Reading Time: 4 minutes

ক্রমসম্প্রসারমান রাজধানীর কথা মাথায় রেখে সরকার অনেক আগেই ঢাকা শহর বর্ধিত করার উদ্যোগ নেয়। তখন থেকেই রাজউক পূর্বাচল প্রকল্পে জমি হয়ে উঠে আকাঙ্ক্ষিত। কারণ এই সম্পূর্ণ শহরটিই নির্মাণ করা হচ্ছে  ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ এবং ভবিষ্যতের কথা মাথা রেখে। সরকারের পরিকল্পনা, পূর্বাচলকে সম্পূর্ণ দুষণমুক্ত, আধুনিক, মডেল এলাকা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা যেখানে নগর জীবনের সকল সুবিধা থাকবে একদম হাতের নাগালেই।  

বর্ধিত রাজধানী

সবুজ ঘাস
এই সবুজে ছাওয়া এলাকাই কদিন পর হতে যাচ্ছে বর্ধিত ঢাকা

বাংলাদেশের মোটামুটি সবকিছুই ঢাকাকেন্দ্রিক। তাই রাজউক পূর্বাচল নিয়ে পরিকল্পনা করার সময়ই পরিকল্পনাবিদরা একে বর্ধিত রাজধানী হিসেবেই নকশা করেছিলেন। সরকারী বিভিন্ন দপ্তর, বাণিজ্যিক এলাকা, কূটনৈতিক এলাকা, কী নেই পরিকল্পনাতে! নিশ্চিতভাবেই বলা যায় এই ৬০০০ একরের এলাকাই হতে যাচ্ছে বর্ধিত রাজধানী।

অবস্থান

রাজউক পূর্বাচল ৩০০ ফুট হাইওয়ে
রাজউক পূর্বাচল প্রকল্পের ৩০০ ফুট হাইওয়ে

ঢাকার উত্তরে টংগী, গাজীপুর বা আশুলিয়া, দক্ষিণে নারায়ণগঞ্জ সংলগ্ন এলাকা বা পশ্চিমের এলাকা, কোনদিকেই আসলে পরিকল্পিত সম্প্রসারণের তেমন সুযোগ ছিল না। তাই পূর্বে সম্প্রসারিত হয় রাজউক পূর্বাচল প্রকল্প। এই বিশাল প্রকল্পটি শীতলক্ষ্যা এবং বালু নদী ঘেরা অঞ্চলে অবস্থিত। এর বড় একটি অংশ পড়েছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে এবং বাকি অংশ গাজীপুরের কালিগঞ্জে। ৩০টি আলাদা সেক্টরে বিভক্ত এই প্রকল্পের শতকরা ২০ভাগেরও বেশি অংশ বরাদ্দ বাণিজ্যিক, শিক্ষা এবং ক্রীড়া প্রতিষ্ঠানের জন্যে। প্রায় ২৬ শতাংশ আছে রাস্তাঘাট, ফুটপাথ এবং আনুসাংগিক অবকাঠামো আর ১৩শতাংশের বেশি জায়গা ব্যবহৃত হবে লেক, পার্ক এবং সৌন্দর্য্যবর্ধক বনায়নের কাজে।  

বর্তমান অবস্থা

সবজির মাঁচা
অনেকেই পূর্বাচলে নিজস্ব জমিতে করছেন সবজি চাষ

পূর্বাচলে বর্তমানে উন্নয়নকাজ চলছে পুরোদমে। ভূমি উন্নয়নের প্রায় ৮০ভাগ কাজ শেষের পথে। বরাদ্দকৃত ২৫০১৬টি প্লটের মধ্যে ১৩ হাজারেরও বেশি প্লট ইতোমধ্যেই মালিকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। রাস্তাঘাট এবং ব্রিজ নির্মাণের প্রায় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে ইতোমধ্যেই। পরবর্তী পরিকল্পনায় আছে ৩০টি সেক্টরেই পর্যাপ্ত এল পি গ্যাসের মজুদ করা যেন প্রতিটি সেক্টরেই এল পি গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়। 

বাংলাদেশ নৌবাহিনী দায়িত্ব পেয়েছে রাজউক পূর্বাচল প্রকল্পের ৬২টি ব্রিজ নির্মাণের যার মাঝে ইতোমধ্যেই ৩০টিরও বেশি নির্মিত হয়েছে। বাকি গুলোর কাজও চলছে দ্রুতগতিতে। প্রগতি সরণি এবং এয়ারপোর্ট রোডের মধ্যে সংযোগকারী বিখ্যাত ৩০০ফিট এক্সপ্রেসওয়ের কাজ তো শেষ হয়েই গিয়েছে।  

এতো গেল বৃহৎ স্কেলে উন্নয়নের কথা, ব্যক্তিগত পর্যায়ে, যারা প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন তাদের অনেকেই নিজস্ব জমির দখল নিতে শুরু করেছেন। নিজের প্লটে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের সাথে সাথে অনেকেই এখানে শুরু করেছেন বিভিন্ন গাছ লাগানো এবং ছোট স্কেলে বিভিন্ন শাঁক সবজির চাষাবাসের কাজ।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

