Reading Time: 4 minutes

ঘর পরিষ্কারের জাদুকরী কয়েকটি উপায় আমরা ইতিমধ্যেই জেনে গেছি। খাবার আমাদের সবার কাছে বেশ প্রিয়! শুধু বেঁচে থাকার জন্য আমরা সবাই খাই না, কেউ কেউ আছি যারা খাওয়ার জন্য বাঁচি! কিন্তু, এই মজাদার খাবার যেখানে তৈরি হয় সেটারও কিন্তু আপনার ভালোবাসা আর মনোযোগের প্রয়োজন, তাই নয় কি! যেহেতু দিনের বেশিরভাগ সময় আপনি সেখানে কাটান কেননা আমরা রান্নঘরের একটু যত্ন করি! কিভাবে ভাবছেন? পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রেখে। এখন হয়তো আবার ভাবছেন রোজই তো পরিষ্কার করি আর কিভাবে করবো? তাহলে বলব, রান্নাঘরের খুঁটিনাটি পরিষ্কার করা। কোন ময়লা, দাগ ও দুর্গন্ধ না হয়। কিংবা রান্নাঘরের পুরনো দাগ কিভাবে দূর করবেন সে সম্বন্ধেও জানতে পারবেন। রান্নাঘর পরিষ্কার রাখার কয়েকটি জাদুকরী টিপস আছে, যেগুলো ব্যবহার করে আপনার রান্নাঘর হয়ে উঠবে ঝকঝকে তকতকে। সেগুলো জানতে পড়তে থাকুন এই লেখাটি।  

সিঙ্ক ও থালাবাসন পরিষ্কার করতে

সিঙ্ক
থালাবাসন পরিষ্কার করার পর সিঙ্ক নিয়মিত ধুয়ে ফেলুন

রান্নাঘরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হচ্ছে সিঙ্ক। সিঙ্ক থাকলে থালাবাসন খুব সহজেই পরিষ্কার করা যায়। সিঙ্কের পাশে থালাবাসন ধোয়ার জন্য সাবান কিংবা ভিম লিকুইড রাখুন। থালাবাসনে চর্বি জমে থাকলে কিছুক্ষণ গরম পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখুন তারপর ধুয়ে ফেলুন, দেখবেন থালাবাসনের সব ময়লা নিমিষেই দূর হয়ে গেছে। 

সিঙ্ক বা বেসিন পরিষ্কার রাখা খুবই প্রয়োজনীয় একটি কাজ। এক সপ্তাহ পর পর সিঙ্ক পরিষ্কার করা উচিত। নয়তবা অনেক দাগ জমে যাবে। সিঙ্কের দাগ দূর করতে লেবুর রসের সাথে বেকিং সোডা মিশিয়ে ভালো করে ঘষুন। এবার ভিনেগার ছিটিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। দেখবেন, সিঙ্ক ঝকঝকে পরিষ্কার।  

সিঙ্কে কাজ করতে গেলে অনেক সময় পানি আটকে যায়। অনেক চেষ্টা করেও পানি সরাতে পারছেন না? রয়েছে সহজ উপায়। একটা পাত্রে গরম পানি নিন সিঙ্কের মুখে ঢেলে দিন। ব্যস, কিছুক্ষনের মধ্যেই সিঙ্ক পরিষ্কার এবং পানি নেমেও যাবে। 

রান্নাঘর সবচেয়ে বেশি নোংরা হয় এঁটো থালাবাসনের কারণে। নিয়মিত থালাবাসুন ধুয়ে ফেলুন অহেতুক জমিয়ে রাখবেন না। এতে করে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হতে পারে, তাই খাবার খাওয়ার পর সাথে সাথে ধুয়ে ফেলুন। একই সাথে সিঙ্কটাও ধুয়ে ফেলুন।

