আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। এই নগরীতে বাড়ির মালিকদের প্রতি ভাড়াটিয়াদের যতই অভিযোগ থাকুক না কেন, দিন শেষে অধিকাংশ ভাড়াটিয়া এবং বাড়িওয়ালার সাথেই কিন্তু বজায় থাকে একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক। এর মূল কারণ খুব সম্ভবত দুপক্ষই তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে থাকেন সচেতন। একজন বাড়িওয়ালার তার বাড়ির প্রতি ভাড়া দেবার পরও যেমন দায়বদ্ধতা থাকে ঠিক তেমনি একজন ভাড়াটিয়ারও উচিত ভাড়া বাসা রক্ষণাবেক্ষণ করার দায়িত্ব সম্পর্কে সম্মক ধারণা রাখা। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে বাড়ির ওভারঅল যত্ন নিতে হয় ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে। বর্ষাকালে সঠিক যত্ন নিতে হলে পরিপূর্ণ যত্ন নিতে হবে কাঠের সব দ্রব্যাদির। শীতকালের জিনিসপত্রের যত্ন নেবার কৌশল অবশ্য আলাদা। আপনি চাইলে তাই ভাড়া বাসা সাজানোর বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন আগ্রহ সহকারে। একজন ভাড়াটিয়া হিসেবে ভাড়া বাসা রক্ষণাবেক্ষণ করার কী কী দায়িত্ব রয়েছে তা দেখে নিন নিচে।
সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (ওয়েস্ট ডিজপোজাল)
বাসাবাড়ির ময়লা সঠিকভাবে এবং সঠিক স্থানে ফেলা একজন ভাড়াটিয়ার অন্যতম প্রধান দায়িত্বের একটি। এ কাজটি ঠিকভাবে না করা হলে বাজে দুর্গন্ধ ছড়ানোর পাশাপাশি পরিবেশের যেমন ক্ষতি হয় তেমনি ছড়াতে পারে নানা রোগবালাই। প্রত্যেক ভাড়াটিয়া যদি সঠিকভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না করেন তাহলে শুধু এক দুজন করে কোন লাভ নেই, বরং তা সমগ্র ব্যবস্থাপনাকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দিবে। এজন্যই এলাকার ময়লা পরিষ্কারের কাজে নিযুক্ত লোকেদের সাথে সঠিকভাবে কাজ করা এবং সঠিক সময়ে তাদের বিল পরিশোধ করতে হবে। যেসব জায়গায় এমন মিউনিসিপালিটি সার্ভিস নেই, সেক্ষেত্রে নিজেদেরকেই উদ্যোগী হয়ে সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।
ছাদ এবং দেয়ালের যত্ন
বিভিন্ন বাসার দেয়াল বা ছাদের রঙ এবং নির্মাণ সামগ্রী ভিন্ন ভিন্ন রকমের। আর এসব জায়গা রঙ করা, যাকে বলে ডিস্টেম্পারিং, বেশ খরুচে একটি বিষয়। তাই এর দীর্ঘস্থায়ীত্ব নিশ্চিত করা ভাড়া বাসা রক্ষণাবেক্ষণ এর একটি অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। বাসায় আপনার থাকাকালীন সময়ে যদি দেয়ালে কোন ওয়ালপেপার বা পোস্টার লাগিয়ে থাকেন, বাসা ছাড়ার আগে আপনার দায়িত্ব একে অবশ্যই খুব সাবধানে খুলে ফেলা দেয়ালের কোন ক্ষতি না করে। দেয়ালের বিভিন্ন ফাঙ্গাস বা মোল্ড যেন দেয়ালের ক্ষতি না করতে পারে তাই সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা নিন সময়মত। আপনি যদি ছাদের একদম নিচের তলাতেই থাকেন তাহলে বিভিন্ন কারণে ছাদে লিকেজ দেখা দিতে পারে। আর ছাদে লিকেজ ঠেকানোও ভাড়া বাসা রক্ষণাবেক্ষণ করার একটি অংশ। আর ছাদে লিকেজ ঠেকানোর আছে বেশ কিছু উপায়। দেয়াল বা ছাদের যত্ন যে শুধু এসব দিক থেকে নিতে হবে তাই নয়, আপনি দেয়ালকে রক্ষা করতে পারেন বিকল্প উপায়েও। ধরুন কোন কিছু দেয়ালে ঝুলাতে হবে, সেক্ষেত্রে ভাবতে হবে ড্রিলিং এর বিকল্প উপায় কী আছে। এভাবে দেয়ালের রঙ যেমন রক্ষা পাবে, বাড়বে এর স্থায়ীত্বও। অনেকেই ছাদবাগান করতে ভালোবাসেন। তবে ঠিকঠাকমত যত্ন না নিয়ে করলে ছাদবাগান আবার ছাদের ক্ষতিও করতে পারে, বিশেষ করে পানি জমে থাকলে। তাই ছাদবাগান করলে ফলো করুন এই স্টেপগুলো।
দরজা এবং জানালা রক্ষণাবেক্ষণ
