Reading Time: 3 minutes

মোগল আমলের স্থাপনাগুলোর মধ্যে অপূর্ব এই নিদর্শন যার নাম হাজীগঞ্জ দুর্গ। যেটি কিনা খিজিরপুর দুর্গ নামেও পরিচিত। লোকমুখে শোনা যায় আনুমানিক ১৬৫০ সালে বাংলার সুবাদার মীর জুমলার শাসনমলে এই দুর্গ বা কেল্লা তৈরি করা হয়। এই দুর্গটির অবস্থান হাজীগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম তীর ঘেঁষে। 

ঢাকায় মোগল রাজধানী গড়ে তোলার পর নদীপথে মগ ও পর্তুগীজ জলদস্যুদের হাত থেকে সংরক্ষণ করতে এই দুর্গটি নির্মাণ করা হয়। নদীপথে যাতায়াত করা শত্রুর ওপর নজর রাখতে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নদীর কোল ঘেঁষে নির্মাণ করা হয় বলে এগুলোকে জলদুর্গ বলে।  সুবাদাররা নাকি শুরু থেকেই বেশ চিন্তায় ছিলেন কিভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়। নানারকম প্রকৌশলীদের নিয়ে বসে চালানো হয়েছে নানান অভিযান। এরপর পাওয়া গেছে এই বুদ্ধি। এভাবেই তিনটি জলদুর্গ তৈরির পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করেন সুবাদার মীর জুমলা।  ইট-সুরকির তৈরি চতুর্ভুজাকৃতির এই দুর্গটি বেশ চওড়া প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। দুর্গে ঢুকলেই দুর্গের ভেতর বসানো রয়েছে বন্দুক বসিয়ে গুলি চালানোর ফোকর। দুর্গে কামান বসিয়ে গোলা নিক্ষেপ করার জন্য রয়েছে নানান ব্যবস্থা।

হাজীগঞ্জ দুর্গ
হাজীগঞ্জ দুর্গ

প্রবেশ পথের দুই পাশে আছে খোদাই করা খিলান, যার ওপরের অংশটি পদ্মফুলের মত অলংকৃত করা। এই উঁচু দুর্গে ঢুকতে আপনাকে প্রবেশ করতে হবে তোড়ন হয়ে আর ডিঙাতে হবে প্রায় ২০ টি সিঁড়ি। প্রায় দুই কিলোমিটার জায়গা নিয়ে এই দুর্গটি বিস্তৃত। দুর্গের মাঝে পুরোটাই ফাঁকা মাঠ। ধারণা করা হয়, এখানে অবস্থান নেয়া সৈন্যরা এ মাঠে নাকি তাবু খাঁটিয়ে থাকতেন আর দিনের পর দিন যুদ্ধ করে যেতেন। সেই সময়কার রক্ত হিম করা নাম হাজীগঞ্জ দুর্গ, এখন এক নীরব নিস্তব্ধ পুরাকীর্তি। সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধ্বংস হতে যাচ্ছে এই দুর্গটি।

বিবি মরিয়মের সমাধি সৌধ

এই হাজীগঞ্জেরই কিল্লারপুরে অবস্থিত দেশের অন্যতম আরেকটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বিবি মরিয়মের সমাধি সৌধ ধারণা করা যায়, ১৬৬৪ থেকে ১৬৮৮  খ্রিষ্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে সুবেদার শায়েস্তা খাঁ- বিবি মারিয়মের এই সমাধি স্থাপন করেন। সমাধিতে শায়িত বিবি মরিয়ম যিনি শায়েস্তা খাঁর কন্যা। 

সুউচ্চ প্রাচীর দিয়ে ঘেরা, একটি আয়তাকার প্রাঙ্গনের মাঝখানে, এ সমাধি সৌধটি নির্মিত। লতা পাতার নকশা অঙ্কিত সমাধিটি, শ্বেত পাথরে তৈরি। এছাড়াও কবর ফলক ও সমাধি লাগোয়া বারান্দায় রয়েছে বেশ কয়েকটি সাধারণ কবরও। সমাধি সৌধটির পশ্চিম পাশে দেখা যাবে, শায়েস্তা খাঁ নির্মিত তিন গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদটি, যার নাম বিবি মরিয়মের মসজিদ। এছাড়াও এ অঞ্চলে নারী শিক্ষার উন্নয়নের জন্য, বিবি মরিয়মের সমাধির পাশেই একটি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় নির্মাণ করা হয়েছে। যার নামকরণ করা হয়, বিবি মরিয়মের নামেই। 

পশ্চিম দিকে আছে একটি সুরঙ্গ পথ। সুরঙ্গ পথ ধরে কোন একসময়, শীতলক্ষ্যা নদী পর্যন্ত যাওয়া যেত বলেও, ধারণা করা যায়। সংস্কারের অভাবে, বহু প্রাচীন এই প্রাচীরের পুরানো ইটগুলি ধ্বসে পড়ছে, সেই সাথে সমাধিসৌধটিও। ঠিক এভাবে চলতে থাকলে কালের বিবর্তনে, মোগল যুগের এসব স্মৃতিসৌধগুলি একদিন বিলীন হয়ে যাবে।

যেভাবে যাওয়া যায়

হাজীগঞ্জ
চমৎকার দর্শনীয় স্থান এটি

ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জগামী যে কোন ট্রেন বা বাসে নারায়ণগঞ্জ যাবেন,সেখানে মেট্রো হলের পাশে বাসস্ট্যান্ড থেকে গুদারাঘাট গামী অটো রিকশায় ভাড়া জন প্রতি ১০ টাকায় যাওয়া যায় বা রিকশায় ১৫ টাকা। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ রেল ষ্টেশন বা বন্দর থেকে অটো বা রিকশায় যাওয়া যাবে। অথবা গুলিস্থান থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ বাসে চড়ে চাষাঢ়া গোল চত্বরে নামবেন। সেখান থেকে রিকশায় চড়ে কিল্লারপুল নামবেন। সেখানেই কেল্লাটি অবস্থিত।  

এখানে আশেপাশে আছে, আরও চমৎকার দর্শনীয় স্থান। হাতে সময় নিয়ে আসলে ঘুরে যেতে পারেন চৌরঙ্গী ফ্যান্টাসি পার্ক, সোনাকান্দা দুর্গ ছাড়াও সালতানাতের সাক্ষী হয়ে থাকা এই সাম্রাজ্য থেকে।   

Write A Comment