রোজ আধা ঘন্টা সময় রাখুন সিঙ্ক ধোবার জন্য, এতে করে আপনার ওপর বেশি চাপ পড়বে না।

চুলার দাগ ঘষে তুলতে

ফ্রাইপ্যান ও চুলা
রান্না শেষে চুলার আশপাশ পরিষ্কার করে রাখুন

রান্নাঘরের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে চুলার আশেপাশে তেলের দাগ ও তেল চিটচিটে ভাব। রান্না করার সময় তরকারির ঝোল পরা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার তারপর তা শুকিয়ে শক্ত হয়ে যায়। দুধ গরম করতে গেলেও পড়তে হয় একই সমস্যায়। দুধ উপচে চুলার উপরে প্রায় সবসময়ই পড়ে। এছাড়া চা, ভাতের মার সবকিছুই চুলার ওপরে পড়লে একই সমস্যার সৃষ্টি করে। এক্ষেত্রে এক চামচ লবন আর গরম পানি দিয়ে ভালো করে ঘষে নিলেই সব দাগ উঠে যাবে। এছাড়া, ক্লিনার কাপড় বা টিস্যুতে লাগিয়ে দাগে্র ওপর ঘষলেই সব দাগ উঠে যাবে।

দুর্গন্ধ দূর করতে

খাবার
রান্নাঘর নিয়মিত পরিষ্কার করলে দুর্গন্ধ কম হবে

রান্নাঘর এমন একটি জায়গা, যেখানে কাঁচা সবজি থেকে শুরু করে মাছ মাংস সবকিছুই রান্নার জন্য প্রস্তুত করা হয়। তাই রান্নাঘরে নোংরা ও দুর্গন্ধ ছড়াবার সম্ভাবনাও থাকে বেশি। এক্ষেত্রে কিছু বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করলেই রান্নাঘরের দুর্গন্ধ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। রান্নাঘরের ময়লার ঝুড়িটা অবশ্যই ঢাকনাযুক্ত হতে হবে। এটি একটা অন্যতম প্রধান কারণ রান্নাঘরে দুর্গন্ধ হওয়ার। খুব সাবধান থাকতে হবে, মাছ মাংস কিংবা দুর্গন্ধ হতে পারে এমন কিছু রান্নাঘরে বেশি সময় ধরে যেন না রাখা হয়। অতিদ্রুত সেই ময়লাগুলো রান্নাঘরের বাইরে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে। তবে কিছু দুর্গন্ধ আমরা কখনই এড়াতে পারব না, যতই সাবধানতা অবলম্বন করি না কেন। সেক্ষেত্রে, দুর্গন্ধ ও পোকামাকড়ের উপদ্রব কমাতে রান্নাঘরের বিভিন্ন কোণায় লেবুর টুকরো ছড়িয়ে রাখতে পারেন। এতে করে দুর্গন্ধ ও পোকামাকড় দুই ই কমবে। অনেক সময় ময়লা ফেললেই তা ঝুড়িতে আটকে যায়। এই সমস্যা সমাধানে ব্যবহার করুন বেকিং সোডা। ময়লার ঝুড়ির তলায় কেমনভাবে যেন আটকে যায়। এমন অবস্থায় বেকিং সোডা ব্যবহার করুন। ময়লার ঝুড়ি ভালোমত ধুয়ে রোদে শুকিয়ে নিয়ে এরপর বেকিং সোডা মাখিয়ে রাখুন। দেখবেন আর ময়লা আটকে থাকবে না এবং সেই সাথে দুর্গন্ধও অনেক কম হবে।