ভাড়া বাসা রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে কথা বলতে গেলে অবশ্য অবশ্যই কথা আসবে দরজা জানালার যত্ন নিয়ে। কেননা এগুলো একটি বাসার অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাসার জানালা পরিষ্কার করার আলাদা কিছু টেকনিক আছে যা ফলো করলে আপনি সঠিকভাবে জানালার যত্ন নিতে পারবেন। আবার দরজার ঠিকঠাক যত্ন না নিলে এর হাতল, নব আলগা হয়ে যেতে পারে এবং জয়েন্ট থেকে বিরক্তিকর ক্যাঁচক্যাঁচ আওয়াজ আসতে পারে। এজন্য সবসময় একে পরিষ্কার রাখা দরকার এবং নির্দিষ্ট সময় পরপর দেয়া উচিত তেল। দরজা জানালা কাঠের হলে তাতে ঘুনপোকার বা ফাঙ্গাসের আক্রমণ হতে পারে, করে ফেলে দিতে পারে এগুলোকে অকেজো। দরজা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে এই লেখাটি পড়ে ফেলতে পারেন। কারণ ভাড়া বাসার রক্ষণাবেক্ষণ করার একটি অত্যন্ত জরুরী বিষয় দরজা জানালার যত্ন নেয়া।
সঠিক সময়ে বিভিন্ন ইউটিলিটি বিল পরিশোধ
ভাড়াটিয়া হিসেবে আপনি একটি বাড়িতে হয়ত যুগের পর যুগ থাকবেন না, তবে এই বাড়ির বিভিন্ন ইউটিলিটি কানেকশন যেমন পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, এগুলো কিন্তু সব সময়ই লাগবে। তাই আপনি যতটুকু সময় থাকেন, আপনার দায়িত্ব এর যাবতীয় বিষয়াদি সম্পর্কে অবগত থাকা এবং সঠিক সময়ে এর বিল পরিশোধ করা। বাসা ছাড়ার আগে আপনার দায়িত্ব যাবতীয় বকেয়া বিল পরিশোধ করা। সময়মত এসব বিল পরিশোধ করা যে কত বড় দায়িত্ব সে সম্পর্কে বলা যায়, সাম্প্রতিক করোনা দুর্যোগে অনেক বিবেচক বাড়ির মালিকই ভাড়াটিয়াদের ভাড়া আংশিক বা সম্পূর্ণ মউকুফ করেছেন। তবে তাদের কেউই কিন্তু ইউটিলিটি বিল অপরিশোধিত রাখেননি! তাই কোন ভাড়াটিয়ার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব কিছু থাকলে তা হল সঠিক সময়ে বিভিন্ন ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করা।
ছোটখাট মেরামত ও ইন্সটলেশনের কাজ
বাসার কিছু জিনিস ব্যবহারকালীন সময়ে নষ্ট হয়ে গেলে তা প্রতিস্থাপন করার দায়িত্ব ভাড়াটিয়ার। যেমন কোন লাইট হোল্ডার, পানির ট্যাপ ইত্যাদি ব্যবহার করতে করতে নষ্ট হতে পারে এবং তা বদলানোর প্রয়োজন পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে নিশ্চিত করতে হবে যে নতুন ইন্সটল করা জিনিসটি যেন আগেরটির মত সেম মডেল অথবা একই কোয়ালিটির হয়। এমন কিছু করার সময় বাড়ির মালিকের অনুমতি নিয়ে নেয়া ভালো। একই কথা খাটে এসি ইন্সটলেশনের সময়। যতটা সম্ভব কম ক্ষতি করে ও ছিদ্র করে এসি ইন্সটল করতে হবে। এসি এমন জায়গায় লাগাতে হবে যেন পরবর্তীতে তা চেঞ্জ করার দরকার না পড়ে, তাহলে ডাবল ক্ষতি। তবে দরজার হাতল, সুইচ বোর্ড বা অন্যান্য ইলেক্ট্রিকাল অ্যাপ্লায়েন্স যেমন মিটার, পাওয়ারবোর্ড, মেইন সুইচ, ইত্যাদি স্বাভাবিকভাবে নষ্ট হলে বা প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন পড়লে তা করার দায়িত্ব ভাড়াটিয়ার নয়। এছাড়া বাসার সবচেয়ে ব্যবহৃত স্থান হচ্ছে এর ফ্লোর বা মেঝে, এই মেঝে ঠিকঠাক রাখার দায়িত্ব কিন্তু ভাড়াটিয়াকেই নিতে হয়। মেঝে বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে এবং একে পরিষ্কার রাখার উপায়ও আলাদা। দেখে নিতে পারেন বিভিন্ন ধরণের মেঝে পরিষ্কার রাখার কার্যকরী কিছু টিপস।
ভাড়া বাসা রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে এই ছিল আমাদের কয়েকটি টিপস। কোন বাড়ির মালিক সেই বাড়ির স্ট্রাকচারাল কোন সমস্যা হলে তা সমাধান করে দেবেন। কিন্তু নিয়মিত বাড়ির সব কিছু মেইন্টেনেন্স করার দায়িত্ব কিন্তু ভাড়াটিয়ার। এবং তা করতে ব্যর্থ হলে উদ্ভব হতে পারে নানা সমস্যার। তাই নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকুন এবং ভাড়া বাসাকে রাখুন ঠিকঠাক। কোন বাসা ভাড়া নেবার আগেই সরকার হলে সব কিছু বিস্তারিত জেনে নিন। বাসা ভাড়া নেয়ার আগে কোন কোন দিকে লক্ষ্য রাখা উচিত সে সম্পর্কে জানতে পড়ে ফেলতে পারেন এই লেখাটি।