পূর্বাচল
পূর্বাচলে ধীরে ধীরে লোকালয় গড়ে উঠতে শুরু করেছে

ফায়ার সার্ভিসের হেড কোয়ার্টারসহ অনেক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, অফিস এবং সরকারী অফিস পূর্বাচলে স্থানান্তরিত হবে। দুটি পুলিশ লাইন এবং চারটিও পুলিশ স্টেশন (থানা) স্থাপন করা হবে এলাকার সার্বিক নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে।   

এছাড়াও, পূর্বাচলের ৭৫ একর জমিতে ১৪২ তলা উঁচু একটি ভবন নির্মাণের পরিকল্পনাও আছে। এটি হবে অনেক উঁচু একটি স্থাপনা এবং এতে অন্যান্য অনেক সুযোগসুবিধার সাথে থাকবে আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র এবং ক্রীড়া কমপ্লেক্স। যুক্তরাষ্ট্রের কালী প্রদীপ চৌধুরী গ্রুপের সাথে এ বিষয়ে চুক্তি নিয়ে কথাবার্তা এগিয়েছে অনেকদূর।

এর বাইরেও, যে চিন্তা মাথায় নিয়ে মূলত এই মহাপরিকল্পনা, সেই আবাসন প্রকল্পও আছে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাতে। সম্পূর্ণ প্রকল্পের প্রায় ৩৮% এলাকা ব্যবহার করা হবে আবাসন প্রকল্পে। স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য ৯০ একর জমিতে নির্মাণ করা হবে ৬২হাজার ফ্ল্যাট। এজন্যই রাজউক পূর্বাচল হতে যাচ্ছে সাধারণ মানুষ এবং আবাসন শিল্পের সাথে জড়িত সবার জন্য এক পরম আরাধ্য এলাকা।  

কেন রাজউক পূর্বাচল প্রকল্প দেশের আবাসন খাত সংশ্লিষ্ট সবার জন্য আকর্ষণীয় 

রাস্তা
নানা কারণে রিয়েল এস্টেট নিয়ে কাজ করা সবার কাছেই পূর্বাচল আকর্ষণীয়

৩০০ ফুট পূর্বাচল হাইওয়ে, ১৮০ ফুট ঢাকা সিটি বাইপাস রোড, ১৫০ ফুট ঢাকা সিলেট মহাসড়ক এবং পূর্বাচল কাঞ্চন ব্রিজ হতে ঢাকা-সিলেট হাইওয়ে পর্যন্ত প্রস্তাবিত ৩০০ ফুট হাইওয়ে থাকার কারণে নিশ্চিতভাবেই ঢাকা শহর থেকে এ অঞ্চলে যাতায়াত হবে অনেক সহজ। সময়ও বাচবে অনেক। উত্তরা বা বিমানবন্দর, কুড়িল ফ্লাইওভার, যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার, চিটাগাং রোড (কাচপুর ব্রিজ), পাঁচদোনা, নরসিংদি বা ভুলতা-গাউছিয়া, যে কোন দিক থেকে প্রবেশ করা যাবে পূর্বাচলে। তাই, আবাসন খাত সংশ্লিষ্ট যে কারও জন্য রাজউক পূর্বাচল প্রকল্প চরম আকর্ষণীয়।

অভিজ্ঞ ও খ্যাতিসম্পন্ন স্থপতি, প্রকৌশলী, নগর পরিকল্পনাবিদ এবং পরিবেশবিদদের সমন্বয়ে নকশা ও পরিকল্পনা করা এই অত্যাধুনিক প্রকল্পে থাকবে আধুনিক জীবনযাপনের সকল উপাদান। ঢাকা শহরের সবচেয়ে বড় যে সমস্যা, অকল্পনীয় যানজট, সেই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এই প্রকল্পে থাকছে ৩০, ৪০, ৬০ এমনকি ৮০ ফুট প্রশস্ত অভ্যন্তরীন রাস্তা। এছাড়াও, বাড়ি বা স্থাপনা নির্মাণ করতে খরচ হবে খুবই কম কারণ উঁচু এবং বন্যামুক্ত এলাকায় হওয়ায় পাইলিং খরচ কমে যাবে। আর মানুষ থাকতে শুরু করলে এই এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থাও হবে যে কোন এলাকা থেকে সেরা!

এমন একটি এলাকার দিকে সকল রিয়েল এস্টেট কোম্পানীরই বিপুল আগ্রহ থাকবে তা স্বাভাবিক। আশেপাশে এজন্য অনেক প্রকল্প গড়েও উঠছে। এবং নিজস্ব ওয়েবসাইটে বিপ্রপার্টি ডট কম এমন বেশ কিছু প্রকল্পের খোঁজও দিচ্ছে।

রাজউক পূর্বাচল প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে ঢাকার অন্য যে কোন এলাকার চেয়ে দ্রুত গতিতে। বলাই বাহুল্য যে ঢাকা শহর আগামী ১০ বছরে বদলে যাবে অনেকটাই। আর পূর্বাচল হবে সেই বদলের কেন্দ্র।

2 Comments

  1. Hi
    Do you have any project at there?

    Regards
    Moztaba

Write A Comment