ব্লেন্ডার ও মাইক্রোওয়েভ ওভেন পরিষ্কার করতে

মাইক্রোওয়েভ
সপ্তাহখানেক পর পর নিয়মিতভাবে পরিষ্কার করুন

ব্লেন্ডার ব্যবহার করা যেমন সহজ তেমনি এটি পরিষ্কার করা বিরাট এক পরীক্ষা। গতানুগতিক নিয়মে যদি এটা পরিষ্কার করলে আশানুরূপ ফলাফল হয়তো আসবে না। যার ফলে ব্লেন্ডারের মত ইলেক্ট্রিকাল জিনিস নষ্ট হবার সম্ভাবনাও থেকে যায়। অন্যদিকে, সঠিকভাবে পরিষ্কার না করলে দুর্গন্ধ ও দাগের তৈরি হতে পারে। এসব থেকে মুক্তি পেতে ব্লেন্ডার ব্যবহারের পর হালকা গরম পানিতে বাসন মাজার লিকুইড শোপ একটু ঢেলে দিন। ব্লেন্ডারের সুইচ অন করে ১০ সেকেন্ডের জন্য ব্লেডগুলোকে চালু রাখুন। এরপর ভালো করে পানিতে ধুয়ে নিন। দেখবেন ব্লেন্ডার একদম পরিষ্কার হয়ে গেছে এবং জং ধরারও সম্ভাবনা নেই। 

মাইক্রোওভেন আমাদের প্রতিদিনের কাজে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। খাবার রান্না থেকে শুরু করে খাবার গরম করা সবকিছুই আমরা মাইক্রোওভেন দিয়ে করে থাকি। তাই এটার বিশেষ যত্ন অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু এটা গতানুগতিক নিয়মে পরিষ্কার করাতে কিছুটা ঝুঁকি থাকতে পারে। অনেকদিন মাইক্রোওয়েভে কাজ করার ফলে ভিতরে গুমট গন্ধ হয়ে গেছে? চিন্তা নেই তাতে। একটি পাত্রে কিছুটা ভ্যানিলা এসেন্স নিয়ে মাইক্রোওভেনে গরম করুন। গরম করার সময় শেষ হলেও মাইক্রোওয়ের দরজা খুলবেন না। ৩০ মিনিট পরে গরম ভ্যানিলা এসেন্সটিকে বের করে নিন। দেখবেন দুর্গন্ধ দূর হয়ে গিয়েছে। ঘরের যে কোনও জায়গা ভ্যানিলা এসেন্স গরম করে রেখে দিন। দেখবেন বহু অবাঞ্ছিত গন্ধ দূর হয়েছে। ঘরে যদি ভ্যানিলা এসেন্স না থেকে থাকে তবে একই উপায়ে লেবু ব্যবহার করুন ভ্যানিলার জায়গায়। এবং প্রত্যেকবার ওভেনের কাজ শেষ হলে একটি কাপড় বা টিস্যু দিয়ে মুছে ফেলুন। ভালো এক বোতল গ্লাস ক্লিনার না ফ্লোর ক্লিনার কিনে রাখুন। দিন শেষে একবার কাপড়ে বা টিস্যুতে ক্লিনার লাগিয়ে মাইক্রোওভেনের ভেতরে ও বাইরে ভালমত মুছে নিন। 

রান্নাঘর পরিষ্কার করতে ওপরের এই সমস্যাগুলোয় আমাদের বেশি পড়তে হয়। কিন্তু এগুলো ছাড়াও আরও বেশ কিছু ব্যাপার রয়েছে যেগুলো মেনে চললে রান্নাঘর পরিষ্কার রাখা অনেকটাই সহজ হবে। যেমন, রান্নাঘরে কখনই বেশি জিনিস রাখবেন না। কিংবা যা হাতের কাছে পাবেন তা নিয়ে রান্নাঘরে গুঁজে দেবেন না। রান্নাঘরের যতটা সম্ভব কম জিনিস রাখুন। এতে কাজে যেমন সুবিধা হবে, তেমনি নোংরাও কম হবে। কখনো প্লাস্টিক বা কাপড়ের ব্যাগ রান্নাঘরে জমাবেন না। ব্যবহার শেষ হলে ফেলে দিন। একান্তই জমাতে হলে একটি ঢাকনা দেয়া পাত্রে বা মুখ আটকানো ব্যাগে জমিয়ে রাখুন। এই রান্নাঘর পরিষ্কারের টিপসগুলো আপনার কেমন লেগেছে কিংবা কোন টিপসটি আপনার কাজের সেটি জানিয়ে কমেন্ট করতে ভুলবেন না। এছাড়া কোন বিষয়ে আপনার আরও টিপস লাগবে, চাইলে সেটাও কমেন্টে জানিয়ে দিতে পারেন।

Write A Comment