন্য টাইলসের ক্ষেত্রে হতে হবে একটু বেশিই সাবধান। টাইলসের গায়ে দাগ যেমন সহজে লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে তেমনি ভেঙে যাওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। নির্মাণ কাজের সময় কতরকম জিনিস থাকে সেগুলো টাইলসের গায়ে লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সিমেন্টই হোক বা চুন যেকোন কিছুকে টাইলস থেকে দূরে রাখাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। কাঠের তক্তার উপর মেঝে থেকে একটু উপরে টাইলসগুলো রাখতে হবে। এবং পলিথিন পেপার দিয়ে ভালো করে মুড়িয়ে রাখতে হবে। নির্মাণ কাজের সময় অনেক সময় ভারী জিনিসপত্র ব্যবহার করে কাজ করতে হয় এক্ষেত্রে এই সমস্ত ভারী বস্তু থেকে টাইলসকে নিরাপদ রাখতে ফোম দিয়ে টাইলগুলোকে মুড়িয়ে রাখতে পারেন। এতে করে ভারী কিছু টাইলসের উপর পরলেও তাতে তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি হবে না। 

ভবন নির্মাণের জন্য কাঁচামাল সংরক্ষণ করতে এই সব পদক্ষেপ গ্রহণ করলেই লক্ষ্য করতে পারবেন কাঁচামাল আগের থেকে বেশ ভালো ভাবে সংরক্ষণ হচ্ছে। এতে করে আপনার বাড়তি ব্যয় যেমন কমে আসবে তেমনি ক্রয়কৃত কাঁচামালও বেশ নিরাপদে থাকবে।

Write A Comment